Saturday, 31 March 2018

প্রতিধ্বনি

একটা অবাক করা গোধূলী হটাৎ আমাকে নিয়ে গিয়ে ফেললো আমার এক স্বপ্নের জগতে। কিভাবে সম্ভব হলো। কেমন করে আমার ভালোলাগার কথা আমার ই সামনে এসে পৌঁছলো। বলিনি তো কখনো। তাহলে কিভাবে হলো এই মেলবন্ধন।
সূর্য্য তখন পাটে বসেছে, অস্তগামীর বিদায় বেলায়, বোধয় বিদায় সম্ভাষণ জানাতে, পুব আকাশে ধীরে ধীরে আপন মুখ তুলে তাকিয়েছিলো কুমুদিনী। সেই অপূর্ব মেলবন্ধন। সেই সময় হটাৎ দূর থেকে আমার কাছে ভেসে এলো কিছু স্বপ্ন। সে স্বপ্নে অনেক কথা ছিল, অনেক সুর ছিল, ভয় ও ছিল, পাছে ওই  স্বপ্নের ঘোর চোখে লেগে যায়। 

তাড়াতাড়ি স্বপ্ন থেকে জেগে উঠতে উঠতেও যেটা পারলামনা সেটা হলো, ওই স্বপ্নের থেকে একটা শব্দ কেন কিজানি আমার মনে আমার নিজের একেবারে নিজের এক স্বপ্নকে মনে করিয়ে দিলো। দোলনা। দোলনা আমার ভীষণ প্রিয়। আমার স্বপ্ন দিয়ে সাজানো একটা জগৎ ছিল, আজ আর নেই তা বলবোনা, তবে ওই যে জীবিকার তাগিদে জীবন কে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তবু স্বপ্ন তো আছেই, আজ হটাৎ করে আমার সেই স্বপ্নের প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম। কিভাবে, এ সম্ভব হলো আমি জানিনা, কখনোতো বলিনি, তবু কিভাবে এক ই রূপ, রং, রস , গন্ধ নিয়ে আমার স্বপ্ন আমার ই সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমাকে একেবারে স্তব্ধ করে দিলো বেশ কিছুক্ষনের জন্য। 

স্বপ্ন হয়তো খুব পার্থিব। অপার্থিব কিছুই নেই এখানে। হয়তো বা বড় বৈষয়িক ও। তবু এ আমার বেঁচে থাকার অঙ্গ। তাই ভাবলাম থাকনা, আজ নাহয় আমার ভালোলাগা, আমার কথা হয়ে, পার্থিব স্বপ্ন কে বয়ে নিয়ে থাক এখানে লেখা। অনেক দিন পরে যখন কখনো অন্য কেউ বা অন্য আমি বা এই আমি ই পড়বো , তখন ভাববো আজকের ই মতো, ঠিক এই আজকে যেমন আমার হটাৎ মনে পরে গেলো একটা আমার পার্থিব স্বপ্নের কথা....একটা বাড়ি, বাগান দিয়ে ঘেরা। বাড়িটার ২ টো দেওয়াল হবে শুধু কাঁচ এর। ঠিক আমার nbrc এর ঘর টার একটা দেওয়াল যেমন শুধু কাঁচের। ঐরকম কাঁচের হবে। পুরোটা। আর পুবদিকে জানালা থাকবে, অনেক বড় বড়। চাঁদনী রাতে সেখান দিয়ে চাঁদের আলো ভাসিয়ে দিয়ে যাবে আমার বিছানা, পড়ার টেবিল, লেখার খাতা, পেন রাখার জায়গা, violin এর তার আর ফুলদানি তে রাখা ফুল ও ওই চাঁদের আলোয় হয়ে উঠবে মায়াবী। আর চৈত্র মাসে ভেসে আসবে গন্ধরাজ আর বেলির আদর। শরতের শিউলির আলতো হাসিও আমি দেখতে চাই ওই জানলা দিয়েই। কিন্তু এতো হলো ঘরের ভিতরের কথা। আসল সুর শুরু হবে আমার ওই ঘরের বাইরের বাগান থেকে। বাগানের গেট টা হবে ঠিক আমার ছোটবেলার বাড়ির আগের গেট টার মতো। আধখোলা, রক্তনীল করা অপরাজিতা আর মাধবীলতায় মোড়া। বসন্তের পরে যখন গাছে গাছে কচি পাতারা খেলা করবে, বাতাস যখন বারবার এলোমেলো করে দেবে আমাদের সমস্ত ভাবনার ডালি, তখন চাঁদনী রাতে ফুলের গন্ধের মাঝে একটা দোলনা থাকুক না.....আর সেই দোলনা যদি ফুলের হয়,?জানি ভাবনা বোধয় একটু বেশি ই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। ক্ষতি কি, এ আমার একান্ত আপনার স্বপ্ন চয়ন। আমার সেই ফুলের দোলনা, একটা ছোট্ট নীল পদ্ম দীঘি। হালকা ভাবে কখনো তা দেবে আমাদের ভিজিয়ে আবার কখনো তার পাড়ে বসে হবে নতুন কোনো স্বপ্ন চয়ন।  থাকবে একরাশ শিউলির কোলাহল। গন্ধরাজের পাগলপারা আহ্বান। সবুজ ঠিক এখানকার যে সবুজ টা আমার ভীষণ প্রিয়, সেই চিকন সবুজ রঙের মাঝে আমার স্বপ্নদ্বীপ এ সবসময় হবে একটা ঝকঝকে সকাল , দুপুর আসবে মদির হয়ে, আলোছায়ার স্বপ্ন জাল বুনে। সন্ধ্যা হবে শান্তি স্তব এর মধ্যে দিয়ে আর রাত্রি নামবে নিস্তব্ধ, সুন্দরকে আলিঙ্গন করে। সেখানে চাঁদনী রাতে ঝুলন এর রোমাঞ্চতা শিহরণ জাগিয়ে যাবে, একাদশীর বাঁকা চাঁদ দেবে স্বপ্ন দেখার আহ্বান। গাঢ় অন্ধকার এর রাতে থাকবে হাজার তারার রোশনাই। আর এই সব কিছুর মধ্যে দিয়ে আমরা অপেক্ষা করে থাকবো আগামীর। আর দুচোখ ভরে স্বপ্ন দেখবো। বেঁচে থাকাটা প্রাণ ভরে, প্রতিনিয়ত অনুভব করে চলবো। আর স্বপ্ন এঁকে নেবো বারবার, ওই মায়া কাজল চোখে দিয়ে চলোনা আমরা আমাদের প্রতিদিনের প্রতিনিয়ত সকল ঘাত প্রতিঘাত কে অস্বীকার করে, স্বপ্ন দেখি। চলো বাঁচি আবার বাঁচার আনন্দে।
একদিন এই স্বপ্ন আমি প্রতিনিয়ত দেখতাম। আমরার আর একজন কে, তা জানার তখন প্রয়োজন ও ছিলোনা , তার অনুভব ও ছিলোনা, আজ সময়ের সাথে সাথে সে স্বপ্ন এর বীজ ঘুমিয়ে পরেছিল. হটাৎ দূর থেকে ভেসে আসা এক প্রতিধ্বনি খুব অন্যভাবে, অন্য মায়ায় আবার আমার সেই স্বপ্ন, স্বপ্নমাখা দোলনাকে মনে করিয়ে দিয়ে গেল। 






Friday, 30 March 2018

পরিচয়

যে আসন দিলে তুমি আমায়,
তার যোগ্য আমি নয়।
বোলোনা বোলোনা আমায়
 হয় বড় ভয়।
কিভাবে, কেমনে জানিনা
হলো এই পরিচয়।
শেষ হয়ে সব কিছু হয় নাই শেষ
মন কেন ভেসে যায়
হায় এ কোন আবেশ।
চাঁদ বলে আয় আয় ,
পাখি যায় ডেকে।
আমি শুধু চুপ করে
দেখি দূর থেকে।
আকাশে বাতাসে আজ সর্বনাশের খেলা ,
মেঘ আর চাঁদে মিলে ভাসিয়েছে ভেলা।
কখনো লুকায় শশী তার ওই মুখ,
মেঘ তাকে ডাকে কাছে -
পেয়ে সর্ব সুখ.
আবার কখনো বা চন্দ্রমা
দিগন্ত ভুলায় ,
মেঘ তার পিছে চলে হয়ে নিজহারা
এভাবে অভ্র কুমুদের আপন মায়ায়
ভেসেছে আমার নিশি হয়ে বাণিহারা।
আপনি মাধুরীতে শশী আপনি সুন্দর,
ভাবে সে বোধয় ওই সরসীর এ এক কৌশল।
চাঁদের জ্যোৎস্নায় ভাসি ,
সরসী বলিছে হাসি ,
আমি কেউ নয়।
আকাশে ভূমিতে আর কি বা পরিচয়।
তোমার তুমিতে তুমি আপনি মহান ,
নিজ গুণে পেয়েছো সবা মাঝে স্থান।
ভুলেছিলে তুমি তব আপন কিরণ।
তাই দেখে আমি শুধু দেখিয়েছি
তোমার নিজ প্রতিফলন।
আমি খুশি এই দেখে  তুমি আছোভালো ।
যে আলো তোমার  অধিকার ,
তা তুমি জ্বালো।।



Monday, 26 March 2018

রূপকথা

শেষের কবিতার অমিত বা গোড়ার গৌড়মোহন, গুরুগম্ভীর পন্ডিতমশাই ই হোন বা আমাদের মতো ১০টা পাঁচটার চাকায় নিষ্পেষিত কোনো মানুষ, কোথায় যেন সবার মাঝে লুকিয়ে আছে সেই এক ছোট্ট মিষ্টি বীরপুরুষ। একটা অনুভূতি প্রবণ, কল্পনা প্রবণ, স্বপ্নের জগতে বেঁচে থাকা মন যেখানে যা কিছু ঘটে সবকিছুকেই মনে হয়,  আমি পারি সব পারি। বড় বড় ইমারত, ইঁট কাঠ পাথর নয়, কিছু নরম নরম মিষ্টি আবেগ, একটু আদর আর ছোট্ট ছোট্ট মিষ্টি অভিমান ফল্গু ধারার মতো বয়ে চলে আমাদের সবার ভেতরে। রোজকারের বেঁচে থাকার যুদ্ধ তাতে প্রলেপ দিয়ে দেয় কাঠিন্যের। সময়ের আগেই হয়তো কখনো অজস্র দায়িত্বের ঘেরাটোপে আমাদের ভেতরের সেই প্রাণবন্ত বীরপুরুষ অভিমানে ঠোঁট ফুলিয়ে একেবারে চুপ করে, মনের এক কোণে নিজেকে বন্দী করে রাখে। সময়ের সাথে সাথে , তার বন্দীত্বের মেয়াদ দীর্ঘ্য থেকে দীর্ঘ্যতর হয়, আর তারপর কখন সে ভুলেই যায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে।  তার নিজের সেখান থেকে বেরোনোর ইচ্ছেটাই একেবারে চলে যায়।

আজ জানো, তোমাদের এক বীরপুরুষের গল্প বলবো, শুনবে? সেই যে মনে আছে? যখন যুদ্ধ চলছিল "ঢাল তলোয়ার ঝনঝনিয়ে বাজে"....সেই রকম যুদ্ধ। .প্রতিনয়ত। .যুদ্ধক্ষেত্র হয়তো আলাদা হয়, কিন্তু যুদ্ধের বিরাম হয়না, যুদ্ধ শেষে কখনো তাতে আমাদের সবার ভেতরের সেই বীর,..কখনো তারা জয়লাভ করে, কখনো বা ক্লান্ত হয়ে পরে। সেইরকম এক যুদ্ধ ক্লান্ত বীরপুরুষ একদিন এসে বসেছিল এক নদীর পাশে, নদী চলছিল তার আপন নিয়মে, সে নিয়ম কখনো ভাঙ্গেনা। ভাঙলেই যে বড় ভয় , যদি সবকিছু ভেসে যায়, তাই সে সবসময় নিজেকে ওই নিয়মের গন্ডীর ভেতরে রাখে, ওই সীমারেখা সে আপনি টেনেছে, ওর ভেতরে থেকেই সে ছুটে চলেছে দূর থেকে দূরে, বর্ষায় উচ্ছসিত হয়েছে, শীত এ শুষ্ক, গরমে বিদগ্ধ। কিন্তু তার ওই গণ্ডীর ভেতরে।

একদিন দূর থেকে যখন সে দেখলো, ওই মিষ্টি বীরপুরুষ ক্লান্ত হয়ে গেছে বড়। হু হু করে উঠেছিল বুকের ভেতরটা। মনে হয়েছিল তার সমস্ত জল টুকু দিয়ে ভিজিয়ে দি ওই ক্লান্তিটুকু, মুছিয়ে দি সমস্ত পরাজয়। আর তারপর অনেক আদোরে অনেক যত্নে সেই বীরপুরুষ স্নিগ্ধ ছায়াতে তার দুচোখে স্বপ্ন এঁকে নিক তারপর আবার দিগ্বিজয়ে বের হোক। নদীর সে কথা শুনতে পেয়েছিলো বুঝি মানুষটা।ধীর পায়ে এগিয়ে এলো সে। তারপর পারে বসে কত কথা হলো দুজনার। নদী বললো তার চলার কথা আর বীরপুরুষ বললো সে এক রাজকন্যা কে আনতে যাচ্ছে, তার জন্যেই এ যুদ্ধ। তারপর ধীরে ধীরে সূর্য্য পাটে বসলো, যে ভোরের সূচনা একসাথে হয়েছিল, সন্ধ্যাকাশের ওই শুকতারা জানান দিয়ে গেল দিবাবসানের কথা। সেদিন রাতে ছিল একটা ফালি চাঁদ, আর চৈত্র মাসের আকাশ ভরে গেছিলো তারায় তারায়। যুদ্ধে ক্লান্ত বীরপুরুষ ঘুমিয়ে পড়েছিল, নদী তার ছলাক ছলাক শব্দে চেষ্টা করছিলো তার সবটুকু ক্লান্তি দূর করে এই পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর কে ওই দুচোখে ঘুমের ছলে এনে দিতে। দূরে কোথাও থেকে ভেসে আসছিলো বেহাগ এর সুর।

তারপর হটাৎ ঝড় উঠলো , বৃষ্টি আর বজ্রপাতের আওয়াজে ঘুম গেলো ভেঙ্গে, চোখে তখনো স্বপ্নের রেশ লেগেছিলো তার, বাঁশির শব্দ তখনো যাচ্ছিলো শোনা। ভালো করে কিছু বোঝার আগেই তৈরি হয়ে নিতে হলো যুদ্ধের জন্যে। নদী তাকে সঙ্গ দিলো। মনে করিয়ে দিলো, রাজকন্যা কে আনতে যেতে হবে যে। নিজে হাতে যুদ্ধবেশে সাজিয়ে রণভূমিতে পাঠিয়ে দিলো। তলোয়ার যেমন রইলো সে হাতে, ঢাল ও তুলে দিলো নদী নিজে অপর হাতে। নদী জানতো, এ যুদ্ধে সে জয়ী হবেই। আর মনে মনে রাজকন্যা কে বললো, দেখো কন্যে, আমার বীরপুরুষ কে সামলে রেখো। বড় অভিমানী মন তার, যত্ন করে, আদরে মুড়ে দিও তাকে। যুদ্ধশেষে সে এখনো খোঁজে একটা স্নেহময়ী হাত, একটা ভালোবাসার কোল। তাই যুদ্ধশেষে যখন তোমাকে জয় করে আনবে সে, তখন ওই কোল পেতে দিয়ো, যে অপার ভালোবাসায় তুমি তার কাছে ফিরে এলে, সে ভালোবাসা দিও তাকে উজাড় করে।

কোনো এক পড়ন্ত বিকেলের আবীর রঙে রাঙিয়ে রাঙা ঘোড়াকে সঙ্গে নিয়ে সেই ছোট্ট বীরপুরুষ তার  নদীর কাছে এসে বসেছিল। দুজনের কেউ ই বুঝতে পারেনি যে কখন এক মধুর মিতালি হয়ে গেছিলো। সে মিতালীতে ছিল একে অপরকে নিজ নিজ গন্তব্যে এগিয়ে চলার নির্দেশ। সে "বন্ধনহীন গ্রন্থি" তে ছিল স্বপ্ন দেখার আহ্বান। সেই সখ্যতার মধ্যে কখনো ছিল ছোট্ট ছেলের দামালপনা, কখনো বা মা এর মতো শাসন, আবার কখনো বা খেলার সঙ্গী হারানোয় দুই শিশুর মতো একে অপরের কাছে অশ্রুসজল অবোধ অনুযোগ।

আজ আবার এক পড়ন্ত বিকেল। নদীর পারে সূর্য্য আবার পাটে বসেছেন। ধ্যানমগ্ন শান্তিতে নদী স্থির করেছে নিজেকে। ছোট্ট বীরপুরুষ এখন অনেক বড়, সে তার ঘোড়া ছুটিয়ে চলে গেছে অনেক দূরে। নদী জানে, যে যুদ্ধ এখন চলছে, সে যুদ্ধ শেষ হবেই। যুদ্ধজয়ী পরিণত বীর খুঁজে পাবে তার সুখী গৃহকোণ। রাজকন্যের হাত ধরে সেই ঘরের কোণে সন্ধ্যারতির মধ্যে দিয়ে নেমে আসবে শান্তি। আর নদী, নদী সেই সুখী গৃহকোণের শান্তিবারিতে নিজেকে করবে স্নিগ্ধ, করবে সমৃদ্ধ। আর মনে মনে বলবে, দেখো কন্যে, আমার বীরপুরুষ কিন্তু সত্যি ই বড় বীর। অসীম তার ধৈর্য্য, সহ্য। যত যুদ্ধই চলুক, দেখো সে যেন আহত না হয়। আর বীরপুরুষ, তার জন্যে শুধু একটাই কথা, যেকথা বলতে চেয়েছিলো, কিন্তু তখন আর বলা হয়নি, সেটা হলো, তোমার ওই দামাল মনটাকে শিকলে বেঁধোনা, খুব নরম তো, জোর করে বাঁধলে লাগবে, তাকে যত্নে রেখো। আদরে। আর ভালো থেকো।। খুব।







Sunday, 25 March 2018

প্রদীপের শিখা

সেই ছোট্ট বেলা থেকে একটি ছোট্ট মেয়ে তার মনের যা কিছু ঠাকুরকে জানাতো। মনে পরে ক্লাস ফাইভ এর এডমিশন টেস্ট এর আগে ঠাকুরকে বড় বড় দুটো চিঠি লেখা হয়েছিল, তাতে কখনো ভালোবেসে কখনো রীতিমতো শাসিয়ে ঠাকুরকে বলা হয়েছিল একটা কথাই, যেন ওই এডমিশন টেস্ট এ যেন তার হয়ে যায়। তখন ওটাকেই জীবনের সব থেকে বড় পরীক্ষা বলে মনে হয়েছিল কিনা, তাই মনে হয়েছিল ফাইভ এর ওই এডমিশন টেস্ট এ পাশ করে গেলেই ব্যাস আর কিছু চাইনা। মনে আছে, পরে যখন মা এর হাতে পরে চিঠিগুলো, বাড়িতে খুব একচোট হাসির ঝড় উঠেছিল। এখনো পর্যন্ত সেই গুলো নিয়ে সবাই ওকে রাগায়। শুধু একজন মানুষ, একজন মানুষ কিন্তু ওকে নিয়ে হাসাহাসি করেনি, আস্তে করে, লজ্জায় আধখানা হয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট মান্তুকে ঘর থেকে বের করে, আদর করে বলেছিলো, "বেশ করেছিস, এবার থেকে যা মনে হবে, বলিস তুই ঠাকুরকে। তোর ই তো ঠাকুর।" 
বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল বাবার আদরের মান্তু। কেন কেঁদেছিলো সেটা সে নিজেও জানেনা। কিন্তু ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের মেয়েটা যখন একটা জায়গা নিজের মনে করে সেখানে তার চাওয়া , পাওয়া, অভিমান, ভালোবাসা সব উজাড় করে দিয়েছিলো আর ওর সেই জায়গাটা সবার সামনে হাজির হয়ে যাওয়াতে বা সবার সামনে হাসির খোরাক হয়ে যাওয়াতে, খুব রাগ হয়েছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কষ্টটা কি ঠিক সে নিজেও সেই বয়সে বুঝতোনা। কিন্তু ওই একটা মানুষ, ওই একটা মানুষ বুঝেছিলো।

আর তখন থেকে মান্তুর ছিল দুটো জায়গা। একটা তো সেই জন্মাবস্থা থেকেই তার নিজের। ওই সদা হাস্যময় মানুষটা। আর একটা ওই মানুষটার থেকে গ্র্যান্টেড হয়ে যাওয়া ওই ঠাকুরের আসন। সেই থেকে আজ ও ওই ঠাকুরের আসন তাকে খুব শান্তি দিতে পারে। এখন যখন আর এডমিশন টেস্ট নয়, প্রতি নিয়ত অজস্র পরীক্ষা দিতে দিতে খুব ইচ্ছে করে সেই ছোট্ট বেলার মতো বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে, যখন খুব ইচ্ছে করে বাবার সঙ্গে টিনটিন, asterix বা পাগলা সাহেব কে ভাগ করে নিতে, তখন শুধু এই একটা জায়গাই যেন ওকে খুব যত্নে কাছে বসিয়ে সেই পাগলামো গুলোকে প্রশ্রয় দেয়। একবার ও মনে করিয়ে দেয়না সময় নষ্টের কথা। একবারো তাড়া দেয়না।

ধীরে ধীরে সন্ধে নামে। শাঁখ ঘন্টা ধুপ ধুনোর মধ্যে দিয়ে অনেক প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে, হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে দিয়ে,রচিত হয় শান্তি। সেদিনের সেই ছোট মেয়েটা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন আর পরীক্ষাতে ভালো করে উত্তীর্ণ হলে আনন্দ উৎসব হয়না, তবু বাবার সেই কথাটা সবসময় মনে পরে , satisfaction . বাবা কখনো জিজ্ঞেস করতোনা পরীক্ষা কেমন হয়েছে, বলতো "তুই satisfied তো?" ব্যাস। ওই একটা মানুষ যে সবসময় তার মনের ওই সন্তুষ্টির খোঁজ নিয়েছে। হাসি মুখের পিছনে অন্য কোনো দুঃখের কথা সেই মানুষটা ঠিক বুঝে যেত। সাত বছর পেরিয়ে গেছে , সামনে এসে কেউ হয়তো জিজ্ঞাসা করেনি। তবু ওই যে চোখ বন্ধ করে যখন খুঁজি ওই কথাটা ঠিক শোনা যায় "তুই satisfied তো ?" হ্যাঁ বাবা, তোমার মান্তু নিজেকে কখনো কষ্টে থাকতে দেবেনা। তুমি ই তো শিখিয়েছিলে, সবসময় যদি ভালো কথা ভাবা যায়, ভালো কথা, ভালো গান, ভালো মানুষদের সংস্পর্শের মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আর কোথাও কোনো কষ্ট থাকেনা। কোনো দুঃখ থাকেনা। আমারও ঠিক তাই হয় জানো, এখনো, বেশিক্ষন কোনো মনখারাপ, কোনো দুঃখই আমাকে কষ্টে থাকতে দেয়না। তুমি কিছু ভেবোনা বাবা। তোমার মান্তু খুব ভালো আছে। 

বাইরে তখন চলছে 
Khandana bhava-bandhana jaga-vandana Vandi-tomay; Niranjana nara-rupa-dhara Nirguna guna-may.
Mochana agha-dushana jaga-bhushana Chid-ghana-kay; Jnananjana vimala-nayana Vikshane moha jay.
........................................................
........................................................
Nirbhaya gata-samsaya drira-nischaya Manasavan; Nishkarana bhakata-sarana Tyaji jati-kula-man.

তুমি কিছু ভেবোনা বাবা। তোমার মান্তু খুব ভালো আছে। এই যে প্রদীপের শিখা যা এখুনি আমি জ্বালিয়ে রাখলাম, সে আলো তে আমার, আমাদের চারপাশের কোনো কারোর অন্তরাত্মা কে আমি কখনো আঁধারে রাখবোনা। ওই যে, বড় সাধ আমার এই প্রদীপের শিখার, ক্ষুদ্র সে, সাধ্য নেই, তবু সাধ সব জায়গায় সব খানে সব অন্ধকার যেন দূর হয়ে যায়। জানি একদিন তা হবেই। ঘরের কোণায় কোণায় জ্বলে উঠবে হাজার বাতি। আমাকে তখন আর কারোর কোথাও মনে পড়বেনা হয়তো, সে না পড়ুক, আমি কিন্তু দুচোখ ভরে দেখবো ওই হাজার আলোর রোশনাই। আর মনে মনে বলবো "প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে , মোরে আরো আরো দাও প্রাণ। "




Saturday, 24 March 2018

Lovely saturday night

It's twelve now,
O my lovely Saturday night.
It's not necessary to get you in my arms
o dear-
but it's true that I always found love everywhere,
and laughter in every single thing.
and it's true that it's a wonderful night.
even if there is nothing-
nothing to dance or sing or recite,
but still, I found everything in my life
and happy not to get many too
and there's no denying
that
its my lovely lovely saturday night.

Thursday, 22 March 2018

semicolon

রাস্তা আমাকে সবসময় ভীষণ টানে। দুপাশে বিশাল বিশাল গাছ আর মাঝখান দিয়ে একটা লম্বা রাস্তা। শুধু যেন বলে এগিয়ে চল এগিয়ে চল। তবে শুধু সেই রাস্তাই বা কেন , ওই যে সকাল বেলাতে যখন ক্যাব করে বা অটো করে আসি, সকাল বেলাতে তখন রাস্তা ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। আমার তো বেশ লাগে সেটা দেখতে। দিল্লিতে সকাল একটু দেরিতেই হয়, মানে একটু পশ্চিমে তো তাই আমাদের ওখানকার থেকে একটু দেরিতে আমার সূয্যি হেসে ওঠে এখানে, তবে এখানে মানুষজনের সকাল খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়। একদম ঘুম ভেঙেই কাজের মধ্যে লোকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেটাও আমার খুব ভালো লাগে। বাবা মা সবসময় বলতো সকাল হলো কাজের সময়। আর কি জানি কেন,  কেমন যেন আমার মনে হয়, ওই যে রাস্তা পরিষ্কার, ওইখান থেকে শুরু হয় আমাদের দিনের। বিগত রাতের যত মলিনতা, আগের দিন এর যা কিছু না পাওয়া, সব কিছু সাফ করে, নতুন করে সুন্দর করে শুরু হয় আমাদের দিন। সেই এক ই রাস্তা, আবার নতুন করে সেজে ওঠে, নতুন পথ চলা। সব না পাওয়া, ব্যর্থতাকে পিছনে ফেলে আগামীর দিকে তাকানো। কি সুন্দর। 

ঘুম থেকে উঠে যখন ব্যালকনিতে এলাম। একটা ঠান্ডা হাওয়া চলছিল। গত কাল রাতে একটু বৃষ্টিও হয়েছিল, সেই বৃষ্টি আমার মনখারাপের সঙ্গে মিশে গিয়ে কেমন এক শূন্য বাতাবরণের সৃষ্টি করেছিল। সকালেও তার রেশ যায়নি, ঘুম থেকে ওঠার আগেই চোখ বন্ধ করেই ভাবছিলাম বৃষ্টি হচ্ছে কি? সকালে বৃষ্টি আমার খুব মনখারাপ করায়। 
বারান্দায় এসে কিন্তু এক অদ্ভুত সুন্দর  সময়ের সাক্ষী হলাম। দেখলাম, পশ্চিম আকাশে কালো মেঘ আর পুব আকাশে লাল সূর্য্য। আর এই দুয়ের মাঝে, হালকা হালকা কালো লালে মেশানো রঙে সমস্ত আকাশ একদম আদুরে হয়ে ঘুম চোখে তাকাচ্ছে। যেন কোনো ছোট্ট শিশু ঘুম ভেঙে চোখ রগড়াতে রগড়াতে মা এর আঁচল খুঁজছে। কেমন ঘোর লেগে যাচ্ছিলো আমার। ঘোর কাটলো নিচে জমাদারের রাস্তা পরিষ্কারের শব্দে। দিন শুরু র সুর, একটু হয়তো কর্কশ, কিন্তু তাতে কি? খুব সত্যি যা কিছু হয়ে থাকে, তাওতো সবসময় মধুর হয়না, কখনো কখনো তো খুব কর্কশ ও তো লাগে, মেনে নিতে কষ্ট হয়, মনে হয়, এই সময় এই সত্যি টা কি আমাকে না বললেই হতোনা। তবু সত্যি টাকে ইনিয়ে বিনিয়ে মিথ্যে করে সাজিয়ে গুছিয়ে না বলে সোজাসুজি পরিষ্কার করে বলে দেওয়াই বোধয় ভালো। প্রথমে কর্কশ লাগলেও, সময়ের সাথে সাথে, মিথ্যের বাহ্যিক চাকচিক্য খসে পরে যায়, কিন্তু সত্যি তার আপন সৌন্দর্য্যে আরো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। 

একটু পরে দিনের শুরুর সাথে তাল মেলাতে মেলাতে আমার আজকের চলা হলো শুরু। রাস্তা তখন পরিষ্কার হয়ে গেছে , কুট্টুস গুলো লেজ নাড়তে নাড়তে অলস ভাবে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। স্কুল কলেজ এর ছেলে মেয়েরা দাঁড়িয়ে, ছেলেরা কেউ একটু আড়চোখে কেউ বা একটু desparately মেয়েদের কে দেখার চেষ্টা করছে। বেশ মজা লাগে আমার। ওদেরকে দেখলে মনে হয় এখনো প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। হয়তো ওই একটু চাহনি একটু হাসি বারবার ক্লাস এর মাঝে মনে পড়বে ওদের। অপেক্ষা করে থাকবে আবার পরের দিনের ওই একটু চাহনির জন্যে। কি মিষ্টি, নিষ্পাপ চাওয়া। সময়ের সাথে সাথে হয়তো এরা আর কেউ ই কারো সাথে থাকবেনা, বা থাকলেও হয়তো সেই চাহনির চাহিদা থাকবেনা, আবার হয়তো বা নিশ্চই কেউ কেউ ওই চাহিদা ধরে নিয়ে এক ই ভাবে পথ চলবে। সে যাই হোকনা কেন, যা কিছু হবে খুব ভালোই হবে। যে যার মতো করে নিজের মতো করে পথ বাছবে, সেই পথে চলবে। রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে কতজনের সাথে দেখা হবে।কখনো বন্ধুর, কখনো মসৃন পথ। কত মোড়, কত বাঁক। কোন বাঁকে কি অপেক্ষা করে আছে আমরা কেউ জানিনা। destiny , কোথায় কিভাবে কাকে চেনাবে কিছু জানিনা। তবু ওই পথ বড় সুন্দর। বড় নেশা আছে চলার মধ্যে। আর ওই পথ দিয়ে হেঁটে আসা সবকটা ধাপ, সমস্ত stepping সেই সময়ের জন্যে যাই হোক না কেন, পরে যখন আমরা ফিরে তাকাবো, দেখবো ওই স্টেপ গুলোই ছিল হয়তো আমাদের জীবনের জন্যে বেস্ট। আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছে জীবনকে। 

গতকাল রাত থেকে একটা মনখারাপ, একটা শূন্যতা, ঠিক ভুল এর এক দোলাচল এর মধ্যে ছিলাম। কেমন যেন এক ক্লান্তি আমার সারাদিনটাকে শ্রান্ত করে দিছিলো বারবার। ভীষণ এক যুদ্ধ চলছিল মনের মধ্যে। একটা অদ্ভুত টানাপোড়েন এ বড় পরিশ্রান্ত হয়ে যাচ্ছিলাম বারবার। 
বিকেলের কফি, খুব প্রিয় আমার। পড়ন্ত রোদে ক্যাফেটেরিয়ার সামনের বাগানটা খুব মায়াবী হয়ে ওঠে। একটা proof কারেকশন নিয়ে কথা হচ্ছিলো। আমাকে দিয়ে একজন বললো, তুমি ই দেখো, এটা , probably you are the best person to do a unbiased judgment. আমি কেন বলাতে সে বললো because you could see things more simply. উফ এই লেখাটা যে লিখেছে, এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে জটিল করে লিখেছে যে তার থেকে সার বস্তু খুঁজে বের করাই মুশকিল। you do it.
সত্যি তো যে সত্যি আর সিম্প্লিসিটির আমি বড়াই করি, যে সিম্প্লিসিটি আমি খুঁজতে পারি বলে, লোকে unbiased judgment করাতে চায়, সেই আমি জীবনের আসল দিক টা যে ভুলেই যাচ্ছিলাম। simplicity. অনেক বেশি কিছু না ভেবে সোজা ভাবে থাকাই তো জীবন। জীবন তো এত জটিল নয়। একটা সরল রাস্তা যে। সেই রাস্তায় পাশে হেঁটে যাওয়ার মধ্যে কোনো জটিলতা নেই। ভালোলাগার মধ্যে কোনো গ্লানি নেই। কোথাও কাউকে এতটুকুও কোনো ঠকানো নেই, ফাঁকি নেই। বরং ভালোলাগাটা কুড়িয়ে নিয়ে, সত্যি টাকে সাথে করে পাশের মানুষটার হাত কি শক্ত করে ধরা যায়না? পড়ন্ত বিকেলের রোদ , সকালের নরম ভাবনা গুলোর মিষ্টতাকে আবার ফিরিয়ে দিয়ে গেলো, আর তার  সাথে মিলেমিশে এক হয়ে অনন্য মায়াজাল তৈরি করে দিলো। মনে হলো ঠিক যেন একটা রাস্তা, আর কেউ যেন হাত ধরে রাস্তা পার করে দিলো।

আর আমি প্রথম সেন্টেন্স টাতেই দেখলাম একটা সেমিকোলন। সেমিকোলন, A semicolon is when an author could have chosen to end a sentence, but chose not to. 
আঃ. beutiful . Life is beautiful .











Tuesday, 20 March 2018

Akash amar vorlo aloy

Vabnar var lekhonite ujar Kore na diye thakte parlamna sesh parjanto. Har manlo mathar asahyo jantronao. Ekta chera pata urte urte ese pouchechilo Amar hate. Se lekhar govirata amar marmosthal parjanto jano shihorito Kare dilo...ak akdvut bedona abar ak nirbak shantite amar duchokh chapiye jol uchle uthche aj. Bujhlam se jal thamano amar nijer khamotar baire. Buker vetor ajasro na bola kathar dheu shudhu balish vijiye dite laglo. Tai abosheshe ashroy khunjlam ei Android er blog e.
Sabkatha guchiye balar moto sharirik ba manosik abosthay aj Ami nei. Moner sab Katha Tai tule dharte parchina. Shudhu sei lekhoker uddeshye boli.. appekkhay thakbo. Tumi janona kabi, tomar lekhoni baro Maya jarano, ador makhano. Oi lekhonir jore tumi sab na paoake prapti dio, ghrina ke valobese hayo garbito, swapno diye vore jak tomar ghareo sabkata deoal. R oi je tomar baganer je golaper kuri? Dekho r kadiner madhyei charidik alo Kare se hese uthbe.

Monday, 19 March 2018

খুব ক্লান্ত লাগছে। 
ভীষণ এক শূন্য, স্তব্ধ , ক্লান্তি।  
হে আমার মহিমাময়, আমার শক্তি হয়ে জড়িয়ে রাখো আমায়।

Why again

An old pic-
Some old words,
Made me walk in the down memory lane.
Felt the same warmth on my cheek,
That same feel-
Why again?

Sunday, 18 March 2018

নিস্তব্ধতা

নিস্তব্ধতা যখন খুব গভীর হয়, তখন ভীষণ অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। আজ সারাদিন বাতাস ছিল একেবারে স্থির। নিস্তব্ধ। কি যেন একটা ভারে এই মন হয়েছিল মৌন। খুঁজছিলো এক স্থির, নিরবিচ্ছিন্ন ভালোলাগা। সন্ধের আরতি তাকে পূর্ণতা দিলো। 
যখন পৌঁছলাম কালীবাড়িতে, সূর্য্য তখন সবে অস্ত গেছে। আকাশে তার সোনার বীনার রেশ তখনো মিলিয়ে যায়নি। শিব মন্দিরে আরতি শুরু হয়ে গ্যাছে তখন। সেই শাঁখ ঘন্টা ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামলো। মাকে আজ ও বড় সুন্দর করে সাজানো ছিল। ফুলে ফুলে ভোরে ছিল মা এর সিংহাসন। পরনের শাড়ি ছিল আজ গাঢ় বেগুনি। ধুপ, ধুনো, ফুল, বেলপাতা, একটানা ঘণ্টার শব্দ আর ওই স্নেহদৃষ্টি। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠেছিল। বুঝতে পারিনি, ওই জায়গাটা আমার এতটা নিজের। আস্তে আস্তে কখন দেখলাম, সন্ধ্যে নেমেছে। বুকের ভেতর লক্ষ হাতুড়ির শব্দ আর সামনে ওই নির্মল স্মিত মুখ। ধীরে ধীরে সব কোলাহল কোথায় মিলিয়ে গেল। চোখের সামনে রইলো শুধু ওই প্রদীপের ওঠানামা। সন্ধ্যা আরতির একটানা সুর। চারিদিকের কোলাহল, শব্দ, কথা , কোথায় যেন সব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, শুধু মনে হলো ওই সামনের মা আর মা এর স্নেহদৃষ্টি যেন আমাকে সিক্ত করে দিচ্ছে। কালকে থেকে বড় নদীর কাছে যেতে ইচ্ছে করছিলো, শান্ত বাতাস, একটু স্থির শান্তি। আজ যেন ওই দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সেই শান্ত সমীরণ আমাকে ছুঁয়ে গেল। আপনা থেকে হাত জড়ো হয়ে গেল, ক্ষুদ্র এ মন। প্রার্থনা ছাড়া আর কিছু যে দেবার নেই। শুধু সেই অন্তরের সমস্ত শুভ ইচ্ছা কে এক করে এ মন বলে উঠলো, এই শান্ত মলয় যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়। যে শান্তির স্পর্শে আমার অন্তরাত্মাকে আমি বারবার জাগিয়ে রাখি, সেই শান্তি সবার সব ঘরের কোণ কে যেন ছুঁয়ে যেতে পারে।
বাড়ি ফিরে এলাম। যে প্রদীপ আজ এখানে জ্বলে উঠলো, সেই প্রদীপের সাধ্য খুব সামান্য কিন্তু বড় সাধ তার সমস্ত অন্ধকার কে দূর করে আলো জ্বালানোর। সে আলো আমার ঝড়ের রাতেও নিভবেনা, বৃষ্টির শব্দ তাকে রোমাঞ্চিত করতে পারে, কিন্তু নিভিয়ে দেবেনা। সেই আলো যাকনা , যাকনা জ্বলে। আর ওই বাতাস প্রার্থনা হয়ে বয়ে যাক। দুচোখে দিক ভালোলাগার হাত বুলিয়ে। 

Saturday, 17 March 2018

জল তোকে ছুঁয়ে আসি

চল জল তোকে ছুঁয়ে আসি। 
পাহাড়ের রুক্ষতা লাগছেনা আর ভালো,
সঙ্গে নিয়ে চল তুই আমায় ,
যেখানে শুধু আলো আর আলো।
যেখানে চাঁপার গন্ধে আকুল দুপুর বেলা -
আলোছায়া রোদে বিছানাতে শুয়ে,
অগোছালো ভাবে উড়বে ডায়েরি র পাতা।
জীবন তখন মোটেও শক্ত নয়,
সবের মাঝে জড়িয়ে যে রূপকথা।
সেইখানে চল নিয়ে তুই আমায়,
শুধু বসে থাকি তোর পাশটিতে।
ছলাক ছলাক করে নাহয় বলিস কিছু কথা,
রিনিঝিনি নুপুর বাজাস লহরীতে।
তবু আজ তুই নিয়ে চল সেখানেতে ,
তোর ওই জলে পা দিয়ে আমি বসি।
আর কিছুনয় , আমি শুধু চাই
ও নদী তোর জলটাকে ছুঁতে ,
ওতেই আমি হবো বড়ো খুশি।।
বড় বেশি ব্যস্ত সবকিছু, সবাই।
চারিদিকে শুধু ব্যস্ত মানুষজন।
কিছুক্ষন নাহয় চল না, না হয় নাই বা দৌড়লাম
পাশাপাশি থাকি বসি কিছুক্ষন।
বাতাস তখন ওড়না ওরাক,
গোধূলির মৃদু হাসি।
দুচোখ ভোরে চল দেখে আসি আমি
কানে কানে নাহয় বললি ই ভালোবাসি।
আকাশ নাহয় মাতাল হলোই
একরাশ রজনীগন্ধা,
হাতে নিয়ে আসিস, চারিদিক ভাসি
আমার অভিমানী অপরাজিতা।
কাঞ্চন ফুলে গাছ গেছে ছেয়ে,
মাধবী লুটায় ভুঁয়ে।
আর কিছুনয় , আমি শুধু চাই
ও নদী তোকে,
আসতে তোকে ছুঁয়ে।











Friday, 16 March 2018

ভালো থাকা।

তোমার মনখারাপের ছোঁয়ায়
দূরে সরিয়ে রাখলাম আমার কান্না
তোমার রোদ্দুর আনতে আনতে
ভুলে গেলাম আমার মেঘে ভরা আকাশ

কান্না আমি আটকাতে চাইনা। 
কান্না আসুক দুচোখ ভোরে।
কালকের সারারাতের বৃষ্টির মতো ,
ভিজিয়ে দিক আমার তোমার সকল আবেগ।
ধুয়ে মুছে যাক সমস্ত যন্ত্রণা।
শুধু নির্মল একটা ভোর হোক তারপর
মেঘ নয় ,
রোদ ঝলমলে দিন চাই আমার।
আমাদের চেতনা যেখানে প্রাণবন্ত,
বোধ যেখানে সঠিক।
আর ঠিক সেই বোধ , সেই চেতনা-
সঙ্গে নিয়েই চলো। .এগিয়ে চলি
সেই হোক আমাদের সাধনা।। 
হয়তো আজ বুঝছো ভুল।
অভিমানে বুকের ওপর হয়তো বা উঠছে ঢেউ.
সেতো আমার গলার কাছে জমা হয়ে আছে কান্না।
ঠোঁটের কাছে না বলা কত কথা।
তবু জানি, একদিন বুঝবে তুমি এর মানে।
জানোতো চলার পথে পথ চলা তবুও যায় একসাথে ,
কিন্তু সাধনার ওই আসন ভাগ করে নেওয়া বড় সহজ কথা নয়
সেই পথে চেয়েছি তোমায়
দেখো, চিনে নিতে ভুল কোরোনা যেন ,
চিনো তার ঠিক পরিচয়।

আর আমি
তোমার ভালোবাসা কে বদলে দিতে চাই তোমার ভালো থাকায়। 


Thursday, 15 March 2018

মায়া

সকালবেলা যখন মেট্রো তে আসি, খুব সুন্দর নরম একটা রোদ তখন আমার এই প্রিয় শহর টাকে জড়িয়ে রাখে। প্রিয় বললাম এই কারণেই, কারণ এই জায়গাটা কে খারাপ লাগার মতো সেরকম কোনো কারণ আমি পাইনি। বরং প্রায় গত ৭ বছর ধরে এই শহর টা আমাকে দুহাত ভোরে এনে দিয়েছে অসংখ্য opportunity . আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে এই শহর এ এসে। predoctoral , doctoral , postdoctoral.....premarital থেকে marital ,  বন্ধুত্ব থেকে একসাথে ঘরবাঁধা, আমাদের সংসার, স্বপ্ন দিয়ে সাজানো প্রতিটা কোণ। আঙুলে আঙ্গুল ছোঁয়া থেকে হাত ধরা, হাতে হাত রাখা, পাশে থাকার অঙ্গীকার। মুখে শুধু বলা নয়, লোক দেখানো ফেসবুক এ শুধু গলা জড়িয়ে ছবি দেওয়া নয়, সত্যি হাত না ছাড়া। সংসার অনলে চারিদিক যদি পুড়েও যায়, বারংবার যদি স্বপ্ন আহত হয় ও, তবুও আবার স্বপ্ন দেখা, স্বপ্নের বীজ বোনা, তাতে জল দেওয়া, প্রাণ দেওয়া, আর ওই আগুন থেকে সযত্নে রক্ষা করে আস্তে আস্তে বড় করে তোলা ভালোবাসার চারাগাছ। এও এক সাধনা। যে করে শুধু সেই জানে এ সাধনের ত্যাগ, তিতিক্ষা, গভীরতা। 

আর এই সাধনাতে আমাকে অনেকের সাথে, অনেক কিছুর সাথে, সাহায্য করেছে, আমার এই শহর টাও। কত কিছু যে শিখিয়েছে। সব থেকে বেশি করে বোধয় এই শহর টাতে আসার পরে আমি নিজেকে চিনতে পেরেছি। অস্মভব আত্মসম্মান বোধ আর আত্মবিশ্বাস, এই শহর টাই দিয়েছে আমায়। ফিরে পেয়েছি নিজেকে, বুঝতে পেরেছি নিজেকে, অন্যকে। দেখেছি চড়া makeup এর নিচে লুকিয়ে থাকা কদর্য্যতা। আবার তার ই পাশে খুঁজে পেয়েছি শিশুর সারল্য। বুঝেছি, আমাদের চারপাশে প্রতিদিন ঘটে যায় এমন অসংখ্য ঘটনা, তার মধ্যে মন কে ক্লেদাক্ত করে দেবার মতো ঘটনাও যেমন আছে, তেমন ই মন কে পবিত্র করে দেবার মতো অনেক কিছুই ছড়িয়ে আছে। কোনটা কুড়িয়ে নেবো আর কোনটার দিকে ফিরেও তাকাবোনা, সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর নির্ভর করে।

আজকের সকাল টা অন্যদিনের মতো আনন্দের সাথে শুরু করতে আমি পারিনি, কেমন এক মনখারাপ মেশানো সকাল ছিল আজকের। যত দিন এগিয়ে আসছে এই জায়গাটা ছেড়ে চলে যাবার, ততো বেশি করেই যেন এই জায়গাটা আমাকে মায়ায় জড়াচ্ছে। কি যে পোড়া মন একটা আমার। কোনো কিছু ছেড়ে চলে যেতে বড্ডো মনখারাপ হয়। যখন স্কুল এ পড়তাম, মনে আছে নতুন ক্লাস এ যখন উঠতাম, নতুন বই এর আনন্দের সাথে সাথে পুরোনো বই গুলোর জন্যে খুব মনকেমন করতো। খুব যত্ন করে ভালো করে সেগুলোকে আবার রেখে দিতাম। অর্পিতা বলে আমার এক জন পাড়াতুতো বোন ছিল, টুকটুক করে এসে ও সেই বই গুলো নিয়ে যেত। 

সেরকম ই হয়তো, আমার এই শহর , কাগজফুলে মোড়া বসন্তের এই সময়, যেন বারবার আমাকে এখান থেকে চলে যাবার এক মনখারাপ এ করে তুলছে কর্মবিমুখ, ভুলিয়ে দিচ্ছে আমার সমস্ত বাস্তববোধ কে। শুধুই যেন ওই সৌন্দর্য্যে বিভোর হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। এ ইচ্ছে অলীক। জীবিকার প্রয়োজনে জীবন কে কখনো বলতেই হয় "রোসো ভাই, আর কাব্য করোনাতো, ওসব রাখো, অবসর জীবনে বসে বসে কাব্য করে চলো মন খুলে।..এখন নয়। " সত্যি কি তাই....কাব্য কি অবসর জীবনে হয়, নাকি জীবনে অবসর কোনোদিন সেভাবে আসে, কাব্য কি মানুষ কে 'চলো ভাই একটু কাব্য করি.'..এই ভেবে করতে হয়। কবিতা কি আমাদের প্রতিদিনের সমস্ত কিছুর সঙ্গে জড়িয়ে নেই? ওই গাছের পাতায়, নরম রোদের আলতো সকালে, পাতা ঝরা শীত এ বা কচিপাতায় মোড়া বসন্তে, সব কিছুর মধ্যেই কি সেই ছন্দ, সুর, তাল, লয়  এ সময় থমকে যায়না? আমিতো বেশ শুনতে পাই, চাঁদনী রাতের শিহরণের ছন্দ, বিষণ্ণ বিকেলের সুর, এমনকি প্রচন্ড গরমের বিদগ্ধ দুপুরের ও আছে এক না বলা বাণী। শুনতে চেও কাছে গিয়ে, নরম সুরে জিজ্ঞাসা করে দেখো।..দেখবে বুক ভোরে আছে তার না বলা কথায়। কবিতার ছন্দের মতো, গানের সুরের মতো সারা দুপুর তোমার বয়ে যাবে, সেই কথার ঘোরে। শুধু একবার শুনতে চেও।

আমার শহর, নিজের হাতে গড়া আমাদের ছোট্ট সংসার আর শহরতলীর এই একান্ত আপনার আমার ছোট্ট ঘরের কোণ। শহর আর শহরতলী, এই দুয়ের ভালোবাসা, এই দুয়ের মায়া আমাকে এই কয়েকবছর যেন একদম আচ্ছন্ন করে রেখেছিলো। সেই মায়াকাজল চোখে দিয়ে আমি সবকিছুর মধ্যে খুঁজে পেয়েছি অনন্ত ভালোলাগা। ঘুম ভেঙে উঠে চাঁদ দেখেছি। পাগলের মতো কাজ করেছি, পড়াশুনা করেছি, বিকেলে কফির কাপ এর চুমুকে জীবন্ত হয়ে উঠেছে আমার ক্যাফেটেরিয়ার নরম আদর, দুচোখ ভোরে দেখেছি ওই আবীর মাখানো গোধূলি, ধ্যানমগ্ন সন্ধ্যার সান্নিধ্য এ পেয়েছি নিশ্চিন্তের শান্তি, ব্যাডমিন্টনের racket এ শেষ করে দিয়েছি সমস্ত না পাওয়ার অভিমান, তারপর রাত্রির মুগ্ধতা দুচোখে জড়িয়ে নিয়ে পরের দিনের নতুন ভোরকে করে নিয়েছি আলিঙ্গন।

শনি রবিবার গুলোতে আমাকে রান্নার নেশাতে পায়, যদি আমি বলি, সেও এক অনবদ্য কবিতা, জানি, হাসবে তুমি। তা হাসো, কিন্তু ভাবোতো তেল, মশলা আর সমস্ত উপকরণ যদি সঠিক ভাবে ছন্দবদ্ধ না হয়, সুরে সুর যদি না মেলে, তাহলে কখনই কি আর সে সঠিক রান্না হতে পারে? সেই কবিতার সুরে আমাদের রসনা হয়েছে তৃপ্ত। দিল্লীর অলিতে গলিতে আছে অনেক ইতিহাস। সেই ইতিহাস কুড়োতে কুড়োতে কখন আমাদের ও অনেক ভালোলাগা ছড়িয়ে দিয়েছি ওই কালীবাড়ি প্রাঙ্গনে, মার্কেট ২ এর আড্ডায়, বাউলির সিঁড়িতে, c.p. এর রাস্তায়, নিজামের কাবাব এ, karims এর কোর্মা তে, পুরোনো দিল্লির ঘিঞ্জি গলি বা গুরগাওঁ এর মেকি আধুনিকতায়; জামা মসজিদের আজানে বা ইস্কন এর আরতিতে, বাংলা সাহেবের আতিথেয়তায় বা অক্ষরধামের চাকচিক্যে, গুরবায়ুর সিম্প্লিসিটিতে বা লোটাসে র শান্ত সৌন্দর্য্যে। মনে আছে যেদিন প্রথম ওখানে যাই, আরতির তালে তালে চোখ দিয়ে দরদর করে জল পরে চলেছিল, আর সেই প্রথম আমি কান্না লুকানোর কোনো চেষ্টা করিনি। কান্নার মধ্যে যে এতো তৃপ্তি আছে সেদিন বুঝেছিলাম।

এইভাবেই কখনও এই শহর আমার কাছে ওই pollution, রেপ বা চুরির শহর হয়ে উঠেতে পারেনি, খুব এক ভালোলাগার শহর হয়ে থেকেছে। জানি যেখানেই যাবো, যেখানেই থাকবো সেখানেও আবার খুঁজে পাবো আমার হাজার ভালোলাগা। নিশ্চই খুঁজে পাবো। তবু আমার আমি টাকে এই শহর টাই এনে দিয়েছিলো আমায়, আর সেই আমি টাই আবার কোনো এক মধ্যাহ্ণের, নিস্তব্ধতার মধ্যে, সন্ধের শান্তির মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল তাদের দুজনার ভালোবাসায় মোরা সুখী গৃহকোণে। ঝড়ের মধ্যে দিয়েও বারবার খুঁজে পেয়েছে সেই বন্ধুতার হাত। সেই সব কিছুকে, সেই অনুভবের জায়গা গুলোকে কি ছেড়ে যাচ্ছি? জানিনা।.কেন আর কিসের এই মনখারাপের নেশায় পেয়েছে আমায়। 









Wednesday, 14 March 2018

খেলিছ এ বিশ্বলয়ে

কখনো কখনো কোনো মানুষের চলে যাওয়া যেন আমাদের নিজেদের হৃৎপিণ্ডের কিছুটা নিংড়ে দিয়ে যায়। রক্তের সম্পর্ক মানেই শুধু আত্মার সম্পর্ক হয়না। বারেবারে তার প্রমাণ পেয়েছি। আজ আরো একবার বোধ করলাম তা। নাহলে, যাকে চিনিনা, জানিনা, তাঁর না থাকাটা এতো বেশি করে কেন বুকের মধ্যে ঢেউ তুলছে। জানিনা। শুধু বারবার চোখের ওপর একটা ছবি ভেসে উঠছে, wheel chair এ বসে থাকা একটা মুখ, না অসহায় নয়। অসম্ভব চিন্তাশীল অথচ শিশুর সারল্যে ভরা মহাজাগতিক বিষ্ময়ে বিস্মিত এক অসাধারণ মৌলিক আধার।

হয়তো সেই ছোট্ট বেলায় আমার মতোই, আমাদের আর পাঁচজনের মতোই মা বাবার হাত ধরে তারা গুনতে শিখেছিলেন, দেখতে, ভালোবাসতে শুরু করেছিলেন ওই আকাশের অসীমতাকে। তারপর আমাদের দৃষ্টিআকাশের অনেক অনেক ওপরে পৌঁছে গিয়ে তিনি ছুঁয়েছেন সেই মহাজাগতিক ছন্দময়তাকে, প্রত্যক্ষ করেছেন অনিন্দ্য সেই সুরের ইন্দ্রজালকে যার মধ্যে বাঁধা পরে আছে  কৃষ্ণগহ্বরের রহস্যময়তা, রাত্রির অপার সৌন্দর্য্য বা দিনের আনন্দমুখরতা।   

সেই সুর, সেই তাল, সেই ছন্দের মধ্যে কোথায় হারিয়ে গ্যাছে পার্থিব না পাওয়া। অপার্থিব সৌন্দর্য্যের সাথে বিলীন হয়ে হাসি মুখে গ্রহণ করেছেন সংসারের ঘাত, প্রতিঘাত। দুহাত ভোরে নিয়েছেন জীবনের সমস্ত দানকে। নিজের কষ্ট মুছিয়ে দেবার জন্যে নির্ভরতা ছিল কিন্তু অপেক্ষা বোধয় ছিলোনা অন্য কারোর। অন্য কোনো জীবনের আশায় থাকেননি, যা কিছু এবং সব কিছু এই জীবনেই। পূর্ণ প্রাণশক্তিতে ওই মহাপ্রাণের গভীর থেকে ধ্বনিত হয়েছে "আমি কৃতজ্ঞ।" দৃঢ়তার সাথে বলেছেন 
"We are each free to believe what we want and it is my view that the simplest explanation is there is no God. No one created the universe and no one directs our fate. This leads me to a profound realization. There is probably no heaven, and no afterlife either. We have this one life to appreciate the grand design of the universe, and for that, I am extremely grateful"
                                                                        ---"Stephen Hawking – There is no God. There is no Fate"

কেমন জানি মনে হচ্ছে বারবার ওই মহা মানবের গভীরে ধ্বনিত হয়েছে 
"....বিশ্ব ভরা প্রাণ/ তাহারি মাঝখানে আমি পেয়েছি মোর স্থান/ বিস্ময়ে তাই জাগে .... / .....জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান / বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান" 

কিছু আগেই কবি শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের এর এক অসাধারন লেখা পেলাম, যথার্থই বলেছেন উনি, 'হকিং একজন কবি '. সত্যি ই তিনি কবি, যে কবি চিরন্তন শাশ্বত সত্যের সাথে সমস্ত সৌন্দর্য্যকে এক করে দেখতে পেরেছেন। তিনি কবি। 
জানি ভগবানে বিশ্বাস তিনি রাখতেননা। তাইতো সমস্ত লিখন কে খন্ডন করে, নিজেই নিজের লেখনী সাজিয়েছেন। তবু ক্ষুদ্র এ মন, বড় ভাবতে ইচ্ছে করছে, বোধয় এই আজকের দিন থেকেই শুরু হলো এক অনন্য অন্বেষণ। বোধহয় ওই 'বিরাট শিশু' মহাকাল, 'কাল' (সময়) এর কান্ডারী কে সাথে নিয়ে মেতে উঠলেন আপন লীলা খেলায়। সৃষ্টির রহস্য সন্ধানে, স্রষ্টা তাঁর সমস্ত মাধুর্য্য মিশিয়ে দিচ্ছেন কি ওই সৃষ্টির পূজারী কে? আর তখন  কি 
"শূণ্যে মহা আকাশে / তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে / ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে / নিরজনে প্রভু নিরজনে।".....







Thursday, 8 March 2018

শুকতারা

আমার ঘুম ভাঙে ঠিক ভোর ৫ টায়। শীত , গ্রীষ্ম , বর্ষা  সবসময় ৫ টা থেকে সারে ৫টার মধ্যে আমার সময় ঘড়ি আমায় জাগিয়ে দেয়। খুব আশ্চর্য্য লাগে, আমাদের ওখানকার থেকে ভোর এখানে হয় প্রায় ঘন্টা খানেক দেরিতে। অন্তত আধ ঘন্টা তো বটেই, তবুও ঠিক ওই সময় টাতে আমার পূর্বঅভ্যাস আমাকে তুলে দেয়। একেই কি বলে অভ্যেস? সেই ছোটবেলাতে, বাবা ওই সময় এ আমাকে যোগ ব্যায়াম , প্রাণায়াম অভ্যাস করাতো আর আমি শুধু ফাঁকি দিয়ে ঘুমোতাম। খুব ছোটবেলাতে অবশ্য বাড়ির মধ্যে আমিই সব থেকে দেরি করে ঘুম থেকে উঠতাম, রুগ্ন মেয়ে বলে আদুরেও কম ছিলামনা, অনেক আদরে , সাধ্য সাধনা করে ঘুম থেকে তোলা হতো আমায়। বড় হয়ে সেই আমি কিভাবে যেন ভোর কে খুব ভালোবেসে ফেললাম। সেই বিএসসি এম এসসি থেকে আরো বেশি করে। বাবার থেকে দূরে তখন। খুব মন কেমন করতো আর বাবা যা যা শেখাতে চাইতো আমায় আরো বেশি করে সেই জিনিস গুলো প্রতিদিনের অভ্যাসের মধ্যে এনে ফেলি। 
তারপর যখন আরো দূরে বা হয়তো বা আরো বেশি কাছের হয়ে গেলাম বাবার, জানিনা ঠিক, তবে ঠিক তখন থেকেই সূর্য্যও যেন বেশি করে আমার কাছে চলে এলো। মনে হতো আমাকে জেগে যেতে হবে, ওই সূর্যোদয় এর সাক্ষী হতে হবে, সাক্ষী হতে হবে ওই বিদায়ী ক্ষণের। আর তখন থেকেই কিভাবে যেন আমার প্রতিটা দিন, দিনের প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে এক অন্যভাবে ধরা পড়লো। কত আনন্দ লুকিয়ে আছে এই এক একটা মুহূর্তের মধ্যে,কত ভালোলাগা, হয়তো বা অনেক খারাপ লাগাও , কিছু আদর হয়তো কিছু অনাদর তবুও সব সবকিছু খুব সুন্দর। একে অন্যের থেকে আলাদা, অভিনব অনুভব এ জড়ানো।  

আজও ঠিক সেভাবেই ঘুম ভাঙ্গে। যান্ত্রিক অ্যালার্ম এর দরকার পড়েনি , এমনি ই ঘুম ভাঙ্গে, চোখ খুলতেই মুখের ওপর উছলে উঠলো একরাশ আলো। ভোর তো তখন ও হয়নি, ওমা , জানালার দিকে তাকাতেই দেখি, একদম আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে শেষ রাতের সুধাকর। সাথে, ঠিক পাশেই আছে শুকতারা। কি অসম্ভব সুন্দর সে মুহূর্ত। চোখ ফেরানো যাচ্ছিলোনা যেন। কি অনুপম তার রূপ। কিছুদিন আগেই পূর্ণিমা ছিল, তাই ভরা যৌবনের সমস্ত মাধুর্য্য নিয়ে চন্দ্রমা এসে দাঁড়িয়েছিল যেন। 
কালকে শোবার সময় চাঁদ দেখিনি, ছোট্ট মিষ্টি একজন মানুষ তাকে খুঁজেওছিলো নাকি, শেষে বলছিলো, চাঁদের নাকি কষ্ট হয়েছে, তাই সে আসেনি। শেষ রাতে চাঁদ বোধয় তার সমস্ত কষ্ট কে একটানে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে শুধু আমাদের মুহূর্তকে সুন্দরতা তে ভোরে দেবে বলে অমন ভুবন ভোলানো হাসিতে চারিদিক ভাসিয়ে দিতে এসেছিলো। ছোট্ট শুকতারা, মুচকি হেসে তার পাশে থেকে তাকে সাহস জোগাচ্ছিলো। শুয়ে শুয়েই তাকিয়ে ছিলাম সেই দিকে, তারপর  উঠে পড়ি, সাক্ষী হলাম সেই ব্রাহ্ম মুহূর্তের। দিবাকরের রশ্মিতে এক হয়ে মিশে গেলো আমার চাঁদের আলো আর সারাদিন বারবার আমার মনে পড়তে লাগলো সেই যুগলবন্দীকে।

আস্তে আস্তে সূর্য্যের তেজ বাড়লো, মধ্যাহ্ন পেরিয়ে পড়ন্ত বিকেল আবার ঘোর লাগালো চারিদিকে। সন্ধের ধ্যানমগ্নতা আমাকে আজ করলো একেবারে নীরব। দূরে ওই মৌন্য আরাবল্লী, সন্ধ্যার রঙে রং মিলিয়ে আরো গাঢ়, গভীর হয়ে মিশে যাচ্ছিলো ওই আকাশে। আজ আবীরের বাহুল্য ছিলোনা পশ্চিমে। আজ ছিল শুধু যেন প্রতীক্ষা। কিসের তা ঠিক জানিনা। হয়তো সুরের , হয়তো বা সঠিক ছন্দের। তবে প্রতীক্ষা ছিল নীরব, শান্ত। সেই নীরব প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে ধীর পায়ে, সন্ধ্যা নামলো।  দূরে ওই বহুদূরে যে ছোট্ট মন্দির টা দেখা যায়, সেখান থেকে খুব অল্প করে ভেসে এলো সন্ধ্যারতির শব্দ। আর এই নিস্তব্ধ নিশিকে স্বাগত জানিয়ে ওই পশ্চিম আকাশেই আপন স্তিমিত মুখ খানি মেলে ধরলো আমার শুকতারা। 












Wednesday, 7 March 2018

বেঁচে আছি

ঘুম ভেঙে জেগে উঠে কখনো চাঁদ দেখেছো?
আকাশ ভরা তারা?
দেখেছো কখনো রাতের কান্না 
শুনেছ নৈশব্দের শব্দ। ..
বোধ করেছো তোমার নিশ্বাস কে....
তোমার শ্বাস এর শব্দময়তাকে প্রত্যক্ষ করেছো।....
বুঝেছো কি তুমি বেঁচে আছো? 

Friday, 2 March 2018

প্রতীক্ষা

হটাৎ ঝড়ের পর যখন সবকিছু শান্ত হয়,
তখন কেমন যেন এক ক্লান্তিময় শান্তি আসে চারিদিকে।
কেমন যেন বিষাদ ময় ক্লান্তি।
সেখানে কথা হারায় তার আপন শব্দ,
সুর হারায় তার আপন গতি ,
তাল হারায় তার আপন ছন্দ।
আর ওই সুর তাল গতি সবকিছু হারিয়ে থাকা প্রকৃতি
নিস্তব্ধ হয়ে, নীরব হয়ে, একেবারে স্তব্ধ হয়ে
অপেক্ষা করে।
সঠিক সময় এর।
একেবারে স্তব্ধ হয়ে, নীরব প্রতীক্ষা করে
সবুজ পাতার। ....
কখন গাছে গাছে আবার ভরে যাবে আম্রমুকুল ,
যুথির গন্ধে , বেলির আগমনে বাতাস হবে আমোদিত।
জ্বলবে আলো।
ফিরে আসবে সুর, তাল, বর্ণ , গন্ধ।
বীণা বেজে উঠবে তার আপন ছন্দে।

ততক্ষন থাকনা। ..
থাকনা সবকিছু স্তব্ধ হয়ে
বোলোনা বোলোনা , কোনো কথার
কোনো অজুহাতের , নেই কিছু দরকার।
অযথা কিছু দিয়ে আমার এ প্রতীক্ষা কোরোনা ভঙ্গ তুমি।
সুরে সুর আজ মিলছেনা ,
তাল গেছে কেটে।

তার থেকে চলো ঠিক সুরটাকে খুঁজি মোরা-
সুন্দর কে আনি।
ততক্ষন সবকিছু থাক নাহয় থেমে ,
নাহয় না থাক কোনো বাণী।







Thursday, 1 March 2018

তুমি তেজ, আমাতে তেজ স্থাপন করো

প্রতিদিনের সূর্য্য প্রতিদিনের ভোর, তবু সে কত নতুন। তার সৌন্দর্য্য কখনো ক্ষয় হয়ে যায়না, নিত্য নতুন ভাবে তোমার আমার সবার প্রতিটা মুহূর্ত কে সাজিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়ে যায়, আবার পরের দিনে নতুন আলোর সন্ধান দেবে বলে। 

আজ আমার জন্ম তিথি, আমি নাকি দোল পূর্ণিমার দিনে এই পৃথিবীতে এসেছিলাম। আমার মা তাই আমার নাম রেখেছিলো দোলা, কিন্তু বাবা চেয়েছিলো আমাকে নদীর গতি দিতে। তাই পরে নদীর নামে আমার নাম রেখেছিলো। মা এর হাতের পায়েস আর বাবার আদর ছাড়া জন্মদিন বা জন্মতিথির অন্য কোনো মানে আমার কাছে কখনোই কোনোভাবে ধরা পড়েনি। না কখনোই, এখানকার cake কেটে মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাকে দেওয়া এদের হাজার আদরকে কখনোই ছোট করিনা আমি। আমাকে দেওয়া আমার প্রিয় মানুষটার, এখানের সবার--  কণা কণা আদর আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, বেশি করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে নিজেকে, অন্যকে। তবু কি জানি দামি রেস্তোরাঁ থেকে ঘরে আসন পেতে কাঁসার থালা আর প্রদীপের শিখাই আমাকে বড় বেশি শান্তি দেয়। 

প্রতিটা দিন প্রতিটা মুহূর্তই একে অন্যের থেকে কত আলাদা, কত অন্যরকম, অথবা সব ই এক রকম। ঠিক জানিনা। আজকের দিনটাও বিশেষ কিছুই নয়। শুধু মা বললো আজ তোর জন্মতিথি। আর আমার মনে হলো, সেই যে কতগুলো বছর আগে আমি এসেছিলাম , ছোট্ট আমি। কত আদর, হয়তো কিছু অনাদর , কিছু আঘাত আবার অনেক ভালোবাসা আমাকে আজকের অমিতে এনে দিলো। কি করলাম আমি এতো গুলো বছর ধরে, কি ই বা করতে পেরেছি এই এতো গুলো বছর ধরে। জানিনা। তবে যখন ফিরে তাকাই, দেখি কোথাও এতটুকু খারাপ লাগা নেইতো। 
তাই আজ এখন এই শান্ত শীতল সকাল বেলা, মন থেকে খুব বলতে ইচ্ছে করছে ধন্যবাদ, হে আমার পরম মঙ্গলময়,  যা কিছু দিয়েছো আমায়, এ আমার অনেক বেশি পাওয়া। আর যা কিছু চেয়েছি, পাইনি বলে আক্ষেপ করেছি তা হয়তো আমার কখনো ছিলোনা। আমাকে বোধি দিও, যে বোধি আমাকে তোমাতে কখনো ভুল বুঝতে দেবেনা। যে বোধি আমাকে আজকের আনন্দের সুরের সাথেও সুর মিলিয়ে দেবে দূরের বেদনা রিক্ত কোনো মুখের। যে বোধি আমাকে এই পলাশ এর লাল এর মাঝেও বারবার কোনো দূরদেশে শিশুর রক্তাক্ত ছোট্ট শরীর টাকে চোখের সামনে তুলে আনছে। হয়তো আমার কিছুই করার নেই। তবু ওই বোধটাকে রেখো ঠাকুর, যে বোধ থেকে আমি প্রাণপণে প্রার্থনা করতে পারি, ওই ছোট্ট দেহ, ওই অসহায় আর্তি যেন আর কখনো কাউকে দিওনা ঠাকুর। আমার পলাশের রং পৌঁছে দাওনা, দাওনা ওখানে। সত্যিকারের শান্তি আসুক। 

জানিনা প্রার্থনা পৌঁছবে কিনা, তবু প্রার্থনা করি, প্রার্থনা করি সেই অমর  অক্ষয় শান্তির। বেদ  এর ভাষায় বলি, আমার বুদ্ধের ভাষায় বলি-
"Dear God
Thank you for this life, this wonderful life. Thank you for this life experience on this earth.
We as an earth family join together in this moment in eternity, from this space in the heart to pray together for peace. We pray for peaceful diplomacy among world leaders. We pray for unity among the religious and spiritual leaders. We pray for a rise in intelligence and compassion.
We pray that we relate to each other as souls and not just the physical body that we inhabit.
We pray for peace, love, unity and cooperation among all of us".

আর আমার ওই সর্ব শক্তিমান সূর্য কে বলি, আমাকে শক্তি দাও, সকল আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা দাও, মনের দৃঢ়তা দাও, হরণ করো আমার চঞ্চলতা। 

"Om, tejo-asi tejo mayi dhehi;
Om, viryam asi viryam mayi dhehi;
Om, balam asi balam mayi dhehi;
Om, ojo-asi ojo mayi dhehi;
Om, manyur-asi manyum mayi dhehi;
Om, saho-asi saho mayi dhehi;"

তুমি তেজ, আমাতে তেজ স্থাপন করো 
তুমি বীর, আমাতে বীরত্ব স্থাপন করো 
তুমি বল , আমাতে বল প্রদান করো 
......

আর বারবার বলি -
     "ॐ असतो मा सद्गमय ।,
तमसो मा ज्योतिर्गमय ।,
मृत्योर्मा अमृतं गमय ।,
ॐ शान्तिः शान्तिः शान्तिः ॥"

asato mā sad gamaya,
tamaso mā jyotir gamaya,
mṛtyor mā amṛtaṃ gamaya,
Om shanti~ shanti~ shanti hi~~

Lead me from falsehood to truth,
Lead me from darkness to light,
Lead me from death to the immortality
Om peace peace peace
আমাকে অসত্য থেকে সত্যের পথে আনো , 
আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাও 
আমাকে মৃত্যু থেকে অমরত্বের পথ দেখাও 
ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি 










আলো

আজ দোল পূর্ণিমার আগের রাত। জ্যোৎস্নার আলোতে চারিদিক আক্ষরিক অর্থেই যেন ভেসে যাচ্ছে। শহরের কোলাহল এখানে পৌছোয়না। শুধু সবুজ সীমাহীন দিগন্ত নামনা জানা পাখির ডাকে চমকে চমকে উঠছে। আকাশ বাতাস জুড়ে এক অদ্ভুত মুগ্ধ স্তব্ধতা। এখুনি এক আলতো হাওয়া চারিদিক এলোমেলো করে চলে গেলো আর কানে কানে, প্রায় ফিসফিসিয়ে বলে গেল- কথা নয় কথা নয়। সাথে দিয়ে গেলো কোনো এক আধফোটা ফুলের আলতো সুবাস। কি যেন এক মন কেমন করা মন মাতানো গন্ধে আমার সমস্ত মন প্রাণ আচ্ছন্ন হয়ে রইলো। কি অপরাসীম, অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য। গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। ভালোলাগা যেন কান্না হয়ে ঝরে পরতে চাইছে। কি অপার্থিব শান্তি অথচ কি অসহনীয় বেদনায় সমস্ত মন কানায় কানায় ভরে উঠছে। 

আচ্ছা, সেই যে আজথেকে কতগুলো বছর আগে, এক বাবা তার আদরের ছোট্ট কণা কে আকাশ দেখা শিখিয়েছিলো, শিখিয়েছিলো, কালপুরুষ কেমন করে দাঁড়িয়ে আছে, পায়ের কাছে ওই যে দেখছো ওটা কিন্তু ওর শিকারী কুকুর। আর ওই যে দেখা যায় জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতো ওটা হচ্ছে সপ্তর্ষি মন্ডল। নাম গুলো। ...নাম গুলো কেন মনে পড়ছেনা বাবা।....আমাকে আর যে কেউ ওই সাত টা তারার নাম মনে করিয়ে দেবার কেউ নেই গো....আজ আবার বড্ডো ইচ্ছে করছে, তোমার কাছে, ছাদের ওপর মাদুর পেতে বসে গল্প শুনি, তুমি আমায় নাম গুলো শিখিয়ে দিও...আবার বার বার। জানো বাবা, তোমার কোলের কাছে শুয়ে, মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে থাকার মতো নিরাপদ নিশ্চিন্তের আশ্রয় আর কোথাও নেই, নেই কোনোখানে। এই যে আজকের চরাচর, ওই যে অপার সৌন্দর্য্যের মুগ্ধতায় নিজেকে মৌন করে রেকেছে। ওই মুগ্ধতা দেখার দৃষ্টি তো তুমি ই দিয়েছো। তোমার সেই বোধ ই তো আমায় ফিরিয়ে দেয় পরম শান্তির বোধিকে। শোক করা তুমি ঘৃণা করো তাই শোক আমি করিনা। এ আমার শোক নয় হয়তো এ আমার তোমাকে আবার পাবার পরম আকুলতা। 

সৌন্দর্য্যই তো সত্যের বোধকে আরো পরিষ্কার করে দেখায়, তাই আজ এই অপার সৌন্দর্য্যের সামনে দাঁড়িয়ে বারবার প্রশ্ন করে চলেছি ' কে আমি? কি আমি ? কেন আমি ?  আর প্রাণপণে প্রার্থণা করছি আমাকে পথ দাও , দিশা দাও। আলো দাও। সুর দাও। বাণী দাও। তুমি কি সত্যি ই তারা হয়ে গেছো বাবা, পাইনা কেন তোমায়।....যদি তাই হও , তবে তুমি শুধু হয়ো দ্রুবতারা।  জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত পৌঁছে দিও , ঠিক সেই প্রথম দিনের মতন করে। আজ বোলোনা আমায় কান্না মুছতে, বোলোনা আমায় না কাঁদতে, এই চোখের জলে ধুয়ে যাক আমার সব না পাওয়ার বেদনা, সব পাওয়ার আনন্দ। কান্না তো পরাজয় নয়, কান্না গ্লানি নয়, আমি জানি কান্না বড় পবিত্র। ওই চোখের জলের ভেতর দিয়ে আমি যেন আরো আরো বেশি করে গ্রহণ করতে পারলাম এই স্তব্ধ নীরব সৌন্দর্য্যকে। 

আর আমার চাঁদ, আমার বড্ডো নিজের। আমি জানি সে আমাকে কখনো ফেরায়না।  সে শান্ত, স্থির , পরম ধৈর্য্যময়। তার নীরব স্নিগ্ধ আলো আদর হয়ে আমাকে ছুঁয়ে থাকুক আর আমার দুচোখের পাতায় নেমে আসুক এই গভীর রাতের মুগ্ধতা। 










ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...