Friday, 2 January 2015

আমার নববর্ষ পালন

আগ্রা যাবার পুরো বিবরণ একটু পরে দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে আমার কিছু সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা খুব লিখতে ইচ্ছে করছে। 
                        গত কাল থেকে শুরু হয়ে গ্যাছে ২০১৫ সাল লেখা, প্রতিবার এর মতই এবার ও আমার ২০১৪ এর জন্যে একটু মন খারাপ হলো আর কি, এসব ক্যাবলামো আমার চিরকালের, আমার যারা সত্যি সত্যি বন্ধু, মানে আমার শত পাগলামো, ন্যাকামো এবং অন্যদের কাছে যেগুলো হয়ত ভীষণ বিরক্তকর, এমন ব্যবহারেও যারা আমাকে ছেড়ে যায়নি, এবং উপরোক্ত এই সব কিছুকেই হেসে আমাকে আরো আদরে বাঁদর করেছে, এমন কিছু বন্ধুর দল তাই, নতুন বছরে আর সবাইয়ের মতো নতুন বছরের শুভেচ্ছা না জানিয়ে বলে ওই যে, পুরোনো বছর গুলোর জন্যে একটু দুঃখ করে নেওয়ার সময় এসেছে তোর্। 
                      তো যাই হোক, সবাই জানি এবং জানে যে নতুন বছর আর অন্য আর সব বছর গুলোর থেকে আলাদা কিছুই নয়, তবু যে যার নিজের মতো করে এই নতুন কে স্বাগত জানায়, প্রতিটা দিন ই তো নতুন তাই না, এক লহমায় পাল্টে যেতে পারে মানুষের জীবন সেকথা তো সবার ই জানা, তবু এই স্বাগতম কে বেশ লাগে আমার। আর আমার এবং আমাদের এই বছর শুরুর দিন টা এবারে সত্যি ই এতদিনের থেকে একটু অন্যরকম গ্যাছে। 
                                 তার আগে আমার সেই আদরে মোড়া মিষ্টি ছেলেবেলা, যখন আমি সত্যি ই ছোটো ছিলাম ,বুঝতাম শুধু বাবা, মা, দিদি, টুন দিদির আদর আর বকা, এ ছাড়া দুনিয়াতে আর কিছু ছিলনা,সেই সময়ের কিছু কথা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। 
                                     সেই রকম এক সময় পয়লা বৈশাখ আর 1st Jan পালন মানেই আমি ঘুম থেকে উঠেই সকালে মাকে বলতাম , আজ কিন্তু আমাকে তোমরা একটুও বকবেনা আর বাবাকে বলতাম আজকে কিন্তু তোমাকে আমায় অনেক গল্প বলতে হবে। আর মা আমাকে বোঝাত বছরের প্রথম দিন খুব ভালো মেয়ে হয়ে থাকতে হয়, দিদির সাথে ঝগড়া করতে নেই আর সব ভাত খেয়ে নিতে হয়, আর খুব মন দিয়ে পড়াশুনো করতে হয়। 
                                      সেই সব আদর বকা খুনসুটি ভরা মিষ্টি বছর গুলোর সাথে তুলনা কোনদিন ই কিছুরই হয়না, এখন ভাবি ইশ আজ আর দিদির সাথে সেই রকম সেই ঝগড়া, মারামারি কেন হয়না? আমি আর আমার বন্ধুবর দুজনেই যথেষ্ট ভাগ্যবান যে ভাইবোনের সাথে ঝগড়ার যে মিষ্টতা সেটা আমরা পেয়েছি, আর তাই বোধহয় আমাদের সবাইকে নিয়ে থাকতে কোনো অসুবিধে হয়না। নিজেরাও যখন কথায় কথায় খুনসুটি করি, অন্য কেউ দেখলে ভাবে খুব ঝগড়া চলছে, কিন্তু এসব হচ্ছে আমাদের ছেলেবেলার বদ অভ্যেস , এই মেঘ, এই রোদ্দুর। তাই ভালো ভালো কোনো কাজের resolution না নিয়ে আমরা দুজনে গত কাল কে  ঠিক করেছি যে আমরা যেন এরকম ই ঝগড়া ঝাটি , খুনসুটি করে আজীবন থাকতে পারি। 
                                মনে আছে একবার দিদিকে আমি রেগে গিয়ে এমন কামড়ে দিয়েছিলাম যে (মানে খুব ই লজ্জা করছে বলতে , কিন্তু সত্যি কথা, কি আর করব বলেই ফেলি,) দিদি কে না ইনজেকশান নিতে হয়েছিল, কিন্তু  মাকে বা বাবাকে সেদিন আমাকে বকতে হয়নি, ওকে যখন ইনজেকশান দেওয়া হচ্ছে, আমি তখন ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। মানে অনুশোচনায় এতই কেঁদেছিলাম যে শেষ কালে সেই বলছে আমাকে যে ওরে আমার কিছু হয়নি রে তুই আর কান্দিসনা। 
                                   তো সেই সব হাসি কান্নায় ভরা দিন গুলোর পরে যখন থেকে আমাকে বাইরে যেতে হলো, তখন থেকে একটু অন্যরকম হলো সেই সব বছর গুলোর শুরুর এবং বাকি দিন গুলো পালন। মা যদিও সব সময় ই আমরা কাছে থাকলেই আমাদের প্রিয় প্রিয় খাবার দিয়ে celebrate করত সেই দিনগুলো। সে বছর শুরুর ই হোক, কি শেষের , কি মাঝের। 
                                    ২০১১ এর পরের বছর গুলো শুধুই আগের কথা ভেবে ভেবে যেত। অন্যদিনের মতো কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিলনা, গত বছর ছুটির দিনেই বছরের প্রথম দিন তা ছিল অবশ্য। 

                তো সে যাই হোক, এ বছর টা শুরু হলো একদম সপ্তাহের মাঝখানে আর সেই প্রথম দিনেই আমরা দুজনে করে ফেললাম দুঃসাহসিক কাজ , যেটা আমার কাছে অতটা দুঃসাহসিক যদিও নয়, কিন্তু আমার বন্ধুবর টির পক্ষে সত্যি ই দুঃসাহসিক। সেটা হলো, সপ্তাহের মাঝখানে , ছুটি নিলে যা হয় হয়ে যাক, সেই  সব না ভেবেই ল্যাব না যাওয়া। শুধু কি তাই সেদিন টা আমরা কাটিয়েছিলাম রাজার মতো। আগের দিন রাত প্রায় ৩টে পর্যন্ত সিনেমা দেখে, হা হা হি হি করে পরের দিন দুপুর ১২ টায় বাড়ির সবার শুভেচ্ছায় ঘুম থেকে উঠে আয়েশ করে চা খেলাম, তারপরে নবাবী চালে ১টার সময় বন্ধু শুরু করলেন আগের দিনের কিনে রাখা মাংস রান্না করতে আর আমি লাগলাম ওনার সাহায্যে। ২.৩০ টে নাগাদ রসিয়ে রসিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাদের সাধের ঘুম বাতিল করে বেড়িয়ে পরলাম মেঘলা দিনে রাস্তায় রাস্তায় টো  টো করতে। কিছু পরে আমাদের এই ভেঞ্চার এ আর ও দুজন যোগ দিল, ও তাদের পথ  নির্দেশে আমরা চললাম কম দামে সোয়েটার কিনতে। পকেট ছিল খালি, কিন্তু তবুও কিনেও ফেললাম, আর ভাবলাম  নতুন বছরে কত সব গিফট দেওয়া নেওয়া হয়, আমরা তো সে সব কিছুই করিনি, অতএব আর কি  হয়ে গেল আমাদের দুজনেরও একে অপরকে উপহার দেওয়া। তারপর নাচতে নাচতে চলে গেলাম C R Park এ, সেখান থেকে গেলাম কালীবাড়িতে, সন্ধ্যারতি শুনে বেরোতে বেরোতে দেখলাম যে খিদে পেয়ে গ্যাছে, market ২ তে গিয়ে আবার কিছু খাওয়া হলো, পুরনো বন্ধুর সাথে দেখাও  হলো আর তারপরে যে যার বাড়ি।  কিন্তু এখানেই শেষ নয়, পেটে  আমাদের সেদিন রাক্ষস নিশ্চই ঢুকেছিল, বাড়ি ফিরে অনেকখন ধরে দুটো বাড়িতে কথা বলা হলো আর তার পরে আরো একটু রাত করে শুরু হলো আমার লুচি বেলা আর ওর ভাজা , অত:পর ? খাওয়া এবং সব থেকে প্রিয় কাজ ঘুম। অতএব বছরের প্রথম দিনে সবাই যখন ভালো ভালো কাজের শপথ নিয়েছে, আমরা সেদিনটা চরম আলসেমিতে কাটিয়েছি। আর এই আলসেমির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল শীতের নরম রোদ্দুরের মত আদুরে শান্তি। যেন জীবনে কোনো ভয় নেই, কোনো চিন্তা নেই , শুধুই তো পথ চলা। তবে যে সুন্দর অভিজ্ঞতা বলব বলে লিখতে আরো বেশি করে ইচ্ছে করছিল, সেটা হয়েছে আজ সকালে, সেটা বলতেই বসেছিলাম, কিন্তু অন্য অনেক কিছু বলা হয়ে গেল, সেটা বরং আর একটু পরে বলছি। এ না হয় হলো শুধুই আমার, আমাদের হয়ে বছর শুরুর কাহিনী, যা বারান্দার রোদ্দুরে জানলার গ্রীল এর ছায়ার মতই সাধারণ কিন্তু সেরকম ই একান্ত আপনার। তাই এই পোস্ট এর নাম দিলাম আমার নববর্ষ পালন। 

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...