Friday, 3 April 2015

আমার দেখা "মানুষের মত মানুষ " (১ম পর্ব শৈশব)

১৯৫০ সন ২৩ শে জানুয়ারী। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে বাড়ির অঙ্গন এ সামনের আঁতুর ঘর থেকে ভেসে এলো সদ্যজাত শিশুর ক্রন্দন। দিদিমা শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে সেই সদ্যজাতকে আবাহন করলেন এ পৃথিবীতে, তাঁদের সেই ছোট বাড়ি টিতে। শিশুটির পিতা অস্থির ভাবে পায়চারী করছিলেন, বলে উঠলেন, আমি কি এখনো ওখানে যেতে পারিনা, এ সব কি আপনাদের নিয়ম , কতবার বলেছি ও আমি মানিনা। ভিতর থেকে দাইমা বাইরে আসিলেন, ঘোমটায় মুখ ঢাকিয়া মৃদু হাসিয়া বলিলেন "পুত্র সন্তান , আজ থেকে তুমি ছেলের বাবা হলে গো , বাপ্ , যাও চিনি বাতাসা নিয়ে আইস।"  
শিশুর প্রশস্ত ললাট , মাথা ভর্তি ঘন কালো চুল, টুকটুকে ফর্সা, আর যে বয়সে চোখের দৃষ্টি ই আসেনা, তখন ই এ কেমন বড় বড় চোখে চারিদিক দেখছে। পিতা অবাক হয়ে নিজ পুত্রকে নিরীক্ষণ করতে লাগিলেন, তাঁর আরো এক কন্যা সন্তান আছে, এছাড়াও সদ্যজাত শিশু তিনি আগেও দেখেছেন, কিন্তু এমন দেবতুল্য পরিণত শিশু তিনি আগে কখনো দেখেননি। বুকের ভেতর টা কেমন যেন করে উঠলো ওনার , পাশেই ছিলেন ওনার শাশুড়ি , ছেলের দিদিমা, তিনি মেয়ে জামাইকে সম্বোধন করে বললেন, "দেখ আমাদের গরিবের ঘরে রাজা এসেছে।" "রাজা নয় মা, সাক্ষাত ভগবান এসেছেন। কিন্তু কেন তিনি আবার মনুষ্য জন্ম ধারণ করলেন, আবার তো তাহলে সব দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে নীরবে চলে যেতে হবে।" বিড়বিড় করে বললেন পিতা। "এ কি বলছেন আপনি", মা এর চোখ ছাপিয়ে জল উপচে পড়ল ," সন্তান ভূমিষ্ঠ হাতে না হতেই আপনি, আপনি তার যাবার কথা বললেন , ছি ছি। এ কি অমঙ্গল এর কথা।" "না না স্বর্ণ এর থেকে মঙ্গল আর পুন্যের কিছু নেই , আমাকে ভুল বুঝনা। শোনো আমি ওর  নাম দিলাম রনজিত , যে যুদ্ধ এ জয় লাভ করে জয়ী , সেই রনজিত।"
শুরু হলো শিশু রনজিত এর পথ চলা। মা দিদিমার রণ , বাবার খোকা আর দিদির ভাই। ছোট থেকেই অসাধারণ মেধা, পর্যবেক্ষণ শক্তি আর ধৈর্য্য ছিল তাঁর। কিন্তু দুষ্টু বুদ্ধিতেও কিছু কম যেতেন না তিনি , পাড়ার বড় রা তাঁর দৌরাত্ব্যে অস্থির হয়ে যেতেন। আর ছোটরা পেতেন আরো উত্সাহ। নিজেদের বিশাল আম, জাম , কাঁঠাল , কলা, নারকেল এর বাগান। তবু অন্যের বাগান থেকে ফল পেড়ে খেতে ছোটদের দল এর ছিল বেজায় উত্সাহ। পুকুর ঝাঁপানো, এ পার থেকে ও পার করা, গাছে গাছে ঘুরে বেড়ানো, গুলতির এক টিপ এ দূর থেকে লক্ষ্য ভেদ এ সব এ তার বেজায় উত্সাহ। শান্ত শিষ্ট মা, কিছুতেই ছেলেকে সামলাতে পারেননা, বাবা ধরে ফেললে, পিটুনি তো অবধারিত, কিন্তু ধরতে পারলে তো, দিদি অন্ত প্রাণ ছিল তাঁর। কিন্তু দুষ্টুমির সময় কাউকে ধরা দেবেনা সে, শুধু হি হি হাসি। আর দৌড়ে দৌড়ে পালানো। কিন্তু একজন এর ডাক কে উপেক্ষা করতে পারতেননা। তিনি হলেন দিদিমা। দিদিমা ডাকতেন ও না বেশি। উনি সব জানতেন, কোথায় আছে, কি করছে, সে ছিল ওনার আর নাতির মধ্যের একান্ত বোঝাপড়া। চুলে তেল মাখান, জোর করে স্নান করানোর  জন্যে পুকুরে নিয়ে যাওয়া , সেখান থেকে তুলে আনা, খেতে বসানো, রাত্রে শুএ শুএ গল্প বলা এ সব ছিল দিদিমার কাজ। 
                                 সেই দুরন্ত , কিন্তু কখনো কখনো এমন শান্ত হয়ে যেত, যে বাড়ির লোক খুঁজতে বেরিয়ে পরতেন , ছেলে কোথায়, ছেলে কোথায়, গিয়ে  দেখেন চুপ করে পুকুর ধারে গাছের গুড়িতে হেলান দিয়ে বসে কোনো বই পড়ছে তাঁদের রণ। সে পড়ার হোক কি গল্পের , বাহ্য জ্ঞান লুপ্ত হয়ে যেত তাঁর বই হাতে পেলে। 
                                                                                                                               (পরবর্তী অংশ পড়ুন ) 

Saturday, 28 March 2015

রচনা

নীরব , নিভৃত অলস মধ্যাহ্ন। বসন্তের মিষ্ট রৌদ্র, শয্যা তে আসিয়া পড়িয়াছে , বাহিরে ককিলের কুহু স্বর্গ লোকের আকাশ করেছে মুখরিত।  পারিজাতের মৃদু সুগন্ধ এ চারিদিক হইয়াছে আমোদিত।   
দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর দ্বিপ্রহরীক আহার সাঙ্গ করিয়া সুখ শয্যায় আসিয়া আধ শোওয়া হইয়া , তাম্বুলদানী হইতে একটি তাম্বুল মুখে দিলেন। আর দেবী ইন্দ্রানী তখন আপনার সিক্ত কেশরাশি সযত্নে কপ্পুর দানীর উপর হইতে সরাইয়া ওনার পাশে আসিয়া আবদার করিলেন একটি গল্প বলার। 
                     দেবরাজ ইন্দ্র কহিলেন "দেবী , আজ তোমাকে মর্তবাসীর এক মজার গল্প বলিব শুন।" "না দেব, অনুরোধ করি, এখন এই বিশ্রাম এর সময় , এমন কিছু  বলিয়া ও শুনিয়া আমি আমাদের এই মুহূর্ত বিষন্ন করিতে চাহিনা, কারণ মর্তবাসীর গল্প মানেই তো অবিশ্বাস, দুঃখ , বেদনা, হানাহানি, খুনোখুনি, গালি ,সেখানে কোনো সম্পর্ক নেই, কেহ সম্পর্ক তৈরি করিতেও জানেনা, করিলেও রাখিতে পারেনা , উহাদের কথা আমি আর শুনিতে চাহিনা। কহিলেন দেবী। 
                       "না , না, দেবী , ইহা তোমার ভ্রম। যদিচ তুমি ঠিক ই কহিয়াছ বেশির ভাগ মানুষ্ ই উপরোক্ত গল্প এর ই চরিত্র হতেই প্রয়াসী ,  তবে অনেকে এমন  এখনো আছে, যারা সুন্দর পৃথিবী কে সুন্দর রাখিতে জানে আর তারা প্রতি নিয়ত রচনা করিয়া চলেছে এক সুন্দর রূপকথা।তাদের একান্ত আপনার অথচ কাউকে আঘাত না করা এক পুষ্প কোমল মন কে শত ঝঞ্ঝা তেও তারা ঠিক বাঁচিয়া রাখিতে পারিয়াছে। কিন্তু তাদের আশপাশ এর পাশবিক আঘাত? যা বারংবার তাদের দিকে ধেয়ে আসিয়াছে, আসিবেও হয়ত আবার ও, তাকে সুন্দর ভাবে সযত্নে পাশ কাটিয়া জানো ইহারা রচনা করিয়া চলিয়াছে এদের আপনার স্বর্গ। জানো দেবী, সে স্বর্গ ও কিন্তু কিছু কম নয় আপনার এই স্বর্গের অপ্পেক্ষা। আর জানো এই সুন্দরের পূজারীরা ও কিন্তু সংখ্যা লঘু নয়, শুধু এদের যুদ্ধ , এদের জয় , বড় নীরব , তাই তুমি শুধু ওই অসুন্দরের ধ্বজাধারী দের দেখিয়া মর্ত হইতে মুখ ফিরিয়া নিওনা প্রিয়ে , অসুন্দরের মধ্য হইতে আইস আমরা সুন্দর কে  লই।" 
দেবরাজ ইন্দ্র র ছলছল চক্ষুর দিকে চাহিয়া দেবী কাছে আসিয়া স্বামীর হস্ত আপনার হস্তে লইয়া কহিলেন " বলো। "


(চলবে )

Friday, 27 March 2015

I am the proud fool

আমি বোকা, আমি গর্দভ আর সত্যি ই তো চিরকাল ই বোকারা ভালবাসে, আঘাত পায়। সহজ কথা সহজ ভাবে চলা যদি ভুল হয় তো ভুল, কিন্তু তার কারণে আমি বাঁকা পথে হাঁটতে পারবনা, কি অদ্ভুত তাই না, আমি ভাবছিলাম আমার সাথে কেউ ভালো করে কথা বলল তারা বুঝি কাছের ভাবে, কিন্তু ভুল করেছিলাম। যে কথা আমি কোনদিন ই mean করিনি সে কথা যখন কেউ মানে প্রাণে বিশ্বাস করে, তবে সেখানে কিছু বলা বা বোঝানো যায়না, তবে আগে জানতে ইচ্ছে করত কেন এই বিদ্বেষ এই রাগ, এই ভুল্ বোঝা? জানাতেও ইচ্ছে করত যে কি খুশি হয়েছিলাম নিজের কথা বলতে পেরে, মানে হয়েছিল অনেক দিন পরে এক নির্ভেজাল বিজ্ঞান আলোচনা হলো, অসহায় হয়েই। গেছিলাম , কাঁদুনি গাইতে নয়। কিন্তু আর নয়, এ যেন শুধুই এক ভুলের ওপর আর এক ভুল। ভুলের রাশি। সব যদি সত্যি হয় সময় ই এর উত্তর দেবে। 

ছি:

আজ আমি নিন্দে করব। একদম প্রাণ খুলে প্রচুর নিন্দে। অনেক দিন অনেক কারোর 'শুধুই নিন্দে' কে অগ্রাহ্য করে এসেছি কিছুটা শুধুই অগ্রাহ্য করে, কিছুটা ভালবাসায়, কর্তব্য বোধে, কিছুটা বলুক, আমি তো জানি আমি কি ভাবি না ভাবি, মিথ্যেই যখন তখন কি হবে তাতে কান দিয়ে, আর কিছুটা এই কারণে যে অন্যের নিন্দে করে সময় নষ্ট করা মানে নিজেকে আরো আরো পাঁকে নামানো। কিন্তু আর সত্যি পারলামনা, পাঁকে আজ আমিও নামলাম।
এর আগে এমন ঘটনা আমার সঙ্গে হয়েছে যে যেখানে আমি সত্যি ই হয়ত শুধুই আমার মনের খারাপ লাগা, ভালোলাগা নিজের মত করে লিখতে গেছি আর তাতে লোকজন ঝাপিয়ে পরে বোঝাতে গ্যাছে যে তুমি আসলে নিন্দে করছ (যা আদতে নিন্দে ছিলনা ) এবং এটি প্রচন্ড গর্হিত কাজ , যাকে যার মতন থাকতে দেওয়া উচিত। অর্থাত কিনা বাক স্বাধীনতা বা লেখনী স্বাধীনতা শুধু আমার একার , আমি দিন রাত এক করে দিয়ে শুধুই লোকের নিন্দে করব। তোমার ও নিন্দে করব , কিন্তু তুমি কে হে , তুমি আমাদের পর্যালোচনা করতে আস , আমরা সব বড় বড় হনু, আমরা যা করব সেটাই ঠিক এবং সেটাই বিশ্বে প্রথম হলো, এরপর যে যে সেই এক ই কাজ করবে , সে আমাদের দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েই করবে। নিজের ইচ্ছে বা শখ এ তো হাতেই পারেনা, কারণ ওই যে সমস্ত কিছু বোঝা, জানা , ভাবা, করা এসব আমার বা আমার সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের, অধিকার। অন্য কেউ নৈব নৈব চ। ও ফটো তুলেছে ? নিশ্চই আমার দেখে? আমাকে টেক্কা দেবে বলে। ও প্রোফাইল picture চেঞ্জ করলো কেন এতদিন পরে , নিশ্চই কোনো কারণ আছে, ঠিক ধরেছি এটা তো আমাদের দেখে করা, দেখেছ হিংসে তে একদম জ্বলে পুড়ে গেছে। আরে ওরা উত্তরের ওই ওখানে বেড়াতে গেল, দাড়াও কেন গেছে জানি, আমাদের দেখে দেখে আবার কি? অর্থাত কিনা, তুমি ওদের কথা ভাব বা না ভাব , ওরা কিন্তু সাদা সর্বদা তোমার বা তোমাদের এবং আরো কত লোকের কথা ভেবে কাটাচ্ছে কে জানে। তুমি কিন্তু এ সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গ জাননা, শুনলে, খারাপ লাগলো তারপর আবার ভুলে গিয়ে নিজের জীবনের মধ্যে মশগুল হয়ে গেলে, অথচ তাদের দুর্দশার কথা ভাব, মহানতা তাও দেখো একবার,দ্যাশের ও দশের কথা ভাবতে ভাবতে তো জীবন দুর্বিষহ। চব্বিশ ঘন্টা তো অন্য কে নিয়ে কাটাতে হচ্ছে, আবার ওপরে ওপরে একটা নির্লিপ্ততা , সাধু সাধু ভাব ও দেখাতে হচ্ছে, তারপর অন্যে তো সব সময় ওদের হিংসে করে তাই না, অত এব নিজেদের জীবনের অভিনবত্ব বজায় রেখে, কিকরে অন্য কে আরো আরো হিংসা দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করতে হবে।
                           সত্যি আমি এমন লোক দেখেছি, যারা ঘোর সংকট এর মধ্যে একটি রোগগ্রস্ত জীবন কাটাচ্ছে। psychology তে এ রোগের কি নাম আছে আমি জানিনা, কারণ  এটি একটু বিরল রোগ, যে রোগ এর প্রধান লক্ষন হলো , এরা কারোর মধ্যে ভালো কিছুই খুঁজে পায়না, আর ঠিক যে জিনিস গুলো নিয়ে সব সময় এরা নিন্দে করে থাকেন, নিজেদের প্রাত্যহিক জীবনে এরা ঠিক সেই কাজ টি ই করে থাকেন। এরা আরো মনে করেন যে চারপাশের মানুষ্ জন  তো বটেই পারলে গোটা বিশ্বের লোক এঁদের জীবন যাত্রার দিকে উঁকি মারতে চায়, একদিকে এরা বলেন, এঁরা প্রকৃত শান্তির সন্ধান পেয়েছেন , আবার আর অন্যদিকে অন্যের এই উঁকি ঝুঁকি (ওদের assumption বা hypothesis অনুযায়ী ) তে ওনাদের সেই শান্তি এমন বিঘ্নিত হয়, যে মানুষ্ কে "ছোটলোক" আখ্যা দিতেও এদের কোথায় আটকায়না। এরা কি সত্যি কারের মানুষ্ ? নাকি নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ভুক্ত এক প্রাণী। যারা কিছুতেই জীবন কে সোজা পরিস্কার চোখে দেখতে পায়না, ভাবতে ই পারেনা যে মানুষ সত্যি ই মানুষের কাছে এমন ই কিছুক্ষণ দাড়াতে পারে, তার পেছনে কোনো মতলব না থাকাটাই স্বাভাবিক , প্রত্যেকের জীবনেই problem আছে, তোমার জীবনে কিছু সমস্যা নেই, ইশ শুধু আমার জীবনেই আছে, এসব না চিন্তা করেই সহজ ভাবেই সাহায্য নিতে বা করতে মানুষ্ ই তো পারে। কোন মোহের অন্ধকূপের মধ্যে ঘুরপাক খেতে খেতে শুধুই বিষোদগার করে চলেছে, আঘাত করে চলেছে, একের পর এক। 
আগে কষ্ট হত এই সব মানুষ্ গুলোকে দেখে, এখন করুণা হয়, এরা বোধহয় কখনই সুস্থ জীবন যাপন করতেই পারবেনা। বুঝতেই তো পারছেনা, সহজ সরল ব্যবহার এর অর্থ। ভালবাসা? সেত আরো অধরা , ভালোবাসা বোঝার মত বা ভালবাসার মত মন কি আর জীবিত রেখেছে এরা ? সবেতেই তো মানে খুজতে বসেছে , এদের কাজ কর্ম দেখে তো মনে হচ্ছে, শুধু অন্যে কি কাজ করে সেটা খোঁজা আর তার নিন্দে করা, এই পরম সৌভাগ্যের কাজ ই এদের জীবনের ব্রত। সত্যি জানেন , এমন লোক দেখেছি যারা ভাবেন তারা ছাড়া অন্য কেউ ই আর কিছু করতেই পারেনা, কারোর মন নেই, কোনো ইচ্ছা নেই, কিছুনা। অভূত লাগবে কিন্তু এমন সত্যি আছে, ধরুন আপনি কিছুদিন আগে পাহাড়ে ঘুরতে গ্যাছেন , ফটো লাগালেন কোনো পাবলিক ফোরাম এ, তার কিছুদিন পরে আপনার চেনা কেউ ও পাহাড়ে ঘুরতে গেল আর ফটো লাগালো , তখন কি আপনি ভাবতে বসবেন যে দেখেছ আমার দেখে দেখে ও হিংসে করে ঘুরতে গেছে আর ফটো লাগিয়েছে। অথচ এমন মানুস আছে জানেন, যারা ভাবে অন্যে যা কিছু করছে সব তাদের ই দেখে, কি অদ্ভুত না? হয়ত আপনি ওদের জীবন যাত্রা সম্পর্কে বিন্দু বিসর্গ খোঁজ খবর রাখেনা বা উত্সাহিত ও নয়, আপনার উদ্দেশ্য শুধুই একটি সহজ সম্পর্ক বজায় রাখা, কিন্তু সেখানেও অসুবিধা। আপনি যেভাবে ফটো লাগাবেন সেটা যদি কোনভাবে ওনার স্টাইল এর সাথে match করে যায়, অতএব লোকে ভাবতে বসবে যে নিশ্চই আমাকে কপি করেছে। একবার ও ভাবতে পারেনা যে কেন কপি করতে যাবে আমায় , আমি কি একাই এরকম ফটো তুললাম, নাকি, ফুল গাছ পাথর, পাহাড় এসব কি আমার একার ই আছে নাকি, ফটোশপ এ একটু আধটু ফটো কে এদিক ওদিক করার ক্ষমতা আমার একার ই। আমি ই ফটো প্রথম সাদা কালো করলাম , আমি ই প্রথম ছবি আঁকলাম , আমি ই প্রথম লেখক , আমি ই প্রথম গায়ক , আমি ই প্রথম সব কিছু। 
                            এসব কি? সত্যি ই কি এরা অসুস্থ ? সাংঘাতিক ব্যাধি আক্রান্ত ?
জানেন আমি এমন লোক দেখেছি যাদের কে "ওরে আমাকে একটু খাওয়াবি "? এরকম ভাবে বলার পরে ও  তারা শুধু ভাবতে পারে যে বাড়িতে না ডেকে , একটু রান্না করে নিয়ে এসে দেবে, যদিও হয়ে ওঠেনা তা, অথচ সেই এক ই লোক কে অন্য কেউ নিমন্ত্রণ করে যদি অন্য আর নিমন্ত্রিত দের খেতে দিয়ে দেয় , তাদের খিদে পেয়েছে বলে এবং খেতে বসেও নিজে তার মায়ের সাথে না খেয়ে অপেক্ষা করে, তবে সেই তারাই তাকে এমন ভাসায় কথা বলে, যা একজন কোনো শিক্ষিত লোক বলতে পারেনা, এতে তারা শুধু তাদের নয়, সেই শিক্ষার অপমান করলো। 

হটাত কিছুদিন ধরে facebook নিয়ে প্রচন্ড কথা হচ্ছে, এবং অন্যের  facebook ব্যবহার নিয়ে যে কেউ বা কারা এত ভাবতে পারে তা, facebook নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে আমার এক অপরিচিত লেখিকার লেখা না পরলে জানতেই পারতামনা। লেখাটি শুধুই হাস্যকর নয়, তার ভেতর প্রধান বিষয় বস্তু থেকে এটাই বোঝা গেল যে লেখিকা facebook বলতে শুধুই বোঝেন স্টেটাস আপডেট দেওয়া বা না দেওয়া, আর তার জন্যে তিনি বসে বসে সবার activity লক্ষ্য করেছেন, এবং যথারীতি সব ই তার কাছে নিন্দনীয় লেগেছে।  অথচ facebook প্রথম কেন আসে বা কোন দরকার থেকে এ প্রথম শুরু হলো ,  বা কে এটি বানিয়েছিলেন সে সম্পর্কে ওনার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই। google তো আছে , আবার কাউকে 'আমরা কত বড়' বোঝানোর সময় google খুলে দেখে নিলেই তো হলো। আমি এই বিষয় টি নিয়ে প্রাণ খুলে জোর গলায় নিন্দে করতে এই জন্যেই পারি যে facebook অনেক অন্য কাজে লাগানো যায় , আমি নিজেই facebook এর মাধ্যমে স্যাম্পল কালেকশন করি। আর লোকেরা কে কি ভাবছে, কে কেন কি ভেবে কিছু লিখছে বা লিখছেনা, আমি কি সেই অন্তর্যামী হয়ে গেছি যে আমি তা বলব। আমি এতই বড় হয়ে গেছি, এতই মহান হয়ে গেছি , যে এ সম্পর্কে অনায়াসে আমি মন্তব্য করতে পারি ? লোককে , তার চিন্তা ভাবনা, কাজকে বিচার করার মত যোগ্যতা কি আমার আছে? আমি যা করি সব ই কি ঠিক? আমি অন্যেকে নিন্দে করছি? আমার এই শুধুই নিন্দের একটিভিটি কি ক্রমশ আমাকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছেনা? বা আমি কি আদৌ কি তা ঠিক করলাম, অন্যের activity র ভুল ব্যাখ্যা করলামনা তো আমি , হয়ত একদিন যে লোকগুলো আমার কাছে ভালবাসার ঝাপি খুলে নিয়ে বসেছিল, ডালা সাজিয়ে দিয়েছিল শ্রদ্ধার , তা আমি সজোরে পায়ে করে সরিয়ে দিলামনা তো? শুধুই নিজের মনের অন্ধকার, insecurity আর egoistic problem এ ভুগে, আমার নিজের জায়গাটা নামিয়ে দিলাম্ নত? আমার এখন দরকার নেই বাইরের লোকের ভালবাসা হয়ত, কিন্তু যে মহা সত্যের কথা আমি বলি, বুঝি বলে ভাবি, তার অপমান করে ফেললাম নত? এত বই, এত কিছু সব নিষ্ফল, স্বাধারণ ঘর সাজানোর সামগ্রী হয়ে গেলনা তো ? কিজানি শুধুই নিন্দার হাত ধরে আমি কি পরম সত্য খুঁজে পাব?



Wednesday, 25 March 2015

চারটি বছর ধরে

দেখতে দেখতে চার বছর হতে চললো 
তোমাকে দেখিনি।
সামনে থেকে

দূর থেকে তো তোমাকে রোজ ই দেখি
ওই যে তুমি ওই ওখানে আছ.......
দেখছ তোমার আদরের অভিমানিনী খেয়েছে কিনা,
ঠিক মতো ঘুম হয়েছে কাল রাতে?
চোখের তলায় কি দাগ ওটা?
দেখেছ কালি পড়েছে ঠিক ....
রাত জাগতে হচ্ছে কি ওকে?
বড্ড বেশি কাজের চাপ?
আহ , দুধ, ডিম টা খাচ্ছে তো ঠিক ঠাক
নজর দেবার সেরকম তো কেউ নেই
দুজনেই যে ছেলেমানুষ বড়ই। .....
মন মেজাজ ভালো আছে তো ওদের
দুঃখ যেন কক্ষনো না পায়
আহ, মেয়েটা আমার এমন ছেলেমানুষ, একটুতেই বড্ড কেঁদে ভাসায়
দাঁড়া এমন একটা গল্প বলব না, মন খারাপ? দেখ কেমন হয় উধাও। .......
এই লেখাটা আলাদা করে রাখি, দেখা হলে বলতে হবে ওকে,
কোন ল্যাব টার কথা বেশ বলছিল ও...... আজ একটা পেপার বের হলনা। ...
কত কি যে বলার আছে ওদের দেখা হলে শেষ ই হবেনা। ....
..........

তোমার মেয়ে হয়েছে অনেক বড়
দুধ ডিম সব ঠিক মতন খায়
কাজের চাপে যখন একা থাকতে হয়,
তখনো সে সময় মতো খায়.....
ঠিক মতো ঘুমিয়েছি আমি
দেখ একটুও নেই চোখের তলায় কালি
সবার সামনে মোটেও কাঁদিনা আমি,
সে যে আমার নিভৃত গীতাঞ্জলি
বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নিয়ে,
মন খারাপ এ আর গল্প বলবে কে....
লড়াই করতে দেখেছি তোমায় আমি
হাসপাতাল এর লোহার বেড এ শুয়ে।
আজ থেকে প্রায় চার টি বছর আগে। ...

বড় হবার সুযোগ দিয়ে গেলে
আরো বড় হতে বলে গেলে
যে হাত শুধু তোমার হাত চিনত
সেই দুহাতে আরো চার হাত দিয়ে গেলে
এত বড় দায়িত্ব কেন দিলে, সে প্রশ্ন আর করিনা আমি
শুধু বলি, তোমার কথা বুঝতে পেরে আমি
আবার তৈরি করছি পায়ের নিচের ভূমি
সব সময় হাসি মুখে থাকি, যেমন ঠিক চাইতে আমায় তুমি
আরো দুজনের মুখের দিকে চেয়ে
বাঁচছি আবার , বাঁচার মতো করে। .....
আজ এই চারটি বছর ধরে

আজ এই চারটে বছর ধরে
তোমার মেয়ে জেনেছে অনেক কিছু
বুঝেছে তার ও বেশি
তাই এখন সে আর যখন তখন কাঁদেনা,
কান্না তার থাকবে জমা করা। .....
দেখা হলে থামাতে হবে তোমায়
অনেক অনেক গল্প মনে রেখো তাই
নইলে কিন্তু মোটেও সে থামবেনা। .......
আমার কাছেও আছে অনেক কিছু
জমা করা রইল রইল সে সব এখান 
থাকবে প্রতিদিনের সকল অভিজ্ঞতা
নতুন নতুন গল্প আর অনেক অনেক কথা
.............

তোমার মেয়ে তোমায় বুঝতে পেরেছে
পেয়েছে তোমায় আরো অনেক কাছে
অনেক অনেক গল্প জমা রইল
একবার যাই, দেখি থামাও তুমি কিসে।....
এবার তো আর একা আমি নয়
ভালবাসার আর এক ভাগীদার যে আছে
ভাগ দিতে আমি রাজি যদিও নই
কিন্তু জানো, নাছোর বান্দা যে সে ,
 তাই
থাক সাথে ও সে। ......


তোমাকে ছেড়ে সেই আশাতেই আছি,
জানি তুমি আছ আমার কাছে
রাস্তা ভুল করলে
হাত ধরে ঠিক পথ দেখিও
এবার তবে ঘুম এর দেশে যাই
সেখানে তো আর কোনো বাধা নেই
সেদেশে আমার সক্কল কে চাই।
ঘুমের মধ্যে চাদর পরে গেলে
জানি তুমি ঠিক করে দেবে এসে
হাত থেকে বই টা তুলে রেখে
ল্যাপটপ টা বন্ধ করে দেবে।

এবার তবে 'টাটা হাম চকাস '
ভুবন ভুলিয়ে হাসো বাবা, একবার।
ভালো থেক সব সময়...........
মন খারাপ আমার একটুও নেই আর।
দেখো আমি হাসছি কেমন করে,
কথা দিলাম, হাসব আমি এভাবেই সব সময়
আমার হাসিতে আর যে দুজন হাসে
তাদের হাসি বন্ধ হবেনা না কখনো।
ভালো করে থেকো তুমি বাবা ,
নিও শরীরের যত্ন।






  

Saturday, 3 January 2015

এক সুন্দর অভিজ্ঞতা

প্রচন্ড ঠান্ডাতে বিছানা ছেড়ে উঠে, ধরা চুড়ো পরে তৈরি হয়ে বাইরে বেরোতে হবে এটা ভেবেই গায়ে জ্বর এসে যায়, তারপর যদি সেই ভোর বেলাতে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে তো আর কথায় নেই।  
                           তো গত কালকে আমার সকালটা শুরু হয়েছিল এই ভাবেই। কিন্তু করার কিছু ছিলনা, কারণ একদিন ছুটি নিয়ে পরের দিন ল্যাব এ  যাওয়া টা দরকারী তো ছিলই , তার থেকেও দরকারী ছিল খুব প্রয়োজনীয় কিছু স্যাম্পল কালেকশন। মানে মানুষ্ নিয়ে কাজ কর্ম করলে যা হয় আর কি, তাদের DNA পাবার জন্যে (মানুষ্ যে আর বেচারা গিনিপিগ কি ইঁদুর নয়) তাই তাদের সময় মতো যখন তারা বলবে, তখন ই তাদের কাছে ছুটে গিয়ে saliva মানে সোজা কথায় থুতু নিয়ে আসতে হয়। কি অবস্থা আর কি, সকাল বেলা, শীত সঙ্গে বৃষ্টি উপেক্ষা করে , বিছানার নরম গরম আরাম ছেড়ে লোকের থুতু আনতে যেতে হবে। মনে মনে এসব ই বলতে বলতে, গজগজ করতে ব্যাগ পত্র নিয়ে আমি বেরিয়ে পরলাম আর বৃষ্টির ছাট বাঁচিয়ে ভুট ভুটিয়া করে পৌছে গেলাম মেট্রো স্টেশন এ।  এদিকার লাইন এ বসার জায়গা পেলেও, পেলামনা ওদিককার লাইন এ, ফলে ৪০ মিনিট দাড়িয়ে দাড়িয়ে যখন সিকান্দার পুর  মেট্রো স্টেশন এ পৌছলাম, বলাই বাহুল্য, মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলাম যে দিন টা আজ নেহাত ই বাজে যাবে। এরপর সুভাদির পরিচিত বাবলু ভাই এর অটোর জন্যে অপেক্ষা আমার বিরক্তি আরো বাড়িয়ে তুলেছিল। বাইরে তখন বেশ বৃষ্টি হচ্ছে।  
                     মনে  মনে  ঠিক করলাম যে চটপট স্যাম্পল নেব আর ৫ মিনিটের মধ্যেই আসব। বাবলু ভাইকেও সেরকম ই বলে ডোর বেল বাজালাম, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে একজন মাঝাবয়সী সুন্দরী মহিলা উঁকি দিলেন আর এক অপূর্ব উষ্ণ অভ্যর্থনা করে আমাকে ভেতরে ডাকলেন। এত সুন্দর অভ্যর্থনায় এবং ওনার আমাকে ডাকার মধ্যে এমন এক আন্তরিকতা ছিল যে যা আমাকে মুহুর্তের মধ্যে সহজ করে দিল। জুতো খুলতেই খুলতেই আমি শুনলাম, উনি আমাকে বলছেন "I  am  sure , u  need coffee". ওনারা হিন্দি বা বাংলা জানেননা, কারণ ওনারা পার্সি।  নিজেদের মধ্যেও ওনারা ইংরাজি তেই কথা বলেন। এরপর ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই বাড়ির মালিক প্রায় ৮৫ ও ৮০ বছরের শক্ত সমর্থ ও সক্রিয়, ধোপ দুরস্ত ভদ্রলোক ও তাঁর স্ত্রী আমাকে এমন ভাবে দুহাত বাড়িয়ে ভেতরে ডাকলেন, যে মনে  হলো যেন বহু বছর পরে আমার নিজের দাদু, ঠাকুমা আমাকে দুহাত ভরে কাছে ডাকলেন। আমার দাদু, ঠাকুমার অভাব আমার বহু দিনের। ছোট বেলাতে তাদের কাছে শুএ শুএ গল্প শোনা তো আমার হয়নি। তাই ওই ভদ্রমহিলা যখন আমাকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরলেন ,মুহুর্তের মধ্যে আমার চোখে জল এসে গেছিল।  না দেখতে দিইনি কাউকে আমি তা, চোখের জল লুকিয়ে মুখে হাসি আনতে আমার এখন  কোনো অসুবিধে হয়না। কিন্তু কোন অমৃতে ওনারা মাত্র একবারের পরিচিতিতে প্রায় অদেখা, অচেনা এক মেয়ে কে এত কাছের করে নিতে পারলেন। বাইরে বেড়িয়ে বাবলু ভাইয়ের ও কোনো অসুবিধে হচ্ছে কিনা, তা দেখে এলেন। ৫মিনিট থাকব ভেবে এসে, ২৫ মিনিট কেটে গেল নানান কথায়। এত আন্তরিক এত সুন্দর ব্যবহার আমাকে ভুলিয়ে দিল সকালের বিরক্তি। বরং মনে হলো যে এখানে না এলেই বুঝি আমার মানুষ্ সম্পর্কে আরো জানা বাকি থেকে যেত। 
                           বয়স্ক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা গুরগাঁও তে থাকেন, দুই মেয়ে, দুজনেই বাইরে। প্রতি বছরে এই সময় ছোট মেয়ে ওনার পুরো পরিবার নিয়ে কানাডা থেকে আসেন এবং বেশ অনেকদিন থেকে যান।এবছর ও তাই এসেছিলেন। তার মধ্যেই আমি আমার কাজের জন্যে ওনাদের বাড়ি যাই , আমি ছিলাম ওনাদের সেই মিষ্টি গেট টুগেদার এ একেবারেই অযাচিত , অন্য কেউ হলে বিরক্ত হত, কিন্তু ওনারা সেই বিরক্ত হবার বদলে আমাকে যে ওই ভাবে আপন করে নেবেন, ভাবতেই পারিনি। আপন করা বা না করা হয়ত একটু বেশি দুরের কথা, আমি কিছু  ইমোশোনাল হয়েই বলে ফেলেছি কিন্তু ওই ভাবে ভেতরে ডাকা? আমার জীবনে খুব কম মানুষ্ অন্য কাউকে এভাবে সাদর অভ্যর্থনা করতে দেকেছি , তাদের মধ্যে সবার আগে বলতে হয় আমার বাবার কথা। আমাদের বাড়িতে যত লোক ই  আসুক না কেন, বাবা সব সময় হৈহৈ করে ডাকত। আর সেটা মন থেকে না হলে কখনো কেউ ওভাবে বাইরের লোক কে ডাকতে পারেনা। 
                    একটা সুন্দর হাসি, একটা সুন্দর ব্যবহারের এত গুণ যে আমার গোটা দিনটাই কালকে যেন বদলে গেছিল। nbrc এসেই সবার সাথে আপনা আপনি ভেতর থেকে একটা ভালো ব্যবহার আমার বেরিয়ে আসছিল। অনেক সময়, অনেক দিন আমি ভেবেছি, দূর ওর সাথে কথা বলবনা, ও আমাকে এভাবে বলল, আমার আত্ম সম্মান এ আঘাত হলো, আমার বাবা অবশ্য সব সময় বলত, এমন কি অর্নব ও বলে, আত্ম সম্মান কি এতই ঠুনকো , একটু কথাতেই আঘাত লাগবে? তখন বুঝিনি, কালকে মনে হচ্ছিল কি হবে এসব ভেবে, নিজেকে এত শক্ত করে রেখে, ভেতরের যে ভালোলাগা তা যেন ভালবাসা হয়ে সবার দিকে ছড়িয়ে পরেছিল। কে কতদিন, আর কার সাথে থাকব, কিন্তু এই যে দুদিনের দেখা, কথা, তার মধ্যে দিয়ে নাহয় নিলাম ই সবাইকে আপন করে। এই যে ওনাদের এক মুহুর্তের ভালো ব্যবহার আমার সারা দিন তাকে প্রজাপতির পাখার মত হালকা করে দিল, এরপর আমার ওনাদের সাথে ভবিষ্যতে কখনো দেখা হোক বা না হোক, ওই সুখস্মৃতি টা তো থেকে যাবে। 
                      গত কালকের সেই সুন্দর ব্যবহার আমার মন থেকে অনেক বাজে স্মৃতি মুছে দিতে সাহায্য করেছে। আগেও এরকম হয়েছে, তবে কালকে আমি সত্যি ই আমার মনের ভেতরে জমে থাকা রাগ, দুঃখ , ক্ষোভ, বিরক্তি থেকে , কিছুটা না হলেও খানিকটা মুক্ত হয়ে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। হয়ত সেইসব ক্ষোভ, দুঃখ রাগ আমার একসময়ের ভালবাসা আর expectation থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল, কিন্তু থাকনা, সবাই তো সব কিছুর উপযুক্ত নয়, যে যেমন ভাবেই আমার কাছে আসুক না কেন আমি কি তাদের কে আমার ভালবাসা দিয়ে আমার মতো করে আমার কাছে  রাখতে পারিনা? প্রতিদানে নাইবা পেলাম সে ভালবাসা, কি হয়েছে তাতে, তবু আমি তো দিতেই পারি। 

আমার সেই একদিনের সুন্দর অভিজ্ঞতা নিজেকে একটু হলেও মানুষ্ বলে ভাবতে সাহায্য করলো কি? জানিনা। তবে এই ভালো লাগা থেকে আমি বেরিয়ে আসতে চাইনা। কালকে ফিরে আসার পর থেকেই খুব লিখতে ইচ্ছে করছিল ওই মানুষগুলোর কথা, এই অভিজ্ঞতার কথাই লিখতে বসে আমার নববর্ষ পালন এর কাহিনী লেখা হয়ে গেছিল।  

Friday, 2 January 2015

আমার নববর্ষ পালন

আগ্রা যাবার পুরো বিবরণ একটু পরে দিচ্ছি। কিন্তু তার আগে আমার কিছু সুন্দর অভিজ্ঞতার কথা খুব লিখতে ইচ্ছে করছে। 
                        গত কাল থেকে শুরু হয়ে গ্যাছে ২০১৫ সাল লেখা, প্রতিবার এর মতই এবার ও আমার ২০১৪ এর জন্যে একটু মন খারাপ হলো আর কি, এসব ক্যাবলামো আমার চিরকালের, আমার যারা সত্যি সত্যি বন্ধু, মানে আমার শত পাগলামো, ন্যাকামো এবং অন্যদের কাছে যেগুলো হয়ত ভীষণ বিরক্তকর, এমন ব্যবহারেও যারা আমাকে ছেড়ে যায়নি, এবং উপরোক্ত এই সব কিছুকেই হেসে আমাকে আরো আদরে বাঁদর করেছে, এমন কিছু বন্ধুর দল তাই, নতুন বছরে আর সবাইয়ের মতো নতুন বছরের শুভেচ্ছা না জানিয়ে বলে ওই যে, পুরোনো বছর গুলোর জন্যে একটু দুঃখ করে নেওয়ার সময় এসেছে তোর্। 
                      তো যাই হোক, সবাই জানি এবং জানে যে নতুন বছর আর অন্য আর সব বছর গুলোর থেকে আলাদা কিছুই নয়, তবু যে যার নিজের মতো করে এই নতুন কে স্বাগত জানায়, প্রতিটা দিন ই তো নতুন তাই না, এক লহমায় পাল্টে যেতে পারে মানুষের জীবন সেকথা তো সবার ই জানা, তবু এই স্বাগতম কে বেশ লাগে আমার। আর আমার এবং আমাদের এই বছর শুরুর দিন টা এবারে সত্যি ই এতদিনের থেকে একটু অন্যরকম গ্যাছে। 
                                 তার আগে আমার সেই আদরে মোড়া মিষ্টি ছেলেবেলা, যখন আমি সত্যি ই ছোটো ছিলাম ,বুঝতাম শুধু বাবা, মা, দিদি, টুন দিদির আদর আর বকা, এ ছাড়া দুনিয়াতে আর কিছু ছিলনা,সেই সময়ের কিছু কথা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। 
                                     সেই রকম এক সময় পয়লা বৈশাখ আর 1st Jan পালন মানেই আমি ঘুম থেকে উঠেই সকালে মাকে বলতাম , আজ কিন্তু আমাকে তোমরা একটুও বকবেনা আর বাবাকে বলতাম আজকে কিন্তু তোমাকে আমায় অনেক গল্প বলতে হবে। আর মা আমাকে বোঝাত বছরের প্রথম দিন খুব ভালো মেয়ে হয়ে থাকতে হয়, দিদির সাথে ঝগড়া করতে নেই আর সব ভাত খেয়ে নিতে হয়, আর খুব মন দিয়ে পড়াশুনো করতে হয়। 
                                      সেই সব আদর বকা খুনসুটি ভরা মিষ্টি বছর গুলোর সাথে তুলনা কোনদিন ই কিছুরই হয়না, এখন ভাবি ইশ আজ আর দিদির সাথে সেই রকম সেই ঝগড়া, মারামারি কেন হয়না? আমি আর আমার বন্ধুবর দুজনেই যথেষ্ট ভাগ্যবান যে ভাইবোনের সাথে ঝগড়ার যে মিষ্টতা সেটা আমরা পেয়েছি, আর তাই বোধহয় আমাদের সবাইকে নিয়ে থাকতে কোনো অসুবিধে হয়না। নিজেরাও যখন কথায় কথায় খুনসুটি করি, অন্য কেউ দেখলে ভাবে খুব ঝগড়া চলছে, কিন্তু এসব হচ্ছে আমাদের ছেলেবেলার বদ অভ্যেস , এই মেঘ, এই রোদ্দুর। তাই ভালো ভালো কোনো কাজের resolution না নিয়ে আমরা দুজনে গত কাল কে  ঠিক করেছি যে আমরা যেন এরকম ই ঝগড়া ঝাটি , খুনসুটি করে আজীবন থাকতে পারি। 
                                মনে আছে একবার দিদিকে আমি রেগে গিয়ে এমন কামড়ে দিয়েছিলাম যে (মানে খুব ই লজ্জা করছে বলতে , কিন্তু সত্যি কথা, কি আর করব বলেই ফেলি,) দিদি কে না ইনজেকশান নিতে হয়েছিল, কিন্তু  মাকে বা বাবাকে সেদিন আমাকে বকতে হয়নি, ওকে যখন ইনজেকশান দেওয়া হচ্ছে, আমি তখন ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছি। মানে অনুশোচনায় এতই কেঁদেছিলাম যে শেষ কালে সেই বলছে আমাকে যে ওরে আমার কিছু হয়নি রে তুই আর কান্দিসনা। 
                                   তো সেই সব হাসি কান্নায় ভরা দিন গুলোর পরে যখন থেকে আমাকে বাইরে যেতে হলো, তখন থেকে একটু অন্যরকম হলো সেই সব বছর গুলোর শুরুর এবং বাকি দিন গুলো পালন। মা যদিও সব সময় ই আমরা কাছে থাকলেই আমাদের প্রিয় প্রিয় খাবার দিয়ে celebrate করত সেই দিনগুলো। সে বছর শুরুর ই হোক, কি শেষের , কি মাঝের। 
                                    ২০১১ এর পরের বছর গুলো শুধুই আগের কথা ভেবে ভেবে যেত। অন্যদিনের মতো কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার কোনো প্রশ্নই ছিলনা, গত বছর ছুটির দিনেই বছরের প্রথম দিন তা ছিল অবশ্য। 

                তো সে যাই হোক, এ বছর টা শুরু হলো একদম সপ্তাহের মাঝখানে আর সেই প্রথম দিনেই আমরা দুজনে করে ফেললাম দুঃসাহসিক কাজ , যেটা আমার কাছে অতটা দুঃসাহসিক যদিও নয়, কিন্তু আমার বন্ধুবর টির পক্ষে সত্যি ই দুঃসাহসিক। সেটা হলো, সপ্তাহের মাঝখানে , ছুটি নিলে যা হয় হয়ে যাক, সেই  সব না ভেবেই ল্যাব না যাওয়া। শুধু কি তাই সেদিন টা আমরা কাটিয়েছিলাম রাজার মতো। আগের দিন রাত প্রায় ৩টে পর্যন্ত সিনেমা দেখে, হা হা হি হি করে পরের দিন দুপুর ১২ টায় বাড়ির সবার শুভেচ্ছায় ঘুম থেকে উঠে আয়েশ করে চা খেলাম, তারপরে নবাবী চালে ১টার সময় বন্ধু শুরু করলেন আগের দিনের কিনে রাখা মাংস রান্না করতে আর আমি লাগলাম ওনার সাহায্যে। ২.৩০ টে নাগাদ রসিয়ে রসিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমাদের সাধের ঘুম বাতিল করে বেড়িয়ে পরলাম মেঘলা দিনে রাস্তায় রাস্তায় টো  টো করতে। কিছু পরে আমাদের এই ভেঞ্চার এ আর ও দুজন যোগ দিল, ও তাদের পথ  নির্দেশে আমরা চললাম কম দামে সোয়েটার কিনতে। পকেট ছিল খালি, কিন্তু তবুও কিনেও ফেললাম, আর ভাবলাম  নতুন বছরে কত সব গিফট দেওয়া নেওয়া হয়, আমরা তো সে সব কিছুই করিনি, অতএব আর কি  হয়ে গেল আমাদের দুজনেরও একে অপরকে উপহার দেওয়া। তারপর নাচতে নাচতে চলে গেলাম C R Park এ, সেখান থেকে গেলাম কালীবাড়িতে, সন্ধ্যারতি শুনে বেরোতে বেরোতে দেখলাম যে খিদে পেয়ে গ্যাছে, market ২ তে গিয়ে আবার কিছু খাওয়া হলো, পুরনো বন্ধুর সাথে দেখাও  হলো আর তারপরে যে যার বাড়ি।  কিন্তু এখানেই শেষ নয়, পেটে  আমাদের সেদিন রাক্ষস নিশ্চই ঢুকেছিল, বাড়ি ফিরে অনেকখন ধরে দুটো বাড়িতে কথা বলা হলো আর তার পরে আরো একটু রাত করে শুরু হলো আমার লুচি বেলা আর ওর ভাজা , অত:পর ? খাওয়া এবং সব থেকে প্রিয় কাজ ঘুম। অতএব বছরের প্রথম দিনে সবাই যখন ভালো ভালো কাজের শপথ নিয়েছে, আমরা সেদিনটা চরম আলসেমিতে কাটিয়েছি। আর এই আলসেমির সঙ্গে জড়িয়ে ছিল শীতের নরম রোদ্দুরের মত আদুরে শান্তি। যেন জীবনে কোনো ভয় নেই, কোনো চিন্তা নেই , শুধুই তো পথ চলা। তবে যে সুন্দর অভিজ্ঞতা বলব বলে লিখতে আরো বেশি করে ইচ্ছে করছিল, সেটা হয়েছে আজ সকালে, সেটা বলতেই বসেছিলাম, কিন্তু অন্য অনেক কিছু বলা হয়ে গেল, সেটা বরং আর একটু পরে বলছি। এ না হয় হলো শুধুই আমার, আমাদের হয়ে বছর শুরুর কাহিনী, যা বারান্দার রোদ্দুরে জানলার গ্রীল এর ছায়ার মতই সাধারণ কিন্তু সেরকম ই একান্ত আপনার। তাই এই পোস্ট এর নাম দিলাম আমার নববর্ষ পালন। 

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...