Thursday, 4 November 2021

ভূত চতুর্দশী, চোদ্দ প্রদীপ, অলক্ষী বিদায়, লক্ষী পুজো, কালীপুজো

আমাদের ছোটবেলাতে দিওয়ালি কি জানতামনা, জানতাম শুধুই কালীপুজো। আর জানতাম এটা সবথেকে আনন্দের দিন। দূর্গা পুজো চলে যাবার পরে , শীত শীত ভাবটা ক্রমশঃ বাড়ছে, দূর্গা পুজো চলে যাবার মনখারাপ তখন ও ছেড়ে চলে যায়নি, এমন এক সময় থেকে কালীপুজোর প্রস্তুতি। প্রস্তুতি বলতে বিশেষ কিছুইনা, একদম ছোটবেলাতে বাবা মোমবাতি কিনে আনতো আর ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি। সেই সাদা সাদা প্যাকেট এ ধপধপে সাদা মোমবাতি আর কাগজের প্যাকেট এর একপাশে একটা মেয়ে ফুলঝুরি হাতে দাঁড়িয়ে, অপরপাশে একটা বাচ্ছা ছেলে মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে এইরকম ছবি দেওয়া কাগজের প্যাকেট এর ভেতরে ঈষৎ স্লেট কালার এর ফুলঝুরি, এই দুটো জিনিস দেখলেই বুকের ভেতরটা আনন্দে লাফিয়ে উঠতো। গোটা বাড়ি সাজানো হবে মোমবাতি দিয়ে, মা মাঝখান থেকে আধখানা করে দিতো মোমবাতি গুলোকে, তখন বুঝতামনা, ভাবতাম ওটাই বোধয় করতে হয়, এখন বুঝি, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার এ আনন্দের সরঞ্জাম কেও রেখেঢেকে বুঝে শুনে খরচ করতে হতো। তিরিশ বছর আগে একথা জানা সবার ই ছিল হয়তো, কিন্তু এখন প্রাচুর্য্যের পরিমানের মধ্যে সেদিনের সেই ইতিহাস ঢাকা পরে গেছে। অর্থ আর আনন্দ সামন্তলারে কোনোদিন ই চলেনি, তাই ওই বুঝে খরচের মধ্যে কোথাও কখনো আনন্দের ঘাটতি হয়নি, বরং, ওই মোমবাতি, ফুলঝুরি , চরকি থেকেই আবার বেশ কিছু বেঁচে যেত, পরের বছরের জন্যে, বাবা বলতো এই দেখো আমার মিতব্যয়ী মেয়ে, এখান থেকে আবার বাঁচিয়ে রাখছে। আমার দিদা মানে মেজদিদা বলতেন, কিপ্টে বলে বদনাম করোনা তোমরা ও আমাদের লক্ষী মেয়ে। মেজদিদা এ পৃথিবী থেকে চলে যাবার আগে পর্যন্ত আমাদের বেশির ভাগ ছোটবেলায় কেটেছে, মেজদিদা দাদুদের পাঁচলার বাড়িতে। বিশাল তিন মহলা জমিদার বাড়ি, এত পুরোনো হয়ে গেছে যে জায়গায় জায়গায় ইঁট খুলে পড়া , বালি পড়া, ভেঙে পড়া পাঁচিল, ফুটিফাটা মেঝে। বিশাল বাগানে চাঁপা, হাস্নুহানা, নারকেল সুপুরি থেকে কোন এমন ফলের বা ফুলের গাছ বাকি ছিলোনা , লতিয়ে লতিয়ে তিনতলার ছাদ পর্যন্ত ওঠা মাধবীলতা আর অপরাজিতা, ছাদ টা ছিল আমার সবথেকে প্রিয় জায়গা, বিশাল ছাদ , একপাশে ঠাকুরঘর। ছাদের কোথাও ভাঙা, কোথাও খুব শেওলা, সেসব জায়গায় যাওয়া বারণ। একদম মাঝের চাদটাতেই যাবার অনুমতি ছিল। সেটাও কম কি, একধারে শুকোতো তেঁতুল, ছোবড়া, এসব। দূরে দেখা যেত দীঘি, শোনা যেত সন্ধ্যায় আজানের শব্দ। দূরের কালীবাড়িতে সন্ধ্যারাতির ঘন্টাধ্বনি। আমি আর দিদি হাঁ করে শুনতাম, দেখতাম। এঘর ওঘর করতাম দিদার পায়ে পায়ে, দুপুরে বড় বড় জানলায় বসে পাথরের থালায় রাখা গুড় তেঁতুল খেতাম চুরি করে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাঁটুল দি গ্রেট পড়া বা দিদার কাছে শুয়ে শুয়ে পুরাণের গল্প শোনা। ভেতর বাড়িতে বড় পুকুরের ধারেই ছিল তুলসী তলা , দিদা চান করে উঠে তুলসী তলায় পুজো করে তবে ভেতরে ঢুকতো। আমি মেনি বেড়ালের মতন পায়ে পায়ে ঘুরতাম। লক্ষী পুজো , কালীপুজো র সকালে আল্পনা দেওয়া শেখাতো দিদা, আমি আর দিদি দিতাম। সিঁড়িতে সিঁড়িতে লক্ষীর পা আঁকা, সেই তিনতলার ঠাকুর ঘর পর্যন্ত।ঠাকুর ঘরটা ছিল সবথেকে আকর্ষণীয় আমার কাছে। লোহার শেকল খুলে ভেতরে ঢুকলেই ধুপ ধুনো কর্পূর চন্দন সবকিছু মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ থমকে থাকতো, অনেকটাই বড় ঠাকুরঘর। একদিকে লাল বেদির ওপরে ঠাকুরেরা সবাই তারপরে মাথার কাছে লক্ষীর ঝাঁপি টাঙ্গানো , লম্বা একটা জানালা। তার নিচে কতগুলো বই রাখা, কি কি বই ছিল সব এখন আর মনে নেই। কালীপুজোর রাতে ছাদে এই এত্ত বড় করে আল্পনা আঁকা হতো, মাঝখানে থাকতেন লক্ষী, নারায়াণ, কুবের। দূরে প্রায় অন্ধকারে থাকতো গোবরে তৈরি অলক্ষির মূর্তি , সন্ধেবেলায় গা ধুয়ে এসে কোনোরকমে জড়ানো চুলের গোছা ভালো করে আঁচড়ানোর পরে চিরুনিতে উঠে আসা চুল দিয়ে তৈরি হতো ওই অলক্ষীর মাথার চুল। সব বর্ণনা ঠিক মনে নেই আমার, আমার এক দিদি রিসেন্টলি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছে কালীপুজোর দিনের এই অলক্ষি বিদায় আর লক্ষী পুজোর। আমার মনে আছে ঠাকুর মশাই এসে বাঁ হাতে কোনোরকমে একটি ফুল ফেলে দিলে, তাকে কুলোর বাতাস দিয়ে দূরে পুকুরের ধারে বা বাঁশবনে বিদায় করে আসা হতো। আর ছাদের মাঝখানে মস্ত করে করা আল্পনার মধ্যে শুরু হতো লক্ষী নারায়ণ কুবেরের পুজো। আলো আর মঙ্গল শাঁখ এর মধ্যে লক্ষী স্থাপিত হতো অন্দরে। সমস্ত অন্ধকার জায়গায় জ্বলে উঠতো আলো। 







ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...