ছোট থেকেই আমি ,ইশ আমার বেশ একটা ভাই থাকতো। বেশ কেমন দিদি দিদি বলে সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতো। রাখী বা ভাইফোঁটার দিন গুলোতে আমার পিসতুতো মাসতুতো দাদা দিদির বন্ধুরা এদের সবাইকে নিয়ে অবশ্য খুব ভালোই কাটতো। স্নান করে, একটু বড় হতেই আবার পাকামি করে কেঁদে কেটে শাড়ি পড়তাম, প্রদীপ জ্বালিয়ে শাঁখ বাজিয়ে ঘটা করে হতো ভাইফোঁটা বা রাখিপূর্ণিমা পালন। বাইরে থাকাকালীন ও ভাই দাদা ঠিক ই কারোর না কারোর হাতে রাখি পড়িয়ে বা ফোঁটা দিয়ে তবে জল খাই, আর পোস্ট এ এখনো রাখি গিয়ে পৌঁছয় কাঙ্খিত জায়গায়, তবু যেন কি যেন একটা থাকেনা, কি যেন একটা নেই। পাঁশকুড়াতে থাকাকালীন একদল বাচ্ছা ছেলেমেয়ে আসতো , ওদের হাতে রাখি পড়াতাম আর ওরা খুশিমনে যেত।
আজকে একটা অন্যরকমের খুশির সাক্ষী হলাম। সকালে কাজের দিদি আসবেনা বলে গেছিলো, কালকে যখন পা ঘষছিলো, মনে হলো কিছু বোধয় দরকার। বললাম কিগো দিদি, বললো না কিছুনা, বুঝলাম, বলতে ইতস্তত করছে। দুজনে আমরা থাকি, তার মধ্যে এই দিদি কখন যেন নিজেদের ফ্যামিলি মেম্বার ই হয়ে গেছে। হাতে কিছু টাকা দিলাম, বললাম ছেলে মেয়েকে মিষ্টি কিনে দিও। খুব খুশি হয়ে গেলো। ওর খুশি দেখে হটাৎ যেন কেমন ঘোর লেগে গেল, মনে হলো এই টুকুতেই এত খুশি, কিছুই যে করতে পারিনা, তাতেই। মনে পরে গেল, আমাদের ছোটবেলার আরতি পিসির কথা। যে স্কুল এ যাবার সময় আমাকে ভাত খাইয়ে দিতো জোর করে। আমি কিছুতেই খেতে চাইতামনা, তারপরে আবার তাকেই খাইয়ে দিতাম আমার থালা থেকে, আমার বাবাকে সেই পিসি ফোঁটা দিতো। নিজের যতটুকু সামর্থ তাই দিয়ে বাবাকে লুঙ্গি গেঞ্জিও দিতো মনে আছো। হটাৎ আমার কি মনে হলো, আরো কিছু টাকা আমাদের এই দিদির হাতে দিয়ে বললাম কালকে রাখী তো? এই নাও তোমার ভাইয়া তোমার জন্যে রেখে গেছে। ও অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে চাইলো, আরে ভাইয়া তো বলো, ভাই হয়না তোমার? রাখীতে তোমাকে সে কিছু না দেয় কেমন করে ? ওর চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পড়তে থাকলো। হাত দুটো আধা নমস্কারের ভঙ্গিতে তুলে কোনোরকমে বললো "ইতনা ইজ্জত মুঝে আজতক কিসিনে নেহি দিয়া, মেরি আপনি ভাই ভি নেহি ", ইজ্জত, দিতে পেরেছি তবে? আমার চোখ ও শুষ্ক থাকলোনা।
No comments:
Post a Comment