Friday, 17 December 2021

পাতা ঝরার দিনে

রাস্তার দুধারের ঝরা পাতা দেখে মনে পরে গেলো সেই ছোটবেলার পড়া "আমলকি বন্ কাঁপে যেন তার বুক করে দুরু দুরু / পেয়েছে খবর পাতা খসানোর সময় হয়েছে শুরু" যদিও রবি ঠাকুর এটা শরৎ কালের জন্যে লিখেছিলেন , কিন্তু আমি কি করব, আমার এটাই এখন খুব appropriate মনে হচ্ছে। সব কিছু কি আর সব সময় বাঁধা নিয়মে চলে। 

চারপাশে আজ ছিল অনেক রঙের সমারোহ। না বসন্তের মাতাল করে দেওয়া বাঁধাহীন উন্মত্ত রং নয় এ। এ যেন প্রকৃতির নীরব কান্নার পরে শান্ত সমাহিত হয়ে সূর্যাস্ত দেখা। সেখানে কোনো চাওয়া নেই, পাওয়া নেই, প্রত্যাশা নেই। কথা নেই, বার্তালাপ নেই। শুধুই যেন যাওয়া আসার মাঝে এক স্থির, শান্ত, ধ্যানমগ্ন ভাবমূর্তি। রাস্তার দুধারে পথের পরে কেমন যেন মায়াময় হয়ে ঝরেছিলো হালকা হলুদ হয়ে আসা শুখনো পাতা। দুপাশের গাছ, কোথাও কোথাও সেখানে ম্লান হয়ে আসা সবুজ আবার কোথাও বা নতুন এর আগমন এ গর্বিত কচি পাতা। আর ওই দূরে, যেখানে বৃক্ষরাজি তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে জয় করে এসেছে সব বদল, সেখানে নেই কোনো আসা যাওয়া। অনেক পরিবর্তন, আগমন বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে আজ তারা স্থির, অচঞ্চল, ধ্যানমগ্ন, নিষ্পলক। কেমন এক গাঢ় গম্ভীর গায়ের রং ওদের, যা মনের মধ্যে এক সম্ভ্রম নিয়ে আসে, মনে হয় বাবার মতো, দাদুর মতো, বড়দের মতো। সবার মাথার ওপরে দাঁড়িয়ে, সবাইকে রক্ষা করে চলেছে। বড় বেশি করে যাদের আমি রোজ খুঁজি। বড় বেশি করে যাদের অভাব আমি রোজ অনুভব করি। 

সময় টা ঝরাপাতার, আসন্ন শীতের রুক্ষতা, প্রকৃতিকে দৈন, শুষ্ক করে দেবার আগে প্রকৃতি যেন তার শেষ সম্বল উজাড় করে দিয়ে নিজেকে সাজিয়েছে। 

এই সৌন্দর্য্যের মধ্যে দাড়িঁয়ে কেমন যেন আপনা থেকে মাথা নাতো হয়ে আসে, প্রণাম করতে ইচ্ছে করে এই সৌন্দর্য্যকে, হাত জড়ো করে বলতে ইচ্ছে করে, এভাবেই কালের নিয়ম কে মেনে নিতে দিয়ো, চারপাশকে ভালোবাসতে দিও, আর খুব ভালো থেকো। 
স্বরচিত পাঠ 
পাতা ঝরার দিনে 
তিস্তা 

Saturday, 11 December 2021

50 years after

 ৫০ বছর বয়সে এই প্রথম অনিকেত এর মেয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে এই রকম টেনশন হচ্ছে। অনিকেত, অনিকেত সোম। CMC VELLORE er chairman । না ছোট থেকে কোনোদিন ই কোনো পরীক্ষা বা রেজাল্ট নিয়েই বিশেষ আদিখ্যেতা বা অযথা চিন্তা তিনি করেননি। বরং বরাবর ই বলে এসেছেন ভয় পাসনা, ভালো করে পর, পরীক্ষা দে, তারপর যা হবার হবে। ১০ ক্রস করেছে মেয়ে, ১২ ও , তারপরে হটাৎ এক নতুন মোড়কের জীবনে প্রবেশ করেছে তাঁর সেই ছোট্ট বাবিন অনামিকা সোম, Indian Institute of Space Science and Technology (IIST), Trivandrum এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং এর থার্ড এর স্টুডেন্ট। পরীক্ষা টা হচ্ছে ইসরো এর পেয়ে গেলে ইসরো তে চান্স উইথ ফুল স্কলারশিপ আর সঙ্গে নাসা এ তে collaborative training . এত অসম্ভব টেনশন কেন হচ্ছে তাঁর। নাসা বলেই কি.....ভাবছেন অনিকেত। 

ph করবেন একবার, হাত কাঁপছে।..

রিং....

হ্যালো, হা বাবা বলো...

কি করছিস রে মা, খেয়েছিস?

হ্যা।...সেতো অনেক্ষন। এখন বিরিয়ানি বানাচ্ছি।

আঁ , সেকি। ....বিরিয়ানি।.....

হ্যা, তুমি নিশ্চই কিছু খাওনি এখনো, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও, আর শোনো, তাড়াতড়ি বেরিয়ে পারো, 

আজ রাতে আমাদের মেনু বিরিয়ানি, ক্যান্ডল লাইট ডিনার। মা এর তো শুটিং আছে বোধহয় আজ ফিরবেনা। আজ আমাদের চয়েস এর কিছু music from your favorite playlist. কেমন বলো, রাজি? 

রাজি, হ্যাঁ রাজিত বটেই। 

উফফ তুমি ভাবো , আমি রাখলাম অনেক কাজ পরে আছে। 

 চিন্তায় তাঁর এদিকে সকাল থেকেই পেট গুড়গুড় করছে, বেশ কয়েকবার ওয়াশরুম এবং দুবার নিচে লবির বাগানে গেছেন সিগেরেট খাবার জন্যে। ফেরার সময় সমীর বাবুর সাথে দেখা, মহা ধড়িবাজ লোক, সপ্রমোশন এর জন্যে খুব হন্যে হয়ে ঘুরছেন, র সব দিকে নজর। দেখা হতে চিবিয়ে চিবিয়ে হাসলেন,  স্যার, মেয়ে কে আকাশে পাঠাবেন , তা খুব ভালো, আজ কোনো রকেট লঞ্চ করবে বুঝি, একটু টেনশন এ মনে হচ্ছেন, , শুনে গা জ্বলে উঠেছিল, কিছু বলেনি, ২০৩৫ এও মানুষের মন গুলোর যদি একটু ইমপ্রুভমেন্ট হতো, কাজ দিতো। 

এদিকে আর একজন ও ভীষণ টেনশন এ আছে, পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে, কলকাতার সাথে সময় যেখানে পিছিয়ে আছে প্রায় সাড়ে দশ ঘন্টা। মধ্যরাতেও একটু স্নান সেরে এক কাপ জেসমিন টি নিয়ে এসে স্টাডি রুম এ এসে বসলেন তৃণা। তৃনা সেন kennedy স্পেসে সেন্টারে  National Aeronautics and Space Administration অর্থাৎ নাসা এর mission launching এন্ড preparing এর হেড অফ টি department . কিন্তু স্টাডি রুম এ বসলেই যে স্টাডি করা হতো, তাহলে তো কোনো কথাই থাকতোনা। কিছুতেই মন বাসাতে পারছেননা। এদিকে ঘুমোতে যেতেও পারছেননা। অনিকেত কে ফোন করতে গিয়েও থমকে গেলেন, অনিকেত যখন কোনো কিছুতে বিশেষ ভাবে টেনশন এ থাকে, এত বাজে ভাবে রেস্পন্ড করে, যে এই এত বয়সেও তাঁর চোখে জল এসে যায়। আহা মেয়েটা, মেয়েটা কি করছে যে, মেয়েটা বলতেই উদাস হয়ে গেলেন তৃণা । কে এই মেয়েটা তাঁর জীবনে, কেউ নয়। তবু এই ১৫ তা বছর ধরে, এক ছোট্ট চারাগাছকে তিনি মহিরুহু হবার স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছেন। কথাটা ভেবেই হাসলেন তিনি, একটু বেশি ভাবছেননা? একটু বেশি দাবি করে ফেললেন? যে মেয়ে জানেইনা তমালিকার অস্তিত্ব, জন্ম থেকে বড় হওয়া, কোথাও কোনো সূত্র তেই যেখানে তমালিকার সাথে তার এক সুতো ও সম্পর্ক নেই, পৃথিবীর অন্য গোলার্ধে বসে তিনি কি এই বুড়ো বয়সে মাতৃত্বের দাবি করলেন নাকি? না, তা নয়। অনিকেত জানেন। জন্ম দিলেই আর ছোট বেলায় আমার তাতে টা ব্যাবা টা বলে আদর করলেই আর গুচ্ছের খেলনা জামাকাপড় কিনে দিলেই কি মাতৃত্বের সব দায়িত্ব পূরণ হয়। হয়না বোধহয়। কোন ছোটবেলায় মেয়েকে যখন তিনি আকাশ দেখাতেন ছাদে গিয়ে তখন মেয়ে বলেছিলো, আমি স্পেস সায়েন্টিস্ট হবো, তারপরে অবশ্য কল্পনা চাওলা এর অভিযান এর কাহিনী টা দেখতে দেখতে খুব ভাই পেয়ে গিয়ে বাবার কোলে মুখ লুকিয়ে বলেছিলো না না আমি স্পেস এ যাবোনা। 

হটাৎ করে তৃণার সাথে আলাপ তার কিছুদিন আগেই। তৃনা দিয়েছিলো একটা আকাশ দেখার সফটওয়্যার, স্টিলারিয়াম বলে। যেটা অনিকেত প্রায় দুবছর পরে মেয়েকে প্লানটেরিয়াম থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসার পরে খোলে। মেয়ে আর বাবা সেদিন রাট ২টো পর্যন্ত তারা দেখে, ওই দেখো কালপুরুষের কুকুর ওটা, দেখো ওই কোণে ওই উজ্জ্বল তারা টা কি। পরেরদিন তৃনা শুনে ছেলেমানুষের মতন খুশি হয়ে গেছিলো। দেখেছো তোমরা, ইশ আমি ও যদি থাকতে পারতাম। তৃনার খুব ইচ্ছে ছিল অনিকেত এর সঙ্গে কোনো পাহাড়ের চূড়াতে বসে একসাথে তারা দেখে। এইসব অনেক উদ্ভট শখ তার মাথায় ঘুরতো। ঘন জঙ্গল এ ক্যাম্প। কুলুকুলু নদীর জল এ পা ডুবিয়ে বসে থাকা, ডিঙি নৌকোতে মাঝির হাতে করা ঝালঝাল তরকারি দিয়ে ভ্যাট খাওয়া আর ভেসে চলা, এমনি কত কি। শুধু মুখেই চলতো এসব, অনিকেত বলতো, শুধু তুই আমাকে স্বপ্ন দেখাস, আসলে তুই একটা মহা ভীতু, সমাজ কে ভয় পাস্, লোকে কি বলবে, এই সব। আর তাইতো আমাকে ছেড়ে যা কিছু আমরা ইচ্ছে করলেই করতে পারতাম সেই সব ছেড়ে চাকরি নিলি নাসা তে। কেন এদেশে ইসরো তে ভালো সায়েন্স করা যেতোনা? খুব ঝগড়া করতো দুজনে, ছেলেমানুষের মতো। 

আর বলতো কেন ঠাকুর এত দেরি করে আমাদের দেখা করালো ,  নাহয় নাই দেখা করাতো নাহয়। দরকার ই ছিলোনা, দেখা করানোর দুজন এক রকমের মানুষকে অথচ এতটা অসময়ে। ছেলেমানুষের মতো কাঁদতো তৃনা। বহুবার ইচ্ছে হয়েছে দৌড়ে এসে দুহাতে অনিকেত কে জড়িয়ে ধরে তার বুকে মুখ গুঁজে দিতে। বহুবার ইচ্ছে হয়েছে বলে চলো একসাথে সংসার করি, দুজনের চাহিদাই বড় সামান্য।উচ্চাশা নেই, জীবনধারণের জন্যে যেটুকু দরকার শুধু সেটুকু নিয়ে, ছবি তুলে আর গান শুনে কাটিয়ে দি সারাটা জীবন,  আমাদের তিল তিল ভালোবাসা দিয়ে তিলতিল করে গড়ে তুলি একটা সংসার। কোথাও কোনো খেঁচাখেঁচি নেই, অশান্তি নেই, ছবির মতো একটা সংসার। সেই ভালোবাসার সাক্ষী করে নিজেদের সবটুকু দিয়ে মানুষের মতো মানুষ করি আমাদের ছেলেমেয়েদের।

কিন্তু বলেনি সেকথা কোনোদিন তৃণা ,যা হবার নয় তা বলে  দুর্বল করে দিতে চায়নি অনিকেত কে। নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন আরো আরো। কিন্তু নিজের ভেতরের desire , সেগুলো থেকে পালাবেন কোথায়। নিজের ভেতর টা যেন ফালাফালা হয়ে যেত মনে হতো আর পারছেননা , কতবার অফিস এ বসে বসে কেঁদে ফেলেছেন। তারপরে চোখে কিচু পড়ার সেই পুরোনো অভিনয়। USA আসার পরে ভীষণ কষ্ট হয়েছে প্রথম প্রথম মানিয়ে নিতে। ভয়ঙ্কর কাজ পাগল দেশ। বেশিরভাগ মানুষকেই তৃণার হৃদয়হীন রোবট মনে হতো, সেইরকম সময়ে, যখন নিজের ভেতরটা ছিঁড়ে খুঁড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন কাজে মন দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। অনিকেত ও তখন নিজের জীবন যুদ্ধে নিজের মতন করে ব্যস্ত। দূরত্ব বাড়তে থাকে, ফিজিক্যাল দূরত্ব তুচ্ছ হয়ে যায় যদি মানসিক কোনো দূরত্ব না থাকে, কিন্তু যখন মানসিক দূরত্ব ক্রমশ দুর্গম হতে থাকলো, তখন তৃণা টালমাটাল হয়ে পড়লো জীবনে। নিজেকে শক্ত বলে অহংকার ছিল তার কিন্তু রক্ত মাংসের মানুষ তো, ভেতরের যুদ্ধের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাইরেটা ঠিক রাখতে পারছিলোনা। এক বছরের মাথায় চাকরি যায় যায় হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে এলো চরম ভর্ৎসনা, এমন এক জায়গায় কাজ করার সুযোগ পেয়েও এভাবে হেলায় হারানোর মূর্খতা ও পাগলামি নিয়ে। 

অনিকেত আর তৃণার জীবন আলাদা আলাদা চাকায় ঘুরতে থাকে। যে যার সংসারের চাকায়, যে যার মতন করে পিষ্ট হতে হতে। একে অপরের সাথে তখন আর কথাই প্রায় হয়না, যদিও তৃণা কোনোদিন ই আমি ব্যস্ত আছি, বা এখন হবেনা, এরকম কথা আজ পর্যন্ত তার মুখে শোনা যায়নি, বিবেকানন্দ পরে বড় হওয়া মেয়ে সে, তার মত ই হলো, মানুষ তখন ই কোনোকাজ এ বলে আমি ভীষণ ব্যস্ত, যখন সে অন্য আর একটি অন্য কাজকে সেই ব্যস্ততার অজুহাতে ঢাকা দিয়ে করতে চায়না। যে কাজ এর প্রায়োরিটি দেবে মানুষ, সে কাজের জন্যে সে সব সময় এ রেডি করে নেবে নিজেকে। তবু কিছুটা নিজের scheduler এর চেঞ্জ এ কিছুটা অনিকেত এর বারবার খুব ব্যস্ততাই তার ওই এক ই কথা মনে হয়, অনিকেত চায়না হয়তো বা আর। এইভাবে একটা কিছু না থাকা না দেখা সম্পর্ক কতদিন আর টেনে রাখা যায়, স্বপ্ন দেখার ও তো একটা ক্লান্তি আছে। হয়তো যে অনিকেত একদিন ছোট্ট ানী হয়ে স্বপ্ন দেখতো, সে অনি হয়তো বড় হয়ে গিয়ে স্বপ্ন ভেঙে বেরিয়ে যেতে চায়। তৃনা বড় অভিমানী। সে অনাদর সহ্য করতে পারে, অবহেলা নয়। তাই নিজের সমস্ত schedule অক্ষুন্ন রেখে সে অপেক্ষা করতে থাকে, কিন্তু এগিয়ে গিয়ে আর ডাকেনা অনিকেত কে।প্রথম প্রথম অনেক সময় যে সময় গুলোতে ভীষণ কষ্ট হতো তার মনে হতো কিকরে পারবে সে অনিকেত কে ছেড়ে সারাটা জীবন থাকতে, তখন লিখতো বারবার হোয়াটস্যাপ এ , পারবে তুমি আমাকে ছেড়ে সারাজীবন থাকতে? উত্তর এ কেমন যেন একটা দায়সারা ভাব থাকতো। তৃনা সামলে নিলো আসতে আসতে। যত ভেতরটা ছিঁড়ে শেষ হয়ে যেত, বাইরে থেকে তত ই শীতল শান্ত হয়ে উঠতো সে। মাঝেমাঝে মনে হতো পারছেনা এই যুদ্ধ করতে আর, তখন নিজেকে সামলানোর জন্যে, না, নিজেকে সামলানোর জন্যে whiskey এর botol বা pub এ গিয়ে বা night ক্লাব এর উদ্দাম নাচের মধ্যে সে নিজেকে ভাসিয়ে দিতেই পারতো। কিন্তু সে দিতো নিজেকে পড়ার টেবিল। এ। যতবেশি তার ভেতরটা চুরমার হয়ে যেত, তত বেশি সে নিজেকে ডুবিয়ে দিতো কঠিন থেকে কঠিন তর্ alogorthim এর মধ্যে।ম্যাথ আর ফিজিক্স ছিল তৃনার খুব ভালো লাগার জায়গা, সে গল্প এর প্লট চিন্তা করতে করতে ফিজিক্স এর অঙ্ক এর মধ্যে ডুবে যেতে পারতো। সে নিজেও জানতো তার চরিত্রের মধ্যে এক অদ্ভুত বৈপরীত্ব একসাথে বাস করে। একবার এক অনেক বড় মানুষ তাকে বলেছিলেন আমি তোমার মতন এত আধুনিক, আবার এক ই আটপৌরে, এত ছেলেমানুষ আবার এত matured , এত সেনসেটিভ আবার এত বুঝদার আমি আমার এই এতটা জীবনেও কাউকে দেখিনি। তৃণা শেখার জগতে ডুব দিলো, যত এগোলো, তত তার কাছে এক আশ্চর্য্য জগৎ খুলে যায়, জানার মধ্যে এত আনন্দ, শেখার মধ্যে এত সজীবত থাকে, ঘোর লেগে গেলো তার। মাঝেমাঝে খুব ইচ্ছে করতো অনিকেত কে সেই আগের মতন করে সব বলে, কিন্ত অভিমান বাধা হয়ে দাঁড়তো।

 তারপরে এভাবে কত বছর পেরিয়ে গেছে, অনিকেত ও কাজকে ধ্যান জ্ঞান করে এগিয়ে গেছে অনেক। মেয়েকে সমস্ত স্বাধীনতা দিয়ে আর সবরকম exposure দিয়ে বড় করেছেন, চেয়েছেন নিজের জীবন ও নিজে বেছে নিক। তিনি শুধু আগলে রেখে সঠিক ডাইরেকশন টা যেন দেখাতে পারেন।  মাঝেমাঝে বহু ঝড় উঠেছে, বহুবার মনে হয়েছে বুঝি পারবেননা।  অনিকেত চাননি রুপোলি পর্দার মোহে পড়ুক তাঁর মেয়ে, পৃথিবীটা তিনি অনেক বেশি দেখেছেন, কত জীবন ওই মরীচিকার মধ্যে ঘুরে ঘুরে শেষে শেষ হয়েছে নায়িকার ব্যাকস্টেজে ডান্সার হয়ে কাপর্দক শূন্য অবস্থায় অথবা দু চারটে সিরিয়েল এ চান্স পাবার পরে প্রচন্ড frustrated হয়ে একটা অস্বাভাবিক জীবন এর মধ্যে অথবা ইভেন মেন্টাল assylym এ তা ভেবে তাঁর বুক কেঁপে উঠেছে। 

তাঁর নিজের জীবনেও এসেছে বহু মহিলা, যত উন্নতি করেছেন, যত প্রমোশন হয়েছে, তত মাছির মতো ছেঁকে ধরেছে নানান প্রলোভন।প্রথম প্রথম সেই সমস্ত attention এ শরীরের রক্ত চলকে যে ওঠেনি বা নিজেকে  নিয়ে যে তাঁর গর্ব হয়নি, তা নয়। কিন্তু দিনশেষে নিজের শিক্ষা সংস্কার আর ওই যে যে মন টাকে তার তৃণা সাবথেকে বেশি শ্রদ্ধা করতো, ভালোবাসতো, সেই নিষ্কলুষ মনটার জন্যে  তাঁকে কখনোই সিল্কের শাড়ির পিছলে পড়া তে, বা বাঁকা ভুরুর অশ্লীল ইঙ্গিতে ডুবিয়ে দিতে পারেনি। 

এদিকে যত তাঁর পাশে ওই মাছির সংখ্যা বেড়েছে, ততই তৃনা দূরে সরে গেছেন। দুজনের মধ্যে দূরত্ব যেতনা বেশি অভিমান আর বেদনা সেই দূরত্বও কে বাড়িয়ে দায় আরো শতগুন। উভয় এই ভাবে ও কি আমায় দয়া করতে চাইছে? দরকার নেই আমার সে দয়ার , ও থাকুক ওর মতন করে, সত্যি ই তো, আমাদের মধ্যে তো কোনো সামাজিক সম্পর্ক নেই, আমার উচিত নয়, ওর জীবনে ইন্টারাপ্ট করা। 

এভাবে সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে, ঘুরতে থাকে বিধাতার সাজানো গল্পের রঙ্গমঞ্চ ও। মেয়ের যখন সেভেন কি eight এ চলছে স্কুল, অনিকেত এর জীবন তখন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, স্ত্রী, তাঁর মডেলিং এবং অভিনয়ের দুনিয়াতে ভালোই খ্যাতি লাভ করায় হয়ে গেছেন বেশ খানিকটা বেশি ব্যস্ত। অনিকেত নিজেও চেয়ারম্যান হবার পর থেকে schedule এ অনেক চেঞ্জ এসে গেছে তাঁর। খ্যাতি, রোজগার, প্রতিপত্তি এসব ই নেশার মতন, খুব কম মানুষ ই টাকা এর ব্যালান্স গুলো করে চলতে পারে।অনিকেত এই নেশায় পড়লেন। কাজ আর বাড়ি, বাড়ি আর কাজ।মাঝে ক্লাব। আউটডোর টুর। ইত্যাদি ইত্যাদি।  যে ছেলে একদিন বলতো, জীবনধারণের জন্যে আমার যা হোক একটা কিছু হলেই হবে, আমি শুধু একটু ভালোভাবে থাকতে চাই, আর প্রাণ ভোরে বাঁচতে চাই, সেই ছেলে পরিপূর্ণ বড়লোক হয়ে গিয়ে, সেই কথা ভুলে গেল। ছবি আঁকার ক্যানভাস এ ধুলো জমে গেলো, শেষের কবিতা বই এর রেক এর এত পেছনে চলে গেলো, যে ওটা যে কোনোকালে ছিল, তাই আর মনে হলোনা। যে ক্যামেরা টা তাঁর একসময় সবসময়ের সঙ্গী ছিল, সেই ক্যামেরা তাঁর অসহ্য লাগতো, সেই ক্যামেরা ভীষণ আউটডেটেড মনে হওয়াতে ভীষণ দাম দিয়ে খুব লেটেস্ট ক্যামেরা, লেন্স, স্ট্যান্ড সব এ এলো বাড়িতে, শুধু এলোনা সেই তার পরিপূর্ণ ব্যবহারের উদ্যোগ। ফলত লেন্স বন্দি হয়ে থাকলো, আলমারির মধ্যে। মেয়ের সাথে যখন খাবার টেবিল এ দেখা হয় মনে হয় যেন কতটা বড় হয়ে গেছে মেয়েটা। কিন্তু সেভাবে কথা বলা আর হয় কোথায়, প্রতি মাসে একবার করে পাঁচতারা হোটেলে খেয়ে ফিরে আসেন। কিন্তু সেই ভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা আর কথা হয়না। 

এমন সময় একদিন তৃনার র ফোন,

ডিনার এর সময়, আগে টেক্সট না করে তো কখনো এভাবে তৃনা ফোন করেনা। 

কি হলো আবার, তৃণার ফোন এ এখন আর আগের মতন অনুভব হয়না অনিকেত এর, কিছুটা বিরক্ত এই লাগে বরং, হ্যা বল। 

এখন, মনে মনে ভাবলো এইবার তৃনার ধানাই পানাই শুরু হবে, হয়তো বলবে, সরি তোমাকে বিরক্ত করে ফেললাম, বা ইত্যাদি অত্যাদি। 

কিন্তু তৃনা তার ধার দিয়েও গেলোনা। 

হ্যালো, শোনো, বাবিনের কোন ক্লাস এখন?

এইটে।কেন। 

ও কি করছে?

মেয়ে পাশেই খাচ্ছিলো, সবে উঠে গেছে , স্ত্রী তাকিয়ে আছেন দেখে অস্বস্তিতে পড়লেন অনিকেত।

বললো শোন, আমি এখন একটু ব্যস্ত পরে কথা বলছি। 

না, পরে নয়, আজ ই কথা বলতে হবে, খুব দরকার আছে। 

এইরকম জোর কোনোদিন ই করেনি তৃণা , একটু অবাক লাগলেও, অনিকেত এর ইচ্ছে হলোনা ঠিক কথা বলতে। সে বললো আচ্ছা একটু পরে করছি। 

পরে তুমি আর করবে কিনা I am not sure . I will call you back after হাফ যান hour .ধোরো। 

আধ ঘন্টা পরে , স্ত্রী কে ভুলিয়ে ওপরের ঘরের সামনে যে হ্যাঙ্গিং লন টা আছে তাঁর সেখানে গিয়ে বসলেন। আগে নিজে হাতে বাগান করতেন। এখন মালি আছে, তার কাজের তদারকি পর্যন্ত আর করার সময় হয়না। 

ঠিক আধ ঘন্টায় পঃ এলো,

হ্যালো,

শোনো, ইসরো অল ইন্ডিয়া লেভেল এ একটা কোচিং ট্রেনিং দেয় , ক্লাস ৮ এর পর্ থেকে স্টার্ট হয় সেটা। কিন্তু ওতে চান্স পাওয়াটা একটু ডিফিকাল্ট, তার আগে একটা টেস্ট হবে, যেটার রেজিস্ট্রেশন এর লাস্ট ডেট তোমাদের ওখানে আজ রাত ১২টা। I just came to know about the test আর সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে জানাচ্ছি তাই, প্লিজ এখুনি রেজিস্ট্রেশন কারো, নাহলে the chance will be missed . 

ইসরো, টেস্ট, অনিকেত এর মাথার ওপর দিয়ে যেতে থাকলো সব। ইটস অলরেডি ১০, হাতে একটা রেড ওয়াইন নিয়ে অনিকেত হেলান দিয়েছে বাগানের কৌচে, এখন আবার এ কি ঝামেলা শুরু করলো তৃণা। 

কিসের টেস্ট, আমিতো কিছুই বুঝতে পারছিনা। কি হবে ওই টেস্ট দিয়ে। 

মানে? ইসরো প্রভিডেস ফ্রি কোচিং এন্ড ফাউন্ড বেস্ট ব্রেন ফর ঠিক country .

দ্যাখ তৃণা , এসব কেন করছিস এই রাত দুপুরে। ওর ওপরে আমি কিছু জোর করে চাপিয়ে কেন দেব, ওর যেটা ইচ্ছে হয়, ও সেটা করবে। 

ওর কি ইচ্ছে হয়, সেটা আর তুমি জানো অনিবাবু? শোনো Mr অনিকেত সোম, একজন মানুষের সামনে যদি তুমি খিদের মুখে শুধু একটি পদ সাজিয়ে রাখো, তাহলে সে ওই একটি পদ ই তৃপ্তির সাথে গ্রহণ করবে। কিন্তু তার সামনে যদি তুমি অনেক গুলো পদ রেখে দাও, তাহলে, সে সব গুলো টেস্ট করে তার মধ্যে বেস্ট পদ টা পছন্দ করে নিয়ে, পেট ভোরে সেটাই খাবে। সবার টেস্ট সমান নয়, এখানে চাপিয়ে দেওয়ার কথা হচ্ছেনা, কথা হচ্ছে তার চোখের সামনে অপসন গুলো মেলে ধরা। বেছে নিতে দিও ওকে। কিন্তু অপসন গুলো যদি নাই দেখানো হয় তাহলে ও বাচবে কি করে। 

ভালো লাগছেনা, সারাদিনের পরে তৃণার এই জ্ঞান অনিকেতের। অসহিঞ্ষু ভাবে বলে উঠলো, দেখ ছোটবেলার আকাশ দেখার শখ সবার ই থাকে, তার মানেই যে তাকে স্পেস সায়েন্টিস্ট হতে হবে, তার কোনো মানে নেই। তোরা সায়েন্টিস্ট রা ভাবিস এই দুনিয়াতে সাইন্স ছাড়া বোধহয় আর কিছুর ই অস্তিত্ব নেই। ববিন কি সুন্দর ডান্স করে জানিস, কত জায়গা থেকে ওর ডান্স এর প্রোগ্রাম এর ডাক আসে। 

ডান্সের প্রোগ্রাম করা আর by profession ডান্স কে বেঁচে নেওয়া is different . তুমি নিজেও তা জানো। 

সিরিয়াল , ওকে। রুপোলি পর্দার আকর্ষণ সব সময় ই মোহময়ী। কিন্তু তুমি জানোনা, কতটা unstable ওই দুনিয়াটা। মরীচিকার মতো। আজ আছে, কাল নেই। জানোনা যে কত জীবন ওই মরীচিকার মধ্যে ঘুরে ঘুরে শেষে শেষ হয়েছে নায়িকার ব্যাকস্টেজে ডান্সার হয়ে কাপর্দক শূন্য অবস্থায় অথবা দু চারটে সিরিয়েল এ চান্স পাবার পরে প্রচন্ড frustrated হয়ে একটা অস্বাভাবিক জীবন এর মধ্যে অথবা ইভেন মেন্টাল assylym এ।

shut up . just shut up . চিৎকার করে উঠলেন অনিকেত। তিনি জানেন,  রুপোলি দুনিয়ার হাতছানি সবসময়েই খুব মোহময়ী।  তৃনা কি করে জানবে, মেয়েকে বড় করতে কত ছোটোখাটো প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছেন তিনি। সুন্দরী মেয়ে, বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো প্রলোভনে জেরবার সংসার। রুপোলি দুনিয়ার হাতছানি সবসময়েই খুব মোহময়ী।অনিকেত কোনোদিন ই চাননি রুপোলি পর্দার মোহে পড়ুক তাঁর মেয়ে, পৃথিবীটা তিনি অনেক বেশি দেখেছেন, যে কথাগুলো তৃনা বললো তার প্রতিটা কথা যে কতটা সত্যি, সেটা জানেন বলেই তিনি এতটা জোরে চিৎকার করে উঠলেন।আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে তোর ভাবার দরকার নেই, তারজন্যে আমি আছি, ওর মা আছে, তুই তোর নিজের সংসার দেখ। 

তৃণার মনে হলো তাকে কেউ চাবুক মারলো, এত অপমান। অনেক্ষন স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো তৃনা। গাল দিয়ে জল পড়তেই উঠে পড়লেন। আর আধ ঘন্টা পরে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং শুরু হবে, একবার ডকুমেন্টস গুলোতে চোখ বোলানো দরকার। ওয়াশরুম এ গিয়ে চোখে মুখে জল এর ঝাপ্টা দিয়ে এসে বসলেন। ঘড়িতে তখন দুপুর ১২টা , মানে ইন্ডিয়ার সময় অনুযায়ী এখন সময় রাট সাড়ে ৯ টা। কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে বসে রইলেন, তারপরে দুটো msg লিখলেন ইনস্টাগ্রাম এ ফেইসবুক এ। খুব ফাস্ট। কিন্তু করতেই হবে ইটা। বার করলেন খুঁজে অনামিকা সোম এর প্রোফাইল, তারপরে খুব widely পোস্ট করলেন। 

অনামিকার জন্যে তার বয়সোচিত একটা একটা ভালো ভালো বই, তার ভেতরে কিছু ভালো quote তৃনা ঠিক সময়ে পৌঁছে দিতো, খুব যত্ন করে। 

তৃনা ইন্ডিয়ার কিছু সোশ্যাল awerness এর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে রাখতো সবসময়, সেখানে একদিন একটি মেয়েকে জিজ্ঞাসা করতে শোনে, 

একদিন হটাৎ মেয়ে বললো আমি নাচ ছেড়ে দেব। 

কেনোরে,

এই নাচ গুলো ভালো লাগেনা, কত্থক শিখবো , তবে পরে এখন 

অনামিকা বড় , ৭, ৮....দূর থেকে তাকে দেখে মাঝেমাঝে তৃনা, দেখে তার অনিকেত কে, সামনের চুল গুলোতে আরো একটু পাক, গোঁফ রাখলে কোনোদিন ই ভালোলাগেনা তাকে, তবু যে কেন গোঁফ রেখেছে, কিছু বলেনা , আগে হলে লিখতে বসত গোঁফ টা কাটো , এখন গালে হাত রাখে ছবিতে, চোখে পরে দাড়ি কাটতে গিয়ে একটা কাটা দাগ, 


তারপরে যে কিভাবে এতগুলো বছর কেটে গেলো, ছোট্ট বাবিন কে ঘিরে বছর গুলো যেন দ্রুত চলতে থাকে, ৭, ৮ বছর বয়স থেকে হটাৎ কিছু চেঞ্জ চারপাশের জগৎটাকে চেনার জানার ইচ্ছে, অনিকেত এর মনে হতো তিনি জিতেছেন, মেয়েকে সঠিক পথ দেখতে পেরেছেন। তারপরে যেন ঝড়ের মতন সময় পেরিয়ে যাওয়া, সেই একদিন রাতে তৃনার হটাৎ ফোন, আজ এ লাস্ট ডেট ইসরো একটা ট্রেনিং শুরু করছে, আজ এ লাস্ট ডেট, রাত ১২ টার মধ্যে এপলাই করতে হবে, অনামিকার তখন ক্লাস ৮। অনিকেত বলেছিলো আরে ছোট বেলায় ঐরকম আকাশ সবাই দেখে, তুই এত সিরিয়াস নিসনা , সেই প্রথম তৃনা রাগে কষ্টে ফেটে পরে , মুখে শুধু বলতে পারে, যাকে নিয়ে কথা তাকে নিজে মুখে বলতে দাও, সেটা। উত্তেজিত কথা বার্তাটা তাকে নিয়েই বুঝতে পেরে, বাবার পাশে এসে দাঁড়িয়ে খুব শান্ত গলায় মেয়ে বলেছিলো, আমি apply করবো। এমনি এত ট্রেনিং নি এটাত ভালো একটা ট্রেনিং কিছু না হলেও ফিজিক্স ম্যাথ তা স্ট্রং হয়ে যাবে।

তারপরে সময় আরো দ্রুত পেরোতে থাকে। মেয়ের আইরনিটিক্স এ rank করা, admission , সফলতা, তাঁর চুলে আরো একটু পাক ধরা, আর তারপরে আজকের দিন। 

অনিকেত বাড়ি এসে দেখেন বিরিয়ানির গন্ধে চারিদিক ম ম করছে, মেয়ে সব কিছু রেডি করে , এত্ত জামাকাপড় নিয়ে trolly খুলে বসেছে, একি রে, কি প্যাক করছিস? সময় পাবনা পাপাই, এর পরে পরপর সব এসে যাবে, আজ রেজাল্ট ডিক্লেয়ার, পরশু কাউন্সেলিং, তারপরে।..মেয়ে বলে যেতে লাগলো।...অরে দাঁড়া দাঁড়া , তুই কি ধরেই নিয়েছিস, যাচ্ছিস, হ্যা , আর শুধু আমিতো নয়, তুমিও যাচ্ছ, কি কি নিতে চাও দাও তাড়াতাড়ি, তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দি। আরে আমি মানে।..দাঁড়া রেজাল্ট বেরোক।.......অনিকেত এর কেমন যেন একটা nervous লাগছে নিজেকে, বাবিন যেন হটাৎ অনেকটা বড় হয়ে গেছে।কেমন একটা রহস্যময়ী লাগছে ওকে, why are you getting nerbous papai ? is there anybody whom u know ? আমি আমি কাকে জানবো ? dr তৃনা বসু।  হ্যা চিনি আমার এক জুনিয়র। ও তাই, আমিও চিনি ওঁকে তবে অনেক অন্য ভাবে, আর এই জার্নি টার জন্যে অনেকদিনের অপেক্ষা আমার, যবে থেকে বড় হয়েছি, বুঝতে শিখেছি। অনিকেত তাকিয়ে থাকেন মেয়ের দিকে, মেয়ে নিচে বসেই বাবার হাঁটুতে একটা হাত রাখলো, আলতো চাপ দিলো ঠিক ছোটবেলাতে কাউকে যখন বেস্ট ফ্রেন্ড বলতেন বা বড় হয়ে আমি আছি, ঠিক সেইরকম লাগলো অনিকেত এর। মেয়ের  মুখে তখন অপূর্ব এক হাসি। 

কেন্টাকি এয়ারপোর্ট এ নিজেই আনতে আসতে চেয়েছিলো তৃনা। কিন্তু অনিকেত দেয়নি , কেমন যেন একটা টেনশন হচ্ছে, এখনো বুঝতে পারছেননা কি হতে চলেছে, মেয়ের মধ্যে যে কিছু একটা চলছে, সেটা উনি জানেন, কিন্তু কি চলছে সেটা ঠিক বুঝতে পারছেননা। তৃনাও জোর করেননি, ভয় তাঁর ও হচ্ছে, এতদিন পরে , এতবছর পরে , কি হলো এই দুজন মানুষের, বয়স কমে গেলো নাকি, এইরকম উত্তেজনা তো হতো সেই টিনএজ এ, মা বাবাকে লুকিয়ে রাখা কোনো চিঠি বা গোলাপ ফুলের পাপড়ি চোখের সামনে আসার ভয়ে। দুজনেই ভাবছেন, হচ্ছেটা কি। অনামিকা, যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে। দুর্দান্ত রাঙ্ক হয়েছে, যদিও মেয়ে রাঙ্ক নিয়ে যে খুব একটা কিছু ভাবছে, তা মনে হয়না, সে দারুন খুশি, যেন দুটো ডানা পেয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে চলছে কনস্ট্যান্ট কথা , সেই ছোট্ট বেলার মতন, তফাৎ একটাই তখন জিজ্ঞাসা করতো এটা কি ওটা কি, আর এখন বলে, বোঝাতে থাকে তার পাপাইকে এটা কি ওটা কি, ফলে তখনো অনিকেত বেশি ভাবনার সময় পেতেননা, না আর এখনো বেশি ভাবার সময় পাচ্ছেন না। একবার বললেন, হারে তোর মনখারাপ হচ্ছেনা, এখান থেকে তো আমি একা ফিরবো তোকে রেখে, তোর পাপাইকে একা ছেড়ে দিতে তোর মনখারাপ হচ্ছেনা, বলতে গিয়ে তাঁর গলা ধরে এলো। না তো ওমা, মনখারাপ হবে কেন, আমি কি আজীবন এখানে থাকবো নাকি, কিছু জিনিস শিখবো জানবো তার জন্যে এই দুটো বছর তো আমাকে দিতেই হবে বলো। আর তুমি াক ফিরবেই বা কে বললো, দ্বিতীয় কথাটা বুঝতে পারলেননা অনিকেত, ববিন এখানে দু বছর থাকবে সেটাই তাঁর মনে ঘুরছে, তাই প্রথম কথার পরিপ্রেক্ষহীতে বললেন, ও কথা সবাই বলে। তারপর র কেউ ফিরতে চায়না। যারা ফিরতে চায়না, তারা সবাই কি সুখ স্বাছন্দের জন্যেই থাকে, পাপাই, নাকি তাঁরা ফিরে যাবার মতন কোনো জায়গা পাননা , তাই যায়না, মানে, কি বলতে চাইছে বাবিন। ববিন তখন আবার অনামিকা সোম, জানালার বাইরে মেঘের দিকে তাকানো সেই মৌনী সুন্দর মুখ এর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুকের মধ্যেটা যে ক্রমশ কানায় কানায় ভোরে উঠছে, তা বুঝতে পারছিলেন তিনি, সবাই বলেন না, ভগবান কখনো পুরোটা নিয়ে নান না, কিছু দিলে, ঠিক কিছু ফিরিয়ে দেন, তাই বোধহয়। 

এয়ারপোর্ট থেকে নেমে আবার ব্যাবিনের পাগলামি, আমরা হোটেল এ কেন যাচ্ছি পাপাই, 

তো কোথায় যাবো?

তুমি জানোনা?

সবসময় হেয়ালি ভালো লাগেনা বাবিন , এই রাতে কার বাড়ি যাবো, 

যাওয়া যায়না তো?

ঠিক আছে, মেয়ে আর কিছু বল্লোনা। দুজনে এসে হোটেল এ উঠলেন। খুব ভালো হোটেল, একদম ছোট খাটো একটা এপার্টমেন্ট ই তৃনা বুক করে রেখেছিলো, দুটো রুম, একটা ছোট্ট করিডোর, পেছনে ব্যালকনি, কফি স্টেশন সব ই পার্সোনাল। মেয়ের বেশ পছন্দ হয়েছে। অনিকেত ও স্বস্তিতে। খুশি খুশি দুজনে ডিনার করে দু ঘরে শুতে গেলেন। 

সকালে উঠে মেয়েকে ডাকতে গিয়ে দেখেন, মেয়ের দরজা খোলা, বিছানা পরিপাটি, কোথাও নেই, একি গেল কোথা , তারাতারি ফোন করতে গিয়ে দেখেন একটা ভয়েস মেইল,পাপাই তুমি ঘুমোচ্ছ বলে, আর ডাকলামনা , আমি নিচে পাঠানো এড্রেস তাই যাচ্ছি, তুমি ফ্রেশ হয়ে চলে এসো। 

কি এড্রেস আর ভালো করে দেখলেননা, অনিকেত, তারতারি তৃনা কে পঃ করলেন, ওকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, ও নিশ্চই চিনবে, দূর ছাই , তৃনার ফোন এ লাগছেনা কেন, উফফ. মেয়েটা যে কি করে, তারতারি ফ্রেশ হয়ে এসে, গাড়ি বুক করলেন, এড্রেস টা দিয়ে উৎকন্ঠা নিয়ে গাড়িতে বসলেন। গাড়ি চলতে শুরু করতে হটাৎ তাঁর মনে হলো, চারপাশের রাস্তা ঘাট ভীষণ চেনা লাগছে ভীষণ। দরজার ডোর বেল এ হাত দিয়ে,











Thursday, 4 November 2021

ভূত চতুর্দশী, চোদ্দ প্রদীপ, অলক্ষী বিদায়, লক্ষী পুজো, কালীপুজো

আমাদের ছোটবেলাতে দিওয়ালি কি জানতামনা, জানতাম শুধুই কালীপুজো। আর জানতাম এটা সবথেকে আনন্দের দিন। দূর্গা পুজো চলে যাবার পরে , শীত শীত ভাবটা ক্রমশঃ বাড়ছে, দূর্গা পুজো চলে যাবার মনখারাপ তখন ও ছেড়ে চলে যায়নি, এমন এক সময় থেকে কালীপুজোর প্রস্তুতি। প্রস্তুতি বলতে বিশেষ কিছুইনা, একদম ছোটবেলাতে বাবা মোমবাতি কিনে আনতো আর ফুলঝুরি, রংমশাল, চরকি। সেই সাদা সাদা প্যাকেট এ ধপধপে সাদা মোমবাতি আর কাগজের প্যাকেট এর একপাশে একটা মেয়ে ফুলঝুরি হাতে দাঁড়িয়ে, অপরপাশে একটা বাচ্ছা ছেলে মোমবাতি হাতে দাঁড়িয়ে এইরকম ছবি দেওয়া কাগজের প্যাকেট এর ভেতরে ঈষৎ স্লেট কালার এর ফুলঝুরি, এই দুটো জিনিস দেখলেই বুকের ভেতরটা আনন্দে লাফিয়ে উঠতো। গোটা বাড়ি সাজানো হবে মোমবাতি দিয়ে, মা মাঝখান থেকে আধখানা করে দিতো মোমবাতি গুলোকে, তখন বুঝতামনা, ভাবতাম ওটাই বোধয় করতে হয়, এখন বুঝি, সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার এ আনন্দের সরঞ্জাম কেও রেখেঢেকে বুঝে শুনে খরচ করতে হতো। তিরিশ বছর আগে একথা জানা সবার ই ছিল হয়তো, কিন্তু এখন প্রাচুর্য্যের পরিমানের মধ্যে সেদিনের সেই ইতিহাস ঢাকা পরে গেছে। অর্থ আর আনন্দ সামন্তলারে কোনোদিন ই চলেনি, তাই ওই বুঝে খরচের মধ্যে কোথাও কখনো আনন্দের ঘাটতি হয়নি, বরং, ওই মোমবাতি, ফুলঝুরি , চরকি থেকেই আবার বেশ কিছু বেঁচে যেত, পরের বছরের জন্যে, বাবা বলতো এই দেখো আমার মিতব্যয়ী মেয়ে, এখান থেকে আবার বাঁচিয়ে রাখছে। আমার দিদা মানে মেজদিদা বলতেন, কিপ্টে বলে বদনাম করোনা তোমরা ও আমাদের লক্ষী মেয়ে। মেজদিদা এ পৃথিবী থেকে চলে যাবার আগে পর্যন্ত আমাদের বেশির ভাগ ছোটবেলায় কেটেছে, মেজদিদা দাদুদের পাঁচলার বাড়িতে। বিশাল তিন মহলা জমিদার বাড়ি, এত পুরোনো হয়ে গেছে যে জায়গায় জায়গায় ইঁট খুলে পড়া , বালি পড়া, ভেঙে পড়া পাঁচিল, ফুটিফাটা মেঝে। বিশাল বাগানে চাঁপা, হাস্নুহানা, নারকেল সুপুরি থেকে কোন এমন ফলের বা ফুলের গাছ বাকি ছিলোনা , লতিয়ে লতিয়ে তিনতলার ছাদ পর্যন্ত ওঠা মাধবীলতা আর অপরাজিতা, ছাদ টা ছিল আমার সবথেকে প্রিয় জায়গা, বিশাল ছাদ , একপাশে ঠাকুরঘর। ছাদের কোথাও ভাঙা, কোথাও খুব শেওলা, সেসব জায়গায় যাওয়া বারণ। একদম মাঝের চাদটাতেই যাবার অনুমতি ছিল। সেটাও কম কি, একধারে শুকোতো তেঁতুল, ছোবড়া, এসব। দূরে দেখা যেত দীঘি, শোনা যেত সন্ধ্যায় আজানের শব্দ। দূরের কালীবাড়িতে সন্ধ্যারাতির ঘন্টাধ্বনি। আমি আর দিদি হাঁ করে শুনতাম, দেখতাম। এঘর ওঘর করতাম দিদার পায়ে পায়ে, দুপুরে বড় বড় জানলায় বসে পাথরের থালায় রাখা গুড় তেঁতুল খেতাম চুরি করে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে বাঁটুল দি গ্রেট পড়া বা দিদার কাছে শুয়ে শুয়ে পুরাণের গল্প শোনা। ভেতর বাড়িতে বড় পুকুরের ধারেই ছিল তুলসী তলা , দিদা চান করে উঠে তুলসী তলায় পুজো করে তবে ভেতরে ঢুকতো। আমি মেনি বেড়ালের মতন পায়ে পায়ে ঘুরতাম। লক্ষী পুজো , কালীপুজো র সকালে আল্পনা দেওয়া শেখাতো দিদা, আমি আর দিদি দিতাম। সিঁড়িতে সিঁড়িতে লক্ষীর পা আঁকা, সেই তিনতলার ঠাকুর ঘর পর্যন্ত।ঠাকুর ঘরটা ছিল সবথেকে আকর্ষণীয় আমার কাছে। লোহার শেকল খুলে ভেতরে ঢুকলেই ধুপ ধুনো কর্পূর চন্দন সবকিছু মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ থমকে থাকতো, অনেকটাই বড় ঠাকুরঘর। একদিকে লাল বেদির ওপরে ঠাকুরেরা সবাই তারপরে মাথার কাছে লক্ষীর ঝাঁপি টাঙ্গানো , লম্বা একটা জানালা। তার নিচে কতগুলো বই রাখা, কি কি বই ছিল সব এখন আর মনে নেই। কালীপুজোর রাতে ছাদে এই এত্ত বড় করে আল্পনা আঁকা হতো, মাঝখানে থাকতেন লক্ষী, নারায়াণ, কুবের। দূরে প্রায় অন্ধকারে থাকতো গোবরে তৈরি অলক্ষির মূর্তি , সন্ধেবেলায় গা ধুয়ে এসে কোনোরকমে জড়ানো চুলের গোছা ভালো করে আঁচড়ানোর পরে চিরুনিতে উঠে আসা চুল দিয়ে তৈরি হতো ওই অলক্ষীর মাথার চুল। সব বর্ণনা ঠিক মনে নেই আমার, আমার এক দিদি রিসেন্টলি খুব সুন্দর করে বর্ণনা করেছে কালীপুজোর দিনের এই অলক্ষি বিদায় আর লক্ষী পুজোর। আমার মনে আছে ঠাকুর মশাই এসে বাঁ হাতে কোনোরকমে একটি ফুল ফেলে দিলে, তাকে কুলোর বাতাস দিয়ে দূরে পুকুরের ধারে বা বাঁশবনে বিদায় করে আসা হতো। আর ছাদের মাঝখানে মস্ত করে করা আল্পনার মধ্যে শুরু হতো লক্ষী নারায়ণ কুবেরের পুজো। আলো আর মঙ্গল শাঁখ এর মধ্যে লক্ষী স্থাপিত হতো অন্দরে। সমস্ত অন্ধকার জায়গায় জ্বলে উঠতো আলো। 







Monday, 13 September 2021

বেশ অনেকগুলো দিন পরে, আবার এই সময় টাতে আমার অকাজের জায়গা বা আমার খুব নিজের জায়গাটা খুলে বসলাম। আগে, ২০১৮ এর অনেকটা সময় বিশেষ করে, ওই যে মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন ...এই সময় ১০টা নাগাদ রাতের খাওয়া শেষ করে, দিনের কাজ গুলো গুছিয়ে রেখে, সেদিনের মতো সব কাজ শেষ করে এসে বসতাম আমার এই মোহনার ধারে, সারাদিনের রোজনামচা লিখে রেখে তবে শুতে যেতাম। আর চোখ থাকতো স্ক্রিন এর ওপরে, ডানদিকে গুগল+ এর নোটিফিকেশন এর ওপরে, ওই যে লাল হয়ে যেটাতে লেখা থাকতো, সেইদিনের কোনো বিশেষ বার্তা এলো কি এলো না, এইভাবেই আমার কাজের সময়ের কিছুটা চুরি করে আমি সযত্নে দিয়ে রাখতাম এই মোহনার ধারে বসার জন্যে। আর মনের মধ্যে থাকতো এক অনন্য অস্ফুট অপেক্ষা। এই মোহনার ধারের অদ্ভুত ওই নোনা হাওয়ায় যেন আমায় সত্যি এক স্বপ্নরাজ্যে নিয়ে যেত। 

কাটলো একটা বছর। সময়ের আড়ালে আবডালে, আদোরে আবদারে, বাস্তব আর স্বপ্নের মেল্ বন্ধনে অনস্বীকার্য পরিবর্তনের আলতো ছোঁয়ায় পুরোনো কিছু সময় বারবার উঁকি দিয়ে যেতে থাকলো। এ এক মহা মুশকিল আমার, স্মৃতিশক্তি টা বাবার আনুকূল্যে ছোটথেকে একটু বেশিমাত্রায় প্রখর। কোনোকিছুই ভুলিনা ছাই। তার ওপর আবার আছে commitment আর consistency এর জ্বালা। একবার কোনো অভ্যাসে পেয়ে বসলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে রীতিমতো নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। করছিলাম ও এই কয়দিন ধরে। সমাধান পেলাম ওই যে সেই একটাই জায়গায়। লাল শাড়ি তে গাঢ় ঘন হয়ে আসা সন্ধের শাঁখ ঘন্টা ধুপ ধুনো আর ঢাকের শব্দের মধ্যে দিয়ে সেই আমার পরম শান্তির জায়গা থেকে ভেসে আসা অমোঘ আশ্বাস, যা বহুবার বহুরকম ভাবে আমাকে আগলে রেখেছে। সেই জায়গা। সেখান থেকে কিছুটা বকুনি ই খেলাম যেন, যেন মনে হলো, আবার তুই এসব ভাবতে বসলি বুঝি? মনখারাপ এর সব আয়োজন তোমার নিজের ই করা। খুব বোধয় ভালোলাগে? মনখারাপ করতে? বলেছি না সব কিছু কালের নিয়মে ছেড়ে দিতে। এইরকম ই কত কি। চারপাশে তখন ঘোর লাগানো নিস্তব্ধতার মধ্যে শুধু ওই সন্ধ্যারাতির একটানা অবিরাম ব্যাপ্তিহীন শব্দ আমার বুকের মধ্যে উথাল পাথাল লক্ষ দামামার শব্দকে খুব ধীরে ধীরে শান্ত করে দিলো। 

চোখের সামনে রইলো শুধু জ্বলজ্বলে ওই ত্রিনয়ন, গলায় লাল জবা আর অপরাজিতার মালা, আর চারপাশে ধুপ ধুনো কর্পূরের গন্ধ। আমাদের বোঝার বাইরে, আমাদের জানার আড়ালে প্রতিনিয়ত আমাদের নিয়তিকে যে অসীম শক্তি পরিচালনা করে চলেছে, সেই শক্তির অনুভূতি আমাকে যেন কি নিশ্চিন্তের এক জায়গা দিয়ে গেল। তাকে বর্ণনা করার ভাষা আমার নেই। তাকে শুধু বোধহয় অনুভূত করা যায়। আপনা হতেই সেই শক্তির কাছে হাত জড়ো হয়ে যায়, মাথা নত হয়ে যায়, ভালোবাসা আর আর ভক্তি কখন যেন এক হয়ে সমস্ত ভয় ভাবনা কে চোখের জলের সাথেই ভাসিয়ে দিয়ে আত্মবিশ্বাস এ পরিপূর্ণ করে দিয়ে যায়। সীমাহীন কে সীমার মধ্যে, আমাদের একান্ত আপনার করে ধরে রাখার কি অমোঘ সৌন্দর্য্য, কি অসীম পরিতৃপ্তি, কি অপার শান্তি, কি অসীম ব্যাপ্তি। পথ চলে পথিক, সুধাই তোমায়, বলো তুমি কিবা চাও, যা চেয়ে তবে মুখপানে চাই, কেন কিছু নাহি পাই/ ওপর থেকে হেসে কয় সেই শান্তিদায়িনী মূর্তি, পথ চলে চল, স্থির রাখ নিজ কর্মে সকল শক্তি/ চোখের জলেতে অধর কাঁপে, তাকাই অবোধ চোখে, করো শান্ত রাখো ধরে তোমার সকল সত্য/ সুন্দর করে প্রকাশিত হোক, তব সুন্দর কান্তি/বলো বারবার আছো তুমি, আছি আমি, আছে সুন্দর শান্তি। 

Monday, 19 July 2021

গত বছরে প্যান্ডেমিক এর মধ্যে এক নতুন দেশের নতুন শহরে এসে একলা ঘরবন্দি হয়ে যখন কাজ শুরু করলাম তখন কাজে মনবসানোর জন্যে আশ্রয় নি আমার সেই ছোটবেলার পুরোনো পন্থায়, অর্থাৎ গল্পের বই এর। কিন্তু সময়টা আলাদা, ছোট বেলার মতন সেই অখণ্ড অবসর এখন তো আর নেই। তাই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে খুঁজে ফেললাম বেশ কিছু অডিও বুক এবং শ্রুতি বলে এক প্রবাসী বাঙালির পছন্দের তালিকাতে নিজের পছন্দের লেখক ও লেখণীদের পেয়ে যার পারনাই আল্হাদিত হয়ে উঠলাম। 
একের পর এক ফিরে ফিরে আসতে লাগলো স্কুল থেকে দৌড়ে দৌড়ে বাড়ি ফিরে বই নিয়ে বসার সেই ছেলেমানুষি বিকেল অথবা গ্রীষ্মের ছুটির অলস দুপুরের কাকাবাবু সন্তুর এডভেঞ্চার, শীর্ষেন্দুর মজার ভুত বা এলেমদার চোর অথবা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এর জীবন বোধ। জীবন যে কত সুন্দর, কোনোরকম কমপ্লিকেশন ছাড়া কত সহজ সিম্পল হয়ে থাকতে পারে, তা যেন আবারো বারবার উপলব্ধি করতে পারলাম। কর্মজগতে তখন আমি সিঙ্গেল সেল এর রহস্য ভেদ করছি আর অল্প অল্প করে কোডিং এর মজার জগতে পা রাখছি, নতুন কিছু শেখার আনন্দ সর্বদাই আমাকে ছেলেমানুষের মতো উছ্বল করে তোলে। সেই উচ্ছলতা সঙ্গে আমার প্রিয় জগৎ কে এতদিন পরে খুঁজে পেয়ে, নিউ ইয়র্ক নিজেই যেন এক অসাধারণ রূপকথার জগৎ হয়ে আমার কাছে ধরা দিলো। 
এমত সময়ে কোনো অজ্ঞাত কারণে আমার প্রিয় সেই অডিওচ্যানেল টি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন এদিক ওদিক খুঁজতে থাকি, মনোমতোন গল্প ভান্ডার পুরোপুরি না পেয়ে আমার এই নিজের বাংলা চ্যানেল টিতে নিজের সাথেই এক কমিটমেন্ট করলাম। তা হলো, প্রতিদিন এক ঘন্টা হোক বা আধ ঘন্টা মিন ২০ যাই হোকনা কেন, আমি আমার প্রিয় লেখকদের লেখনীতে নিজেকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। আর তা নথি বদ্ধ করে রাখবো এই চ্যানেল এ। এতে আমার ব্যক্তিগত লাভ হবে দুটো, এক আবারো সেই রচনার সান্নিধ্য পাওয়া আর দুই পরবর্তী কালে আবারো যখন ই ইচ্ছে হবে এগুলো পড়ার তখন হাতের কাছে বই না থাকলেও এগুলো শুনে নিতে পারবো। আর উপরি পাওনা হবে অবশ্যই আমার মতন কোনো বই প্রেমী যদি আমার এই উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে তাদের নিজেদের ভালোলাগা খুঁজে পায়। 
প্রথম গল্পপাঠ হলো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের "পাগলা সাহেবের কবর" এর পরে ইচ্ছে আছে সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এর "ইতি পলাশ" বা "রুকু সুকু" , এবং আরো অনেক অনেক কিছু নিয়ে আসার। 

Saturday, 5 June 2021

চেনা সবুজের মধ্যে দিয়ে অচেনা কে চিনে নেওয়া

আমার permanent address এ সবসময় থাকে vill + post Raghudevbati , Dist Howrah , Nalpur . আমি যে তথাকথিত শহুরে নয়, বরং ভীষণ ই এক গ্রাম্য পরিবেশ এ বড় হয়ে ওঠা একজন মানুষ , একথা ভাবতে এবং বলতে আমার খুব ভালোও লাগে গর্ব ও হয়। শিকড় আলগা করে দিলে সে গাছ যে একদিন ঝড়ে পরেই যায়। তাই পৃথিবীর যেখানেই থাকি সে দিল্লি ই হোক বা ওয়ার্ল্ড/স বেস্ট সিটি তেই হোক খুঁজে ফিরি আমার গ্রাম বাংলার সেই সবুজকে, বৃষ্টি ভেজা গাছের পাতা এখানেও এক ই ভাবে ঝিকমিক করে, চাঁদের আলো কিন্তু এখানেও ওই রকম ই নরম হয়ে পড়ে। নিউ ইয়র্ক এর ক্রিস ক্রস রাস্তা গুলো আমার খুব  ভালো লাগে, হারানর ভয় নেই, কেমন যেন যে পাড়া টা দিয়ে অত্রীদের কাছে ফিজিক্স পড়তে যেতাম সেরকম লাগে যখন ই আমি ম্যানহাটান এর এই ৮থ এভিনিউ এর দিকে আসি, কেমন চুপচাপ। এখানের তুলনায় কিছুটা নিচু বিল্ডিং, এগুলোকে নাকি ফ্লেমিংগো স্টাইল এর বিল্ডিং বলে, কিজানি কেন বলে। 

চেনা সবুজের মধ্যে দিয়ে অচেনা কে চিনে নেওয়া 

কিছুদিন আগে লোটাকম্বল পড়ছিলাম, সেখানেই এই ওয়েস্ট ম্যানহাটান এর একটা বাড়ির এক ঘটনার কথা বলা আছে, দেখতে দেখতে যাচ্ছি, কিছুইনা কখন চোখে পড়ে যায়, আর মেলাতে শুরু করবো হয়তো কত বছর আগের কোনো ঘটনাকে। মানুষ চলে যায়, রেখে যায় তার কীর্তি, ঐতিহ্য বহন করে থাকা কিছু সাক্ষী। নতুন প্রজন্ম আসে, এভাবেই এক প্রদীপ থেকে আর এক প্রদীপ জ্বলতে থাকে। দেখতে দেখতে যাচ্ছি, বিশ্ব যুদ্ধের সময়ের পুরোনো বিল্ডিং কত, আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা হয়তো কত অজানা কাহিনী। যত্নে কোথাও অযত্নে রক্ষিত ফুলের ঝাড়। আর এই হলো এক ভীষণ চেনা ছবি। এগুলো হলো আমার খুব প্রিয় আর চেনা সেই পাখি, দিল্লিতে যারা ছিল নিত্যসঙ্গী, ঠাকুমার মতো করে গুটিগুটি হাঁটা আর নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে দানা পাতি খাওয়া। 

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...