Sunday, 27 January 2019

হটাৎ বৃষ্টি

দ্যাখো দেখি এমন শীতের দুপুরে, একরাশ কাজের মাঝে আবার একি বিড়ম্বনা
আকাশ ভেঙে বৃষ্টি যে
মন কে যখন বুঝিয়ে সুঝিয়ে কাজের মধ্যে রাখা
এমন সময় ঘন কালো মেঘে এই মেঘের গুরুগুরু যে সব কাজ ভুলিয়ে দিলো
 কি যে করি
অগত্যা
এসে দাঁড়ালাম আমার অকাজের এই বারান্দাটায়
শীতের মাঝে যাতে বৃষ্টিতে ভিজে না যাই,
সেই ভয়ে তাড়াতাড়ি আসছিলাম বাড়ির নিশ্চিন্তের আশ্রয় টা পাবো বলে
আর যেই পেলাম
অমনি সেই বৃষ্টির ছিটে টাকেই আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে হলো
এক ই অবাধ্যতা মনের
ক্ষনে ক্ষণে একি পরিবর্তন
কোথায় যেন হারিয়ে গেল হিসেব  নিকেশ
অনেক দিন পরে আবার নাকে এলো সেই সোঁদা গন্ধটা
বৃষ্টির জোলো হাওয়া শীতের কাঁপুনি নিয়ে এক অদ্ভুত শিহরণ এনে দিলো
মনে পড়লো বেশ কয়েকটা দিন হলো আমার বুড়ো লোকটার গান শোনা হয়নি
কত্তদিন হয়ে গেল শেষের কবিতা অভিমানে মুখ লুকিয়ে পরে আছে
আর সব বইয়ের মাঝে
কেমন যেন একটা অবহেলা আর অনাদরে
যেসুরটা সেদিন ঠিক ভাবে বাজেনি,
তাকে আর যত্নে আনা হয়নি আমার বেহালার ছড়ে
কতদিন হয়ে গেল ছাদের আলসে বেয়ে চলা
সেই সবুজ পাতার নরম টাকে ছুঁয়ে দেখা হয়নি
কোথায় আর কিকরে যেন ভুলেছিলাম কত অঙ্গীকার
অসমাপ্ত হয়ে থাকা সেই ফসিল এর ভেতরে লুকিয়ে থাকা
আশ্চর্য্য কাহিনীকে জানার যে আকুলতা একদিন
আমার দিনের সমস্ত কাজকে জড়িয়ে থাকতো
জীবিকার জন্যে সে কেন হলো আমার অবহেলার শিকার


সামনে গাছ গুলো এখন প্রকৃতির প্রলয় এর সাথে তাল মিলিয়ে মাথা দুলিয়ে মেতেছে
সেই তাল হটাৎ যেন আমার আমির ছন্দ টাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেল
কোথায় হারিয়ে ছিল সে...
হটাৎ যেন হারিয়ে যাওয়া সবকটা বোধ খুঁজে পেলো
অবিনশ্বর সেই শান্তির বাণী
আমার রোজের কর্তব্যের সাথে যা আছে জড়িয়ে
আমার আমিকে যা প্রতিনিয়ত রাখে ভরিয়ে
সেই গভীর অমৃত বোধ এই অকাল বৃষ্টির সাথে সাথে
সমস্ত গ্লানি কে ধুইয়ে দিয়ে
যেন কি এক অসামান্য আনন্দে উঠলো গেয়ে
কি আনন্দ কি আনন্দ কি আনন্দ
দিবারাত্রি নাচে মুক্তি নাচে বন্ধ


Sunday, 6 January 2019

ব্যাপ্তি

বেশ অনেকগুলো দিন পরে, আবার এই সময় টাতে আমার অকাজের জায়গা বা আমার খুব নিজের জায়গাটা খুলে বসলাম। আগে, ২০১৮ এর অনেকটা সময় বিশেষ করে, ওই যে মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন ...এই সময় ১০টা নাগাদ রাতের খাওয়া শেষ করে, দিনের কাজ গুলো গুছিয়ে রেখে, সেদিনের মতো সব কাজ শেষ করে এসে বসতাম আমার এই মোহনার ধারে, সারাদিনের রোজনামচা লিখে রেখে তবে শুতে যেতাম। আর চোখ থাকতো স্ক্রিন এর ওপরে, ডানদিকে গুগল+ এর নোটিফিকেশন এর ওপরে, ওই যে লাল হয়ে যেটাতে লেখা থাকতো, সেইদিনের কোনো বিশেষ বার্তা এলো কি এলো না, এইভাবেই আমার কাজের সময়ের কিছুটা চুরি করে আমি সযত্নে দিয়ে রাখতাম এই মোহনার ধারে বসার জন্যে। আর মনের মধ্যে থাকতো এক অনন্য অস্ফুট অপেক্ষা। এই মোহনার ধারের অদ্ভুত ওই নোনা হাওয়ায় যেন আমায় সত্যি এক স্বপ্নরাজ্যে নিয়ে যেত। 

কাটলো একটা বছর। সময়ের আড়ালে আবডালে, আদোরে আবদারে, বাস্তব আর স্বপ্নের মেল্ বন্ধনে অনস্বীকার্য পরিবর্তনের আলতো ছোঁয়ায় পুরোনো কিছু সময় বারবার উঁকি দিয়ে যেতে থাকলো। এ এক মহা মুশকিল আমার, স্মৃতিশক্তি টা বাবার আনুকূল্যে ছোটথেকে একটু বেশিমাত্রায় প্রখর। কোনোকিছুই ভুলিনা ছাই। তার ওপর আবার আছে commitment আর consistency এর জ্বালা। একবার কোনো অভ্যাসে পেয়ে বসলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে রীতিমতো নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। করছিলাম ও এই কয়দিন ধরে। সমাধান পেলাম ওই যে সেই একটাই জায়গায়। লাল শাড়ি তে গাঢ় ঘন হয়ে আসা সন্ধের শাঁখ ঘন্টা ধুপ ধুনো আর ঢাকের শব্দের মধ্যে দিয়ে সেই আমার পরম শান্তির জায়গা থেকে ভেসে আসা অমোঘ আশ্বাস, যা বহুবার বহুরকম ভাবে আমাকে আগলে রেখেছে। সেই জায়গা। সেখান থেকে কিছুটা বকুনি ই খেলাম যেন, যেন মনে হলো, আবার তুই এসব ভাবতে বসলি বুঝি? মনখারাপ এর সব আয়োজন তোমার নিজের ই করা। খুব বোধয় ভালোলাগে? মনখারাপ করতে? বলেছি না সব কিছু কালের নিয়মে ছেড়ে দিতে। এইরকম ই কত কি। চারপাশে তখন ঘোর লাগানো নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু ওই সন্ধ্যারাতির একটানা অবিরাম ব্যাপ্তিহীন শব্দ আমার বুকের মধ্যে উথাল পাথাল লক্ষ দামামার শব্দকে খুব ধীরে ধীরে শান্ত করে দিলো। 

চোখের সামনে রইলো শুধু জ্বলজ্বলে ওই ত্রিনয়ন, গলায় লাল জবা আর অপরাজিতার মালা, আর চারপাশে ধুপ ধুনো কর্পূরের গন্ধ। আমাদের বোঝার বাইরে, আমাদের জানার আড়ালে প্রতিনিয়ত আমাদের নিয়তিকে যে অসীম শক্তি পরিচালনা করে চলেছে, সেই শক্তির অনুভূতি আমাকে যেন কি নিশ্চিন্তের এক জায়গা দিয়ে গেল। তাকে বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। তাকে শুধু বোধহয় অনুভূত করা যায়। আপনা হতেই সেই শক্তির কাছে হাত জড়ো হয়ে যায়, মাথা নত হয়ে যায়, ভালোবাসা আর আর ভক্তি কখন যেন এক হয়ে সমস্ত ভয় ভাবনা কে চোখের জলের সাথেই ভাসিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস এ পরিপূর্ণ করে দিয়ে যায়। সীমাহীন কে সীমার মধ্যে, আমাদের একান্ত আপনার করে ধরে রাখার কি অমোঘ সৌন্দর্য্য, কি অসীম পরিতৃপ্তি, কি অপার শান্তি, কি অসীম ব্যাপ্তি। 

Wednesday, 2 January 2019

সন্ধ্যের আজান

সন্ধ্যের আজান এর শব্দ ভেসে এলো দূর থেকে। রোজ ই এই সময় সন্ধের আজান হয়, তার ও আরো একটু পরে নামে সন্ধ্যে। আর তখন আমার তুলসী তলাতে জ্বলে ওঠে প্রদীপ। সেই ছোটো বেলা থেকে এক ই ভাবে, এক ই নিয়মে এই এতগুলো বছর ধরে হয়ে আসা সেই এক ই অভ্যেস। কি যেন এক ঘোর আছে ওই শব্দে, কি যেন একটা মনখারাপ করা উদাস সুর, দিনের শেষ সূচনা করে। 
ছোট বেলাতে এই শব্দ শুনে ছাদ থেকে নামতাম। এইটা ছিল আমার ছাদে থাকার মাপকাঠি। এর পরে আর ছাদে থাকা যেতোনা, বাইরে তো নয়। তারপর বড় হলাম, এই শব্দ কে ভাগ করে নেবার সঙ্গী পেলাম। পাঁশকুড়ার ওই শান্ত সবুজ জলা, জমির মধ্যে দিয়ে শীতের ধোঁয়া ধোঁয়া সন্ধের মধ্যে দিয়ে, আজানের শব্দের মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যে নামতো। আর দুজন, সদ্য ভালোবাসা কে ঠিক করে বুঝে উঠে না উঠতে পারা ছেলেমেয়ে ওই অবাক সুন্দরের মধ্যে দিয়ে সেই ভেজা নরম হয়ে আসা শান্ত সন্ধ্যে নামাকে আবাহন করে নিত। মনের ভেতরে কত ঢেউ , সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। মনের মধ্যে শুধু একটাই চিন্তা তখন, আচ্ছা থাকতে পারবো তো একসাথে? গাড়ি নয়, বাড়ি নয়, বড় বড় দেশ বিদেশের লক্ষ্য স্বপ্ন নয়, দামি রেস্টুরেন্ট এ খাওয়া নয়, এই পৃথিবীর কোথায় কে কত বড় বড় বিজ্ঞান করছে, কে কতটা সাফল্য পেয়েছে জীবনে, কার সাথে মেশা উচিত আর কার সাথে মেশা উচিত নয়, এসব কথা দুঃস্বপ্নেও আসতোনা। জীবন তখন শুধু যেন এক টাই লক্ষ্যে, একটাই ছন্দে ছন্দিত হয়ে চলতো।  ভালোবাসা, ভয়, অনিশ্চয়তা মেশানো ভবিষ্যতের স্বপ্ন। একটাই। একসাথে থাকার। আর ওই ধোঁয়া ধোঁয়া সন্ধ্যে নামার শব্দ কে কান পেতে শোনার। 😊

আজকের সন্ধের আজান এর শব্দ হটাৎ সেই কত্তদিন আগের সেই মেঠো রাস্তা, আর আমার প্রথম কাশফুল দেখতে পাওয়ার স্মৃতিকে উস্কে দিয়ে গেল। 

চড়াই উৎরাই ভরা কেমন আমাদের জীবন। প্রতিদিন কত নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম, নতুন শিক্ষা, নতুন প্রাপ্তি, সুখের প্রাপ্তি, দুঃখের প্রাপ্তি সে যাই হোক প্রাপ্তি তো বটেই। কত বোধ, কত ব্যাপ্তি, কত নতুন নতুন অভ্যেস, কত অভ্যেস আমরা সেই ছোট থেকে বয়ে বেড়াই আবার কত অভ্যেস কয়েকদিনের মধ্যেই কেমন যেন মিশে যায় আমাদের সাথে। নিজের অজান্তেই কখন তা আমাদের বিশ্বাসের জায়গাটা দখল করে বসে। যত সমস্যাও তো ছাই মন কে নিয়েই। মনখারাপ হলে মনে হয় দৌড়ে যাই, আমার জায়গা, উজাড় করে কাঁদি ই না হয়। মনভালো হলে ও তাই মনে হয়। দৌড়ে যাই। 
দিনশেষের আজান এর ওই উদাস শব্দ যেন হটাৎ আমায় এক ডাক দিয়ে গেল, নারে মেয়ে, তোর নিজের পাওনা সেটা তুই ই বুঝিস। তার ভাগ সবাই পেতে পারে নাকি? সে যে তোর ই শুধু , একার। 

শীত এর সন্ধ্যে। কেমন ঝুপ করে অনেকটা অন্ধকার হয়ে যায়। আজ কতগুলো বছর হয়ে গেছে , সেই মানুষটাকে দেখিনি, সামনে থেকে। সেই যে একজন যার মান্তুর এতটুকু মনখারাপ ও তার অগোচর থাকতোনা, সামনে এসে মাথায় হাত দিয়ে বলত মনখারাপ করতে নেই। ওই একটা কথাই যথেষ্ট ছিল একরাশ অভিমান কে শান্ত করে দেবার জন্যে। সেই মানুষটা জানতো, তার মেয়ের হটাৎ আসা মনখারাপ আবার হটাৎ সরে যেতে খুব কষ্ট করতে হয়না। আর সেই মনখারাপের ও সবসময় যে অনেক বিশেষ কারণ থাকে তাও নয়। মেনি বেড়ালটাকে অনেক্ষন না দেখতে পাওয়া বা যে ফুল টা ফুটতই তার হটাৎ ঝরে যাওয়া বা প্রিয় ফুলটাকে গাছ থেকে কারোর তুলে নেওয়াই যথেষ্ট কারণ হতে পারে, সেই মনখারাপের জন্যে। মা বলতো আহ্লাদী, এতো আদর দিওনা, পরে কষ্ট পাবে। আর বাবা বলতো কষ্ট পেলে ওর কাছে চাবিকাঠি আছে নিজেকে সামলে নেবার। মা বলতো, কষ্ট পেলেতো কাউকে মুখ ফুটে বলতেও পারেনা কোনোদিন, এক তাকে যে আদর দিয়ে বন্দর করছে সেই বাবা ছাড়া। আর বাবা বলতো, যদি কোনোদিন কাউকে ও নিজে থেকে নিজের মনখারাপের কথা বলে, জানবে সে ধন্য। মা রাগ করতো। 
কতদিন আগেকার সেই সব কথা। সব বাবারাই হয়তো তাদের মেয়েদের এইভাবে বড় করে। সব বাবারাই হয়তো মনে করে তার মেয়েই সবথেকে সেরা। তবে জানিনা সব বাবারাই কি তাদের মেয়েদের মধ্যে মনখারাপ সামলে নিয়ে আবার হাসিমুখে বাঁচার ক্ষমতা দিতে পারে কিনা। ওই মানুষটা পেরেছে। 

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...