Wednesday, 22 May 2019

জন্মান্তর

সেদিন, হটাৎ ছেলেটি মেয়েটিকে বললে,
এই আমাকে তুই বলে ডাকবি? ডাকনা।...
মেয়েটি অবাক।....যাহ , তুমি করে ডাকতে ডাকতে হটাৎ আবার তুই বলা যায় নাকি,
ছেলেটি জেদ করলে একবার বলার জন্যে।..
কেন এমন অদ্ভুত আবদার।
অবাক হলো মেয়েটি
পরে বুঝেছিলো, খুঁজে পেয়েছিলাম মাতৃ ছায়া আকাঙ্খিত এক অবুঝ বালক কে
যে বারবার তার পরম কাছের জায়গা থেকে খুঁজে পেতে চেয়েছে মা এর মমত্ব
সহোদরা, বন্ধু, সখী , প্রেমিকা, স্ত্রী। .....বয়সের সাথে সাথে অজস্রের সম্পর্কের ভিড়ে , অনেক দায়িত্বের আবডালে কেউ আর আলাদা করে মনে করেনি বা করায় ও নি, যে তার ও চাই একটা মাতৃক্রোড়ের মতোন ভরসাস্থল
এক নিশ্চিন্তে বাহুডোর
এক অনন্ত আশ্রয়।
মৈথুন রত ক্লান্ত শরীর কি শুধুই শরীর হাতড়ে চলে,
তার মধ্যে কি শুধুই থাকে ভোগের ইচ্ছা, চেতনাহীন, বোধহীন অনন্ত সম্ভোগ?
শুধুই ?
আমি যদি বলি, স্নেহহীন , মমত্ব হীন মৈথুন ধর্ষণ এর ই সমান।....
ধর্ষিত কি শুধু নারী ই হয়,
পুরুষ নয়.........
সারাদিনের পরিশ্রমে ক্লান্ত বিধ্বস্ত শরীর যখন চেয়েছে সঙ্গিনীর নরম বক্ষস্থলের উষ্ণ আদোরে গলে পড়তে,
তখন হয়তো তাকে মেটাতে হয়েছে সঙ্গিনীর ই রতি লিপ্সা
তার সন্তুষ্টি আর তৃপ্তির সঙ্গে মিশে যেতে যেতে কখন ভুলে গেছে নিজেরও কিছু চাওয়ার ছিল
বীর্য্যস্খলন এর যন্ত্রণা নয়, তার সুখ শরীরের প্রতিটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইয়ে দেওয়ার, বইয়ে নেওয়ার গভীর অভীপ্সা।
সমঝোতার মধ্যস্থতা নয়, দুটো মনের সঠিক বোঝাপড়ার পরে এক হয়ে মিশে যাওয়া।
শুধুই স্বামীত্বের কর্তব্য নয়, স্বামী হয়ে উঠতে পারার পরম প্রাপ্তি কে আপন স্বত্বার প্রতিটা বিন্দুতে অনুভবের ইচ্ছা।
আত্মগ্লানির মধ্যে জেগে ওঠা নয়,
নতুন ভোরের স্নিগ্ধতার মধ্যে, সলাজ মধুর স্মৃতির রোমন্থনের মধ্যে দিয়ে, নতুন ভোরের পবিত্রতার মধ্যে দিয়ে, নতুন করে মাতৃ ক্রোড়ের মতোই নিশ্চিন্ত তার সঙ্গে ঘুম ভাঙা।..আর দিনের আলোর মতো চেতনা বোধ মায়ায় এগিয়ে চলা।
অবাক হচ্ছেন, ভাবছেন মৈথুন কিভাবে মাতৃপ্রেম এর সাথে তুলনীয় হয়?
হয়....প্রেম মনের এক প্রকাশ, যা সম্পর্কের পরিবর্তনে তার রূপ বদলায় মাত্র, আর আমাদের অন্তরের অন্তস্থলে বয়ে চলে সেই প্রেম এর অবিনশ্বর ধারা।...
যেহেতু মা বাবা হচ্ছেন সবথেকে বিশ্বস্ত জায়গা
তাই....
পুরুষ তার সঙ্গিনীর থেকে খুঁজে চলে সেই নিশ্চিন্ততার জায়গা
নারী তার সঙ্গীর কাছ থেকে খুঁজে চলে সেই ভরসাস্থল
আর যখন এই দুই চাওয়া সম্পূর্ণ হয়, তখন হয় প্রকৃত মিলন
কখনো নারী সেই পর্বত সমান বক্ষস্থলে চায় ছোট্ট চড়াই পাখিটি হয়ে থাকতে
আবার কখনো বা নিজ বক্ষের নরমে আগলে রাখে সেই পর্বত এর ই শিশু সুলভ সত্তা।
সমুদ্র মন্থন এর পরে, আকণ্ঠ গরল পান করে শিব যখন হলেন নীলকণ্ঠ
তখন স্বয়ং পার্বতী তাঁকে আপন স্তন্যের সুধা পান করিয়ে সেই গরল কে অমৃত রূপ দান করলেন।
মহাকাল তখন এক শিশুর মতন মাতৃরূপী পার্বতীর কাছে নিজেকে করলেন সমর্পন।
আর পরম যত্নে, মমতায় পার্বতী আপন সন্তান স্নেহে শিশু ভোলানাথের মুখে দিলেন নিজ স্তন।
কি অপূর্ব, কি অসাধারণ সেই সৃষ্টি।
প্রেম ও প্রকৃতি যদি একাত্ম হয় রচনা হয় যুগান্তকারী সৃষ্টির
নারী পুরুষ তখন উন্নীত হয় শুধুই নারী পুরুষের সাধারণ সম্পর্কের থেকে অনেক ওপরে।

আর এইভাবেই আমাদের নিজেদের অজান্তেই , অজ্ঞানে, হয়তো ফল্গুধারার মতো নারীমনে বয়ে চলেছে, তার পাশের মানুষটিকে যত্নে স্নেহে সমস্ত সংসার গরল থেকে রক্ষা করার বাসনা।....যা তাদের শুধুই  প্রেমিকা, শুধুই স্ত্রী, শুধুই সখার জায়গা থেকে নিয়ে যায় আরো ওপরে।
আর পুরুষ, সমাজ সংসার এ সকল দায়িত্ব , কঠোর কর্তব্যের পরেও মনের গভীরে থাকে এক মা এর খোঁজ, নিজের অজ্ঞানে, অচেতনে
কোথাও হটাৎ যদি সেই স্নেহ ময় মাতৃ রূপ এর সাথে এতটুকু মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তখন মন বলে ওঠে এই খুঁজছিলাম,
কিন্তু কজন নারী একাধারে বান্ধবী, প্রেমিকা,  থেকে সহধর্মিনী হয়ে উঠতে পারে ?
মাতৃরূপে আপন মমতায় পাশের পুরুষটিকে রাখে আগলে ?
আর কজন পুরুষ ই বন্ধু, প্রেমিক, সখা থেকে সত্যি স্বামী হয়ে উঠতে পারে?
বা স্বামীত্বের অধিকার বোধ পেরিয়ে পিতৃত্বের সুরক্ষার আবডালে রাখতে পারে পাশের নারীটিকে
হোকনা নাহয় জন্মাতর এবার ,
নবজন্ম পাক সংসার প্রেম
নব চেতনায় উন্মীলিত প্রেম বোধ তব
ফিরিয়ে আনুক মোরে নব নব রূপে
দিক ফিরিয়ে তোমারে
এ সংসার সাগরে।
বারেবারে।

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...