Wednesday, 28 November 2018

did you do it

আজ ও আকাশে চাঁদ। কার্তিক মাসের হিম হিম নিস্তব্ধতা, জঙ্গল থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝি পোকা আর ও কত অদ্ভুত শব্দ মাঝেমাঝে এই শীতল নিস্তব্ধতাকে ভেঙে খানখান করে দিচ্ছে। ব্যালকনিতে বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলে ঠান্ডা লাগছিলো, আবার ঠিক সেখান থেকে সরেও আসতে ইচ্ছে করছিলোনা। হাতে পড়েছিল  কাজ, সেগুলোর দিকেও ঠিক মন বসাতে পারছিলামনা। এমন সময় ওই যে রাত জাগা পাখি, এক ঝাপটাতে উড়ে যেতে যেতে যেন মনে করিয়ে দিয়ে গেল। মন বসাও। মন বসাও। 
মন হলো ভারী এক অদ্ভুত জিনিস। ছোটথেকেই আমার একা থাকতে ভয় হতো। অথচ, কি পরিহাস দ্যাখো, দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটতো আমার একা একা। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা থাকতো বাবার বাড়ি ফেরার। কারণ বাবা মানেই যে ছিল গল্প, হাসি, মজা। হাজার আনন্দ। 
বড় হবার পর থেকেই থিতু হতে চাইতাম। স্থিরতা চাইতাম। কিন্তু যত বেশি স্থিরতা চেয়েছি, ভাগ্য ততবেশি আমাকে অস্থিরতার মধ্যে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে। বিএসসি করার সময় থেকেই শুধু ভাবতাম যাহোক করে একটা চাকরি নিয়ে বিয়ে করে সংসার করবো চুটিয়ে। জানি, এমন কথা শুনে অনেকের ই চোখ কপালে উঠবে, ছি ছি করার মতো কথা তো বটেই। কিন্তু কি করবো আমি যে একদম সাধারণ এক মেয়ে। অকপটে এ কথা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই যে এমন কথা আমি সত্যি ই ভাবতাম। অতন্ত্য ছাপোষা সাধারণ এক মেয়ে আমি। যে সন্ধ্যে কে আনতে চায় ধুপ ধুনোর স্নিগ্ধ সান্নিধ্যে, চায়ের গরম কাপের মধ্যে দিয়ে, রাত্রে যার একা থাকতে ভয় করে, সূর্য্যপ্রনামের মধ্যে দিয়ে যার দিন শুরু হয়। দুচোখে স্বপ্ন নিয়ে অথচ সচেতন ভাবে যে স্বপ্নের মতো জীবন যাত্রা চায়। থিতু হতে চায়। 

থিতু হতে আমি পারিনি এখনো। শুধু অন্ধের যষ্ঠির মতন সহায় আছে এখনো আমার জ্ঞান পিপাসা টা। আর যেন কোথাও কিছু নেই। হটাৎ চোখ জ্বালা করে উঠলো। পরক্ষনেই হাসি পেলো। এখনো বুঝি অভিমান হয়। এখনো বুঝি ঝগড়া করিস ঠাকুরের সাথে, নিজের মনেই নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম। নাহ , এখন আর অভিমান হয়না। সবকিছুতে, সবকিছুর মধ্যে মনে হয় ঠিক আছে। সব ঠিক আছে। all okay . everything is okay. 
আমার জুনিয়র রা বলে, আমি নাকি আলাদা, ডিস্টিংক্ট, বলে নাকি আমার মধ্যে ক্ষমতা আছে স্ট্রেস handle করার, সহ্য করার। হাসি আবার। কিজানি বা, হবে হয়তো। হয়তো আছে, আর ঠাকুর সেইজন্যেই হয়তো আমাকে সুখী গৃহকোনের কোণ টা তে এনে ফেলেনা কিছুতেই। একটা, সুন্দর, নিস্তরঙ্গ , থিতু জীবন দেয়না হয়তো তাই। নাহ , এসব কি ভাবছি। এই যে আদিগন্ত চরাচর ভাসিয়ে আমার চাঁদ তার স্মিত মুখখানি তুলে তাকিয়ে আছে, ওই যে গভীর ঘন জঙ্গল। নাহয় বন ফায়ার ওখানে হচ্ছেনা, violin বাজিয়ে গান ও নয়। তবু এইসব ও কম বা কি। জীবন যেভাবে যখন যা দেয় , তাকেই যে দুহাত ভোরে গ্রহণ করতে হয়। নাহলে ওই যে, ধরো তোমাকে সর্বস্ব দিয়ে কেউ যত্ন করতে চাইছে, ভালোবাসছে, খেয়াল রাখছে, কিন্তু তুমি তাকে অবহেলায় দূরে সরিয়ে রাখছো, বুঝতেই পারছোনা, সে না চাইতেই তোমাকে ভরিয়ে রাখতে চাইছে। তারপর একদিন অবহেলা করতে করতে তুমি তাকে হারিয়ে ফেললে, আর খুঁজেই পেলেনা কোথাও। তখন? তখন সেই সমস্ত কিছুকে একটু ছোঁবার জন্যে তুমি আকুল হবে। কিন্তু আর পাবেনা। আজকের ওই রাত জাগা did you do it বলা ওই লম্বা লম্বা ঠ্যাং এর পাখিটাও যেন ঠিক তাই বলে গেলো আমায়। গ্রহণ করো। গ্রহণ করো। প্রতিটা মুহূর্ত এর অমৃত সুধা আকণ্ঠ পান করো। দুঃখ তো একটা নেশার মতো, দুঃখের কথা ভাববে, একের পর এক দুঃখ ভেসে আসবে মনে। এই পাইনি, ওই পাইনি। পায়নি কি তা ভাবতে ভাবতে যে যা পাচ্ছ সেটা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই পাইনি নয়, পেয়েছিও যে কত কিছু। কত কিছু। চোখটা আবার জ্বালা করে উঠলো। সত্যি তো এমন মায়াবী রাত। দুধসাদা জ্যোৎস্না। নরম চাদরের মতন একটা গভীর রাত। এইসব যে আমার জন্যে আছে। পাখিটা আবার ডেকে উঠলো, did you do it ? নারে পাখি, করিনি আমি, অনেক কাজ এখনো বাকি পরে আছে। করা হয়ে ওঠেইনি। করবো। তুই শুধু মাঝেমাঝে মনে করিয়ে দিস তো, বলিস আমায়, বকিস, ডাকিস did you do it . আমি আমার সবটুকু ক্লান্তি কাটিয়ে আবার হাসি মুখে এই পৃথিবীকে দেখবো আর বাকি পরে থাকা কাজগুলোকে সম্পূর্ণ করবো। 










Saturday, 24 November 2018

নীল আকাশ আর নস্যি রঙের চাদর

বছরের প্রতিটা সময়ের আলাদা আলাদা গন্ধ আছে, আলাদা রং, আলাদা হাওয়া। একদম আলাদা আলাদা। distinct . এখনের এই শিরশিরে ঠান্ডা উত্তরে আবেশ , ঝকঝকে গাঢ় নীল আকাশ ও ঠিক সেইরকম একেবারে এই সময়ের নিজস্ব কি যেন একটা নিয়ে বারবার আমার দরজায় এসে কড়া নাড়ছে। কি যে, সেটা ঠিক বুঝতে পারছিলামনা। রান্না ঘরে চা বসিয়ে সোয়েটার টা ভালো করে পড়তে পড়তে ওই রোদে ঝলমলে নীল আকাশ টাকে দেখতে দেখতে মনে মনে বললাম,না বাপু এই সাত সকালে এমন ঝলমলে দিনটাকে মনখারাপ দিয়ে মাটি করার দরকার নেই কোনো। তার থেকে বরং যা কিছু মনখারাপ আর আবোল তাবোল ভাবনার ঝুলি নিয়ে আজ যাক বসা। আমার ইচ্ছেখাতার কাছে। ইচ্ছেখাতার পাতাগুলোর সাথে অনেক গল্প করা বাকি থেকে গেছে। অনেকদিন অপেক্ষা করে আছে ওরা। আমিও অপেক্ষা করতে থাকলাম, দিনের সব টুকু কাজ শেষ করে, কখন বসবো ওই আমার আবোল তাবলের ঝুলি নিয়ে। আর সব কাজের , সব কিছুর মাঝে বারেবারে শুধু চোখ চলে যেতে থাকলো ওই নীলের দিকে। নীলটা আজ সত্যি ই যেন খুব অন্যরকম। গভীর। গম্ভীর, মৌন। কিন্তু কাছের নয়। যেন না বলা অনেক কিছুর দূরত্ব দিয়ে ঘেরা। দূরত্ব তো আছেই। চাইলেই যে কোনো দূরত্ব এক নিমেষে মুছে ফেলা যায় আবার কখনো কখনো এক হাত দূরের দূরত্ব ও হয়ে যেতে পারে যোজন মাইল এর বেশি। আজকের নীল টা ছিল না ঘোচাতে চাওয়া দূরত্বের মতো। মনে হলো থাক। জীবনের যা কিছু spontaneous , আপনা হতে পাওয়া। তাই সুন্দর। তার মধ্যেই ওই হটাৎ পাওয়ার zeal টা থাকে। আর যা কিছু অনেক ভেবেচিন্তে প্ল্যান করে করা, তার মধ্যে যেন কি যেন একটা থাকেনা। ওই যে স্বাভাবিকতার বদলে এক অস্বাভাবিক কৃত্রিমতা সমস্ত পাওয়ার আনন্দকে মাটি করে দিয়ে চলে যায়। ঠিক ওই ঘিসঘিষে বাংলা বা হিন্দি serial গুলোর মতো। চলছে চলছে তো চলছেই। এর পরে কি হবে, serial এর হিরো কি ডায়লগ বলবে বা নায়িকা কিভাবে তাকাবে সব ই লোকজনের মুখস্থ , তবু প্রতিদিন এক ই সময়ে ওই এক ই তাকানো বা এক ই কথা শোনার জন্যে অধীর অপেক্ষা। 

সে যাই হোক, মনে হলো থাক। ওই নীলের দূরত্ব থাক আজ। আমার জীবনে সময় মতো, মানে অন্যদের তুলনায় যেকোনো কিছুই পেয়েছি অনেক পরে, আমার সিনিয়র, জুনিয়র, batchmate এরা যখন PhD শেষ করে একটা দুটো পোস্ট ডক করে ফেলেছে, ভাগ্যের চাকা তখন ও আমাদের ওই এক ই যাঁতাকলে ঘুরিয়েছে। না তখন ও দোষ দিনি ভাগ্যকে। তাকিয়ে থেকেছি আমার সময়টাকে চেনার জন্যে। সময় এসেছে তার মতো করে। এখন ফিরে তাকালে বুঝতে পারি, সেই সময়ের মূল্য। আর এখনো জানি, ওই যে আকাশের নীল আমাকে আজ বারবার হাতছানি দিচ্ছে, আর আমি নিজেকে আমার চেনা গন্ডির মধ্যে আটকে রেখে তার দিকে দেখছি বারবার, অনেক দিন পরে এই সব কিছু আবার তার সমস্ত মাধুরী টুকু নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসবে। 
আজ খুব হাওয়া দিচ্ছে। হিমেল হাওয়া। শীত যে আমার খুব ভালো লাগার সময়, তা কিন্তু নয়, বরং শীত মানেই আমার মনে হয় বিষণ্ণতা। সবাই যখন পুরো বরফে ঢাকা সাদা ধূসর ছবি দেয় চারিদিকে, আমি তখন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চোখ সরিয়ে খুঁজতে থাকি একটু রং। বাইরের দেশে শীত শুরুর আগে প্রকৃতি কেমন নিজেকে সাজিয়ে রাখে, দুচোখ ভোরে আমি ওই রং দেখি। হয়তো প্রকৃতির চরম কাঠিন্য তাকে রিক্ত করে দেবার আগে, প্রকৃতি প্রাণপণে নিজেকে তার সমস্ত সুন্দরতা দিয়ে সাজিয়ে রাখতে চায়। যাতে এর পরের ভয়ঙ্কর কাঠিন্য তাকে শেষ না করে দিতে পারে, প্রচন্ড লড়াই শুরুর আগে যেন নিজের মাধুরীকে সঞ্চিত রাখা। যাতে লড়াইয়ের ময়দানে তার সেই মাধুরী তাকে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবার জন্যে শক্তি যোগান দিতে পারে। 

বাইরের দেশ শুধু বলছি কেন, আমার নিজের দেশের শীতের ও তো কত রং। শীত এ বাবা আমাকে সবসময় আগলে রাখতো। যাতে এতটুকু ঠান্ডা না লাগে, শীত শুরুর আগেই শুরু হয়ে যেত সেই পরিচর্যা।কোথায় তুলসীর রস, চব্যানপ্রাশ। বাবার কাছ থেকে নিজের অজান্তেই কখন সেই স্নেহ, মমতা, পরিচর্যা আমার কাছে চলে এসেছে, বুঝতেই পারিনি। আমার আশেপাশের এই সব মানুষ গুলো এখন যখন দেখি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে, আমার বকুনি দেওয়া বা জ্ঞান দেওয়া টাকে খুব উপভোগ করে। ষাট পেরিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো যখন ছেলেমানুষ হয়ে গিয়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করে চব্যানপ্রাশ টা কিভাবে খাবো, কখন খাবো, তখন অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসির সাথে সাথে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। খুব মনে পরে যায় আমার জীবনের সেই একজন মানুষের কথা। শীত মানে যে উষ্ণ উষ্ণতা। শীত মানে শুষ্ক কাঠিন্য নয় বরং,  স্নেহমাখা নরম পরিচর্যা। যে উষ্ণতা আজ আমি হয়তো কিছুটা দিতে পারছি কিন্তু এই উষ্ণতার আসল বোধটা যার থেকে পাওয়া। যার গলা থেকে একটু জোরে কোনো শব্দ উচ্চারণ হলে আমার চোখ উঠতো জলে ভোরে। যার সাথে অনর্গল গল্প করা যেত পাশের বাড়ির মেনি বেড়াল টা কিভাবে গাছে উঠছিলো বা কুট্টুস আজ কি করেছে বা স্যার আশুতোষ এর সন্দেশ খাওয়ার কথা। বাবার চোখ দিয়ে শীত টাকে দেখেছি। তাই হয়তো আমার মধ্যবিত্ত মন winter ফ্যাশন এ সামিল হতে পারেনা মন খুলে, বারবার মনে পরে যায়, নলপুর স্টেশন এর সামনে বসা অনিল কাকুর বিড়ির দোকানে দরজা ছিলোনা ভালো, বাবার খুব চিন্তা ছিল অনিল কাকুর ঠান্ডা লেগে যাবে সেটা নিয়ে। এইসময়ে চারপাশে হওয়া ছোট্ট ছোট্ট তুলোর বলের মতো কুট্টুস ছানা গুলোকে নিয়েও আমার আর বাবার ভাবনার অন্ত ছিলনা, মনে আছে , মা স্কুল এ বেরিয়ে গেলে, আমার, দিদির আর বাবার চলতো পুরোনো জামা কাপড় খুঁজে ওদের ঢেকে আসার এক্সপেডিশন। শীত মানেই barbique তে কাবাব বানানোর বদলে, তাই আমার মধ্যবিত্ত মন এ ভেসে ওঠে ফুটপাতে কুঁকড়ে শুয়ে থাকা ওই দেহগুলোর কথা। না এসব ই আমার মধ্যবিত্ত চিন্তাভাবনার বহুল বিলাসিতা। যা আমার বাবাকে কোনোদিন "বড়লোক" হয়ে উঠতে দেয়নি। আমার স্কুল মাষ্টার বাবা, হাসি মুখে ওই সবার কথা ভেবে চোখ ভিজিয়ে শুধু "বড়োমানুষ" হয়েই থেকে গেছে , কিন্তু কখনো "বড়োমানুষী" আর দেখিয়ে উঠতে পারেনি।  আজ বারবার খুব মনে পড়ছে , ওই মানুষটাকে আজীবন শুধুমাত্র দুটো চাদর আর দুটো হাফ সোয়েটার পড়তে দেখেছি। একটা চাদর আর হাফ সোয়েটার বাইরে পড়ার মানে সেটা বাবা স্কুল এ পরে যেত, আর একটা চাদর আর হাফ সোয়েটার বাড়িতে পড়তো। হাসিমুখে, খুশিমনে। কোনোদিন মনেও হয়নি যে বাবার ওটাতে দুঃখ ছিল কোনো বা আজ ও ফিরে তাকালে কোথাও কোনো অভাব, অভিযোগ, দুঃখ , চাহিদা কিছু খুঁজে পাইনা। 

জামাকাপড় গোছাচ্ছিলাম। একরাশ জামাকাপড়। সোয়েটার , জ্যাকেট, হাজার রকমের শীত বস্ত্রের মাঝে বারবার শুধু চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগলো সেই এক জোড়া নস্যি রঙের চাদর। ঝকঝকে দুটো চোখ আর ভীষণ উজ্জ্বল , অমলিন একটা হাসিমুখ। 
বাইরে রোদ ঝলমলে শীতের দুপুর।  

Thursday, 8 November 2018

কেন দিলে
বৃন্ত হতে তুলে আনা
ওই নীল অপরাজিতা
ধরিয়া রাখিতে নারি
ফিরে ফিরে দেখি তারি
যতবার দেখি
যেন
সবকথা হয়ে যায় কবিতা 

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...