দেখতে দেখতে প্রায় একমাস হতে চললো। আমি নতুন দেশে, অজানা অচেনা শহরের মাঝে। ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিচ্ছি নিজের জায়গাটা। দশ তলার ওপরে এই এক কামরার ছোট্ট এপার্টমেন্ট এ চড়ুই আসেনা। আসেনা সেই পায়রা গুলো। কিজানি ওদের আর খাওয়া হয়না বোধয়। আমি রান্না ঘরে গেলেই কেমন আমার সাথে কথা বলতে আসতো।
চারদিকে মৃত্যুর স্তব্ধতা। পৃথিবীর ব্যস্ততম শহরে আজ এ কিসের করাল ছায়া নেমেছে। পিনড্রপ সাইলেন্সার মধ্যে এম্বুলেন্সের শব্দ ছাড়া যখন আর কিছু শোনা যায়না, তখন গৃহ পরিজন আপন জনেদের থেকে বহুদূরে এই দশতলার আকাশচুম্বী ফ্ল্যাট এর মধ্যে একাকী বসে যেন মনে আজ সত্যি ই মনে হচ্ছে আমার পৃথিবী কাঁদছে। এ আমার গ্রামবাংলার বৃষ্টি নয়, এ বৃষ্টি দেখে কবি গান গেয়ে ওঠেনা, এ বৃষ্টি দেখে মনে হয়, কাতারে কাতারে অসহায় প্রাণ যেন তাদের শেষ ভিক্ষা নিয়ে প্রকৃতির কাছে নতজানু হয়ে বলছে ফিরিয়ে দাও। আমার প্রবাসের একাকী জীবন যেন হটাৎ পেয়েছে অখণ্ড অবসর। চরম ব্যস্ততার পরে সেই অখণ্ড অবসর আমাকে দিয়েছে অসীম সুদূর প্রসারী ভাবনার। চেতনার কোন এক সুপ্ত স্তর থেকে যেন মন বলে উঠছে তবে কি সময় হয়েছে, এ পৃথিবীর সেই চরম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে কি? কোনো এক মহাপুরুষ বলেছিলেন প্রকৃতি কে তোমরা যদি লালন না করো , প্রকৃতি কিন্তু নিজের মতন করে নিজেকে লালন করে নেবে। আর সে বড় ভয়ঙ্কর। আজ কি তবে সেই সময় এসেছে? যখন প্রকৃতি চাইছে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। কিন্তু সে যদি গুছিয়ে নিতে শুরু করে, তবে তো সে কিছুই দেখবেনা। staticstics এবং Evolutionary এর ভাষায় একে বলে random selection under a certain circumstances irrespective of everything when a few get selected from a larger population. প্রকৃতির সেই সিলেকশন যে বড় ভয়ঙ্কর হয়। সে দেখেনা কে কার ভাই বন্ধু মা বাবা সন্তান স্বামী। এইভাবেই তো কালের নিয়মে সৃষ্টি ধ্বংস চক্রাকারে চলেছে। সভ্যতার বড়াই করে আধুনিকত্বের ভুল ব্যাখ্যায় মানুষ যখন শুধুই ভোগ লালসা মদেমত্ত হয়ে আছে, সব কিছুকেই যখন অবজ্ঞায় হেসে উড়িয়ে দিতে চায়, মনে করে পৃথিবীটা যেন তাদের হাতের মুঠির ভেতরে তাদের ই নিয়ন্ত্রণে আছে। তখন অলক্ষ্যে বসে বিধাতা হাসেন বৈ কি। অযত্নে অবহেলিত প্রকৃতি স্বার্থান্বেষী লোভী এবং এই আমিত্বময় মানব জগৎ কে গোড়া থেকে নাড়িয়ে দিয়ে জানান দিতে হয় যে হে অবলা , ওঠো জাগো, সময় হয়েছে নিজের অন্তর স্থলের গভীরে কতদিন তাকিয়ে দেখোনি, তাকিয়ে দ্যাখো তার দিকে। স্বার্থ , লোভ, পরান্মুখতা ত্যাগ করে একবার আবার চলো তাকিয়ে দেখি চরাচরে।
No comments:
Post a Comment