নাম হীন যেকোনো কিছুই আমাদের ভাবনায় ফেলে। নামহীন, গোত্রহীন কোনো কিছুকে কোনোদিন ই আমাদের বুদ্ধি, আমাদের বিবেচনা মেনে নেয়না। আর তাইতো যত ক্ষুদ্র ই হোকনা কেন, সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী হোক বা আগাছা হোক, তাকে ধরে বেঁধে যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো গোত্রভুক্ত করা হচ্ছে, ততক্ষন পর্যন্ত শান্ত হতে পারিনা আমরা। সে প্রাণী হোক কি উদ্ভিদ, কি হোক কোনো নামনা না জানা কোনো জায়গা, নাম তার চাই। অজানাকে জানার নেশায় আমরা ভালোবাসি অচেনা কে চেনা করে নিতে। আর তাই পরিচয় সম্পূর্ণ করার জন্যে সবার আগে করতে বসি নামকরণ। আর সেই নামকরণের নেশা, পেশা হয়ে আমাদের মতো কত অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনামী ভাবি বৈজ্ঞানিক দের বৈজ্ঞানিক হয়ে ওঠার পথে প্রথম পদক্ষেপ সাফল্যের সঙ্গে রাখতে সাহায্য করে। আমরা খুঁজতে বসি, নতুন কে, নতুন জায়গা, যেখানে কেউ যায়নি, নতুন বিষ্ময়, যাকে কেউ জানেনি, তাকে জানতে চাই, আনতে চাই চেনার জগৎে। নতুন প্রাণী, নতুন উদ্ভিদ, নতুন রোগ, নতুন জিন..সমস্ত নতুনকে চেনার সারিতে এনে আমরা ফেলি স্বস্তির নিশ্বাস।
আমাদের চারপাশের পার্থিব জগৎ যখন এই নিয়মে চলে, তখন আমরা নিজেরাও এর ব্যতিক্রমী হইনা। অচেনা মানুষটিকে চেনা করে নিতে, সবার প্রথমে চলে পরিচয়। শিশুর সঙ্গে এই অবাক পৃথিবীর পরিচয় হয় সব থেকে কাছের ওই দুজন মানুষের হাত ধরে। শুধু ওই মানুষ দুজনের সাথেই বোধহয় আলাদা করে কোনো পরিচয় এর প্রয়োজন পড়েনা, বাকি আর সবার সাথেই বোধয় দরকার হয় আনুষ্ঠানিক পরিচয় এর। সেই ছোট্ট শিশু বড় হয়, আপন বৃত্ত, আপন গন্ডী ছাড়িয়ে পা বাড়ায় আরো বড় জগতে। বৃত্ত বৃহত্তর হতে থাকে। প্রতিনিয়ত কত নতুন মুখ, নতুন ভিড়। নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন পরিচয় এর সারি। কখনো সে পরিচয় শুধুই চলার পথের ক্ষণিকের সাক্ষী হয়ে থেকে যায়, আবার কখনো তা পরিচিত করে নেয় তার খুব কাছের কারোর সাথে। আর যতবার সেই পরিচয় এর কথা আসে, জানিনা কেন, শুধু মনে পরে যায়, শিলং পাহাড়ের ওপর, চলতি পথের বাঁকে কবির কল্পনায় গড়ে ওঠা সেই এক পরিচয় এর কথা, যাকে কল্পনা বলতে মন চায়না। যুগ যুগ ধরে, আমরা সবাই যেন কোথাও না কোথাও উন্মুখ হয়ে থাকি ওইভাবে পরিচিত হতে। স্বপ্ন যেখানে বাস্তবের রুক্ষতায় আহত না হয়ে ওই শিলং পাহাড়ের মেঘের মতোই হালকা নরম পেঁজা তুলোর মতো স্থির থাকে। যে "মেঘ হাত দিয়ে যেন ছোঁয়া যায়". আর সেই পরিচয় পর্বের মতোই কত সময় আমরা পরিচিত করে নি, একে, অন্যকে, ভালোবেসে নিজের নামে নিজের মতো করে নতুন নামকরণে কাছের করে নি। ভাগ করে নি মুহূর্ত। তৈরি হয় অসংখ্য মুহূর্তরা। তারপর হয়তো, একদিন পথ আলাদা করে দেয়, থেকে যায় ওই নাম, সন্তর্পনে সংগোপনে মনের মনিকোঠায় অসংখ্য মুহূর্তদের সাথে। কখনো সযতনে , কখনো বা অযতনে , অনাদরে। কিন্তু থেকে যায়।
আর এই নামকরণের সাথে সাথেই অঙ্গাঙ্গি ভাবে এসে যায়, সম্পর্ক। চেনা গন্ডির, চেনা সম্পর্কের বাইরে অন্য আর কিছু সম্পর্ক এর কথা ভাবলেই, মনের মধ্যে শুরু হয় ভীষণ এক অস্বস্তি। ভাই, বোন, মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এর মধ্যে ছোঁয়া আছে এক নিশ্চিন্তততার। চেনা গন্ডি, চেনা নাম। চেনা সম্পর্ক। কিন্তু এর বাইরেও আমাদের নিজেদের বৃত্ত হতে থাকে বড় , পরিচিত হতে থাকি কত কারোর সাথে, কেউ কেউ তাদের মধ্যে, আমরা চাই বা না চাই, এসে পরে আমাদের একান্ত নিজের সেই ছোট্ট বৃত্তের ভেতরে, যে বৃত্তে আমরা সহজে কাউকে ঢুকতে দিনা, কিন্তু যে বৃত্তের মধ্যে একবার ঢুকে গেলে, তাকে সমস্ত স্বত্বা দিয়ে আগলে রাখতে চাই। সেইরকম কিছু মানুষ হটাৎ কখনো কখনো অযাচিত হয়তো অবাঞ্চিত ভাবে আমাদের জীবনে পৌঁছে যায় আর তারপর ভীষণ ভাবে সত্যি হয়ে ওঠে তার উপস্থিতি। বাঞ্চিত হয়ে ওঠে তার প্রতিদিনের রোজনামচা। হটাৎ ই কিছুদিন আগে যে ছিল সম্পূর্ণ অচেনা, তার ভালো থাকা খারাপ থাকার সাথে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও যেন কখন কিভাবে জড়িয়ে যায়। মনেই হয়না এই পরিচিতি খুব অল্প দিনের জন্যে। মনে হয় যেন যুগ যুগান্তর ধরে এই পরিচিতি। সামনের গাছটায় নতুন পাতা এলেও যাকে বলার জন্যে মন ছটপট করে। যাকে নির্দ্বিদ্ধিধায় করা যায় নিম ফুল ভাজা দিয়ে আলুভাতে খাবার নিমন্ত্রণ। দুপুর বেলায় শুয়ে শুয়ে আচার খাবার ইচ্ছেপ্রকাশ। অথবা ওই চোদ্দটা তিথির খণ্ডতা পূরণের অপেক্ষা , করা যায় একসাথে। একসঙ্গে চাঁদ কে যায় খোঁজা অথবা ভোর হবার প্রথম খবর টা পৌঁছে দিতে ইচ্ছে করে সবার আগে। ভোর তো হবেই। সব জায়গাতে ই দিনের নিয়মে, সময়ের নিয়মে রাত পার হয়ে ভোর হবে, তারপর আবার শুরু হবে রাত্রির স্তব্ধতা। তুমি সেই ভোর হবার খবর পৌঁছে দিলেও হবে, না দিলেও হবে। তবু তোমার মনে হবে, আমি ই দি। নতুন দিনের নতুন বার্তা আমি ই পৌঁছে দিয়ে আসি। কিন্তু কেন , কেন মনে হবে তোমার এ রকম। ও তোমার কে, যে তার জন্যে তোমার এই সহজাত ভাবনা। এ প্রশ্ন ও কখনো কখনো আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে বই কি। নিজের মনের ভেতরে নিজেই জিজ্ঞাসা করতে থাকি, ও কে আমার। কেন জানো, কেন ওই প্রশ্ন জানো? ওই যে, নতুন।...নতুন, নামহীন গোত্রহীন অচেনা সম্পর্ক আমাদের মনে তৈরি করে তাকে গোত্রভুক্ত করার বাসনা। বিপরীত লিঙ্গ হলে সমস্যার খুব সহজ সমাধান তোমাকে আশেপাশের মানুষ জন ই দিয়ে দেবে। প্রেম। 😊আর সমলিঙ্গ তে ব্যাপারটা আরো একটু ভাবনার। ব্যাপারটা কি, নিজের কেউ নয়, তবু এত। ....কি এত ? প্রেম। 😊
আমি ভাবি প্রেম তো বটেই। বিশ্ব জুড়ে তো শুধু প্রেমের ই ফাঁদ। অবশ্যই প্রেম। সম , অসম , ক্লিব এ যে লিঙ্গ ই হোকনা কেন। এ আমার প্রেম। আমার ভালোবাসা। আমি যেমন চাঁদ দেখতে ভালোবাসি, যেমন ফুল ভালোবাসি, যেমন নতুন কচি সবুজ পাতা দেখলে ভালোলাগায় আমার কান্না পেয়ে যায়, যেমন ওই যখন চাঁদের আলোয় নারকেল গাছের পাতা গুলো ভিজে যায় মনে হয়, তখন যেমন ভালোবাসায় আমি পাগল হয়ে যাই। দেখে দেখে আশ মেটেনা। যেমন ওই যখন সন্ধ্যে আরতি হয়, মনে হয় যেন আর ওই আরতির শব্দ যেন কখনো না থামে। বুকের ভেতরের ওই উথাল পাথাল কখন স্তব্ধ কান্না হয়ে ভালোলাগায় ফেরত পাই। ঠিক তেমন ভাবেই কিছু কিছু সম্পর্ক আমাদের নিজেদের অজান্তে ভীষণ কাছের একবারে মনের মাঝখান টাতে যেন বসে আছে। জানতেই পারিনি, বুঝতেই পারিনি। কখন কিভাবে।
কোনো ভালো বই পড়লে বলতে ইচ্ছে হয়, কোনো ভালো জায়গায় গেলে সঙ্গে নিতে ইচ্ছে হয়, কোনো ভালো খাবার খেলে মনকেমন করে। জ্বর হলে মনে হয়, এখুনি ছুটে যাই। মনখারাপ হলে মনে হয় পাশে বসে ভাগ করে নি। আর এই সব ইচ্ছে সবসময় এক জনকে ঘিরে যদি না হয়, হয়তো তখন আমাদের নিজেদের মনেই প্রশ্ন ওঠে, সম্পর্কের, পরিচয় এর নাম এর। আমরা হাঁতড়াই , হাঁতড়াতে থাকি। ভাবতে থাকি। কি মানে এর। জানিনা। এ পৃথিবীর অপার বিষ্ময় এর মতো এও হয়তো এক বিষ্ময়। অনেক কেনোর মতো এও হয়তো অজানা। তবে, সেদিন একটা খুব সুন্দর গান শুনলাম। নতুন একটা গান। দুই বন্ধুর। যে বয়সে মানুষ লিঙ্গ বিচার না করে, শুধুই মনের টানে ভালোবাসে, আর সেই নিষ্পাপ নিষ্কলুষ ফুলের মতো গড়ে ওঠা সম্পর্ক আস্তে আস্তে তার মিষ্টি সুগন্ধে চারিদিক আমোদিত করতে থাকে। যে বয়সে সম্পর্কের মধ্যে কেন আর কি পাবোর হাজার টানা পোড়েন সম্পর্কের সমস্ত মিষ্টতা নিঙড়ে নিয়ে তার বৈধতা বিচারে বসেনা। যে বয়সে তুই ঠিক আমার দিদির মতো বা তুই ঠিক আমার বোনের মতো বা তুমি ঠিক আমার চেনা অমুক দাদার মতো অথবা তোমার মধ্যে আমি নিজের ভাই কে পেলাম, এসব বলে সম্পর্কের নামকরণের কোনো দরকার হয়ে পড়েনা। যে বয়সে ভালোবাসি বলতে কোনো দ্বিধা হয়না। মনকেমন এর কথা চিৎকার করে বলতে পারা যায়। সেই বয়সের এক মনের টানের গান। অনেকবার শুনলাম গানটা। আর সাথে সাথে ওই যে না পাওয়া সম্পর্কের নাম? তাও খুঁজে পেলাম। সখ্যতা। দিদি বোন নয়। প্রেমিক প্রেমিকা নয়। শুধুই বন্ধুত্ব। নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রাখার। আগলে রাখার। কোনো কিছু দিয়ে নয়, কোনো কিছু নিয়ে নয়। কোনো কিছুর আশায় নয়। কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়। কোনো কিছুর দাবিতে নয়। শুধুই বন্ধুত্ব। সখ্যতা। আর গানটা হলো ,
তুই যেভাবে হোক, আয় চলে ফিরে তাকাস
তুই মেঘলা মন , যায় গলে ভেজা আকাশ
তুই যেখানে হোক, দৌড়ে আয়
যদি পারিস
তুই, একা একা , ভেজা দুগাল
মিঠে বারিশ
আমারও খুব বলতে ইচ্ছে করছে। এইভাবেই। সমস্ত দ্বিধা, ভেদাভেদ, প্রশ্ন, উত্তর , ঠিক বোঝা, ভুল বোঝার হাজার জটিলতা সরিয়ে দিয়ে, হটাৎ আজ ছাদে, চাঁদের নরম আলোতে মাদুর বিছিয়ে, পা ছড়িয়ে বসে আমতেল আর চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখা খেতে খেতে অনেক গল্প করতে ইচ্ছে করছে। সত্যি সত্যি হাত ধরতে পারলে সকল দূরত্ব তুচ্ছ হয়ে যায় বৈকি।
আজ আকাশে চাঁদ নেই। একটা তারাও নেই। তার বদলে আকাশে আজ মেঘ এর ঘনঘটা। অল্প অল্প মেঘ ডাকছে আর কেমন একটা ঝোড়ো হাওয়া চলছে। আমার একলা ঘরে ধূপের ধোঁয়াতে আমার মনের গভীর থেকে উঠে আসা সুর টাকে ঠিক মতো করে যেন চিনতে পারছিনা আজ। চেনার চেষ্টা করছি। আর ভাবছি, জানিনা ওই যে, সবার ওপরে থেকে যিনি মুচকি মুচকি হেসে চলেছেন, তাঁর মনে কি আছে। তবে এটা জানি, যার জন্যে যেটা সবথেকে ভালো আর যেমন করে ভালো, ওই ঠাকুর সেসব কিছুকে ঠিক তেমন করেই সাজাচ্ছেন। আমাদের শুধু থেমে গেলে চলবেনা। প্রত্যেকটা দিন কে নিজের বেস্ট টুকু দিয়ে আমাদের সাজিয়ে তুলতেই হবে। তবে সর্বাঙ্গ সুন্দর হবে সবকিছু। শুধু এই ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে সেই প্রার্থনাই রাখলাম। সেই শক্তি আমায় দিও ঠাকুর। সেই শক্তি সবাইকে দিও।
আর এই নামকরণের সাথে সাথেই অঙ্গাঙ্গি ভাবে এসে যায়, সম্পর্ক। চেনা গন্ডির, চেনা সম্পর্কের বাইরে অন্য আর কিছু সম্পর্ক এর কথা ভাবলেই, মনের মধ্যে শুরু হয় ভীষণ এক অস্বস্তি। ভাই, বোন, মা, বাবা, স্বামী, স্ত্রী, সন্তান এর মধ্যে ছোঁয়া আছে এক নিশ্চিন্তততার। চেনা গন্ডি, চেনা নাম। চেনা সম্পর্ক। কিন্তু এর বাইরেও আমাদের নিজেদের বৃত্ত হতে থাকে বড় , পরিচিত হতে থাকি কত কারোর সাথে, কেউ কেউ তাদের মধ্যে, আমরা চাই বা না চাই, এসে পরে আমাদের একান্ত নিজের সেই ছোট্ট বৃত্তের ভেতরে, যে বৃত্তে আমরা সহজে কাউকে ঢুকতে দিনা, কিন্তু যে বৃত্তের মধ্যে একবার ঢুকে গেলে, তাকে সমস্ত স্বত্বা দিয়ে আগলে রাখতে চাই। সেইরকম কিছু মানুষ হটাৎ কখনো কখনো অযাচিত হয়তো অবাঞ্চিত ভাবে আমাদের জীবনে পৌঁছে যায় আর তারপর ভীষণ ভাবে সত্যি হয়ে ওঠে তার উপস্থিতি। বাঞ্চিত হয়ে ওঠে তার প্রতিদিনের রোজনামচা। হটাৎ ই কিছুদিন আগে যে ছিল সম্পূর্ণ অচেনা, তার ভালো থাকা খারাপ থাকার সাথে নিজেদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ও যেন কখন কিভাবে জড়িয়ে যায়। মনেই হয়না এই পরিচিতি খুব অল্প দিনের জন্যে। মনে হয় যেন যুগ যুগান্তর ধরে এই পরিচিতি। সামনের গাছটায় নতুন পাতা এলেও যাকে বলার জন্যে মন ছটপট করে। যাকে নির্দ্বিদ্ধিধায় করা যায় নিম ফুল ভাজা দিয়ে আলুভাতে খাবার নিমন্ত্রণ। দুপুর বেলায় শুয়ে শুয়ে আচার খাবার ইচ্ছেপ্রকাশ। অথবা ওই চোদ্দটা তিথির খণ্ডতা পূরণের অপেক্ষা , করা যায় একসাথে। একসঙ্গে চাঁদ কে যায় খোঁজা অথবা ভোর হবার প্রথম খবর টা পৌঁছে দিতে ইচ্ছে করে সবার আগে। ভোর তো হবেই। সব জায়গাতে ই দিনের নিয়মে, সময়ের নিয়মে রাত পার হয়ে ভোর হবে, তারপর আবার শুরু হবে রাত্রির স্তব্ধতা। তুমি সেই ভোর হবার খবর পৌঁছে দিলেও হবে, না দিলেও হবে। তবু তোমার মনে হবে, আমি ই দি। নতুন দিনের নতুন বার্তা আমি ই পৌঁছে দিয়ে আসি। কিন্তু কেন , কেন মনে হবে তোমার এ রকম। ও তোমার কে, যে তার জন্যে তোমার এই সহজাত ভাবনা। এ প্রশ্ন ও কখনো কখনো আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে বই কি। নিজের মনের ভেতরে নিজেই জিজ্ঞাসা করতে থাকি, ও কে আমার। কেন জানো, কেন ওই প্রশ্ন জানো? ওই যে, নতুন।...নতুন, নামহীন গোত্রহীন অচেনা সম্পর্ক আমাদের মনে তৈরি করে তাকে গোত্রভুক্ত করার বাসনা। বিপরীত লিঙ্গ হলে সমস্যার খুব সহজ সমাধান তোমাকে আশেপাশের মানুষ জন ই দিয়ে দেবে। প্রেম। 😊আর সমলিঙ্গ তে ব্যাপারটা আরো একটু ভাবনার। ব্যাপারটা কি, নিজের কেউ নয়, তবু এত। ....কি এত ? প্রেম। 😊
আমি ভাবি প্রেম তো বটেই। বিশ্ব জুড়ে তো শুধু প্রেমের ই ফাঁদ। অবশ্যই প্রেম। সম , অসম , ক্লিব এ যে লিঙ্গ ই হোকনা কেন। এ আমার প্রেম। আমার ভালোবাসা। আমি যেমন চাঁদ দেখতে ভালোবাসি, যেমন ফুল ভালোবাসি, যেমন নতুন কচি সবুজ পাতা দেখলে ভালোলাগায় আমার কান্না পেয়ে যায়, যেমন ওই যখন চাঁদের আলোয় নারকেল গাছের পাতা গুলো ভিজে যায় মনে হয়, তখন যেমন ভালোবাসায় আমি পাগল হয়ে যাই। দেখে দেখে আশ মেটেনা। যেমন ওই যখন সন্ধ্যে আরতি হয়, মনে হয় যেন আর ওই আরতির শব্দ যেন কখনো না থামে। বুকের ভেতরের ওই উথাল পাথাল কখন স্তব্ধ কান্না হয়ে ভালোলাগায় ফেরত পাই। ঠিক তেমন ভাবেই কিছু কিছু সম্পর্ক আমাদের নিজেদের অজান্তে ভীষণ কাছের একবারে মনের মাঝখান টাতে যেন বসে আছে। জানতেই পারিনি, বুঝতেই পারিনি। কখন কিভাবে।
কোনো ভালো বই পড়লে বলতে ইচ্ছে হয়, কোনো ভালো জায়গায় গেলে সঙ্গে নিতে ইচ্ছে হয়, কোনো ভালো খাবার খেলে মনকেমন করে। জ্বর হলে মনে হয়, এখুনি ছুটে যাই। মনখারাপ হলে মনে হয় পাশে বসে ভাগ করে নি। আর এই সব ইচ্ছে সবসময় এক জনকে ঘিরে যদি না হয়, হয়তো তখন আমাদের নিজেদের মনেই প্রশ্ন ওঠে, সম্পর্কের, পরিচয় এর নাম এর। আমরা হাঁতড়াই , হাঁতড়াতে থাকি। ভাবতে থাকি। কি মানে এর। জানিনা। এ পৃথিবীর অপার বিষ্ময় এর মতো এও হয়তো এক বিষ্ময়। অনেক কেনোর মতো এও হয়তো অজানা। তবে, সেদিন একটা খুব সুন্দর গান শুনলাম। নতুন একটা গান। দুই বন্ধুর। যে বয়সে মানুষ লিঙ্গ বিচার না করে, শুধুই মনের টানে ভালোবাসে, আর সেই নিষ্পাপ নিষ্কলুষ ফুলের মতো গড়ে ওঠা সম্পর্ক আস্তে আস্তে তার মিষ্টি সুগন্ধে চারিদিক আমোদিত করতে থাকে। যে বয়সে সম্পর্কের মধ্যে কেন আর কি পাবোর হাজার টানা পোড়েন সম্পর্কের সমস্ত মিষ্টতা নিঙড়ে নিয়ে তার বৈধতা বিচারে বসেনা। যে বয়সে তুই ঠিক আমার দিদির মতো বা তুই ঠিক আমার বোনের মতো বা তুমি ঠিক আমার চেনা অমুক দাদার মতো অথবা তোমার মধ্যে আমি নিজের ভাই কে পেলাম, এসব বলে সম্পর্কের নামকরণের কোনো দরকার হয়ে পড়েনা। যে বয়সে ভালোবাসি বলতে কোনো দ্বিধা হয়না। মনকেমন এর কথা চিৎকার করে বলতে পারা যায়। সেই বয়সের এক মনের টানের গান। অনেকবার শুনলাম গানটা। আর সাথে সাথে ওই যে না পাওয়া সম্পর্কের নাম? তাও খুঁজে পেলাম। সখ্যতা। দিদি বোন নয়। প্রেমিক প্রেমিকা নয়। শুধুই বন্ধুত্ব। নিবিড় ভাবে জড়িয়ে রাখার। আগলে রাখার। কোনো কিছু দিয়ে নয়, কোনো কিছু নিয়ে নয়। কোনো কিছুর আশায় নয়। কোনো কিছুর বিনিময়ে নয়। কোনো কিছুর দাবিতে নয়। শুধুই বন্ধুত্ব। সখ্যতা। আর গানটা হলো ,
তুই যেভাবে হোক, আয় চলে ফিরে তাকাস
তুই মেঘলা মন , যায় গলে ভেজা আকাশ
তুই যেখানে হোক, দৌড়ে আয়
যদি পারিস
তুই, একা একা , ভেজা দুগাল
মিঠে বারিশ
আমারও খুব বলতে ইচ্ছে করছে। এইভাবেই। সমস্ত দ্বিধা, ভেদাভেদ, প্রশ্ন, উত্তর , ঠিক বোঝা, ভুল বোঝার হাজার জটিলতা সরিয়ে দিয়ে, হটাৎ আজ ছাদে, চাঁদের নরম আলোতে মাদুর বিছিয়ে, পা ছড়িয়ে বসে আমতেল আর চানাচুর দিয়ে মুড়ি মাখা খেতে খেতে অনেক গল্প করতে ইচ্ছে করছে। সত্যি সত্যি হাত ধরতে পারলে সকল দূরত্ব তুচ্ছ হয়ে যায় বৈকি।
আজ আকাশে চাঁদ নেই। একটা তারাও নেই। তার বদলে আকাশে আজ মেঘ এর ঘনঘটা। অল্প অল্প মেঘ ডাকছে আর কেমন একটা ঝোড়ো হাওয়া চলছে। আমার একলা ঘরে ধূপের ধোঁয়াতে আমার মনের গভীর থেকে উঠে আসা সুর টাকে ঠিক মতো করে যেন চিনতে পারছিনা আজ। চেনার চেষ্টা করছি। আর ভাবছি, জানিনা ওই যে, সবার ওপরে থেকে যিনি মুচকি মুচকি হেসে চলেছেন, তাঁর মনে কি আছে। তবে এটা জানি, যার জন্যে যেটা সবথেকে ভালো আর যেমন করে ভালো, ওই ঠাকুর সেসব কিছুকে ঠিক তেমন করেই সাজাচ্ছেন। আমাদের শুধু থেমে গেলে চলবেনা। প্রত্যেকটা দিন কে নিজের বেস্ট টুকু দিয়ে আমাদের সাজিয়ে তুলতেই হবে। তবে সর্বাঙ্গ সুন্দর হবে সবকিছু। শুধু এই ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে সেই প্রার্থনাই রাখলাম। সেই শক্তি আমায় দিও ঠাকুর। সেই শক্তি সবাইকে দিও।
No comments:
Post a Comment