Sunday, 19 July 2020

উত্থান

রবীন্দ্রনাথ কে আমি মনে করি, মনে করি, একান্ত নিজের স্বার্থে। যখন ই মনে হয় কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে, বা বিভিন্ন অপ সংস্কৃতির হাত থেকে মন চাইছে একটু সুগন্ধি চিত্ত স্নান , তখন ই মনে হয় স্নান করি ওই গীতবিতান এর পাতায়। নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করার জন্যে মনে করি। মনে করি তাতে লাগাম দেবার জন্যে।

হয়তো তাই জন্যেই কখনো কখনো যখন মন সত্যি ই লাগাম ছাড়া হতে চেয়েছে, চেয়েছে সমস্ত ঠিক ভুল এর চিন্তা বিসর্জন দিয়ে আত্ম সম্পর্পন, তখন ও ওই ভালোলাগার গভীর সুপ্তি থেকে নিজেকে বেদনার্ত জায়গায় উত্থিত করে আনতে পেরেছি।

জানিনা, এই জীবন আমাকে কিভাবে কি দেবে, কি এর মানে, কি এর পথ, তবুও সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত্রির আলিঙ্গনে আমাদের দিন যখন খুঁজছে নিজের আশ্রয়, করছে সমস্ত দিনের হিসেব , এমন সময়ে , এই চন্দন এর গন্ধে আমাদের ওখানের দখিনা হাওয়ার মতো এলোমেলো হাওয়াতে আমার মন হয়ে চলেছে উদ্বেল। তখন আবার আমি নিজেকে খুঁজলাম ওই রবীন্দ্র সৃষ্টির মাঝে। আজ অনেক দিন পরে লিখতে বসলাম কিছু। সৃষ্টির আনন্দে স্রষ্টার যে আনন্দ, সে আনন্দ অসীম, অক্ষয়। সে যা কিছুই সৃষ্টি হোকনা কেন। যত তুচ্ছ, যত মহৎ ই হোকনা কেন, তবু সে ভীষণ নিজের। আপন মহিমায় মহিমান্বিত। আমরা এক খুব অন্যরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি, পাওয়া না পাওয়া, চাওয়া , ইচ্ছে, এই সমস্ত শব্দ এখন কিরকম যেন থমকে গিয়ে অপেক্ষার মোড়কে নিজেদের বন্দি করেছে। মাঝেমাঝে কেমন যেন ক্লান্ত লাগে, মনে হয়, থাক , আর কিছু ভাববোনা। সমস্ত পৃথিবীর মতন আমিও নিজেকে সকল ভাবনা থেকে বিরাম দি। এমনিতেই সব কিছু কত ভঙ্গুর , কত ক্ষণস্থায়ী, কালকে যা ছিল, আজ তা নেই। কালকের ইমোশন আজ হয়তো অর্থহীন। আবার আজকের অর্থহীনতা আগামী দিনে হয়তো অর্থ পূর্ণ হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, হতেই পারে। আমি যখন আমার সব থেকে কাছের মানুষ, আমার বাবাকে হারালাম, আর তারপরেও জীবন থিম গেলোনা, তখন ই বুঝেছিলাম জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে। এ মহা বিশ্বের কোনো কিছুতেই কোনো কিছু হয়না। কারোর বিহনে কিছু থেমে যায়না। সেটাই সত্যি।
আমাদের কাজ হলো, জীবনের ওই গতিটাকে ধরতে পারা। তাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা। প্রতিটা দিন কিছু বলতে চায়, প্রতিটা দিনের নিজস্ব কিছু বার্তা থাকে, সেই বার্তা কে বুঝে নিয়ে এগিয়ে চলা। আর আজকের যা কিছু তাকে গ্রহণ করে আগামীর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা। হে ঠাকুর আমাকে শক্তি দিও, আমি যেন সেই নক্ষত্রের পথ অবলম্বন করে চির শান্তির পথে নিজের লক্ষে স্থির থেকে এগিয়ে যেতে পারি। আমার সঙ্গে থেকো। বেদনা যেন আমার আনন্দ কে আবৃত না করে ফেলতে পারে। আর আমার আনন্দ যেন পার্থিব আর বস্তুত হয়ে গিয়ে নিজেকে গন্ডি তে আবদ্ধ না করে ফেলে। তা যেন আকাশের মতো উদার হয়, আর এই সকল সৃষ্টি রস এ নিমজ্জিত থাকে।

"তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে, আছে, আছে
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই
অন্তরগ্লানি, সংসারভার, পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই"

Tuesday, 14 July 2020

কুচ কামিনী, সুধা যামিনী/ বধূয়া, বৃথা বিনে তব
এই গন্ধসলিলা সুখ রজনী

আমাদের মন জল এর মতন, যে পাত্রে রাখবে , যে ঢালে ঢালবে সেই ঢালে সেই মতন ই সে ঢলবে।আবার কি জানো , জল কে যেমন ফোটাতে হয়, ফিল্টার করতে হয় তেমনি মন কেও ফোটাতে হয়, ফিল্টার করতে হয়। ভালো কথা, ভালো গান, সুর, ভালো সঙ্গের মধ্যে দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়, সৎ সংকল্পের মধ্যে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। শিশুর মতন সরল জিজ্ঞাস্য নিয়ে এ পৃথিবীর সকল কঠিন রাস্তা কে অনায়াস এ সহজ করে নিতে হয়। এই ভাবে নিজেকে প্রতিদিন উন্নীত করতে হয়, কেউ আসবেনা তোমার সাধুতা বিচারে, তুমি নিজেই নিজের বিচারক। তবে একদিন সময় তোমাকে এর প্রতিদান দেবে। দেবেই। তাই যদি তুমি এই কঠিন পৃথিবীর সুন্দরতম দিক টি খুঁজে নিতে চাও তবে সেই সুন্দরের কাছে যাও। কিন্তু কোথায় পাবে সেই সুন্দরকে। পাবে তোমার মননে, ভালো সঙ্গে, সুন্দর ফুল, ভালো লেখা।খুঁজে নাও সেই পুরা পুরাতনী পুরাণের ধারা, ঢেলে ফেলো তাকে আধুনিকতার ঢালে। মেঘমল্লার এর সুরে খুঁজে পাও বিরহী যক্ষ আর যোগিনী উমাকে। 

শুধু এখন বলি, হে প্রেমিক, যে উমার কালজয়ী প্রেম মহেশ্বর কে সাধনা করে লাভ করিতে হইয়াছিল, তাহাকে অমন দৈনিন্দিন করিয়া দিওনা। তাহাকে সযত্নে সাজায়ে রাখিয়ো। দেখোনা, সব পূজার সব ফুল হয়না, সব ঋতুতে সব ফুল ফোটেনা, জনিবে রাতের শিউলি রাতে আমন করে ফুটত পারে বলেই ভোরে তা সবুজ ঘাসের গালিচাকে অমন পবিত্র করিয়া তুলতে পারে। অপেক্ষা করিয়ো সেই শুভক্ষণ সুন্দর মুহূর্তের জন্যে।গহীন রাতের তামসাবৃত হয়ে শুধুই কামনার বশবর্তী হয়ে নারী পুরুষের একে অপরের যে কাছে আসা তাতে কামনা অধিক হয়ে ওঠে।প্রেম যায় হারিয়ে সে কাছে আসার মধ্যে কামনা সন্তুষ্ট হয় বটে তবে মনের গহীনে লুকোনো যে সুপ্ত সুন্দর তাহা জাগ্রত হয়না। সে সুধা আস্বাদনের সৌভাগ্যই বা কজনের হয়েছে, সে সুধার খবর জানেই বা কজনে, যে জানে সে মৃগনাভীর সুগন্ধে মাতোয়ারা মৃগ যেমন হন্যে হইয়া শুধুই সেই মৃগনাভিতেই বিলীন হতে চায়, সেও তেমনি করিয়া শুধু ওই সুধাতেই নিজেকে মগ্ন করিতে পারে।শুধু সব কথা, সব ভাব সব জায়গায় অনিয়ো না, তাহাকে যত্নে রাখিয়ো, রাতের মালকোষ যেমন চাঁদনী রাতের গভীরতাতে সম্পূর্ণতা পায় , তেমনি ই প্রকৃত মুহূর্তএ সম্পূর্ণতা পায় তোমার সকল অপ্রাকৃত প্রাকৃত ইচ্ছা কামনা বাসনা। 

বাসনা স্বাভাবিক তবে তাকে ভিতরে রাখো, সেই গভীর রাতের গহীন মোহে যখন চাঁদ নরম হয়ে স্নেহ ভোরে তাকিয়ে থাকে, সেই রাতের নীল আকাশের মতন গভীর রঙের শাড়িতে নিজে হাতে করে তোমার প্রিয়াকে সাজিয়ো। পরিয়ে দিও যুথির মালা, রজনীগন্ধা, বেলি, মোমের আলোয় যত্ন করে তৈরি কোরো সেই পরিবেশ যা জন্ম জন্মান্তেরেও মানুষ পায়না। সব শরীর কবিতা হয়না, সব শরীরে কবিতার ছন্দ রুদ্ধ হয়ে যায়না, সবাই সব ছন্দ খুঁজে নিতেও পারেনা। খুঁজে নিও সেই ছন্দ , চিনে নিও সেই গন্ধ। শুধু অপেক্ষা কোরো সেই প্রকৃত মুহূর্তের জন্যে। তার আগে কিছু বোলোনা। বোলোনা। দিওনা সেই মুহূর্ত, সেই সময় নষ্ট করে। 
সন্যাসীর জীবন আলাদা, মনন আলাদা, আর সংসারের মনন আলাদা। ওরে সংসারী মন, সংসার ই যদি করবি তো সেভাবে কর যেভাবের ঘোরে মহেশ্বর নিজেকে উমা পতি করে উমা চরণে নিবেশিত করেছিল। সেই ভাব খুঁজে নে। সেই মন কে তৈরি কর। 

বাইরে ঝলমলে রোদ্দুর ভরা একটা দিন , ভীষণ নীল আকাশ। আমার বাড়ির সামনের ম্যাপল গাছের পাতা প্রায় সব ই ঝরে পড়ে গেছে। দুদিনের জন্যে এত সৌন্দর্য্য ন...