Friday, 1 June 2018

কল্পনা

সকাল বেলাতে চেনা শব্দ খুঁজে পেতে কষ্ট হচ্ছিলো। পাচ্ছিলামনা। এখন আবার অনেক শব্দ যেন ভিড় করে আসছে। কি যে করি এই মন টাকে নিয়ে, আজ কের কোকিল ডাকা নরম ভোর এ সবুজ, ভেজা ঘাসে খালি পায়ে হাঁটাটাই কি তাহলে যত নষ্টের গোড়া। না, তাতো নয়, তাহলে আমার আনন্দ ভেজা মনটা বোধয় মেঘলা আকাশে বৃষ্টি খুঁজতে গিয়ে, খুঁজে পেলো আদোরে মোরা ছেলেবেলা। যার প্রতি পরতে পরতে আছে বাবার হাত ধরে পথ চলা। খুব ইচ্ছে করছিলো নতুন চকচকে কভার এর টিনটিন এর গন্ধ শুঁকতে। অথবা এস্টেরিক্স ওবেলিক্স এর মজার যুদ্ধ এর কাহিনীর মধ্যে বুঁদ হয়ে যেতে। আর সব থেকে বেশি করে ইচ্ছে করছিলো আমার প্রতিদিনের প্রতিমুহূর্তের তৈরি হওয়া ওই রাশি রাশি কথার সাক্ষী করতে ওই মানুষটাকে, যার হাত ধরে আমি রোজ বিকেলবেলা যেতাম পাশের মাঠে যে গরু গুলো চড়তো তাদের কচি বাঁশ পাতা খাওয়াতে, ছাগল ছানার গলায় আদর করতে বা নদী তে পাতা ভাসাতে। মনে পড়ছিলো আমাদের বাড়ির সামনের সেই ছোট্ট কালভার্ট টা, যার একদিকে পাতা ফেলে দৌড়ে উল্টোদিকে গিয়ে দেখতাম কতক্ষনে সেই পাতাটা ভেসে আসছে। পরে, বড় হয়ে যখন সময়ের অঙ্ক শিখছিলাম, তখন বাবা কতবার সেই ঘটনা মনে করিয়ে দিছিলো অঙ্ক শেখানোর সময় আর আমি প্রতিবার ই বলতাম, এখন ও চলো না যাই, আর বাবা বলতো, তোমার এখন কতো বন্ধু, বাবার সাথে আর তুমি পাতা ভাসাতে যাবে নাকি। ছদ্ম রাগ দেখাতাম বাবার ওপরে। 

আজ এখানে যখন সেই সব দিন থেকে অনেক দূরে, এই পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট জায়গাটাতে বসে বসে বড় ইচ্ছে করছিলো, বাবা বলে ডাকতে। কতদিন ডাকিনি তো, তাই। 

কাজ ছিল আজ সকাল থেকেই, কিন্তু কাজের ফাঁকে গ্যাপ ছিল অনেকটা করে। যে সময় এর ফাঁক গুলোতে না অন্য কোনো কাজে করা যাচ্ছিলো মনোসংযোগ, না যাচ্ছিলো, চুপ করে বসে থাকা। মেঘলা আকাশ আমার চেনা সকালটাকে বারবার হারিয়ে দিচ্ছিলো আমার কাছ থেকে। সূর্য্য ওঠা শান্ত সবুজ, নরম ভিজে ভিজে ভোরটাকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে মেঘলা আকাশের মনখারাপ করে নিলো অধিকার। আমার চেনা শব্দভাণ্ডারে পড়লো টান। কিন্তু প্রকাশের অস্থিরতায় হাতে থাকা মোবাইল এর ব্লগ খুলে, বিদেশী ভাষাকেই করলাম স্মরণ। তারপর বৃষ্টির খোঁজ আবার আমার মন আকাশে তুললো জল এর তৃষ্ণা। আর পাগল এ মন এই চারদেয়ালের হাজার হিসেব নিকেষ তুচ্ছ করে, linux এর সমস্ত কোড কে অগ্রাহ্য করে, ছুঁতে চাইলো বৃষ্টির জল। 'দারুন অবাধ্যতায়' পারি দিলো স্বপ্ন মাখা বারান্দাটায়, যার নিচ দিয়ে কুলকুল করে নদী যদি নাও বয়ে যায়, চারপাশটা কিন্তু সবুজে মোরা থাকতেই হবে। সামনের কাঠের গেট টাকেও কিন্তু সাজতেই হবে গাঢ় নীল অপরাজিতা আর গোলাপী লালের মাধবীলতায়। তারপর বৃষ্টি নামবে। যে বৃষ্টি বহুদিন, বহুদিন দেখিনি, সেই অঝোরধারায় বৃষ্টি, কালো মেঘের বুক চিরে তড়িতের হাতছানি, আমার দুপুর বেলাকে ভরিয়ে দেবে কানায় কানায়। মেঘের গর্জন আমার ভয় করে। কিন্তু সেদিন নাহয় কোনো নিশ্চিন্তের আশ্রয় সেই ভয় কে ভালোলাগায় করে দিক রূপান্তরিত। আর দুচোখ ভোরে আবেগ তাড়িত স্বপ্নে কানে বাজুক শুধু বৃষ্টির শব্দ। অথবা বৃষ্টিকে সামনে রেখে  আয়েশি easy চেয়ার এর হাতলে রাখা থাক এক কাপ কফি, আর হাতে থাকুক সুনীল গাঙ্গুলির 'সেই সময়' বা  নারায়ণ সান্যালের 'রূপমঞ্জরী' বা বঙ্কিমের গড় মান্দারনের মুগ্ধতা, বাতাসে ভাসুক নাহয় প্রিয় গজলের কোনো সুর অথবা সেই চেনা 'ঝরঝর মুখর বাদল দিনে ' কিংবা শব্দ যদি খুব ই বাহুল্য হয়ে যায়, তখন নাহয় একটা শুধু কোনো বাঁশির সুর বা সেতারের ঝংকার মিশে যাক বৃষ্টির শব্দের সাথে। আর নাম না জানা কোনো ফুলের গন্ধ বাতাসকে করে তুলবে আনমনা। আর তখন এ পৃথিবীর সমস্ত কালো, সব অন্ধকার ঘুচিয়ে দিয়ে, সব মালিন্য দূর করে দিয়ে শুধু অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়বে। আর তারপর যখন বৃষ্টি শেষে কনে দেখা আলো তে চারিদিক ঝলমল করবে, তখন বৃষ্টিস্নাত এই পৃথিবী পরম ভালোবাসায়, আপন মাধুরীতে,  আপনার স্মিত শান্ত মুখখানি তুলে ধরবে। 

আজ এখানে বৃষ্টি নেই, গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহ জানান দিয়ে গেল এ সব ই আমার শুধুই মনের কল্পনা। তা হোক, সত্যি আর স্বপ্ন মিলে মিশে যদি এক হয়ে যদি সহাবস্থান না করে, তবে যে আমাদের এই জীবনটা নিতান্তই শুষ্ক হিসেবের খাতা হয়ে যাবে। অনেক হিসেবের মধ্যে নাহয় রইলো আঁকা আমার  আজকের দুপুরের এই বেহিসেবি বৃষ্টি ধরার ইচ্ছে, যা আমার ছেলেবেলার পথ কে ভিজিয়ে দিয়ে, আমার বড়বেলার আমিকে আবার ফিরিয়ে দিয়ে গেল বাস্তবের মাটিতে। এতে লাভ লোকসানের কি যে কতটা কি হলো জানিনা , তবে বহুদিনের না পাওয়া চেনা সোঁদা গন্ধ এই একরাশ চাঁপার সাথে মিশেও বা গেল হয়তো। 

No comments:

তুমি আমার কে

 তুমি বললে কেন ভাবো আমায়, কে আমি তোমার  আমি বললাম তুমি। .. না কেউ তো নয়  কেউ তো নয়  তবু এই যে যখন শ্রাবণ মাসের বৃষ্টি ভিজে হাওয়া গায়ে এসে লা...