Thursday, 2 August 2018

মাছরাঙা

একটা ছোট্ট মাছরাঙা, যার ডানার ভেতরটা নীল, গাঢ় নীল রঙের। যখন উড়ে যায়, তখন সেই নীল, গাঢ় , মনভোলানো নীল রং চোখে পরে। আর যতক্ষণ কাছে থাকে, যেন চুপ করে ধ্যানমগ্ন হয়ে থাকে সমস্ত অনুক্ষণ। আমার কাছের সময়, যে সময়টা আমরা পেরিয়ে চলেছি, হটাৎ হটাৎ করে যেন সব ভাষা হারিয়ে ঐরকম ধ্যানমগ্ন হয়ে যায়। কথা ছিল কি? বলার ছিল কিছু? ছিল কি কিছু টানা পোড়েন ? কিছু বোঝাপড়া? হিসেব? ছিল হয়তো, কি এসে যায় তাতে। সেইসব জটিলতা, ওই ভরাগঙ্গার জোয়াড়ে যেন কোথায় ভেসে চলে গেল। মনে এলোনা আর। শুধু মনে হলো, এই ক্ষন, এই একটা একটা মুহূর্ত যেন ওই ভরা বর্ষার যৌবনমতী ধরিত্রীর মতো খুব স্নিগ্ধ, সবুজ হয়ে, তার সমস্ত আকুলতা নিয়ে বয়ে চলেছে। সেই আকুলতা কখনো কখনো অবোধ ইচ্ছে হয়ে ঢেউ তুলে দিয়ে যায় , আবার কখনো কখনো শিশুর আবদারে আদুরে নরম দুপুরের মতো হয়ে ছায়া চায়। সেই চাওয়া, সেই আকুলতাকে স্নেহে জড়িয়ে রাখা যায় কিন্তু ভুল বোঝা যায়না। 
আমার সেই চেনা মাটির গন্ধটা যেদিন থেকে পেয়েছি, সেদিন থেকেই এই চেনা আকাশ আমাকে প্রাণ ভরে বৃষ্টির শব্দ শুনিয়েছে। সেই বৃষ্টিতে চারপাশের চিরপরিচিত ছোট খাটো খাল বিল নদী সবাই যেন নবযৌবন ফিরে পেয়েছে। সেই নবযৌবনমতী নদীকে আজ কাছে থেকে দেখার কিছু মুহূর্ত এলো বীরপুরুষের হাত ধরে, ঘোড়ায় চড়ে। প্রাণ ভোরে দেখলাম সেই ভরা গঙ্গার উথাল পাথাল আজ নেই। ভাঁটা তো নয়, জোয়ার চলছিল যে...তাও , দুকূল ছাপিয়ে বয়ে চলা স্রোতসিনী কেমন ভাব গম্ভীর হয়ে বয়ে চলেছিল। চলার বোধেই শুধু নয়, যেন পরম মমতাতেও , চারপাশের সমস্ত কিছুকে বুকে করে নিয়ে এগিয়ে চলেছিল। সেই ভেসে চলা কচুরি পানা , আরো কত হাজারো জঞ্জাল, যাকে দেখে আমরা দূরে সরে যাই, নদী  কিন্তু তাকে ফেলে দেয়না , তাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলে, আবার নতুন স্রোতে মুছিয়ে দেয় পুরোনো সব গ্লানি। আবার ভেসে চলা। চলার নিয়মে। 
সেই ভেসে যাওয়া, কিরকম যেন অদ্ভুত ভাবে আমার চারিদিকে ঘোর তৈরি করতে লাগলো। চিরপরিচিত হাওড়া ব্রিজ আর হুগলী সেতুকেও নতুন লাগছিলো। কেন লাগছিলো জানিনা, এখন সেটা খুঁজবোওনা। তবে ওই নদী যেন ওই মাছরাঙার হাত ধরে আমাকে কিছু কথা বলে গেল,  যেন কিছু মুহূর্ত তৈরি করে দিয়ে গেল। আর যেন বলে গেল যে আমাদের চারপাশে তৈরি হওয়া প্রতিটা মুহূর্তকে গ্রহণ করতে। প্রত্যেকটা মুহূর্ত আলাদা আলাদা গন্ধ নিয়ে আসে। এর ই নাম কি মুহূর্তে বাঁচা? কিজানি। জানিনা। তবে ওই যে আজ আবার সেই কথা কটা মনে হলো, আমাদের নিজেদের ইচ্ছেতে তো এই সংসারে গাছের একটা পাতাও নড়েনা , তাহলে কেন আমরা মিছেই ভেবে মরি। সময়ের সাথে সাথে যা চলে যাবার, তা ঐরকম ই ভেসে চলে যাবে। চাইলেও যাবে, না চাইলেও। আবার যা আসার তা আপনি সঙ্গে থেকে যাবে। জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে কখন জড়িয়ে যাবে। কিভাবে, আমরা তা এতটুকু টের ও হয়তো পাবনা। আপনা হতে আমার সব ভাবনা কোথায় হারিয়ে যেতে চাইলো। কঠোরতার হাত ধরে কখনো তাকে জোড় করে ধরে রাখার চেষ্টা ও করলাম বা। তারপর একসময় সবকিছু কেমন স্থির শান্ত হয়ে গেল। বৃষ্টিভেজা পৃথিবীতে ঘোর লাগলো আবার। কথা তখন বাহুল্য হয়ে গেল। ভাষা পেলোনা তার ঠিক সুরটা। কথা বললেই তখন তা মনের সমস্ত ভাবকে গোপন করে শুধু রোজকারের রোজনামচা হয়ে যাচ্ছিলো। তাই শব্দ কে ছুটি দেওয়া হলো। সামনে তখন শুধু একটানা ভেসে চলার আহ্বান। মাথার ওপরে শঙ্খচিলের উড়ে চলা। ভেসে যাওয়া ডিঙি নৌকার স্বপ্ন দেখার হাতছানি। আর ভরা গঙ্গার মমতা মাখানো মৃদু হাসি। 












No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...