Wednesday, 10 July 2019

আদর মাখা ছোটবেলাতে বিকেলবেলা গুলো আসতো ভীষণ মিষ্টি হয়ে। মা চুল টানটান করে দিয়ে দুপাশে দুটো ঝুঁটি বেঁধে দিতো। বাবা একদম একটা করে চুল বাঁধা পছন্দ করতোনা। কোঁকড়ানো চুলে দুটো করে চুল বাঁধলে ঠিক যেন ফুলের মতন থোকা হয়ে থাকে। চুল বাঁধা হয়ে গেলে মা কাজল পড়াতে চাইতো আর বাবা বলতো না কাজলে চোখ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলত অনেক বড় বয়স পর্যন্তই আমি মায়ের হাতে ঘরে পাতা কাজল পড়েছি। আর য্খন actually মেয়েরা কাজল এমনকি eyeliner tiner ও কি জিনিস জেনে গেছে , তখন থেকে আর কাজল পড়াই হয়নি আমার। ফলে অভ্যেসটাই চলে গেছিলো কাজল পড়ার। 
চুল বেঁধে কখনো সাদা, কখনো নীল কখনো সেই প্রিয় লাল রঙের ফুলফুল ফ্রক পরে বাবার হাত ধরে আমি বেড়াতে বেরোতাম। দিদি বলতো ওই যে বেড়াতে চললেন মহারানী। আমি লাফিয়ে লাফিয়ে প্রথমেই যেতাম পাশের মাঠে, যেখানে বাদামি রঙের গরুটা বাঁধা থাকতো, সেখানে। তাকে খাওয়াতাম কচি বাঁশপাতা। আর ওর গলায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কি যে গল্প করতাম কিজানি। তারপরে আমাদের গন্তব্যস্থল হতো সামনের ছোট্ট কালভার্ট টা। সেখানে একদিক থেকে পাতা ভাসাতাম আর অন্য দিকে সেই পাতাটা ভেসে বেরোচ্ছে কিনা দৌড়ে দেখতে যেতাম। তারপরে সামনের মাঠ এ তে একটু বসে ফিরে আসা। এই ছিল আমার আর বাবার প্রাত্যহিক রুটিন। ক্লাস চেঞ্জ হয়, একটা একটা করে ধাপ বদলায়, কালভার্ট এর পাতা ভাসানোর সাথে সাথে শিখে ফেলি স্রোতের অঙ্ক , জোয়ার ভাঁটার হিসেব , গতি এমন কত কি। তবে শুধুই অঙ্ক , বিজ্ঞান নয়, ওই পাতা খাওয়ানো আর স্রোতের যাওয়া আসা দেখতে দেখতে কখন বাবা তার ছোট্ট মেয়ের মধ্যে দিয়ে দিয়েছিলো আরো অনেককিছু। কোনো কোনোদিন সেই বেড়াতে যাবার ব্যতিক্রম হলেই মনখারাপ হতো। তারপর আরো বড় হলাম, কখন বেড়াতে যাওয়া রূপান্তরিত হলো দাবার প্রাকটিস আর সন্ধের ছবি আঁকার মধ্যে। তারপর আরো...আরো....এখন আর সেই বিকেল আসেনা, ল্যাব থেকে যাতে বিকেলে বেরোতে পারি, তারজন্যে সবাই খুব রাগায় ও আমায়। কি করে বোঝাই ওদের বাড়িতে যে আমার এক আকাশ বিকেল আছে, সন্ধে আছে। আছে মরসুমি পাখির ঘরে ফেরা। 

তবু সেই বিকেল আসেনা। এখানের গরু গুলো ও যেন আর আদর করে ঘাড় নেরে দাঁড়িয়ে থাকেনা। চারিদিকের পৃথিবীর মতন এরাও বড় হয়ে গাছে যেন, ব্যস্ত হয়ে গেছে, মুডি হয়ে গেছে। কচি পাতাও আর হাতের নাগালে থাকেনা, ডাল নুয়ে দেবার ও কেউ নেই যে আর ওরাও বোধয় ওই যে সবার মতো মুডি হয়ে গেছে, ইচ্ছেমতন আসবে বা আসবেনা। তাই আর ছুঁতে যাইনা ওদের কাছে, দূর থেকেই দেখি, ভালো আছে। সিম্প্লিসিটির হিসেব গেছে হারিয়ে। তবু সেই সব কিছুর মধ্যে আমার বাবার সেই জোয়ার ভাঁটার গল্প সাথে নিয়ে আজ ও সন্ধ্যে বেলার আমি অবাক হৈ। কখনো মনখারাপ লুকিয়ে কখনো মনখারাপ  ভুলে হেসে উঠি। বুকের মাঝের তোলপাড় গলার কাছে কি যেন একটা আটকে রেখে যখন সেই বিকেলের কালভার্ট খুঁজে চলে মনে মনে, বাইরে অচঞ্চল হাসিতে তখন হয়তো কেউ বলে ওঠে তুই তো খুব খুশি। আর আমার ভেতরের আমিটা চোখ বন্ধ করে দেখতে পায় , কখনো স্রোতের টানে, কখনো স্রোতের প্রতিকূলতায় পাতাটার এগিয়ে চলা, নিজ গন্তব্যে। পাঁকে আটকে গেলে হবেনা। চরৈবেতি চরৈবেতি। এগিয়ে চলাই জীবন। স্থির অচঞ্চল ভাবে এগিয়ে চলা। 

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...