বাইরে ঝলমলে রোদ্দুর ভরা একটা দিন , ভীষণ নীল আকাশ। আমার বাড়ির সামনের ম্যাপল গাছের পাতা প্রায় সব ই ঝরে পড়ে গেছে। দুদিনের জন্যে এত সৌন্দর্য্য নিয়ে এসেছিলো। দুহাত ভোরে উজাড় করে দিয়ে কেমন নিঃস্ব হয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে। আচ্ছা দিতে দিতে এভাবেই কি সবাই নিঃস্ব হয়ে যায়? কেউ তাকে জিজ্ঞাসা করেনা ? তার ও কিছু চাওয়ার আছে কিনা? পাওয়ার আছে কিনা? এ পৃথিবীতে এটাই যেন কি অদ্ভুত এক বৃত্তের মতন চলে মাঝেমাঝে ভাবি। ধরো আমি কাউকে দুহাত ভরে দিচ্ছি, কিন্তু যার জন্যে আমার দিন আমার রাত অপেক্ষা করে আছে, ধরো সে আমায় নয়, অন্য কারোর দিন রাত সাজিয়ে দিতে তার সমস্ত কিছু উজাড় করে দিচ্ছে, আবার যাকে সে সব উজাড় করে দিচ্ছে সে তাতে সন্তুষ্ট হচ্ছেনা, সে আরো অন্য কিছুর জন্যে আশা করে অন্য কোথাও চলেছে, এভাবে কখনোই কি এই এই বৃত্ত সম্পূর্ণ হবেনা? হতে পারেনা এমন আমি তোমাকে সব উজাড় করে দিলাম আর তুমিও আমাতেই। কিজানি। জ্বর আসছে মনে হচ্ছে আবার। মাথার মধ্যে হাজারো চিন্তা আর অদ্ভুত একটা কষ্ট। কাজের চাপ। বন্ধ প্রজেক্ট। চারিদিক থেকে ব্যর্থতা,....অনেক। একটা কঠিন সময় অনেক কে চিনিয়ে দেয়। পরিস্থিতি। ঠিক তখন ওই নিঃস্ব ম্যাপল গাছটার মতন মনে হয় নিজেকে। নিচে অজস্র পাতা পরে আছে। কান্না পাচ্ছে। কেন আমরা কান্না কে চাপা দি। আটকাই। কান্না তো সব ধুয়ে দেয়। এখনো কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে , চোখে জল আসে মানেতো এখনো আমার মধ্যে নদীর মতন টলটল এ ভালোবাসা আছে। তা শুকিয়ে যায়নি, সেই দিন এখনো আসেনি, যখন কোনোকিছুতেই কিছু হবেনা আর। চোখে জল আসবেনা, অভিমান থাকবেনা, অপেক্ষা থাকবেনা। ইচ্ছে থাকবনা , আকাঙ্খাও থাকবেনা।
Monday, 24 November 2025
Sunday, 5 October 2025
পুজোর উপহার
দেখতে দেখতে পুজোর চারটে দিন কেটে গেলো।পুজোর এই চারটে দিন কেন প্রায় আগে পিছে করে মাসখানেক বেশ বিপজ্জনক। হিংসুটে আমি মাঝেমাঝেই কাজ ফেলে facebook খুলে দেখি চারিদিকের আলো ঝলমলে ছবি—নতুন শাড়ি, নতুন জামা, ঠাকুরের সামনে ভিড়, মুখে হাসি, হাতে কচুরি, টেবিল এ কষা মাংস।
আমি আবার বরাবর ই শাড়ীর পিয়াসী। শাড়ী দেখেই আমারও শাড়ী প্রেমী মন উৎসাহিত হয়ে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা শাড়ীর বাক্স খুলে ঘাঁটতে শুরু করে। তারপর , এখানে অতীব খারাপ শাড়ী পাওয়া যায় জেনেও স্ক্রল করে করে শাড়ী পছন্দ করে কার্ট ভর্তি করা এবং তারপরে এক এক করে সব ই অপছন্দের তালিকায় ফেলে দিয়ে শেষে বেশ সুদৃশ্য blouse কিনে ফেলা এসব চলতেই থাকে। এমন সময় পুজো এসে যায়। পৃথিবীর এই প্রান্তে পুজো হৈ হৈ করে আসেনা, আসে বেশ নিঃশব্দে, পায়ে পায়ে। তবু তো সে আসে। এই আসা নিয়ে কতদিনের কত জল্পনা। এবারে আবার নতুন এক সদস্য—তাকে মা দুর্গার সঙ্গে আলাপ করাতে হবে। তার পুজোর সাজ রেডি তাই সবথেকে আগে।
এখন যেকোনো পুজো বা অনুষ্ঠান মানেই এই ছোট্ট মানুষগুলোর মহা দুর্ভোগ। বাড়ির বড়রা এদের সাজাতে সাজাতে একেবারে নাজেহাল করে ফেলে। রথে জগন্নাথ, জন্মাষ্টমীতে গোপাল, গণেশ পুজোয় গণেশ, লক্ষ্মী পুজোয় লক্ষ্মী, সরস্বতী পুজোয় সরস্বতী—ছোটবেলা থেকে এসব সাজের বোঝা টানতে টানতে আমার তো ভয় হয়, এরা বড় হয়ে পুজোর নাম শুনলেই শত হস্ত দূরে পালাবে না তো!
আমাদের কাছে যা আনন্দের পুতুলখেলা, ওদের কাছে সেটা মাঝে মাঝে একেবারে বিপর্যয়। তবে অবশ্য সব সময় এমনটা হয় না। ছোট থেকে নিজেকে মডেল ভাবে দেখতে দেখতে অনেকেই পরে সহজেই নিজেদের খুঁজে পায় আধুনিকতার রিলে।তখন বাবু ফোন নিওনা বললে আর বাবু শোনেনা তা!
সে যাই হোক, আমার ছোট্ট মানুষটাকে নিয়ে এমন টানাটানি না করলেও আমি কিন্তু এবারে একেবারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, বহুদিন পরে ফেইসবুক এ যখন উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছি ই আর বেশ হিংসুটে হিংসুটে মন নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফেলে বলছি যে কবে পুজোর সময় বাড়িতে থাকবো, আর একসঙ্গে শাড়ী গয়না পরে তোরে একদম ভীষণ রকমের বাড়াবাড়ি করবো। এমন সময়ে বাধ সাধলো দুটো জিনিস। এক ফ্লু ভ্যাকসিন এর ভয়েও পালিয়ে না যাওয়া ফ্লু আর দুই পৃথিবীর এই সবচাইতে হ্যাপেনিং জায়গায় থাকার ফলশ্রুতি। এই ফাঁকে বলে দি, US এর পূর্ব উপকূল এর নিউ ইয়র্ক ও পশ্চিম উপকূলের ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়া US এর বাকি সমস্ত জায়গা, সমগ্র কানাডা এসব কিছুটা কলকাতার সামনে মফস্বল ও গ্রাম গঞ্জের মতন। আর সে জায়গা যদি হয় নিউ ইয়র্ক এর অন্যতম শহর ম্যানহাটান তো কথাই নেই। এই পুজোর সময়ে অন্যান্য জায়গায় উইকেন্ড এ বাঙালিরা এক সঙ্গে জোট বেঁধে আমাদের ওখানকার পাড়ার মতন ই পুজো করলেও , এই শহর এ বাঙালি ও যেমন বেশি, পুজো ও তেমন , অজস্র পুজোর সবাই ই মোটামুটি ভারত বর্ষের আসল সময় সুচির সঙ্গে তাল মিলিয়েই হয়, সেখানেই মানুষ কাজের পরে দৌড়ে যায়, ঠাকুরের কাছে দু দণ্ড দাঁড়িয়ে আবার পরের দিনের কাজের প্রস্তুতি। নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পূজো, লোপামুদ্রা থেকে রূপঙ্কর ,ভোগ খাওয়া,—সবই হয় এখানে, কিন্তু সেগুলো মিশে যায় রোজকার কাজকর্মের ভিড়ে। তাতে অ্যালবাম ভরলেও মন ভরেনা। মন পরে থাকে আমার চিরকালীন সাবেকি চন্ডী মণ্ডপে। যেখানে উমা সপরিবারে বাপের বাড়ি আসে, আবার ফিরে যাবার সময় ঠিক ঘরের মেয়ের মতন ই মা তাঁর মুখে আদর করে অশ্রু সজল চোখে কানেকানে বলেন, আবার আসিস মা। সেইখানে। তবুও পূজো তো পূজোই। সারাবছরের অপেক্ষা যেটুকু সময়ের জন্যে, তাকে যেভাবেই পাওয়া যাক না কেন সেটুকুকেই আষ্টেপৃষ্ঠে নেবার জন্যে প্রস্তুতি চলছিল মন জুড়ে।
মাঝপথে বাধ সাধলো মা-ছেলের অসুস্থতা। ঘরে শুয়ে থাকলে এখানে না শোনা যায় ঢাকের আওয়াজ, না শোনা যায় মাইকে মন্ত্রোচ্চারণ। অথচ আশ্বিনের আকাশ আর পেঁজা তুলো মেঘ - মুখর —আজ পূজো। মনেই ভেসে উঠল ঢাকের তালে তালে ধুনোর গন্ধ, মন্ত্রের সুর আর ঘামতেলে ঝলমলে ঠাকুরের মুখ।কিন্তু তখনো জানতামনা ওপরে বসে বসে অলক্ষ্যে কেউ মুচকি হাসছে , আর এক বড় উপহার অপেক্ষা করে আছে আমার সমস্ত আক্ষেপ মুছে দেবার জন্যে। সে উপহার পেলাম এই ছোট্ট মানুষটার নিষ্পাপ দৃষ্টিতে, যখন সে চুপ করে বসে মা দুগ্গার দুষ্টু লোক কে শাস্তি দেবার গল্প শুনলো। শাস্তি, দুষ্টু মানুষ—এই বড় বড় কথাগুলো যে এত সরলভাবে বোঝানো যায়, তা ওকে বলতে গিয়েই শিখলাম।এই ছোট্ট দেড় বছরের মানুষটা
কতটা কি বুঝলো কে জানে, নিজে থেকে বই টেনে নিলো, অনেক্ষন ধরে ছবি দেখলো পাতা উল্টে উল্টে আর তারপরে নমঃ করলো। কানায় কানায় ভরে উঠলো আমার মন।যেকোনো গল্প শোনানো শুরু হয় বোধহয় এমন করেই ।মণ্ডপে গিয়ে দাঁড় করাতে পারিনি , ছবি তুলতে পারিনি বলে যে দুঃখ ছিল তা কখন উধাও হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। মনে মনে বললাম, ঠাকুর , আজ যা শুরু হলো তা যেন ধরে রাখতে পারি, ওর ওই নিষ্পাপ চোখ দুটোতে আমি যেন আসল পুজোকে চেনাকে পারি। যেন বোঝাতে পারি, রীল আর ক্যামেরার ঝলকানি তে পুজো হয়না, পুজো হয় শিউলি গন্ধে , নীল আকাশের ওই সাদা মেঘের ভেলায়, আশ্বিনের মিঠে রোদে , আনন্দমেলার কাড়াকাড়িতে আর অনেক অনেক গল্পের মধ্যে। আমরা যেন গল্প তৈরি করতে পারি।
Monday, 11 August 2025
তুমি আমার কে
তুমি বললে কেন ভাবো আমায়,
কে আমি তোমার
আমি বললাম তুমি। .. না কেউ তো নয়
কেউ তো নয়
তবু এই যে যখন শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি ভিজে হাওয়া গায়ে এসে লাগে,
নরম চাদরের মতন জড়িয়ে নি তোমার ভাবনার ওম
অসহ্য গরমের হল্কার পরে আসা সন্ধ্যের মন জুড়োনো হাওয়ায়
হটাৎ উড়ে আসো তুমি
শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোতে হটাৎ মনে হয় আচ্ছা
এমন চাঁদের আলোয় বিভোর হয়ে তাকিয়েছ কখনো কারোর ঘুমন্ত মুখে ,
সঙ্গে সঙ্গে এসে ভিড় করে অনেক ভাবনা, অনেক ইচ্ছে।..
জানি , এ সব এর সঙ্গেই ইচ্ছে , মনে হওয়া ,কল্পনা এই সব শব্দরা জুড়ে
না ছুঁতে পারা দূরত্বের অনতিক্রান্ত ভার শুধু মন খারাপের পাহাড় জমায়
আর দূরে আরো দূরে নিয়ে চলে যেতে থাকে তোমাকে আমার থেকে আমাকে তোমার থেকে
তবু আমি স্বপ্ন দেখি,
সেই কোনো একদিন এর অপেক্ষায় যখন কোপাই পাড়ে দুজন মানুষ পাশাপাশি বসে
তাদের জীবনের ইচ্ছেখাতার পাতা ওল্টাবে।
সময়ের চোখ রাঙানি থাকবেনা, থাকবেনা তার ডিফারেন্স
ভাবছো, স্বপ্নই আবার
নাহয় তাই বা হলো
জ্ঞানীরা বলে কোনো স্বপ্ন সত্যি এর নেশায় মানুষ নাকি নিজের বেস্ট তা দিয়ে বাঁচে
আমিও নাহয় তাই হলাম।
তাইতো এত প্রশ্ন থাকে মনে, স্বপ্ন গুলো এক এ জানার চেষ্টায় নিজের মনখারাপের বোঝা বাড়ানো আরো।
কি করবো, আমরা যে কেউ এ কারোর হইনা , তবু যে কখন জুড়ে যাই একে অন্যের সাথে,
এই এত গুলো বসন্তের রঙে , বৃষ্টিভেজা হাওয়ায়, এমনকি কাজের দুপুরের প্যাচপ্যাচে গরমেও মনে পরে যায়
আর অশ্বিনের ভোরের ঠান্ডা হাওয়ায় নরম ওমের মতন তাকে জড়িয়ে নিয়ে শুরু হয় দিনের কর্মকাণ্ডে,
এভাবেই শিউলি গন্ধে, জুঁই এর নরম পাপড়িতে, গোধূলি রঙে , চাঁদের আলোয়, কারোর মুখের হাসিতে, চোখের তারায় সব জায়গায় মিশে গেছো কিভাবে, কখন, কেউ কারোর না হয়েও
জানিনা।
Friday, 28 February 2025
ইচ্ছেনদী
বাইরে ঝলমলে রোদ্দুর ভরা একটা দিন , ভীষণ নীল আকাশ। আমার বাড়ির সামনের ম্যাপল গাছের পাতা প্রায় সব ই ঝরে পড়ে গেছে। দুদিনের জন্যে এত সৌন্দর্য্য ন...
-
কিছুদিন ধরে পুরোনো বেশ কিছু ছবি বারবার আমাকে পৌঁছে দিচ্ছিলো আমার ছোটবেলার দিনগুলোতে। আবৃতি, আঁকা, রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী , আর এই সব ভাবতে ভ...
-
আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...
-
আমি বোকা, আমি গর্দভ আর সত্যি ই তো চিরকাল ই বোকারা ভালবাসে, আঘাত পায়। সহজ কথা সহজ ভাবে চলা যদি ভুল হয় তো ভুল, কিন্তু তার কারণে আমি বাঁকা পথে...