রেজিস্ট্রি অফিসে চার হাত এক করে দিয়ে যখন রেজিস্ট্রি অফিসার অঙ্গীকার করতে বলে একসাথে থাকার, তখন তাঁকেই যেন মনে হয় ভগবান। কিংবা অগ্নি সাক্ষী করে একে অপরকে সঙ্গে করে চলার সেই অঙ্গীকার : সপ্তপদী। দুই মন তখন পরিপূর্ণ ভাবে চায় একে অপরের কাছে সমর্পন। সেই অঙ্গীকার সেই শপথ , সে ভগবান যীশুর সামনেই নেওয়া হোক বা আল্লা কে স্মরণ করে, মন্দিরেই হোক বা বৌদ্ধ প্যাগোডাতে সব ক্ষেত্রেই তার মাহাত্ম এক ই। শপথ নেবার মাহাত্ম, তাকে মেনে সারাজীবন চলার যে অঙ্গীকার, কত স্বপ্ন কে সত্যি করার যে গভীর অভীপ্সা, এ সব ই ভীষণ ভাবে সত্যি। সেই সময় খুব কম মানুষ ই ভাবে সে নিজে কতটা সুখী হবে, বরং ভাবে পাশের মানুষটাকে সে যেন সুখী করতে পারে।
চার্চের ফাদার ই হোন বা সামনে বসে থাকা পুরোহিত, মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে দুই তরুণ মন কখনো সেই শব্দ সমষ্টির মধ্যে থেকে বুঝে নিতে চেষ্টা করে অন্তর্নিহিত অর্থ আবার কখনো বা সেই শব্দ শুধুই শব্দ হয়ে কানের কাছে গুঞ্জন সৃষ্টি করে আর নিজ নিজ মনের ভিতরে এতদিনের জমে থাকা কত শত স্বপ্নকে আরো একবার নাড়িয়ে চারিয়ে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে থাকে । ছেলেটির হয়তো বা মনে পরে বাড়ির সামনে ঘন ঘন সাইকেল করে যাওয়া আসার কথা, আচ্ছা যে মুখটা একবার একটুখানি দেখার জন্যে একদিন কত অপেক্ষা করেছে আজ থেকে সেই মুখ সর্বক্ষণ সবসময় একরাশ হাসি আর অনেক খুশি নিয়ে শুধু তার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবে? এই চিন্তায় পুলকিত হয়ে আড়চোখে হয়তো বা পাশের জনকে একটু দেখে নিতে ইচ্ছা করে। সেই তাকানোও গোপন থাকেনা, লুকোচুরি এই চাওয়া পাশের মানুষটির মধ্যেও সঞ্চারিত হয়ে তাকেও করে তোলে শিহরিত। এইভাবে বুঝে বা না বুঝে সম্পন্ন হয় এই সপ্তপদীর অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানের রেশ মনের মধ্যে রেখে শুরু হয় সংসার সাগরে তরী বাওয়া। সহজ তো নয়, সারাজীবনের জন্যে করা একদিনের আকুল শপথ, সারাজীবন স্বাচ্ছন্দে পালন করা।
ফলে কখনো কখনো ঝড় ওঠে, সংসার তরী টলোমলো হয় ও বা। সেই যে অগ্নিসাক্ষী করেই হোক বা পরমেশ্বর কে সাক্ষী রেখেই হোক, সেই যে সপ্তপদীর শপথ
"Now let us make a vow together. We shall share love, share the same food, share our strengths, share the same tastes. We shall be of one mind, we shall observe the vows together. I shall be the Samaveda, you the Rigveda, I shall be the Upper World, you the Earth; I shall be the Sukhilam, you the Holder - together we shall live and beget children, and other riches; come thou, O sweet-worded girl!"
শয্যা , শয়নে , স্বপনে, সবসময় পাশে থাকার সেই অঙ্গীকার। কখনো বা হয় ব্যাহত। দুই দেহ এক হয়ে গিয়ে এক আত্মা, এক মনন হয়ে যাবার যে স্বপ্ন সপ্তপদীর সময় শপথ নেয় দুই সবুজ মন, অনেক ক্ষেত্রেই তা শুধু ওই মন্ত্র হয়েই থেকে যায়। হয়তো দুই দেহ কখনো এক ই হয়না, এক ছাদের তলায় থেকেও দুই দেহ কখনোই হয়তো হয়না এক। কখনো দেহ মিশে যায়, মন থাকে আলাদা আলাদা জগতে, নিজের নিজের মতন করে। কখনো শুধু মাত্রই জৈবিক কারণে হয় মৈথুন। সন্তান থাকে সেতু হয়ে, ব্যক্তিগত স্বার্থের উর্ধে গিয়ে দুই মন আবার নামে সমঝোতায়, তারপর একসময় আবার হয়তো নিজ নিজ স্বত্বাকে ভুলে দেহের মিলন মনের চাহিদাকে করে পরিপূরণ।
আর এইভাবেই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে হয়ে চলে সপ্তপদী গমন।
কখনো কখনো ওই যে ওপরে যিনি বসে আছেন, তিনি নেন পরীক্ষা। এই চলার পথের পাথেয় মজবুত কিনা দেখার জন্যে হয়তো কখনো বা ঝড় ওঠে সংসার তরীতে। আর তখন ই বোঝা যায় যে এই সপ্ত গমন এর পথ এতো পলকা নয়, অনেক গভীর এর শিকড়। পাশের মানুষটার এতটুকু শরীর খারাপ সমগ্র পৃথিবীকে দুলিয়ে দেবার জন্যে যথেষ্ট। চারপাশের সমস্ত সম্পর্ক সমস্ত কিছু এক নিমেষে তুচ্ছ হয়ে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়। আর এই বোধয় সেই সপ্তপদীর কাহিনী। সেই শপথ গ্রহণের মাহাত্ম।