Tuesday, 28 April 2020

পৃথিবীর এই সংকটের সময়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নয়, নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতা সবটুকু দিয়ে তার পাশে থেকে এই সবকিছুর মধ্যেই বরং করে নিতে চাইছি তার সৌন্দর্য্যকে। আমরা সবাইতো নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে, আমাদের ওই সময়টুকুতে আমাদের জন্যে রাখা কাজটুকু শেষ করতে আসি। আমার  কিছুই নেই, তবু শুধু আমি আমি আর আমি। সেই আমিত্বের বেড়াজাল ভেঙে একটু বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখলেই চোখে পরে এ পৃথিবীর কোণায় কোনায় সকল মানুষ মায়ায় ভালোবাসায় অপরকে আছে, ভরিয়ে আছে।
বড় ক্ষনিকের এই সব কিছু। সমস্ত কিছুর মধ্যেই হয়তো আমাদের সমস্ত স্বত্বা লীন হয়ে থাকে, মিশে থাকে। বারংবার আমাদের আশেপাশের বিভিন্ন উদাহরণ ফিরিয়ে দেয় বিশ্বাস, বস্তে শেখায় ভালো, আর প্রাণ ভোরে গ্রহণ করতে শেখায় সবটুকু ভালোকে। আমি সবের মধ্যেই আছি কিন্তু আমার কিছুই নয়। বিশ্বজোড়া শুধুই যে মায়ার ফাঁদ। তবে এ মায়া থেকে আমি পালাতে চাইনা, চাইনা এ মায়া ছিন্ন করতে। সংসারের মধ্যে থেকে আমি এক খুব সাধারণ নারী হয়ে সবকিছুর মধ্যে থেকে মায়া খুঁজে নিতে ভালোবাসি। সুখ নয়, দুঃখ নয়, যেন এই সুন্দরের কাছে ম্লান হয়ে যায় সমস্ত চাওয়া পাওয়া। শুধু মনে হয় এই মায়ায় যেন এমনি করে আজীবন সবকিছু সবসময় সুন্দর হয়ে সবাইকে জড়িয়ে থাকুক। আর এই নিস্তব্ধ রাতের গভীরতার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়ে মনে মনে আবৃতি করতে ইচ্ছে হয় স্বামীজীর সেই প্রেম ময়

 শব্দ সম্ভার -

"ভ্রান্ত সেই যেবা সুখ চায়, দুঃখ চায় উন্মাদ সে জন—
মৃত্যু মাঙ্গে সেও যে পাগল, অমৃতত্ব বৃথা আকিঞ্চন।
যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,
এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।
পক্ষহীন শোন বিহঙ্গম, এ যে নহে পথ পালাবার
বারংবার পাইছ আঘাত, কেন কর বৃথায় উদ্যম?
ছাড় বিদ্যা জপ যজ্ঞ বল, স্বার্থহীন প্রেম যে সম্বল;
দেখ, শিক্ষা দেয় পতঙ্গম-অগ্মিশিখা করি আলিঙ্গন।
রূপমুগ্ধ অন্ধ কীটাধম, প্রেমমত্ত তোমার হৃদয়;
হে প্রেমিক, স্বার্থ-মলিনতা অগ্নিকুণ্ডে কর বিসর্জন।
ভিক্ষুকের কবে বলো সুখ? কৃপাপাত্র হয়ে কিবা ফল ?
দাও আর ফিরে চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।
অনন্তের তুমি অধিকারী প্রেমসিন্ধু হৃদে বিদ্যমান,
'দাও, দাও'-সেবা ফিরে চায়, তার সিন্ধু বিন্দু হয়ে যান।
ব্রহ্ম হ'তে কীট-পরমাণু, সর্বভূতে সেই প্রেমময়,
মন প্রাণ শরীর অর্পণ কর সখে, এ সবার পায়।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।।"

  হাত জড়ো  হয়ে আসছে, প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে, এ পৃথিবীর বুকে আবারো বার বারো সেই শান্তির ছায়াকে আহ্বান করে বলতে  




asato mā sad gamaya,
tamaso mā jyotir gamaya,
mṛtyor mā amṛtaṃ gamaya,
Om shanti~ shanti~ shanti hi~~

Lead me from falsehood to truth,
Lead me from darkness to light,
Lead me from death to the immortality
Om peace peace peace

আমাকে অসত্য থেকে সত্যের পথে আনো , 
আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাও 
আমাকে মৃত্যু থেকে অমরত্বের পথ দেখাও 
ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি 


আমাদের চারপাশের সবকিছু, সমস্ত সম্পর্ক, যা কিছু পার্থিব বা অপার্থিব সব কিছু খুব সুন্দর। খুব সত্যি। হয়তো কখনো কখনো সময়ের টানা পোড়েনে তাতে তিক্ততার ছোঁয়া লাগে। হয়তো পারিপার্শ্বিকের চাপে তার মধ্যে অসুন্দরের ছায়া এসে পরে। কিন্তু এসব কিছুই এই চাঁদের কলংকের মতোই। ঠিক সময়ে, যখন জ্যোৎস্নায় চরাচর ভিজে নরম হয়ে যাবে তখন আর ওই কলঙ্ক চোখেই পড়বেনা, তার সবকিছু খুব স্নিগ্ধ, নরম আলোর মতো করে জড়িয়ে থাকবে আমাদের। কখনো তা চাঁদনী রাতের আদর হয়ে আমাদের রোমাঞ্চিত করে যাবে, কখনো তা দিন শুরুর নরম সোনালী রোদ্দুর হয়ে উজ্জীবিত করবে, কখনো বা কর্মরত মধ্যাহ্নের জানলা দিয়ে বাইরে দেখার আবেশ আনবে আবার কখনো তা দিনশেষে ঘরে ফেরার প্রিয় স্পর্শ দেবে। আর সমস্ত কিছুর মধ্যে বারংবার উপলব্ধি দিয়ে যাবে সেই গভীর স্নেহ, মমত্ব, ভালোবাসা আর শান্তির।
তাই আমার সন্ধ্যার ইমন কল্যাণ বারবার সুর তোলে। জীবনের হাজার সমস্যার মধ্যেও জীবনকে স্বপ্ন দিয়ে সুন্দর করে সাজাতে চাই , করিনা? ক্ষতিকি ? যতদিন স্বপ্ন দেখতে পারি, দেখিনা? তারপরে যদি ওই ওপরে যে বসে আছে, একদিন যদি ইচ্ছে করে, আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে, দেবে, আমার কাছেতো সে মহাপ্রলয় থামাবারও যে কোনো উপায় নেই। সে যবে হবে হবে, তবে তার আগে পর্যন্ত আমি না হয় প্রাণ ভোরে নিশ্বাস নি। ভোর বেলাতে হালকা চাদর গায়ে দিয়ে দিলে, যেমন সেই চাদর টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে মানুষে শান্তি আর স্বস্তি তে আবার ঘুমিয়ে পরে, আর সেই শান্তির রেশ লেগে থাকে ঘুম ভেঙে উঠে সারাদিনটার মধ্যে। সেইরকম ই আমার এই স্বপ্ন মাখা চাঁদের আলো কে আমি জড়িয়ে থাকতে চাই। আর চাই ওর ওই আদরটা থেকে যেন কেউ কোথাও না বঞ্চিত না হয়। ওই আদোরে জড়ানো শান্তি জড়িয়ে থাকুক , তোমাকে, আমাকে, সবাইকে। ওই স্বস্তির নিঃশ্বাসটা আমি অনুভব করতে চাই। খুব।

No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...