সেবারে ঠান্ডাটা শুরু হয়েছিল একটু আগেই,
এই ধরো এই রকম ই কোনো এক দিন।
ডিসেম্বর এর প্রথম সপ্তাহ।
ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন চারিদিক,
এক হাত দূরের জিনিস ও আবছা লাগছিলো,
আর ঠিক এমন ই ঘন কুয়াশা সরিয়ে-
কাউকে দেখা গেছিলো,
যেন বহু বছরের অস্পষ্ট কুয়াশা সরিয়ে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়েছিল সেই উপস্থিতি।
তারপর।.কুয়াশা কেটেছে।.. সূর্য্যের আলোর মতন করে উঠেছে চারিদিক ঝিকমিক।
সেই যে মেয়েটা কোনো এক কুয়াশা মাখা সকালে,
গরম কফির কাপ হাতে নিয়ে হটাৎ ই কাউকে খুঁজে পেয়েছিলো?
মনে হয়েছিল কি যেন এক ভুল আছে, আর পাঁচজনের চেনার আড়ালে।
আর ছেলেটার মনে হয়েছিল, জীবনের সবটা বোধয় এখন ই শুধুই তিঁতকুটে নয়, তার মধ্যে কোথায় যেন এক মিষ্টি মদিরতা, এখনো লুকিয়ে আছে আবছায়া আবডালে।
ধরো এই গল্প টা তাদের নিয়ে।...
শীতের শুষ্ক কাঠিন্য দিয়ে যে পথ চলা শুরু হয়েছিল,
বসন্তের লাল আভায় সে হলো লাজে রাঙা,
গরমের প্রচন্ডে দাবদাহে বিদগ্ধ,
শরতের শিউলি আর কাশের হাতছানি মাখা-
শুভ্র মাধুরীর নিস্তব্ধ ভোর,
হেমন্তের শিশির সঙ্গে নিয়ে-
আবার পৌঁছে দিলো শীতের শুষ্ক সান্নিধ্য।
মন যেন, ঠিক সেই শেষের কবিতার অমিতর মতো করে বলে উঠলো 'ইতি প্রথম সৰ্গ / আমাদের রয়ে সয়ে সর্গ।
পথের প্রান্তে এসে, মেয়েটি বললো এই বেশ হলো। এবার থামা যাক।
ঠিক জায়গাটাতে এসে পথ আমাদের দাঁড় করিয়েছে।
এতটা পথে কেমন আমরা পেলাম বসন্তের পলাশ,
স্বপ্নঘন পূর্ণিমার আলো , শরতের শিউলি,গ্রীষ্মের চাঁপাকে।
এর পরে আর চললে, যদি চেনা সৌন্দর্য্য হারায়?
ছন্দপতন সইবোনা।
সেই শুরু হলো তর্ক , বোঝায় কাকে-
ছেলেটি বললো মনে নেই শাপমোচন,
আসল ছন্দ ফিরে এসেছিলো হয়ে ভুল ছন্দের পতন।
তারপর বেজেছিল মধুর বিনা-
সেইরকম ই ঠিক ছন্দটা বাজতে দেনা-
তাছাড়া আর সব ফুলের মাঝে , মিতা,
ভুললি কেমনে আমাদের অপরাজিতা?
সেতো সারা বছর ই হয়, আমার দুহাত ভোরে আছে সেই নীল ফুলে
অবশ্যই তোর ই ভুলে , কিন্তু এখন আমি কি করি
অপরাজিতার ঘন নীল করেছে আমাকে মাতাল,
বুকের ভেতরে চাপা সমুদ্র হয়েছে উত্তাল-
শান্ত হয়েছি বাইরের আমি, বুঝতেও পারি অনেক।
শুধু তোর এই কথা শুনবনা আমি, তুই আমি যে একেবারে এক।
বুকের ভেতরে লক্ষ দামামার শব্দ।
ক্ষণিক দুজনেই একেবারে নিস্তব্ধ।
তারপর।....
ঝগড়া করার প্রচন্ড প্রস্তুতি নিয়ে মেয়েটি বসলো অনেক যুক্তি সাজিয়ে-
ছেলেটি বড্ডো চালাক, সেসব কিছুকে একেবারে পাশ কাটিয়ে
সোজাসুজি দাখিল করলো
তার স্বপ্নরাজ্যের পরিকল্পনা।...
(ছেলেটি)কোন সে তেপান্তরের মাঠের পরে অপরাজিতা আর মাধবিলতা মোড়া এক সবুজ স্বপ্নদ্বীপ
যেখানে থাকবে আমাদের আনাগোনা-
সদ্য স্নাত চুলের জলে নাহয় আমার ঘুম ভাঙালি,
ভিজিয়ে দিলি।
রক্ত রাঙা সূর্য্য নাহয় মুচকি হেসে লজ্জা পেলো।
সেই লাজেতেই ভরলো নাহয় সকাল শুধু আলোয় আলো।
শান্তি স্তবের মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যা নামাস-
একটু পরে ছাদের ওপর পেতে ফরাস,
কোনো নাহয় গল্প শোনাস, নাহয় একটা গান গাস-
সেই সুরেতে রাত্রি নামুক সুন্দরের ই আলিঙ্গনে,
আরো নাহয় গভীর হোক চাঁদনী রাতের শিহরণে-
সবসময় তো আর পূর্ণিমা না-
একাদশীর বাঁকা চাঁদ।....স্বপ্ন দেখাক।...আকুল করে-
ওভাবেই যে যায় পাওয়া যায় সুন্দর ওই আগামীরে।
এসব যে সব তোর ই বলা-
আজ কেন চুপ, বদল কোথা।..
একসাথে কি যায়না চলা,
জীবন কেন হয়না শুধুই নাবলা কোনো গল্পকথা।
আমার কাছ থেকে চলে যেতে চাস কেন , আমার প্রাণ ফিরিয়ে নিতে চাস?
এ নতুন জীবন যে তোর দেওয়া ? জানিসনা তুই?
কত পথ পার হয়ে, আমি তপ্ত মরুর বুকে মরুদ্যান খুঁজে পেয়েছি।
শুষ্ক বিদগ্ধ অশ্রুসজল অশান্তির মাঝে আমি পেয়েছি শান্তির ছায়া-
কোনো নিঠুর হয়ে সব কেড়ে নিয়ে চলে যেতে চাস।
(মেয়েটি)'তোমার ভুল ভাঙ্গাবো বলে' উত্তর এলো
(ছেলেটি)ভুল যদি ঠিক হয়ে আমার জীবন কে সাজিয়ে দেয় , দিকনা
ঠিক ভুলের বিচারে আমরা কে, যদি এ ভুল হয়, তবে আমার তাই ভালো
(মেয়েটি)জীবন কারোর দেওয়া হয়না, পারেই না,
(ছেলেটি)থাকনা। ..
এসব কথা থাক নাহয় আজ
(মেয়েটি)তোমার স্বপ্ন আমি চাইনা দেখতে
ভয় করে,
শুনতে পাওনা তুমি বাঁধ ভাঙার আওয়াজ
স্রোতের টান যে সাংঘাতিক
(ছেলেটি)ভাঙুক না বাঁধ, ভাসাক স্রোত,
(মেয়েটি)যদি হারায় দিকবিদিক
সবকিছু যদি হয় বেসামাল
(ছেলেটি)করুক না,..মন যে আমার হয়েছে যে দামাল
(মেয়েটি)না...
(ছেলেটি)বেশ তাহলে সামলে নিস্।
সে দায়িত্ব ও যদি হয় শুধু তোর,
আমার আমাকে আগলে রাখিস।
কর না আমায় একটু জোর।
চেনা গন্ডির মধ্যে থেকে
রোজ এভাবে সঙ্গে নিস্।
সীমারেখা টা জানি আমি
আর জানি তুই ভালোবাসিস।
স্বার্থ ছাড়া সত্যিকারের ভালোবাসার ভীষণ বালাই।
তাই যে কাছে থাকতে চাই।
(মেয়েটি)বোঝোনা কেন , আমিও যে তোমায় কাছে রাখতে চাই।
ক্লান্ত তুমি ফিরলে বাড়ি,
থাক সেকথা বলতে নাড়ি
(ছেলেটি)নাবলা তোর সকল কথা আমার জানা
জানি বলতে মানা
তবু বলি, এইটুকু মোর স্বপ্নচয়ন
এইটুকু মোর শক্তি দেয়
সমস্ত দিন দৌড়ে বেড়াই এটাই শুধু করে মূলধন
এবার তবে ঝগড়া থামুক,
আকাশ জুড়ে বৃষ্টি নামুক।
ইচ্ছে তো হয় যাই ভেসে,
যার সাথে যাই ভাসতে-
বাধা যে সে নিজেই যে।
সমস্ত দিন গেল বৃথাই
করে শুধু ঝগড়া লড়াই
দিনের শেষে একটা কথাই বলি এসে,
যা কিছু আমাদের তা থাকবে শুধু আমাদের ই যে।
আর যা কিছু সঙ্গে নিয়ে চলবে নদী কলকলিয়ে।
ভাঙবেনা পাড় , পাসনা ভয় ,
এতদিনের অভিজ্ঞাতায় সেটুকু বোধ হয়েছে সঞ্চয়।
সন্ধ্যে নামলো, বাবলা গাছের মাথার ওপরে বাঁকা চাঁদ।
জীবন তুই সহজ বড়।
নেই তো কোথাও কোনো জটিলতা, কোত্থাও নেই পাতা কোনো ফাঁদ।
(ছেলেটি)জীবন যেন এক আরশি,
যেমন ভাবে দেখি তাকে
ঠিক সেভাবেই ফিরে পাচ্ছি।
তাই হয়তো বেশি করে মানছি ভালোবাসি।
ভীষণ কাছে চাইছি তোকে,
নিজের করেই চাইছি।
ভাঙা কিছু জুড়ে গেছে আজ,
তাই বোধ হয় পালাতে চাস।
যাসনা সরে, ভালোই নাহয় বাসলি একটু
বাসবো তোকে ভুবন জুড়ে।
বিশ্বাস কর, ধরনারে হাত, ঠকবিনা যে দিলাম কথা
শুধু আমায় দিস সাজাতে আমাদের এই নকশিকাঁথা।
কোপাইয়ের ধার সাক্ষী হবার
মিথ্যে নাকি সে অঙ্গীকার
বাদাম ভাজাটাও থাকবে সাথে
আমার সব লেখা তোকে পড়াবো সেই সে রাতে।
(মেয়েটি)ইশ..ছানি পড়া চোখে কাঁপা কাঁপা হাতে
পড়বো কি করে, বাদাম খাবো কিভাবে বাঁধানো সে দাঁতে
(ছেলেটি)ওই ভারটা আমার থাক
আর না এখন ভাবিসনা তুই
শুধু তুই আমায় রাখ।
(কবিকথা) রইলো পরে ঝগড়া ঝাঁটি,
মিথ্যে রাগ আর কথা কাটাকাটি,
দিনের রবি বসেছেন পাটে।
আবির মাখানো দিগন্ত জুড়ে অস্তাচলের মায়া-
রাতের রানীর স্মিত হাসি নিয়ে মুখ খানি তুলে চাওয়া
ফুল পাখি নদী ঝিকিমিকি আলো
কচি পাতা গাছ ঝর্ণা-
এই যা কিছু এই শুধু চিরন্তন, অবিনশ্বর আর হয়না।
পথের ভাবনা নয়কো কারোর,
শুধু পথ টুকু চলা চাই।
পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে পরে যদি পিছু ফিরে চাই ,
দেখবো শুধু পরে আছে আলো
যা কিছু হয়েছে আর যা আছে
সবটুকু শুধু ভালো
যেটুকু পথ, যার সাথে চলা
যতটুকু হাসি যা কিছু বলা
সব যেন করা আছে ঠিক।
ভগবান বলো অথবা ঈশ্বর
এসব তার কারসাজি
ওই দ্যাখো কেমন মুচকি হাসছেন, করিয়ে তোমায় রাজি।
মুছে দিয়ে যত মান অভিমান, ভালো টুকু এস খুঁজি
সবখানেতে সবটুকুতে শুধু ভালোই চলো বুঝি।
দেখবে কেমন জিতে যাই জীবনে তে
দরকার নেই হারাবার কাউকে
শুধু ভালোবেসে মরি আর বেঁচে উঠি ভালোবাসতে।
No comments:
Post a Comment