Friday, 29 August 2014

অহম ব্রহ্মসী

আজ্  আমি এখানে লিখতে বসেছিলাম কিছুটা ক্রিতাগাতা বোধে আর কিছুটা বা শুধুই এমনি কিছু একটা লিখতে ইচ্ছে করলো তাই।  কিছুদিন আগে আমরা উত্তারাখান্দ এ বেড়াতে গিয়েছিলাম। না কেমন বেড়ালাম বা কি খেলাম অবশ্যই সেসব লিখবনা। তবে বেড়াতে যাবার আগে অনলাইন বেশ কিছু ব্লগ থেকে খুব ভালো ভালো কিছু রিভিউ আর্টিকেল থেকে বেড়াতে যাবার এবং গিয়ে থাকার জায়গা পছন্দ করেছিলাম।  তাই মানে হলো যে আমিও যদি আমার অভিজ্ঞতা এখানে লিখি, তাহলে হয়ত আমার মতো অন্য কারোর কিছু উপকার  হবে আর সঙ্গে সঙ্গে সেই সমস্ত মানুষকে হয়ত বা acknowledge করা হবে। আজ অনেকদিন অপেক্ষার পরে, ল্যাব এ কিছু ভালো result পেয়েছি।  মন টা তাই যেন চাইছে কিছু টা আরাম করতে, রোজের কাজ থেকে কিছুটা ছুটি নিয়ে চুরি করে, নিজের মনের মতো করে যা ইচ্ছে তাই কিছু লিখতে 
                              কিন্তু অদ্ভুত মানুষের মন, লিখতে বসে আর কিছুতেই আমার আজ আর সেই 'ভ্রমণ কাহিনী' লিখতে ইচ্ছে করছেনা, বরং লিখতে গিয়ে আমার একদিনের কথা মনে পরে গেল, লিখতে ইচ্ছে করছে আমার সেই চরম অনুভুতির, পরম পাওয়ার, সেই অপরূপ উপলব্ধির মুহুর্তের কথা। 
                              
                                আমরা হাঁটছিলাম নির্জন পাহাড়ি পথ ধরে, সূর্য তখন পাটে  বসেছে, আকাশ জুড়ে চলছে সেই চির নতুন, চিরাপুরাতন রঙের খেলা। সমস্ত আকাশ বাতাস পাহাড় রাস্তা সবাই যেন এক হয়ে সেই মৌন মুগ্ধ সৌন্দর্য কে প্রনাম করছিল।  সেদিন ছিল জন্মাষ্টমী। দুরে কোনো পাহাড়ি মন্দিরের থেকে ভেসে আসছিল মন্দিরের ঘন্টা। রাস্তার বাঁকে একটা ঢিপির কিছুটা ওপরে, একটু উঁচুতে বসার জায়গা ছিল।  আমি আর অর্নব তার ওপরে গিয়ে বসলাম। দুজনে মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলাম সেই সৌন্দর্য।  বেশ কিছু ফটো তোলার পরে ক্যামেরা ও আর হাতে নিতে ইচ্ছে করছিলনা। মানে হাছিল এ সৌন্দর্য ধরে রাখার মতো মনের আর চোখের মতো ভালো ক্যামেরা আর কিছু নেই। মিশে যাচ্ছিলাম সেই অপারুপের মধ্যে। হটাত আমার তখন নিজেকে ভীসন lucky মনে হলো।  আমি বুঝতে পারলাম যে বাবাকে আমি সব সময় মিস করি , যে বাবার জন্যে আমার সব সময় কি প্রচন্ড অভাব বোধ হয়, সব সময় মনে হয়, যদি বাবা থাকত, বাবা এই বলত, যদি বাবা থাকত, আমি এভাবে বাবাকে বলতাম, বাবা তার উত্তরে এই বলত...কিনতু আসলে তো আমার বাবা আমার মধ্যেই আছে। আমার সকল ভালোলাগাতে বাবা আছে, আছে আমার সমস্ত কাজের মধ্যে। তাই তো আমি কোনদিন কোনো খারাপ কাজ করতেই পারবনা।  নিজের প্রতি ক্যামন এক গর্ব বোধ হলো, ভিশন এক জোর পেলাম মনে।  আমি বাবার মেয়ে। যে বাবাকে আমি কতবার মনে মনে বলেছি, বাবা তুমি ই আমার ভগবান। সবাই ভগবান কে পুজো করে, আমার কি মজা, আমি তো ভগবান এর ই মেয়ে।  আবার পারে নিজেকে বোঝাতাম, ধুর আবার আমি স্বার্থপরের মতো ভাবছি? সবাই ই  তো ভগবানের  সন্তান। আমি সেই বাবার মেয়ে, যে বাবার সম্পর্কে কোনো কথা বলতে গেলে আজ ও লোকে হাত তুলে নমস্কার করে, আমাকে বলে, তুমি অমুকের মেয়ে, তোমার সংস্কার তো ভালো হবেই। নতুন করে যেন দিশা পেলাম নিজের মধ্যে। আমি কখনো খারাপ করবনা, ভুল পথে যদি কোনদিন চলি, আমার বাবা ঠিক আমাকে ঠিক করে দেবে। আমিনা বাবার মেয়ে, কখনো ভুল পথে আমি চলতেই পারিনা। মনে আছে রবীন্দ্রনাথের 'আমি' কবিতার সেই বিখ্যাত লাইন  'এ আমার অহংকার/ অহংকার প্রতিটা মানুসের হয়ে'............ঠিক তখন ই অর্নব জিজ্ঞাসা করলো, কি ভাবছিস? আর আমার মনে হলো, বাবা আমার জীবনের সাথে একজন সত্যি কারের কান্ডারী কে বেঁধে দিয়েছেন।  সত্যি তো, বাবা ছাড়া ওই তো একমাত্র আমাকে আমার মতো করে বোঝে। মাঝে মাঝে মানে হয়, বাবা যেন যত্ন করে অর্নব কে নিজের শিক্ষা, চিন্তা ভাবনা, মন  সব কিছু দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন। যত বেশি করে ওকে বুঝি, যত বেশি করে ওকে জানি, তত বেশি করে বুঝতে পারি, ওর শিক্ষা, সেই শিক্ষা যে শিক্ষা পেয়ে আমরা বড় হয়েছি, যে শিক্ষা স্বার্থপরতা শেখায়না, শেখায় উদারতা।যে শিক্ষা জীবন কে একটা ছোট্ট গন্ডির মধ্যে বেঁধে রাখেনা , তাকে জ্ঞানের আলোর বৃহত্তর বৃত্তের মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলে। আজ হতেও তো পারত যে অর্নব আর আমি দুজনে ভিন্ন ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে পাশাপাশি থাকতাম,তাহলে কি র এমনি করে আমি সবার জন্যে ভাবতে পারতাম, বা ভাবতে পারলেও, করতে পারতাম। আর যদি উল্টোটা হত, তাহলে ও, ও তো কিছুই করতে পারতনা, এই যে সামান্য কিছু খেতে পর্যন্ত গেলে সেই খাবার যে ভালবাসে তাদের কথা আমাদের মনে পারে যায়, তাদের কে দিতে ইচ্ছে করে, এই যে মানুষকে ভালবাসা , সমস্ত প্রাণী জগতের প্রতি করুনা বোধ, তাদের সাথে নিজেদের একাত্ত বোধ, এও তো ভগবানের আশির্বাদ,আমার বাবার আশির্বাদ। নিজেকে মানুস ভাবতে পারছি, এ যে পরম পাওয়া। আমাদের কোনো ইগো নেই, ভিসন কোনো মারামারি কাটাকাটি রকমের আত্মসম্মান  বোধ ও নেই। লোকে আমাদের কখনো বেশ কষ্ট ও দেয়, তা দিক।  আমার কোনো গ্লানি নেই, কোনো দুখ্খ নেই, কারোর প্রতি কোনো অনুযোগ নেই।  সবার প্রতি, সব কিছুর প্রতি এক পরম মমতা বোধ হলো।  আর নিজেদেরকে আমার ভীসন সুখী মনে হলো।  ভাগবানকে প্রনাম করলাম, প্রনাম করলাম সেই মৌন সৌন্দর্য কে, আর প্রার্থনা করলাম, আমাদের দুজনকে তুমি ঠিক এভাবেই রেখো, এভাবেই  জ্ঞানের পথ, সত্যের পথ  শিক্ষার পথ  আর ভালবাসার পথ ধরে সুরু হোক আমাদের দুজনের একসাথে পথ চলা। বাবার আশীর্বাদের হাত অনুভাব করলাম।
                                               অর্ণবের দিকে তাকালাম, মনে হলো, বোধহয় যেন বুঝতে সেই কথার মানে "অহম ব্রম্হসী" "তম ব্রম্হসী" ব্রহ্মময় এ জগত।  

1 comment:

Arpita Chatterjee said...

Good Bless you two. Welcome to blogger. Waiting for more posts.

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...