জীবনে চলার পথে মানুষ্ এর কত রকম অভিজ্ঞতা হয়। কখনো তা মধুর, কখনো বা বিষাদ ময়।
কত জনের সাথে আমাদের আলাপ হয়, কিন্তু তাদের মধ্যে কিছু সম্পর্ক থাকে, যা বোধহয় সারা জীবনের সম্পদ হয়ে থেকে যায়। ছোটো থেকে আজ এই বড় বয়স পর্যন্ত এমনি অগনিত সম্পর্ক দ্বারা আমি সমৃদ্ধ হয়েছি, হয়ে চলেছি। মাঝে মাঝে ভীষণ ইচ্ছে করে তাদের সবার কথা, সবাইকে জানাতে। এই সমস্ত ব্লগ গুলো তো সবাইকে জানানোর জন্যেই। তাই না? তাই যখন চারিদিকে সবাই একটু ভালো মানুষ্ খুঁজে বেড়ায়, নিস্বার্থ একটা হাত ধরতে চায়, বা না পেয়ে আমি একাই ভীষন ভালো, অন্যেদের থেকে ভীষণ আলাদা, এই ভ্রান্ত ধারনায় উল্লসিত হয়ে আরো বেশি অন্ধকারের পাঁকে নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলে, তখন আমার চিত্কার করে সবাইকে জানাতে ইচ্ছে করে যে, এ পৃথিবী টা সত্যি ভীষন সুন্দর, এ পৃথিবীর প্রতিটা জিনিস, প্রতিটা মানুষ্ সবাই ভীষন সুন্দর আর নিজেদের কে আলাদা করে ভাবতে গিয়ে, দেখাতে গিয়ে, আরো বেশি করে যারা সবাইয়ের ভিড়ে মিশে যাচ্ছে, তাদেরকে বলতে ইচ্ছে করছে যে তোমারা তো এমনি ই সুন্দর। ঠিক এমনি ই থাকো, ধীর, অমলিন, innocent. হারিয়ে ফেলনা নিজেদের কে।
আমি আমার এই জীবনে এত ভালো ভালো কিছু মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, যে শুধু সেই মানুষ্ গুলোর জন্যেই বোধহয় আজ অনায়াসে আমি খুব সহজেই মানুসের অন্ধকার দিক টা না দেখতে পেয়ে আলোর দিকটা খুঁজে নিতে পারি। সেই আলোর পথের দিশারী দের কথা বলতে গেলেই প্রথমেই চোখের ওপর সব সময় ভেসে থাকা সদাহাস্যময় আমার বাবার মুখটা আরো উজ্জল ভাবে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, আবার আমার গুনগান সুরু করবিত ? না বাবা, তোমার কথা, তোমার আদর্শের কথা, ভালবাসার কথা, উদারতার কথা, আর তো....মা......র কথা কোনদিন ই শেষ হবার নয়। অন্তত লিখে বা বলে শেষ করা বোধহয় আমার পক্ষ্যে সম্ভব হবেনা। আর মা বাবা কার কাছে না আলোর পথের দিশারী হয়, তাই তোমাদের সাথে একদম এক পঙ্ক্তিতে আমি কোনদিনে কাউকেই বসাতে পারবনা এ কথা ঠিক তবু আমার সেই ইংলিশ মাস্টার মশাই, জেঠু, ট্রপিকাল মেডিসিন এ আলাপ হওয়া S K G Sir , মনবিকাশ এ আলাপ হওয়া ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটি এর dean প্রফ দুর্গাদাস স্যার যিনি এখনো রেগুলার আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন, মৈত্রী ম্যাম, যিনি কোনদিন আমাকে না দেখে আমার কত বড় উপকার করেছেন, শুধু তাই নয়, আমার সম্পর্কে কত বড় decision নিয়েছেন। এনাদের সবার কথা আমি অনেক সময় নিয়ে আসতে আসতে বলব। এনারা ছাড়াও আরো অনেকে আছেন, সবার কথা আমি বলব, এই জন্যেই বলব শুধু এ পৃথিবীটা শুধুই খারাপ আর আমরা কজন খুব ভালো, তা নয়, এ পৃথিবীটা ভালো কারণ এই পৃথিবীতে এইরকম কিছু মানুষ্ আছেন।যাঁদের জন্যে আমাদের মনের ও সব কালিমা কোথায় চলে যায়। কিন্তু এ না হয়, আমাদের থেকে একটা প্রজন্ম আগে যারা এসেছেন, তাদের কথা, কিন্তু আমাদের এই প্রজন্মেও আমাদের আশেপাশে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেও আছে তামান মানুষ্। হয়ত খুব সাধারণ কিছু ঘটনা, কিন্তু আমার কাছে অসাধারণ আর বড় গভীর এর মূল্য। ট্রপিকাল মেডিসিন এই আলাপ হয়েছিল, মলয় দা বলে এক দাদার সাথে, আর মনবিকাশ এ অনীকদা। এদের কথা ও ঠিক এখানেই উল্লেখ করার মতো। কিন্তু করব আর একটু পরে। আজ বরং বলি, খুব রিসেন্ট আমার মন ছুঁয়ে যাওয়া এক অন্তারিকতার কথা। কিছু সম্পর্ক, যা সম্পদ এর মতো সারা জীবন সযত্নে বাচিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে, চলে গেলেও মনে গর্ব হয়, এই ভেবে যে এক সময় তো ছিল, ক্ষোভ হয়না, দুখ্হ হয়না। শুধু ভালোলাগা থাকে। আর এই বোধ থাকে তার থেকে, যে আন্তরিকতা এখনো মরে যায়নি, মানুষ্ হয়নি এখনো পাথর। বুঝতে পারি আমরা বেঁচে আছি। স্বার্থপরতা নয়, সতেজতার সোঁদা মাটির গন্ধ এসে লাগে নাকে।
গত জুলাই মাসের ৪ তারিখ আমার বিয়ে হলো। অনেক দিনের সম্পর্ক আমাদের, বহুদিন অপেক্ষায় যে ছিলাম ওই দিন এর জন্যে , সে কথা অনাস্বীকার্জ্যা। আমাদের চেনা পরিচিত বন্ধু বান্ধবের দল সবাই আমাদের কে খুব আন্তরিক ভাবেই জানিয়েছিল অভিনন্দন। আমাদের কাছের এক দাদা ও দিদি মানে হওয়ার কথা দিদি জামাইবাবু বা দাদা বৌদি, কিন্তু অনেকদিনের অভ্যেসবশত আমরা দাদা, দিদি ই বলতাম। তো তারা দুজনে আমাদের কে একদম প্রথাগত ভাবে নতুন জামা শাড়ী পড়িয়ে, নানা রকম এর প্রচুর খাদ্য দ্রব্য রান্না করে, অপূর্ব করে সাজিয়ে আমাদের একসঙ্গে প্রথম আইবুড়ো ভাত খাওয়ায়।সত্যি মন ভরে গেছিল। বিদেশ বিন্ভুএ যেখানে সামান্য একটু বাড়ির রান্না পেলেই মন খুশি হয়ে যায়, সেখানে অমন অসামান্য আয়োজন আর অমন আন্তরিকতার সাথে।
ভালোলেগেছিল, সেদিনের সেই আন্তরিকতার ছোঁয়া তে পেয়েছিলাম সতেজ সম্পর্কের গন্ধ। কিন্তু বুঝিনি না চাইতেই বাকি আছে আরো অনেক, মূল্যবান, কিছু অপ্রত্যাশিত উপহারের।
হ্যা , সত্যি ই চাইনি কারোর কাছে কিছুই। বিয়ে এর খুশি বা আনন্দ এ সবের পাশাপাশি বা হয়ত এ সবের থেকে অনেক বেশি করে ফল্গু ধারার মতো আমার ভেতরে বয়ে চলেছিল অশ্রু নদী। না, চাপা কষ্টের গোঙানি শুনতে দি ই নি কাউকেই। কারণ বাবা চলে যাবার পরেই বুঝেছিলাম যে তোমার দুর্বল তম জায়গাটা লোকে জানতে পারলে খুব কাছের মানুষ্ ছাড়া কেউ ই তাতে সহ মর্মিতার হাত রাখেনা, বরং আরো বেশি করে আঘাত দিয়ে ক্ষত যাতে না সারে, তার যোগার করে। কিন্তু আমার জীবনের এক সময় এর অভিজ্ঞতা, আর এক সময়ের অভিজ্ঞতা র কাছে হার মানলো, ভুল প্রমানিত করে দিল আমার ধারনাকে। আর আমি আবার সেই সুন্দরের উপলব্ধিকে কে খুঁজে পেলাম।
NBRC তে এসেই আলাপ হয়েছিল সর্বাণী আর মৌমিতার সাথে। ঘনিষ্টতা ও ছিল, কিন্তু কখনই আমি সে ঘনিষ্ট তা কে নিজের কষ্ট লাঘব করার জায়গা বলে মনে করিনি কারণ তার আগের কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতা খুব কঠিন ভাবে আমাকে শিখিয়েছিল যে সেল্ফ হেল্প ইস the বেস্ট হেল্প। না সেটাও খারাপ কিছু নয়, কিন্তু ওই যে আমি খুব সাধারণ, তাই, কঠিন এর থেকে নরম ভালোবাসাই আমার সেই অশান্ত মন কে শান্ত করতে পেরেছিল। প্রতিদিনের খাওয়া দাওয়ার খোঁজ খবার নেওয়া থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের ঘনিষ্টতা। কিন্তু কখনই আশা করিনি যে যে হাসি মুখের হাসি দেখে সবাই শুধু বিয়ের খুশিটাই দেখতে পেয়েছিল, আর দুটো আমার থেকে কম বয়সী মেয়ে কিনা, নিজেদের boyfriend আর মিষ্টি মিষ্টি প্রেমের কথা ছেড়ে আমার মন এর খোঁজ নেবে বা আমাকে কি করে সত্যি খুশি রাখা যায়, সে চেষ্টা করতে নিজেদের ট্রেন এর টিকেট কেটে ফেলবে। বাড়ি ওদের ও কলকাতা তেই কিন্তু সেটা বোধহয় এখানে বড় কথা ছিলনা, কারণ জাস্ট পরের মাসেই ছিল এক লম্বা ছুটি। আর বহুদিন ধরেই ওরা এমন এক লম্বা ছুটির অপেখ্যায় ছিল। আমি ওদের এক ফর্মাল নিমন্ত্রণ করেছিলাম। কারোর ওপর জোর খাটানোর ইচ্ছে টাই তখন চলে গাছে। নিজের দিদি ই যখন অবস্থার পাকে পরে প্রানপ্রিয় একমাত্র বোনের বিয়েতে এসে দাড়াতে পারছেনা, সেখানে আমি জোর করব অন্য কাউকে ? না করিনি, কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এই দুজন সত্যি ই শুধু আমাকে, আমাদেরকে খুশি করার জন্যে বিয়ের আগের দিন মানে আইবুড়ো ভাতের দিন সকাল বেলা দুজনে হাজির হলো আমাদের বাড়িতে। বাড়িতে আমাদের যথারীতি নিয়ম মাফিক বিয়ের তোড়জোড় ছিল ঠিকই , কিন্তু তাদেখে কেউ আর আর যাই বলুক বিয়ে বাড়ি বলবেনা, বরং আমার আর মা এর মুখে থমকে ছিল কান্না, সে কান্না সেই বুঝবে, যে কখনো তাদের প্রিয় জনকে হারিয়েছে, আর না হারিয়েও বুঝতে পারার মতো মানুষ্ আছে তারা, যারা বোঝার মতো মন নিয়ে বড় হয়েছে। এরা এসেছিল প্রস্তুত হয়ে, বাড়ির পরিবেশ কে পাল্টে দেবার প্লান করে। মুহুর্তের মধ্যে আমাকে কাঁদিয়ে হাসিয়ে , মেরে ধরে ওরা বাড়ির পরিবেশ পাল্টে দিল, কারণ শুধু ওরা যে নয়, এক অসামন্য মানুষের আশীর্বচন সেদিন আমাকে নিজেকে অশির্বাদিতা ভাবতে বাধ্য করেছিল, তিনি হলেন আমার শ্রধ্যেয় কাকু, সর্বানীর বাবা। হাঁ , শুধু আমাকে আশির্বাদ করবেন বলে, আমাকে প্রফুল্ল করবেন বলে, উনি এসেছিলেন, বলেছিলেন, আমার নিমন্ত্রণ না থাকলেও, আমি শুধু ওই মেয়েটার হাসি মুখ তা দেখে আসবই। হাঁ , এরকম মানুষ্ আছেন, যারা কদিনের সম্পর্ক কে আত্মার সম্পর্ক বলে মনে করার মতো ক্ষমতা রাখেন। সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আমার বাবার বলা কিছু কথার মানে, আর অশ্রুমুগ্ধতার মধ্যে উপলব্ধি করেছিলাম আমার বাবার আশীর্বাদের হাত।
আর ওই দুজন আমাদের বাড়িকে যতভাবে খুশি রাখা যায়, সেদিকে কোমর বেঁধে উঠে পড়ে লাগলো। এখানে আর একটা কথা বলা খুব দরকার, আমি বাড়ি আসার আগে মৌমিতা আমি কোন জামা কাপড় নিয়ে বাড়ি যাব থেকে আমার suitcase গোছানো, সব ই করে দিয়েছিল। আর বাড়িতে এসে ঝাঁট দেওয়া থেকে ফুল বাঁধা সব ই এরা কাড়াকাড়ি করে করেছে, আমাদের বাড়িতে লোক খুব কম, আর এরা তা জানত, তাই পরের দিন সকালে সর্বাণী যে সর্বানিকে ল্যাব এ দৌড় দৌড়ি করে কাজ করা ছাড়া লোকে আর কিছুতে দেখেনি, সে ঝাঁটা হাতে ঘর পরিস্কার করে বরযাত্রী রা তত্ত নিয়ে এলে কোথায় রাখা হবে, তার জায়গা করছিলো। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, মানুষ্ চিনতে আমার বাকি ছিল, অন্ধকার দেখতে দেখতে আলোর কথা ভুলেই গেছিলাম, তাই আমিত্বের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে যখন জগত কে দেখতে পেলাম, চোখ ধান্দিয়ে গেল যেন...........
(চলবে )
3 comments:
ভালো হয়েছে লেখাটা। দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
তোর চারধারে আরো বেশী বেশী আনন্দ এসে তোকে - তোদেরকে উদ্ভাসিত করুক - এই লেখাটা পড়ে প্রথমেই এটা মনে হলো - তাই সেটা লিখে জানালাম। খুব ভালো। ভালো মানুষের সংসর্গে ভ্রান্ত পাঁকে নিমজ্জিত মানুষদের দেওয়া সব তিক্ত স্মৃতি একদিন নিশ্চয়ই নি:শেষে মুছে যাবে - এরই মধ্যে নিশ্চয় মুছতে শুরু করেছে। কিন্তু শুধু এটুকু বলি, যারা হারিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর, তারা তো অন্যদের কোনো অসুবিধে করছে না, সমালোচনাও করছে না, কেবল নিজেদের মতো পাঁক খুঁজে ক্রমশ ডুবে যেতে চায়, যাক না। এদের জন্য কারো কোনো সমস্যা হবার তো কথা নয়। অবশ্য তাদের সমালোচনা করে যদি মনটা কিছুটা হাল্কা হয় তাহলে নিশ্চয় সেটা করা উচিত।
na pinakida, eta kintu thik samalochona nay, eta akanto amar parjalochona.....samasya to nay e......erakam bahu parjalochona to manus kare thake, amio serakam e karechi......ar jibaner bibhinno phase e, bibhinno vabe, bibhinno samay e tomra, amar charpasher manus era kakhan nijer ajantei ato sukhasmriti rekhe jay, je tiktata ar abashishto thakena..........gota lekhatay samalochona ba amar samasya jadi highlighted haye thake tahole bujhbo eta amar lekhar drawback karan valolagatuku rekhe tiktata muche felar mishtatai chilo share karar......
Post a Comment