Sunday, 9 September 2018

লিলি

দিনের বেশিরভাগ সময় টাই আমাকে থাকতে হয় একা। না, there is a difference  between loner and loneliness, আমি একা থাকি ঠিক ই কিন্তু আমি একাকিত্বে কষ্ট পাই তা কখনোই নয়। চারপাশের কত কিছু আছে, যা আমাকে কখনো একা বোধ করতেই দেয়না। আমার লেখা জোকা, আঁকা, গল্প, কবিতা, গান, সুর, ছন্দ, রান্নার এক্সপেরিমেন্ট, ঘর গোছানো, ফুল সাজানো, গাছে জল দেওয়া, আকাশ দেখা, পাখি দেখা, বকম বকম শোনা এই সব কাজে এই রবিবার গুলো যদি ভোরে না থাকে, তবেই হয় ভীষণ অস্বস্তি। জানি ভীষণ ই নন-সাইন্টিফিক বাকগ্রাউন্ডের গৃহস্থের মতো শোনালো তো কথা গুলো? কি করবো, আমার ভেতর থেকে যে ওই মাটির গন্ধটা মুছতে পারিনি এখনো। আর মুছবে বলে এমন কোনো চিহ্ন ও তো দেখতে পাইনা। 

আজ অনেক আগেই ওই সব কাজ শেষ হয়ে গেছে। আর এতদিনের মধ্যে আজ কেন কি জানি সত্যি ই একা বোধ হলো। খুব একা একা লাগছে আমার এই একলা দুপুরে। কেমন যেন হিংসে হচ্ছে, এই রবিবার দুপুর গুলোর অলসতা কে যারা প্রাণ ভোরে নিতে পারছে, তাদের ওপরে। না ঠিক হিংসে নয়। কিন্তু কেমন যেন একটা কষ্ট গলার কাছটাতে দলা পাকাচ্ছে। বুঝলাম এটা সেই বদমাশ মনখারাপ এর কারসাজি। আমার সাধের উইকেন্ড এর আনন্দকে মাটি করার চেষ্টায় আছে। জানেইতো না যে আমি করতেই দেবোনা সেটা তাকে।

আমি বুঝি। তাই, না কোনো দুঃখ নেই এতে। জীবিকার প্রয়োজনে জীবন কে তো অনেক সময় ই দূরে সরিয়ে রাখতে হয় আমাদের। আমার কোনো আক্ষেপ নেই এতে, অভিযোগ ও না। রবিবারে বাড়ি থেকে বেরোতে আর কে চায়। আমার পাশের মানুষটাকেও কিছু চলতে থাকা experiment এর জন্যে বাধ্য হয়েই যেতে হয়েছে।  আমারও কাজ যে নেই তা নয়, একরাশ কাজ পরে আছে, অনেক calculation , অনেক গুলো analysis , অনেক গুলো লেখা বাকি। কিন্তু ওগুলোর মধ্যে থাকা বাধ্যবাধকতার বাঁধন টা আমাকে কিছুতেই ওগুলোর দিকে তাকাতে দিচ্ছেনা। সপ্তাহের শেষ বা আর একটা সপ্তাহের শুরু যে আজ, কেন তাকাবো ওগুলোর দিকে, আজ যে রবিবার।  আজ যে সবাই একসাথে থাকার দিন। sunday নয়, শুধুই রবিবার। যেটা শুনলেই মনে হয় একটা ঝকঝকে মদির সকাল, গল্প আর গান শুনতে শুনতে এমনি ই বেশ বেলা গড়িয়ে নতুন কোনো খাবারের স্বাদ নিতে নিতে আসবে অলস মধ্যাহ্ন। সেই আলসেমি পাশাপাশি থাকা খুনসুটির সাথে মিশে গিয়ে বিকেলের নরম রোদের রক্তিম লালিমা এনে সলাজ হেসে তুলে ধরবে সন্ধ্যের গভীরতা। আর সন্ধ্যে, দিনের দিবাকরকে বিদায় দিয়ে মধুনিশিকে আলিঙ্গন করার সেই পরম পবিত্র এক ক্ষণ। দিনের এমন একটা সময় যে সময়টা আমার ভীষণ আপনার, nbrc থাকার দিনগুলোতে এই সন্ধ্যে গুলোকে আমি ভীষণ ভাবে মিস করি। শাঁখ প্রদীপ ধুপ ধুনোর মধ্যে দিয়ে এখনকার এই শরৎ কালের নরম হয়ে আসা সন্ধ্যে, তার আবাহন। কি গভীর শান্তি। আর তারপরে, এই সামনের কালী মন্দিরের আরতি, হালকা হেঁটে আসা বা এমনি ই ঘরে বসে গরম চা এর সাথে নিছক আড্ডা। একটা রবিবারকে পরিপূর্ণ করে তুলতে,  সপ্তাহের বাকি দিন গুলোকে বুস্ট up করার জন্যে আর কিছু চাইকি? 
একটা দিন, যখন কাউকে একটুও বেরোতে হবেনা। সারাদিন ধরে মুখ চলুক টুকটাক করে। খাদ্য রসিক যে আমি, রসনার তৃপ্তি না হলে কোনো রস ই যে আত্মস্থ হবেনা। আর তাই রন্ধন পটিয়সী বলে যে সুনাম টা আছে, তাকে বারবার সার্থক করে তুলতে আমি একটুও পিছপা হইনা। আর এসবের মাঝে, বুড়ো লোকটা? বুড়ো লোকটা থাকবেনা বুঝি? ওই লোকটা থাকুক মাঝখানে, অথবা তা না চাইলে প্লিঙ্ক ফ্লয়েড বা কাটি মেলুহাকেও আনা যেতে পারে guns and rose এ ও আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু এই চারটে দেওয়াল এর মধ্যে যত আনন্দ হাসি কে ছুটির আলস্যের সাথে আনা যায়, আসুক সবকিছু একসাথে। হয়তো একটু কম বিজ্ঞান করা হবে। হয়তো একটু পিছিয়ে পড়বো অন্যদের থেকে, হয়তো আমাদের হাতে থাকা কোনো পুরস্কার চলে যাবে অন্য কোথাও। যাকনা, কি এসে যায় তাতে। তবু এই চার দেওয়ালের মধ্যের ফুলের গন্ধ এর যে মাতলামো তাতো আর অন্য কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবেনা। 

আজকের আকাশটা ভীষণ নীল। তাতে ফুলো ফুলো সাদা সাদা গোবলু গোবলু মেঘের দল ভেসে যাচ্ছে। আমি খুশি, ওই বদমাশ মনখারাপ কিছুতেই কাবু করতে পারেনি আমায়। একটা আলস্য ভরা মায়াবী দুপুরের ইচ্ছে আমার এই নিছক ছেলেমানুষি রোজকার ইচ্ছের ব্লগটাতে লিখে রাখতে রাখতে ভাবছিলাম। ভাবছিলাম দূর থেকে ভেসে আসা কয়েকটা কথা। ইচ্ছে খাতার ইচ্ছের লিস্ট গুলো বাড়ছে। কোনোদিন বসবো হয়তো ওই লিস্ট গুলো নিয়ে। কিজানি। কাশের বনের যে হাতছানি উপেক্ষা করে আজ দৌড়ে বেড়াতে হচ্ছে, সেদিন হয়তো সেই হাতছানিতে সাড়া দিতে পারবো। জানি হালকা সুতোর কাজ করা ধপধপে সাদা নরম পর্দায় সেদিন ঝড় উঠবে। আর সেই ঝড়ের সাক্ষী হোক  শুধু ওই ভায়োলেট পিঙ্ক মেশানো একরাশ 'লিলি'। আর সেদিন, সেদিন ওই একরাশ লিলিকে জড়িয়ে ধরে বলবো এগুলো 'আমার'। তাকে জড়িয়ে ধরে, আদরে সোহাগে ভরিয়ে দিতে দিতে বলবো শুধু আমার। আমার। আমার। দূরে কোথাও সাদা পাথরের ওপরে টুপটাপ ঝরে পড়বে রক্ত রাঙা রঙ্গন। 

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...