সন্ধ্যে বেলাতে আমি সাধারণত কক্ষনো ঘুমাইনা। ঘুমোলেই কেন কিজানি ওই ঘুম চোখ খুলে দেখা অন্ধকার আমার মনে এক অদ্ভুত ভয় আর মনখারাপ নিয়ে আসে। তাই কখনো ঘুমাইনা। কিন্তু আজ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। নিচের ঘরে টিভি চলছিল, সিরিয়াল। মা দেখছিলো। তাই ওপর ঘরেই শুয়েছিলাম। একটা ফোন আসতে হটাৎ ঘুম ভেঙে গেল। অন্ধকার ঘর। খোলা কাঁচের জানালা দিয়ে আধো আলো ছায়া, গ্রিল আর গাছের পাতার প্রতিচ্ছবি নিয়ে দেওয়ালে, মেঝেতে আঁকিবুকি কাটছিলো। কেমন একটা ভয় আর মনখারাপ এ হটাৎ চোখ দুটো জ্বালা করে উঠলো। গলার কাছটাতে কিসের একটা দলা সমস্ত মনটাকে আচ্ছন্ন করে দিলো। মনে হলো, কাঁদি , অনেক কাঁদি। কিন্তু ওই যে, জানিত যে আনন্দের মতো মনখারাপ ও একটা নেশার মতো, শেষকালে মনখারাপ করতে করতে এমন প্যানপ্যান করতে থাকবো যে সে আর শেষ ই হবেনা। তাই উঠে বসলাম।
ওই যে একজন মানুষ, যাকে আমি সবসময় মিস করি, যে মানুষ টা এসে যদি একবার মাথায় হাত রাখতো, তাহলে কোথায় সব মনখারাপ ভেসে চলে যেত, যে তার মান্তুর এতটুকু মনখারাপ, এতটুকু চোখের জল সহ্য করতে পারতোনা। সেই সেবারেও, মনোবিকাশ এ কি একটা প্রবলেম চলছিল, মনখারাপ ছিল আমার। বাড়ি ফিরতেই বাবা কোথায় আমার প্রিয় মেনি কে এনে আমার কোলে দিচ্ছে, কোথায় টিভি তে ছোট ভীম চালিয়ে দিচ্ছে আবার কোথাও বা মাকে বলছে, দেখোনা ও কি খাবে। সেই আকুলতা, কারোর মনখারাপ এ এইরকম আকুল হয়ে মন ভালো করার চেষ্টা, হটাৎ এক প্রায় অচেনা অথবা খুব চেনা এক ছোট্ট মানুষের মনখারাপ এর কথা আমার মনে এনে দিলো। মনে হলো ইশ যদি এখুনি কিছু ভাবে ওই ছোট্ট মানুষটার মন ভালো করে দেওয়া যেতে পারতো। জানিনা কেন আর কিভাবে আমার নিজের মনের ওঠা পড়ার সাথে আমি ওই এক ছোট্ট অচিনপাখির মনের কোথাও এক যোগ খুঁজে পাই। শুধু নাম এর মিল ই কি এই মেল্ এর জন্যে দায়ী? কি জানি। জানিনা। নাকি সেই অনেকদিন আগে আমার বাবার অংকের মাষ্টার মশাই, আমার সম্পর্কে আমার বাবা কে বলা সেই কথা? সেইটাই সত্যি? কি জানি। তখন আমি মাধ্যমিক দিয়েছি, বাবা ওনার কাছে নিয়ে গেছিলেন। কি শান্ত সৌম্য মূর্তি। কাছে গেলেই মনে হয়, পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করি। উনি আমার সাথে অনেক কথা বলেছিলেন। আর পরের সপ্তাহে বাবাকে ডেকে বলেছিলেন, তোর এই মেয়ের মধ্যে এক স্বভাব মা বসে আছে। বিশ্বজননী। বাবা হাসছিলো, বলছিলো আমার কুকুর বেড়াল, ছাগল ছানা ঘাঁটার কথা। উনি বলেছিলেন, শুধুই তা নয়, এই সময়ে যে ভয় থাকে, তোর মেয়ের জন্যে সেই ভয়ের কোনো দরকার নেই। ওর সারল্যের সুযোগ নিয়ে হয়তো অনেকে ওর কাছে আসার চেষ্টা করতে পারে, কারণ বয়সের তুলনায় অনেক বেশি সরল ও, কিন্তু ক্ষতি করতে পারবেনা। ওই যে ভেতরে বসে থাকা ওই জননী, সে ঠিক সময়ে বুঝে গিয়ে বেড়া দিতে পারবে। তোর মেয়ে বেড়া দিতে জানে। কথাগুলো হয়েছিল আমার সামনেই। ছোট থেকে মা এর কড়া শাসন ছিল, কখনো সামনে ভালো বলতোনা। তাই ওই সব প্রশংসা শুনে খুব লজ্জা হচ্ছিলো, তাড়াতাড়ি সেখান থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিলাম। কিন্তু সেই প্রশস্তি , বলতে গেলে সেই প্রথম এত বেশি প্রশস্তি সামনে বসে থেকে নিজে শুনলাম। তাই বোধয় কখনো ভুলিনি। আর মাঝেমাঝেই যখন বাবাকে খুব মিস করি বা কোনোকারণে ঠিক ভুল হাঁতড়াই , তখন ওই কথাগুলো মনে পরে, ওই কথাগুলোকে আঁকড়ে যেন আমি রাস্তা পাই, ঠিক টাকে চিনে নিতে পারি। আত্মবিশ্বাস এ আবার উঠে দাঁড়াতে পারি।
বাবাকে সবসময় ই খুব মিস করি। যখন এক হল ভর্তি লোকের সামনে presentation দিতে উঠি, তখন শুধু ওই একটা স্নেহ দৃষ্টির জন্যে বড় আকুল লাগে; বাড়িতে যখন প্রথম পিএইচডি এর থিসিস নিয়ে ঢুকেছিলাম বা সেই খুব শীত এ যখন আগাগোড়া গরম জামাকাপড়ে মুড়ে পিএইচডি ডিফেন্স করে নামতেই মা বলেছিলো, আমার এই তুলোর বল টা এত ইংরাজি তে কথা বলতে পারে? তখন মা মুখে ওই আদরের কথা শুনে খুব লজ্জা পেয়েছিলাম, আনন্দও। কিন্তু চোখ আর মন খুঁজছিলো শুধু একটাই হাসি মুখ। মা এর পাশে সেই একজনকেই খুব খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। বাবা থাকলে শুধু আমাদের চোখে চোখে হাসি বিনিময় হতো। ওই হাসির ভাষা শুধু আমদের দুজনের। আমরা দুজনেই জানি ওই ভাষার মানে। ওই একটা হাসি মুখের জন্যে কাহন কখনো সব শূন্য মনে হয়। সেই যে, সবসময় যে মানুষটার হাত ধরে রাস্তা পার হয়েছি। সেই মানুষটা তো জানতেই পারেনা এখন তার মান্তু কত বড় হয়ে গেছে , একা একা কারোর হাত না ধরে, কত রাস্তা সে পার হতে পারে এখন। কতবার আমার বন্ধুবর টি বলে, আর কবে একা রাস্তা চিনবি? আর কবে একা একা যাবি। এখন তো সত্যি ই আমি কতকিছু একা একা করি।
গতকাল সন্ধ্যে থেকে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত মনখারাপ বারবার চিনচিন করে উঠছিলো। আর সেই চিনচিনে ব্যাথা সমস্ত রাত্রি, ঘুমের মধ্যে, চোখের জলের মধ্যে দিয়ে জানান দিয়ে যায় তার উপস্থিতি। আজ সকালে রাস্তায় বেরিয়েও সে পিছু ছাড়েনি, সঙ্গে ছিল সমান তালে। আর তাই যখন সাঁত্রাগাছিতে নেমে উবের বুক করতে যাবো, তখন হটাৎ মনে হলো, সবার মধ্যে যাই। within crowd . দিল্লিতে মেট্রোতে গেছি অবশ্য। তবে, আমি কোনোদিন ই কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ যাইনি। এমন কি শেয়ার পর্যন্ত কখনো করিনা। শুধু আমি কেনো খুব কম লোক ই দিল্লিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এ যায় বোধহয়। কিন্তু কোলকাতা তে এলে কেন কিজানি, একটা এমনি ট্যাক্সি করতে গেলেও আমি থমকে যাই। কিজানি, হয়তো এটা আমার নিজের জায়গা, ভরসা টা এখানে অনেক বেশি? তাই জন্যে? বা আরো একটা প্রচ্ছন্ন কারণ ও থাকতে পারে, কোলকাতাতে যখন একসময় নিজের পা এ দাঁড়াবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, তখন হাতে এই এত টাকা ছিলোনা। তখন সাঁতরাগাছির ওই সাদা সাদা বাস গুলোতে করেই আমি যেতাম। তাও ওই বাস গুলোকেও আমার বিলাসিতা লাগতো, বাবা জোর করে ধমক দিতো তাই ওই বাস গুলো করতাম। আর আমার ভিড় এ যাতায়াত করতে কষ্ট হতো। ঐটা নিয়ে বাবার খুব টেনশন ছিল, তাই বাবার কথা মানতাম। আর ট্রেন তো ছোট থেকেই আমার অভ্যেস, কারণ আমাদের এই ছোট্ট খুব ছোট্ট জায়গাটাতে কোনো বাস ৰূট এখনো হয়নি। এইভাবেই আমার বড় হওয়া। সবার মাঝে, সবার কষ্ট দেখে, সেটার অনুভব ভেতরে দিয়ে অথচ আবার খুব আলাদা ভাবে আমাদেরকে আমাদের মা বাবা বড় করেছে। এখন সেটা বুঝতে পারি। যখন ট্রেন এ বাস এ , নিজেদের পাড়ায় বা নিজের প্রফেশন এ চারপাশের মানুষের চোখে একটা এক্সট্রা সম্ভ্রম দেখতে পাই, যখন একটা একটু বেশি attention, একটু বেশি cautiously, একটা অন্য respect নিয়ে মানুষ কথা বলতে এগিয়ে আসে, তখন বুঝি এ আমার মা বাবার দান।
যাই হোক, বাস এ গিয়ে উঠলাম। সেই সাদা বাস গুলো। প্রথম দিকের লেডিস সিট টাতে গিয়ে বসলাম। সামনে বাঁ দিকে যে বসার জায়গা, সেখানে একটা ছোট্ট ছেলে, কত বয়স হবে, হয়তো এই চার বছর মতন, তার মা এর কোলে বসেছিল। অনেক ক্ষণ থেকেই দেখছিলাম, চোখে কাজল কপালে কাজলের টিপ্ পড়া ওই পুচকেটা আমাকে এক দৃষ্টিতে মা এর কল থেকে ঝুঁকে ঝুঁকে দেখছে। চোখাচোখি হতেই আমার হাসির প্রত্যুত্তর ও দিলো সে, এক গাল হাসি দিয়ে। আড়চোখে দেখলাম। খুব অবাক হয়ে ও একবার আমার দিকে দেখছে, র একবার আমার হাত এর ঘড়িটা। বুঝলাম বড় ডায়াল টা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আস্তে করে একবার ছুঁলো , তারপর আবার দেখতে থাকলো। কিজানি কি দেখছিলো, ভাবলাম হয়তো এমন বিসদৃশ জিনিস ও আর দেখেনি, হাতের পলার পাশে এই এত্তবড় ডায়াল টা তাই বারবার দেখছে ওই ছোট্ট মানুষটা। তারপর আর একটা অদ্ভুত জিনিস করলো পুচকেটা। বাস তখন সেকেন্ড ব্রিজ এর ওপরে। আমি বাইরে দেখছিলাম। হটাৎ দেখলাম, হাতের ওপরে একটা আলতো স্পর্শ। চমকে তাকিয়ে দেখি, ওর ছোট্ট ছোট্ট আঙ্গুল দিয়ে আমার বাম হাতের ওপরটা ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখছে। খুব সন্তর্পনে, সাবধানে। আমার মুখের দিকে তাকালো, আমার মুখের অবাক হাসিটাতে রাগ নেই বুঝে, একটু সাহস বাড়লো বোধহয়। অন্য সব আঙ্গুল গুলো তো ওর তুলনায় অনেকটাই বড় , তাই বোধহয়, কড়ে আঙ্গুল টাকেই হলো পছন্দ। আলতো করে প্রথমে হাত দিলো, আর তারপরে আঙ্গুলটাকে ধরে রাখলো, সেই এক্সসাইড পর্যন্ত। আস্তে করে শিশুহাত সরিয়ে যখন নেমে যেতে হলো আমায়, তখন নামার সময় ও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে থাকলো। আমি নেমে হাঁটতে থাকলাম। পরে নেমে গিয়ে ভাবলাম, হয়তো কোলে নিলে ভালো হতো, কিন্তু হাত বাড়াইনি। কেন কিজানি। আমার কোলে ব্যাগ রাখা ছিল, তবু নেমে মনে হলো, কেন হাত বাড়ালামনা, হাত বাড়ালেই হয়তো আসতো, কিন্তু বাড়াইনি। ও ওর মা এর কোল এ থেকেই আঙ্গুলটা ধরে রইলো। আর আমিও নিজের জায়গায় থেকেই ওর ওই ধরে রাখাটাকে অনুভব বা উপভোগ করেছিলাম। ঐটুকুই হয়ে রইলো আমাদের পরিচয়। ঐটুকুতে আমার ওই আঙ্গুলটাকে জড়িয়ে রেখে কি ভাবলো আর কি পেলো ওই শিশুমন, আমি জানিনা। তবে এক অর্থবহুল আনন্দে আমার মন ভরিয়ে দিলো। ধীরে ধীরে গতকাল রাতের মনখারাপ এর মেঘলা আকাশে সূর্য্যের হাতছানি দেখা দিতে থাকলো যেন। বুঝলাম, গন্তব্য এসে গেলে চলে যেতে হবে সবাইকেই। তবে ওই গন্তব্যে পৌঁছনোর কিছুটা পথ যদি কারোর সাথে একসাথে চলার থাকে, তাহলে সে পথ এর অনুক্ষণ গুলোর সবটুকু ভালোলাগা ওই পথিকের, দুই পাঠসাথীর।
ঠিক করলাম, আজ একা একা ভিড়ের মধ্যে হাঁটবো। দিল্লিতে কিছুদিন আগে যেমন সরোজিনীতে ঘুরেছিলাম। সেইরকম। তবে এটাতে গন্তব্য আছে। আর সেটা ছিল শুধুই ঘোরা। যাই হোক, দিন চলতে থাকলো। আমি বাস, মেট্রো তারপর আবার বাস এর পরে গন্তব্যে পৌঁছলাম। ক্লান্ত লাগেনি একটুও। অচেনাও না। যাকেই জিজ্ঞাসা করলাম, সেই কি ভালো করে রাস্তা বলে দিলো। এখানে কাকু, জেঠু বলে এখনো কথা বলা যায় দেখলাম। দিল্লির মতো কথায় কথায় excuse me বলার দরকার হয়না। এখনো বাস যেখানে ইচ্ছে হাত দেখালেই থেমে যায়, stoppage এর তোয়াক্কা না করেই। যদিও সেটা সর্বত্র খুব নিন্দনীয়, তবু আমার তো বেশ ভালো লাগলো। বেশ প্রাণ আছে এখনো মনে হলো। রাজাবাজার থেকে কলেজ স্ট্রিট যাবার ছিল, তাড়া ছিল, তাই উবের ই করেছিলাম। কিন্তু বোকার মতো লোকেশন দিয়েছিলাম শুধুই কলেজ স্ট্রিট , তাই অনেকটা আগেই অন্য একটা রাস্তায় নামবে হলো। যদিও ওখান থেকে ২ মিন এর হাঁটা পথ বললো, কিন্তু আমার অবস্থাতো তথৈবচ, তাই, সেইটাই নিলো প্রায় ১০ মিন, যেতে যেতে দেখলাম পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে, মাত্র ৫টাকায় একটা এত্তবড় পেয়ারা। বিটনুন দিয়ে পেয়ারা খেতে খেতে হাঁটতে থাকলাম। ট্রাম রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকলাম। আঃ কি মিষ্টি পেয়ারা ছিল, কি সুন্দর পেয়ারা খেতে খেতে হাঁটা যায় এখানে। বন্ধুবর টি থাকলে নিশ্চই বকুনি খেতাম আমি, কিন্তু আমি খুব জানি, ওই এইটুকু ধুলোবালি মাখা খাবার খেলে আমার কিছু হবেনা। বরং এইভাবে একা একা এইভাবে পেয়ারা খেতে খেতে রাস্তা হাঁটাটা না গেলেই আপসোস হতে পারতো পরে। ইউনিভার্সিটি র গেট এ এসে দেখি ফুচকা, একটু লোভ সামলালাম। কিন্তু কাজ শেষ করে বেরিয়েই শুরু করে দিলাম ফুচকা। খিদের মুখে পেয়ারা আর তারপর ফুচকা পেটের মধ্যে যাই তৈরি করুক না কোন , আমার গোটা দিনটাকে যেন এক অন্য আনন্দের স্রোতে ভাসিয়ে দিলো।
কলেজ স্ট্রিট আমার সবসময় ই খুব ভালো লাগে, দুপাশে অজস্র বই, নতুন পুরাতন মিলে মিশে কেমন এক অনন্য গন্ধ। হাতে সময় ছিলোনা আজ বেশি, এর পরের দিন এলে একটু বই দেখে যাবো। কত মানুষ চলছে। কত ছেলেমেয়ে। নতুন নতুন প্রেমের নেশা। হালকা চাহনি, একটু আলতো দেখা। বেশ লাগলো আশপাশের ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ওই মুখগুলোকে। আমার একটা অনেকদিনের ইচ্ছে আছে, ইচ্ছে পূরণ হয়নি এখনো। একটু ইতস্তত করে রাখলাম লিখে ওই ইচ্ছে খাতার পাতাতেই। সেটা হলো, পড়ার বইয়ের তাড়াতে নয়, মনের তারণাতে, আর ভালোলাগার তাগিদে, ওই অজস্র বইয়ের মধ্যে দিয়ে, কোনো বিশেষ কারোর হাত ধরে খুঁজবো কোনো প্রিয় বই। নতুন, পুরোনো বিভিন্ন বই এর মিশ্র গন্ধ এসে লাগবে আমাদের নাকে। আর তারপর এক কাপ কফির সঙ্গে কাটবে কিছুক্ষন। ওই কফিহাউসে বসে, নাহয় তর্কের ঝড় উঠুক, গল্পের আবেগ আর প্রাণের আনন্দে সুর মেলাক প্লিঙ্ক ফ্লয়েড, কাটি মেলুহা বা ওই বুড়ো লোকটা। মনে রাখার মতো, কিছু মুহূর্ত তৈরি হোক। আর আমরা বারবার ওই মুহূর্তে বাঁচি। বারবার জেগে উঠি। বারবার খুঁজি সুর। আর তারপর জীবনের প্রতিটা সুর, তাল, ছন্দ এক হয়ে মিশে গিয়ে যেন একাকার হয়ে মেলবন্ধন ঘটায়।
প্রেসিডেন্সির গেট এর সামনে একটা কদম গাছ আছে, আর তার একটু পরে বোধয় বকুল ওটা। দুটো গন্ধই নাকে এসে আমাকে উন্মনা করে দিয়ে এই স্বপ্নজাল বোনাচ্ছিলো। জাল ছিন্ন করলামনা, কিন্তু সময়ের হাতেতো বন্দি আমরা সবাই, তাই এগিয়ে চললাম। মনের মধ্যে রইলো এক স্থির, নিরবিচ্ছিন্ন আনন্দ। এক নিশ্চিত শান্তি। আর অনন্ত ভালোলাগা। কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ, কোনো অনুযোগ কিছু মাত্র নেই। কোনো আশাও নয়। আজকের এই আমার একলা ভ্রমণ একান্ত ভাবে আমাকেই আবার চিনিয়ে দিয়ে গেল। আজ দিন শুরু করেছিলাম, বুকের ভেতরে এক চাপা কষ্ট নিয়ে, কিন্তু দিন শেষ করলাম এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে। এটাই আমার পাওনা। হয়তো এটাই আমার সাধনাও।