Monday, 29 January 2018

রোদ্দুর

সেই গত সপ্তাহ থেকে শুধু মেঘ, বৃষ্টি, ঘন কুয়াশা। আমার রোদ্দুর এর জন্যে বড্ডো মনকেমন  করছিল। 
আজ সকাল বেলাতে কুয়াশা থাকলেও দিন বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে সমস্ত কুয়াশা কেটে গিয়ে আকাশ ঝলমল করে উঠলো রোদ্দুর। জানলার বাইরের রোদ ঝলমল ঘন গাঢ় নীল আকাশ আর ওই সবুজের গালিচা অনেক্ষন থেকেই আমাকে উস্কাছিলো বাইরে বেরোনোর জন্যে। শেষে আর পারলামনা, মাথাটা যন্ত্রনা তে ফেটে যাচ্ছিলো। না তেমন কিছুই নয়, মাথা থাকলে ব্যাথা তো হবেই। seasonchange, কুয়াশা, ঠান্ডা লাগা, জ্বর জ্বর ভাব ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই আদুরে রোদ্দুরের জন্যে সে সব কিছু তুচ্ছ করাই যায়। রাস্তার দুধারের ঝরা পাতা যেন শীত কে বিদায় সম্ভাষণ জানাছিল। মনে পরে গেলো সেই ছোটবেলার পড়া "আমলকি বন্ কাঁপে যেন তার বুক করে দুরু দুরু / পেয়েছে খবর পাতা খসানোর সময় হয়েছে শুরু" যদিও রবি ঠাকুর এটা শরৎ কালের জন্যে লিখেছিলেন , কিন্তু আমি কি করব, আমার এটাই এখন খুব appropriate মনে হচ্ছে। সব কিছু কি আর সব সময় বাঁধা নিয়মে চলে। 

চারপাশে আজ ছিল অনেক রঙের সমারোহ। না বসন্তের মাতাল করে দেওয়া বাঁধাহীন উন্মত্ত রং নয় এ। এ যেন প্রকৃতির নীরব কান্নার পরে শান্ত সমাহিত হয়ে সূর্যাস্ত দেখা। সেখানে কোনো চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, প্রত্যাশা নেই। কথা নেই, বার্তালাপ নেই। শুধুই যেন যাওয়া আসার মাঝে এক স্থির, শান্ত, ধ্যানমগ্ন ভাবমূর্তি। রাস্তার দুধারে পথের পরে কেমন যেন মায়াময় হয়ে ঝরেছিলো হালকা হলুদ হয়ে আসা শুখনো পাতা। দুপাশের গাছ, কোথাও কোথাও সেখানে ম্লান হয়ে আসা সবুজ আবার কোথাও বা নতুন এর আগমন এ গর্বিত কচি পাতা। আর ওই দূরে, যেখানে বৃক্ষরাজি তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জয় করে এসেছে সব বদল, সেখানে নেই কোনো আসা যাওয়া। অনেক পরিবর্তন, আগমন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে আজ তারা স্থির, অচঞ্চল, ধ্যানমগ্ন, নিষ্পলক। কেমন এক গাঢ় গম্ভীর গায়ের রং ওদের, যা মনের মধ্যে এক সম্ভ্রম নিয়ে আসে, মনে হয় বাবার মতো, দাদুর মতো, বড়দের মতো। সবার মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে, সবাইকে রক্ষা করে চলেছে। বড় বেশি করে যাদের আমি রোজ খুঁজি। বড় বেশি করে যাদের অভাব আমি রোজ অনুভব করি। 

দিন যতই দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে পৌঁছতে শুরু করলো, নিজেকে ল্যাব এ আটকে রাখা আর সম্ভব হলোনা আমার। বিকেল ৫টার একটু পরেই বেরিয়ে এলাম। বাইরে বেরিয়েই যেন শিহরণ খেলে গেলো। কি এক অদ্ভুত , উন্মনা হাওয়া আমায় জানান দিয়ে গেলো বসন্ত আসছে। এই কয়েক বছরে এখানে দেখলাম যে বাংলার বাইরে হলেও বাংলার সমস্ত ঋতু গুলো অনেক বেশি সুস্পষ্ট ভাবে এখানে ধরা পরে। বসন্ত আসা, তার থাকা, চলে যাওয়া এই সমস্ত কিছু বড় মধুর ভাবে এখানে আমাদের জানান দেয়। এক ভীষণ অন্যরকম, গ্রীষ্মের ছোঁয়া লাগানো অথচ শিরশিরানি শীত শীত অনুভব যেন আমার সমস্ত মন টাকে একেবারে জড়িয়ে ধরে রাখলো। ঘরে ঢুকে তাড়াতাড়ি পর্দা সরিয়ে দিতেই পড়ন্ত বিকেলের একরাশ আদর আমার বিছানার ওপর উছলে উঠলো। অপূর্ব এক মাদকতা তখন সমস্ত ঘর জুড়ে। ব্যালকনির ঠিক নিচ দিয়ে উড়ে গেলো দুটো ময়ূর। ও হ্যাঁ , আজ তো আমি নীলগাই ও দেখেছি দুপুরে হাঁটার সময়। আবার দেখলাম। দূরের জঙ্গল টা দিয়ে দল বেঁধে কোথায় গেলো , ঘরে ফিরলো কি? কি জানি, তাই বোধহয় হবে। ব্যালকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই আবার সেই মনকেমন করা, বাঁধন হারা হাওয়া। দূরে সূয্যি তখন পাটে বসেছেন। ধ্যানমগ্ন পৃথিবী। সবাই যেন একদম চুপ করে, শান্ত হয়ে, স্থির হয়ে সাক্ষী হতে চলেছে পশ্চিম আকাশে ঘটে যাওয়া সেই চির পুরাতন চির নতুনের মহা কর্মযজ্ঞের। আপনা হতে হাত জড়ো হয়ে গেলো। 

                                 "ॐ असतो मा सद्गमय ।,
                                 तमसो मा ज्योतिर्गमय ।,
                                 मृत्योर्मा अमृतं गमय ।,
                               ॐ शान्तिः शान्तिः शान्तिः ॥"

      "Lead me from falsehood to truth
Lead me from darkness to light,
Lead me from death to the immortality
         ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি "

















No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...