আমাদের সবার একটা গল্প আছে। সেই ছোটবেলা থেকে, যখন আমরা এক ঠাকুরমার ঝুলির রূপকথাদের মধ্যে গুঁজে গুঁজে নিজেদের জায়গা করে নি, অথবা বড় হয়ে উঠে বুদ্ধদেব গুহর বাবলি হয়ে ওঠার আকাঙ্খা করি বা শীর্ষেন্দুর পার্থিব এর সেই চার বন্ধুদের মতো বন্ধু খুঁজি। কিছু দেখে , কিছু পরে, কিছু বুঝে উঠতে উঠতে বেড়ে উঠি, আর তারপরে বড় হয়ে উঠি। দায়িত্ব আসে, কর্তব্য আসে, কিন্তু আমাদের সবার মধ্যে নিজেদের সেই দায়িত্ব বোধ আসেনা, কর্তব্য বোধ আসেনা, আবার কখনো বা ঠিক উল্টোটা দেখা যায়, এই দায়িত্ব বা কর্তব্য কাউকে কাউকে একেবারে নিষ্পেষিত করে দেয় , জীবনের রং তখন শুধুই ১০ টা পাঁচটার চাকায় ঘুরতে থাকে। পূর্ণিমার চাঁদকে ঝলসানো রুটি, শুধু সুকান্তের কেন, বহুবার আমাদের অনেকের মনে হয়। গাছের সবুজ পাতার দিকে তাকানো কেও বিলাসিতা বলে হয়, আর অন্য কেউ যদি সেই চাঁদ পাতার মধ্যে থাকে, তখন মনে হয় ইসঃ ওর জীবনে তো কোনো চিন্তাই নেই, হতো আমার মতো জীবন বুঝতো তখন। আর এখনকার এই ফেইসবুক, ইনস্টাগ্রাম এর যুগে, এ চিন্তা অনেকের ই হয়, মুখ ঘুরিয়ে থাকি, ভাবি দেখবোনা দেখবোনা, যতক্ষণ না আমার কাছেও একটা এইরকম ঝকঝকে অমিকে তুলে ধারার মতন কিছু থাকছে, কিছুতেই ততদিন আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকি, আবার সে অদম্য টান কেও একেবারে উপেক্ষা করা যায়না। আমাদের বয়সের যারা তারা নিজেদেরকে একটু ভাগ্যবান বলতেই পারে, কারণ আমাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার দরজা খুলে যাবার আগে, বই এর পাতায় মুখ গোঁজার মতন কিছু দিন ছিল, স্কুল থেকে এসে দৌড়ে দৌড়ে বই পড়ার নেশা ছিল, আর ও একটু দুপুর বেলায় মা ঘুমোলে চুপিচুপি নিষিদ্ধ বই এর খোঁজে চুপিসারে আলমারির কাঁচ সরানো ছিল, পড়ার বই এর তলায় গল্পের বই রেখে পড়ার টানটান উত্তেজনা ছিল, আমার লাভ লেটার ও পেয়েছিলাম আমি পাড়ার লাইব্রেরি তে বুদ্ধদেব গুহর বাবলির মধ্যেই। ধরা পরে মা এর হাতে প্রচণ্ড উত্তম মাধ্যম ও হয়েছিল। প্রথম পাওয়া গোলাপ ফুল তাও ঠাঁই পেয়েছিলো গীতাঞ্জলির মধ্যে। বলতে না পারা পাঁপড়ি গুলো শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে গেলেও, গীতাঞ্জলি খুললেই সব স্মৃতি আবার জীবন্ত। যাকগে যে কথা বলছিলাম, আমি খুব ভাগ্যবান, যে, ঠিক সময়ে ঠিক জীবন বোধের ঠিক রসদ টা আমার হাতে তুলে দিয়েছে আমার চারপাশের মানুষগুলো, মা , বাবা, বাবুমামা,সেই লাইব্রেরিয়ান কাকু।.আর তারপরে কিছু বই আমি নিজে বেছে নিয়েছিলাম, ওই বড় সময়গুলোতে, যেগুলো
কিছু কিছু বই আমাদের চলার পথে অনেক সময় ই আমাদেরকে স্থির রাখে, সুখে, দুঃখে, বিভিন্ন পরিস্থিতির মধ্যে ব্যালান্সড রাখে। আমার কাছে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের শিউলি হলো এমন ই এক বই। গল্প পাঠে তিস্তা। আমি বিশেষ ভাবে কৃতজ্ঞ সেই মানুষটির প্রতি যিনি কিছু কিছু করে এই বই এর কিছু কিছু পাতার ছবি তুলে আমাকে পাঠান , তার জন্যেই আবারো এই বইটি আমি পড়তে ও পড়ে শোনাতে পারছি।