কত্তদিন কিছু লেখা হয়নি। আজ এই দুপুরবেলায় হটাৎ ভীষণ খুব লিখতে ইচ্ছে করছে। না, লেখিকা আমি নই , তবু এতদিন পরের এই বাদল বাতাস , ভিজে ভিজে এই হাওয়া , সারাদিন ধরে অঝোর ধারায় বৃষ্টির শব্দ মনের মাঝে অদ্ভুত কি এক সুর তুলেছে, যাকে বর্ণনা করার জন্যে সঠিক ভাষা পাওয়া যায়না, তবু মনে হয়, এমন ও দিনের দুপুরবেলাটাতে ও কি শুধু কাজ কাজ করে থাকা যায়। মনে হয় কি হবে এই এতো কাজ করে।
একটু আগে আমার পঁয়ষট্টি পেরোনো বড়মাসী ফোন করেছিল, তার আদরের বোনঝি কে নিয়ে জানালার ধারে বসে বসে দুছত্র লিখেছিলো, শোনাতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু বোনঝি সেটিও মন দিয়ে শুনতে পারলোনা, কারণ ওই কাজ। গতকাল রাত্রে পিসি ফোন করেছিল, তার কামিনী ফুলের গাছ ফুলে ফুলে ভোরে গেছে , সেই কথাটাও এই ভাইঝি কে না জানালে কি করে হয়, কিন্তু ভাইঝি টি যে পাঁচ মিনিট ও বার করতে পারেনা ওই পিসির জন্যে, যে পিসির সঙ্গে ছোটবেলাতে কত মেলা দেখেছে, রথ , চড়ক, পুজোর মণ্ডপ। শ্বশুর বাড়িতে সব থেকে আদর পায় যে মানুষ দুজনের কাছে, সেই ব্যাপী আর মামনির জন্যেও রাখা আছে অনেক গল্প। কিন্তু তার আগেও নাকি কাজ শেষ করা দরকার।
আজ এই জলে ভেজা সবুজ হয়ে যাওয়া পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে নিজেকে নিয়েই যেন অনেক প্রশ্ন উঠছে। মনে হচ্ছে তাহলে কি খুব যন্ত্রের মতো হয়ে যাচ্ছি আমরা। সত্যি ই কি এই এত কাজের কোনো প্রয়োজন আছে। ডেডলাইন এর পরে ডেডলাইন। কি হবে যদি সব ডেডলাইন মিস ই করি। কেমন হয় যদি এখন চুপ করে বসে শুধু বৃষ্টি ই দেখি। বা মাসির লেখা কবিতা শুনি বা প্রাণ ভোরে নি পিসির কামিনী ফুলের গন্ধে। অথবা এই যে আজ সবাই কেমন তৃপ্তি করে আমার হাতের রান্না খেলো, এটা দেখাও কি কম সৌভাগ্যের। নিজের মানুষদের কাছে বসিয়ে যত্ন করে খাওয়ানো, তাদের রসনা তৃপ্ত মুখের পরিতৃপ্ত হাসি দেখতে পাওয়া, এও কি কম পাওনা।
হয়তো খুব সেকেলে, বোকা বোকা কিছু সেন্টিমেন্ট আগলে রেখে চলেছি আমি। হয়তো এই যে কাজে ফাঁকি দিয়ে এইসব আবোলতাবোল লেখার মধ্যে দিয়ে করছি সময়ের অপচয়। তবু, করিনা, কি হবে। আমি যে ভালোবাসি। সবকিছু ভালোবাসি। যেমন ওই যখন আমি ল্যাব এ ঢুকি, তখন ল্যাব এর ওই চিরপরিচিত গন্ধটা আমাকে ঘোর লাগায় , তেমন ই যে এই সিক্ত সবুজ পৃথিবী আমাকে ঘোর লাগায়। চারিদিকের এই ভিজে ভিজে নরম সবুজ সিক্ত পৃথিবীটা কে যত দেখি তত যেন মনের মধ্যে চলা সব ঝড় শান্ত, স্থির হয়ে যায়। কারোর সাথে কোনো কথা কাটাকাটি, ঝগড়া, কথার খেলা খেলতে আর ইচ্ছে করেনা। শুধু মনে হয় শান্ত হয়ে চুপ করে বসে কেউ আমাকে আমার মতো করে বুঝে নিক, জেনে নিক, আর আমি শুধু তার কথা শুনি। কোনো তর্ক নয়। কথার পৃষ্ঠে কথা নয়। জটিলতা নয়। গ্লানি নয়। শুধুই তার কথা শুনি, একেবারে চুপ করে বসে। চারপাশের সমস্ত জটিলতা, না পাওয়াকে দূরে সরিয়ে দুহাত ভোরে শুধু একরাশ ভালোলাগা কে আগলে রেখে , চারপাশের সব ভালোটুকুকে এক করে শুধু ভালোবাসা গাঁথা হয়ে থাক।
একটা ভিজে হাওয়া এসে ঘরের পর্দা গুলোতে ঢেউ তুলে দিয়ে গেল। আজকে আবার জুঁই ফুলের মালা দিয়েছি ঠাকুরের কাছে, গোটা বাড়িতে ভেসে বেড়াচ্ছে জুঁই ফুলের গন্ধ ওই যে আমার ঠাকুর, যে সব সময় আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে, কি জানি তার মনে কি আছে। ওই গন্ধ, এই বৃষ্টির শব্দ, এই ভিজে হাওয়ার মধ্যে দিয়ে সবকিছু এলোমেলো করে কি বার্তা পাঠাচ্ছে , কি জানি। তবে জানি, এলোমেলো করার জন্যে নয়, সব কিছুকে সুন্দরতা দিয়ে সাজিয়ে দেবার জন্যেই তার সব আয়োজন।
খুব ইচ্ছে করছে, বৃষ্টি ভেজা একমুঠো জুঁই ফুল আলাদা করে, সংগোপনে, সযতনে তুলে রাখতে।