Monday, 13 September 2021

বেশ অনেকগুলো দিন পরে, আবার এই সময় টাতে আমার অকাজের জায়গা বা আমার খুব নিজের জায়গাটা খুলে বসলাম। আগে, ২০১৮ এর অনেকটা সময় বিশেষ করে, ওই যে মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন ...এই সময় ১০টা নাগাদ রাতের খাওয়া শেষ করে, দিনের কাজ গুলো গুছিয়ে রেখে, সেদিনের মতো সব কাজ শেষ করে এসে বসতাম আমার এই মোহনার ধারে, সারাদিনের রোজনামচা লিখে রেখে তবে শুতে যেতাম। আর চোখ থাকতো স্ক্রিন এর ওপরে, ডানদিকে গুগল+ এর নোটিফিকেশন এর ওপরে, ওই যে লাল হয়ে যেটাতে লেখা থাকতো, সেইদিনের কোনো বিশেষ বার্তা এলো কি এলো না, এইভাবেই আমার কাজের সময়ের কিছুটা চুরি করে আমি সযত্নে দিয়ে রাখতাম এই মোহনার ধারে বসার জন্যে। আর মনের মধ্যে থাকতো এক অনন্য অস্ফুট অপেক্ষা। এই মোহনার ধারের অদ্ভুত ওই নোনা হাওয়ায় যেন আমায় সত্যি এক স্বপ্নরাজ্যে নিয়ে যেত। 

কাটলো একটা বছর। সময়ের আড়ালে আবডালে, আদোরে আবদারে, বাস্তব আর স্বপ্নের মেল্ বন্ধনে অনস্বীকার্য পরিবর্তনের আলতো ছোঁয়ায় পুরোনো কিছু সময় বারবার উঁকি দিয়ে যেতে থাকলো। এ এক মহা মুশকিল আমার, স্মৃতিশক্তি টা বাবার আনুকূল্যে ছোটথেকে একটু বেশিমাত্রায় প্রখর। কোনোকিছুই ভুলিনা ছাই। তার ওপর আবার আছে commitment আর consistency এর জ্বালা। একবার কোনো অভ্যাসে পেয়ে বসলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে রীতিমতো নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। করছিলাম ও এই কয়দিন ধরে। সমাধান পেলাম ওই যে সেই একটাই জায়গায়। লাল শাড়ি তে গাঢ় ঘন হয়ে আসা সন্ধের শাঁখ ঘন্টা ধুপ ধুনো আর ঢাকের শব্দের মধ্যে দিয়ে সেই আমার পরম শান্তির জায়গা থেকে ভেসে আসা অমোঘ আশ্বাস, যা বহুবার বহুরকম ভাবে আমাকে আগলে রেখেছে। সেই জায়গা। সেখান থেকে কিছুটা বকুনি ই খেলাম যেন, যেন মনে হলো, আবার তুই এসব ভাবতে বসলি বুঝি? মনখারাপ এর সব আয়োজন তোমার নিজের ই করা। খুব বোধয় ভালোলাগে? মনখারাপ করতে? বলেছি না সব কিছু কালের নিয়মে ছেড়ে দিতে। এইরকম ই কত কি। চারপাশে তখন ঘোর লাগানো নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু ওই সন্ধ্যারাতির একটানা অবিরাম ব্যাপ্তিহীন শব্দ আমার বুকের মধ্যে উথাল পাথাল লক্ষ দামামার শব্দকে খুব ধীরে ধীরে শান্ত করে দিলো। 

চোখের সামনে রইলো শুধু জ্বলজ্বলে ওই ত্রিনয়ন, গলায় লাল জবা আর অপরাজিতার মালা, আর চারপাশে ধুপ ধুনো কর্পূরের গন্ধ। আমাদের বোঝার বাইরে, আমাদের জানার আড়ালে প্রতিনিয়ত আমাদের নিয়তিকে যে অসীম শক্তি পরিচালনা করে চলেছে, সেই শক্তির অনুভূতি আমাকে যেন কি নিশ্চিন্তের এক জায়গা দিয়ে গেল। তাকে বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। তাকে শুধু বোধহয় অনুভূত করা যায়। আপনা হতেই সেই শক্তির কাছে হাত জড়ো হয়ে যায়, মাথা নত হয়ে যায়, ভালোবাসা আর আর ভক্তি কখন যেন এক হয়ে সমস্ত ভয় ভাবনা কে চোখের জলের সাথেই ভাসিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস এ পরিপূর্ণ করে দিয়ে যায়। সীমাহীন কে সীমার মধ্যে, আমাদের একান্ত আপনার করে ধরে রাখার কি অমোঘ সৌন্দর্য্য, কি অসীম পরিতৃপ্তি, কি অপার শান্তি, কি অসীম ব্যাপ্তি। পথ চলে পথিক, সুধাই তোমায়, বলো তুমি কিবা চাও, যা চেয়ে তবে মুখপানে চাই, কেন কিছু নাহি পাই/ ওপর থেকে হেসে কয় সেই শান্তিদায়িনী মূর্তি, পথ চলে চল, স্থির রাখ নিজ কর্মে সকল শক্তি/ চোখের জলেতে অধর কাঁপে, তাকাই অবোধ চোখে, করো শান্ত রাখো ধরে তোমার সকল সত্য/ সুন্দর করে প্রকাশিত হোক, তব সুন্দর কান্তি/বলো বারবার আছো তুমি, আছি আমি, আছে সুন্দর শান্তি। 

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...