Wednesday, 19 September 2018

অন্য মায়া

গত সাত বছর ধরে এই আরাবল্লী পাহাড়ে ঘেরা ছোট্ট জায়গাটা আমাকে তার সমস্ত সজীবতা দিয়ে ঘিরে রেখেছে। ঘুম ভেঙে ওঠা নরম চাঁদের আলো , শীতের পাতা ঝরা , বসন্তের পলাশ, বর্ষার সবুজ আর সারাবছরের আমার এই চাঁপা; প্রলেপ দিয়েছে আমার ক্ষত তে। ফিরিয়ে দিয়েছে আমার সেই আমি টাকে। যে সত্যি র জন্যে কারোর কাছে মাথা নিচু করেনা। মেরুদন্ড সোজা রেখে, মাথা উঁচু করে , অথচ নমনীয় ভাবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাঁচতে শিখেছি। রোজকার যুদ্ধে ক্ষত বিক্ষত হতে হতে নিয়েছি ফুলের গন্ধ। আর প্রাণ ভোরে বেসেছি ভালো। সবকিছুর মধ্যে দেখেছি নতুন ভোর, অন্য আলোয় কখনো নতুন ভাবে সকাল ফিরে পেয়েছি কখনো বা মেঘলা আলোতে আমার আকাশ ভোরে গেছে , প্রাণপণে দুহাতে মেঘ  সরিয়ে খুঁজেছি রোদ্দুর। কখনো পেয়েছি, পাইনি কখনো বা। আপন নিয়মে সময় তার যেটুকু আমাকে তুলে দেবার তুলে দিয়েছে। কখনো বুঝেছি, কখনো বুঝিনি। অনেকটা পথ পেরিয়ে আসার পর মনে হয়েছে , পেয়েছিলাম। হয়তো পরে কখনো মনে হবে পেয়েছিলাম। 


আজ ল্যাব থেকে আসার সময়  রোজের মতো গেছিলাম আমার চাঁপাদের কাছে। আমি যেখানেই থাকি, চেষ্টা করি একটু ফুল রাখতে কাছটাতে। সে ঝরে যাওয়াই হোক বা কেনা। আজ ও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গাছ থেকে টাটকা ফুল পাড়তে একটু কষ্ট হয় আমার, তাই খোঁজ করি, একটু পুরোনো। আজ নতুন বা পুরোনো জানিনা, তবে একগোছা ধপধপে সাদা ফুল, কাছে গিয়ে আলতো হাত দিতেই হাতে চলে এলো। ঘরে এসে সবকটা পর্দা সরিয়ে দিতেই কাঁচের ভেতর দিয়ে উছলে উঠলো পড়ন্ত বিকেলের মায়াবী, হলুদ নীলে মেশানো একটা আলো। তাড়াতাড়ি, গ্লাস এ ঠান্ডা জল দিয়ে ফুলগুলো রাখতেই যেন চারিদিকটা হেসে আমার দিকে তাকালো। কি যে অপূর্ব মায়া আছে ওই সাদা পাপড়ির ভেতর দিয়ে উঁকিমারা হলুদ আলোর মধ্যে দিয়ে। জানিনা। আর তাকে যেন আরো কি এক মায়ায় জড়িয়ে দিলো বিকেলের ওই আলো।
আমার সেই চিরপরিচিত চাঁপা যেন নতুন করে ধরা পড়লো অন্য চোখে। বুঝলাম, সমস্ত কিছু এক থাকা সত্ত্বেও ওই যে দেখার আলো যদি বদলে যায়, তাহলে বোধয় বদলে যায় সব ই।  নাহলে রাত তিনটের সেই চাঁপার সাথে আজকের এই চাঁপার মধ্যে পার্থক্য একটাই , ওই আলোটার। বাকি সেই এক ই মায়া , সেই মমতা, সেই স্নেহ, সেই ভালোবাসা। কম বেশি, দূরে কাছের, বদল ফেরতের সব তর্ক দূরে সরিয়ে দিয়ে, আমি শুধু চুপ করে দেখতে থাকলাম আধখানা চাঁদ কেমন ধীরে ধীরে ঢলে গেল পশ্চিমে। একেবারে চুপ করে দেখলাম, দেখলাম কোনো শব্দ না করে। কি হলে কি হতো, আর কি হয়নি সেসব প্রশ্ন থাক আজ। এই মুহূর্তের এই ক্ষণের প্রতিটা মায়া সত্যি, প্রত্যেকটা মমতা সত্যি। আর সত্যি এর গভীর অনুভব। ঠিক যেন ওই অন্য আলোর মতো। যে অনুভূতির আলোতে চারিদিক  মায়ের নরম আঁচল আর বাবার উষ্ণ আদর মাখা নিশ্চিন্ততার আশ্রয় পাওয়া শিশিরে ভেজা ভোরের নরম ঘাসের মতো স্নিগ্ধ, শান্ত হয়ে চোখ মেলে তাকায়। সেই পরম মঙ্গলময় অনুভূতি। আর সত্যি এই চুপ করা নৈশব্দ। শ্রান্ত আদুরে ঘুমন্ত পৃথিবী। আর অপার নৈশব্দ।

জানলার দিকে তাকাতেই চোখ পড়লো স্থির, অচঞ্চল দ্রুবতারা।  








No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...