আজ আমি নিন্দে করব। একদম প্রাণ খুলে প্রচুর নিন্দে। অনেক দিন অনেক কারোর 'শুধুই নিন্দে' কে অগ্রাহ্য করে এসেছি কিছুটা শুধুই অগ্রাহ্য করে, কিছুটা ভালবাসায়, কর্তব্য বোধে, কিছুটা বলুক, আমি তো জানি আমি কি ভাবি না ভাবি, মিথ্যেই যখন তখন কি হবে তাতে কান দিয়ে, আর কিছুটা এই কারণে যে অন্যের নিন্দে করে সময় নষ্ট করা মানে নিজেকে আরো আরো পাঁকে নামানো। কিন্তু আর সত্যি পারলামনা, পাঁকে আজ আমিও নামলাম।
এর আগে এমন ঘটনা আমার সঙ্গে হয়েছে যে যেখানে আমি সত্যি ই হয়ত শুধুই আমার মনের খারাপ লাগা, ভালোলাগা নিজের মত করে লিখতে গেছি আর তাতে লোকজন ঝাপিয়ে পরে বোঝাতে গ্যাছে যে তুমি আসলে নিন্দে করছ (যা আদতে নিন্দে ছিলনা ) এবং এটি প্রচন্ড গর্হিত কাজ , যাকে যার মতন থাকতে দেওয়া উচিত। অর্থাত কিনা বাক স্বাধীনতা বা লেখনী স্বাধীনতা শুধু আমার একার , আমি দিন রাত এক করে দিয়ে শুধুই লোকের নিন্দে করব। তোমার ও নিন্দে করব , কিন্তু তুমি কে হে , তুমি আমাদের পর্যালোচনা করতে আস , আমরা সব বড় বড় হনু, আমরা যা করব সেটাই ঠিক এবং সেটাই বিশ্বে প্রথম হলো, এরপর যে যে সেই এক ই কাজ করবে , সে আমাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েই করবে। নিজের ইচ্ছে বা শখ এ তো হাতেই পারেনা, কারণ ওই যে সমস্ত কিছু বোঝা, জানা , ভাবা, করা এসব আমার বা আমার সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের, অধিকার। অন্য কেউ নৈব নৈব চ। ও ফটো তুলেছে ? নিশ্চই আমার দেখে? আমাকে টেক্কা দেবে বলে। ও প্রোফাইল picture চেঞ্জ করলো কেন এতদিন পরে , নিশ্চই কোনো কারণ আছে, ঠিক ধরেছি এটা তো আমাদের দেখে করা, দেখেছ হিংসে তে একদম জ্বলে পুড়ে গেছে। আরে ওরা উত্তরের ওই ওখানে বেড়াতে গেল, দাড়াও কেন গেছে জানি, আমাদের দেখে দেখে আবার কি? অর্থাত কিনা, তুমি ওদের কথা ভাব বা না ভাব , ওরা কিন্তু সাদা সর্বদা তোমার বা তোমাদের এবং আরো কত লোকের কথা ভেবে কাটাচ্ছে কে জানে। তুমি কিন্তু এ সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গ জাননা, শুনলে, খারাপ লাগলো তারপর আবার ভুলে গিয়ে নিজের জীবনের মধ্যে মশগুল হয়ে গেলে, অথচ তাদের দুর্দশার কথা ভাব, মহানতা তাও দেখো একবার,দ্যাশের ও দশের কথা ভাবতে ভাবতে তো জীবন দুর্বিষহ। চব্বিশ ঘন্টা তো অন্য কে নিয়ে কাটাতে হচ্ছে, আবার ওপরে ওপরে একটা নির্লিপ্ততা , সাধু সাধু ভাব ও দেখাতে হচ্ছে, তারপর অন্যে তো সব সময় ওদের হিংসে করে তাই না, অত এব নিজেদের জীবনের অভিনবত্ব বজায় রেখে, কিকরে অন্য কে আরো আরো হিংসা দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করতে হবে।
সত্যি আমি এমন লোক দেখেছি, যারা ঘোর সংকট এর মধ্যে একটি রোগগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছে। psychology তে এ রোগের কি নাম আছে আমি জানিনা, কারণ এটি একটু বিরল রোগ, যে রোগ এর প্রধান লক্ষন হলো , এরা কারোর মধ্যে ভালো কিছুই খুঁজে পায়না, আর ঠিক যে জিনিস গুলো নিয়ে সব সময় এরা নিন্দে করে থাকেন, নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে এরা ঠিক সেই কাজ টি ই করে থাকেন। এরা আরো মনে করেন যে চারপাশের মানুষ্ জন তো বটেই পারলে গোটা বিশ্বের লোক এঁদের জীবন যাত্রার দিকে উঁকি মারতে চায়, একদিকে এরা বলেন, এঁরা প্রকৃত শান্তির সন্ধান পেয়েছেন , আবার আর অন্যদিকে অন্যের এই উঁকি ঝুঁকি (ওদের assumption বা hypothesis অনুযায়ী ) তে ওনাদের সেই শান্তি এমন বিঘ্নিত হয়, যে মানুষ্ কে "ছোটলোক" আখ্যা দিতেও এদের কোথায় আটকায়না। এরা কি সত্যি কারের মানুষ্ ? নাকি নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুক্ত এক প্রাণী। যারা কিছুতেই জীবন কে সোজা পরিস্কার চোখে দেখতে পায়না, ভাবতে ই পারেনা যে মানুষ সত্যি ই মানুষের কাছে এমন ই কিছুক্ষণ দাড়াতে পারে, তার পেছনে কোনো মতলব না থাকাটাই স্বাভাবিক , প্রত্যেকের জীবনেই problem আছে, তোমার জীবনে কিছু সমস্যা নেই, ইশ শুধু আমার জীবনেই আছে, এসব না চিন্তা করেই সহজ ভাবেই সাহায্য নিতে বা করতে মানুষ্ ই তো পারে। কোন মোহের অন্ধকূপের মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে শুধুই বিষোদগার করে চলেছে, আঘাত করে চলেছে, একের পর এক।
আগে কষ্ট হত এই সব মানুষ্ গুলোকে দেখে, এখন করুণা হয়, এরা বোধহয় কখনই সুস্থ জীবন যাপন করতেই পারবেনা। বুঝতেই তো পারছেনা, সহজ সরল ব্যবহার এর অর্থ। ভালবাসা? সেত আরো অধরা , ভালোবাসা বোঝার মত বা ভালবাসার মত মন কি আর জীবিত রেখেছে এরা ? সবেতেই তো মানে খুজতে বসেছে , এদের কাজ কর্ম দেখে তো মনে হচ্ছে, শুধু অন্যে কি কাজ করে সেটা খোঁজা আর তার নিন্দে করা, এই পরম সৌভাগ্যের কাজ ই এদের জীবনের ব্রত। সত্যি জানেন , এমন লোক দেখেছি যারা ভাবেন তারা ছাড়া অন্য কেউ ই আর কিছু করতেই পারেনা, কারোর মন নেই, কোনো ইচ্ছা নেই, কিছুনা। অভূত লাগবে কিন্তু এমন সত্যি আছে, ধরুন আপনি কিছুদিন আগে পাহাড়ে ঘুরতে গ্যাছেন , ফটো লাগালেন কোনো পাবলিক ফোরাম এ, তার কিছুদিন পরে আপনার চেনা কেউ ও পাহাড়ে ঘুরতে গেল আর ফটো লাগালো , তখন কি আপনি ভাবতে বসবেন যে দেখেছ আমার দেখে দেখে ও হিংসে করে ঘুরতে গেছে আর ফটো লাগিয়েছে। অথচ এমন মানুস আছে জানেন, যারা ভাবে অন্যে যা কিছু করছে সব তাদের ই দেখে, কি অদ্ভুত না? হয়ত আপনি ওদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গ খোঁজ খবর রাখেনা বা উত্সাহিত ও নয়, আপনার উদ্দেশ্য শুধুই একটি সহজ সম্পর্ক বজায় রাখা, কিন্তু সেখানেও অসুবিধা। আপনি যেভাবে ফটো লাগাবেন সেটা যদি কোনভাবে ওনার স্টাইল এর সাথে match করে যায়, অতএব লোকে ভাবতে বসবে যে নিশ্চই আমাকে কপি করেছে। একবার ও ভাবতে পারেনা যে কেন কপি করতে যাবে আমায় , আমি কি একাই এরকম ফটো তুললাম, নাকি, ফুল গাছ পাথর, পাহাড় এসব কি আমার একার ই আছে নাকি, ফটোশপ এ একটু আধটু ফটো কে এদিক ওদিক করার ক্ষমতা আমার একার ই। আমি ই ফটো প্রথম সাদা কালো করলাম , আমি ই প্রথম ছবি আঁকলাম , আমি ই প্রথম লেখক , আমি ই প্রথম গায়ক , আমি ই প্রথম সব কিছু।
এসব কি? সত্যি ই কি এরা অসুস্থ ? সাংঘাতিক ব্যাধি আক্রান্ত ?
জানেন আমি এমন লোক দেখেছি যাদের কে "ওরে আমাকে একটু খাওয়াবি "? এরকম ভাবে বলার পরে ও তারা শুধু ভাবতে পারে যে বাড়িতে না ডেকে , একটু রান্না করে নিয়ে এসে দেবে, যদিও হয়ে ওঠেনা তা, অথচ সেই এক ই লোক কে অন্য কেউ নিমন্ত্রণ করে যদি অন্য আর নিমন্ত্রিত দের খেতে দিয়ে দেয় , তাদের খিদে পেয়েছে বলে এবং খেতে বসেও নিজে তার মায়ের সাথে না খেয়ে অপেক্ষা করে, তবে সেই তারাই তাকে এমন ভাসায় কথা বলে, যা একজন কোনো শিক্ষিত লোক বলতে পারেনা, এতে তারা শুধু তাদের নয়, সেই শিক্ষার অপমান করলো।
হটাত কিছুদিন ধরে facebook নিয়ে প্রচন্ড কথা হচ্ছে, এবং অন্যের facebook ব্যবহার নিয়ে যে কেউ বা কারা এত ভাবতে পারে তা, facebook নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে আমার এক অপরিচিত লেখিকার লেখা না পরলে জানতেই পারতামনা। লেখাটি শুধুই হাস্যকর নয়, তার ভেতর প্রধান বিষয় বস্তু থেকে এটাই বোঝা গেল যে লেখিকা facebook বলতে শুধুই বোঝেন স্টেটাস আপডেট দেওয়া বা না দেওয়া, আর তার জন্যে তিনি বসে বসে সবার activity লক্ষ্য করেছেন, এবং যথারীতি সব ই তার কাছে নিন্দনীয় লেগেছে। অথচ facebook প্রথম কেন আসে বা কোন দরকার থেকে এ প্রথম শুরু হলো , বা কে এটি বানিয়েছিলেন সে সম্পর্কে ওনার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। google তো আছে , আবার কাউকে 'আমরা কত বড়' বোঝানোর সময় google খুলে দেখে নিলেই তো হলো। আমি এই বিষয় টি নিয়ে প্রাণ খুলে জোর গলায় নিন্দে করতে এই জন্যেই পারি যে facebook অনেক অন্য কাজে লাগানো যায় , আমি নিজেই facebook এর মাধ্যমে স্যাম্পল কালেকশন করি। আর লোকেরা কে কি ভাবছে, কে কেন কি ভেবে কিছু লিখছে বা লিখছেনা, আমি কি সেই অন্তর্যামী হয়ে গেছি যে আমি তা বলব। আমি এতই বড় হয়ে গেছি, এতই মহান হয়ে গেছি , যে এ সম্পর্কে অনায়াসে আমি মন্তব্য করতে পারি ? লোককে , তার চিন্তা ভাবনা, কাজকে বিচার করার মত যোগ্যতা কি আমার আছে? আমি যা করি সব ই কি ঠিক? আমি অন্যেকে নিন্দে করছি? আমার এই শুধুই নিন্দের একটিভিটি কি ক্রমশ আমাকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেনা? বা আমি কি আদৌ কি তা ঠিক করলাম, অন্যের activity র ভুল ব্যাখ্যা করলামনা তো আমি , হয়ত একদিন যে লোকগুলো আমার কাছে ভালবাসার ঝাপি খুলে নিয়ে বসেছিল, ডালা সাজিয়ে দিয়েছিল শ্রদ্ধার , তা আমি সজোরে পায়ে করে সরিয়ে দিলামনা তো? শুধুই নিজের মনের অন্ধকার, insecurity আর egoistic problem এ ভুগে, আমার নিজের জায়গাটা নামিয়ে দিলাম্ নত? আমার এখন দরকার নেই বাইরের লোকের ভালবাসা হয়ত, কিন্তু যে মহা সত্যের কথা আমি বলি, বুঝি বলে ভাবি, তার অপমান করে ফেললাম নত? এত বই, এত কিছু সব নিষ্ফল, স্বাধারণ ঘর সাজানোর সামগ্রী হয়ে গেলনা তো ? কিজানি শুধুই নিন্দার হাত ধরে আমি কি পরম সত্য খুঁজে পাব?
No comments:
Post a Comment