নিস্তব্ধতা যখন খুব গভীর হয়, তখন ভীষণ অর্থপূর্ণ হয়ে ওঠে। আজ সারাদিন বাতাস ছিল একেবারে স্থির। নিস্তব্ধ। কি যেন একটা ভারে এই মন হয়েছিল মৌন। খুঁজছিলো এক স্থির, নিরবিচ্ছিন্ন ভালোলাগা। সন্ধের আরতি তাকে পূর্ণতা দিলো।
যখন পৌঁছলাম কালীবাড়িতে, সূর্য্য তখন সবে অস্ত গেছে। আকাশে তার সোনার বীনার রেশ তখনো মিলিয়ে যায়নি। শিব মন্দিরে আরতি শুরু হয়ে গ্যাছে তখন। সেই শাঁখ ঘন্টা ধ্বনির মধ্যে দিয়ে ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামলো। মাকে আজ ও বড় সুন্দর করে সাজানো ছিল। ফুলে ফুলে ভোরে ছিল মা এর সিংহাসন। পরনের শাড়ি ছিল আজ গাঢ় বেগুনি। ধুপ, ধুনো, ফুল, বেলপাতা, একটানা ঘণ্টার শব্দ আর ওই স্নেহদৃষ্টি। বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠেছিল। বুঝতে পারিনি, ওই জায়গাটা আমার এতটা নিজের। আস্তে আস্তে কখন দেখলাম, সন্ধ্যে নেমেছে। বুকের ভেতর লক্ষ হাতুড়ির শব্দ আর সামনে ওই নির্মল স্মিত মুখ। ধীরে ধীরে সব কোলাহল কোথায় মিলিয়ে গেল। চোখের সামনে রইলো শুধু ওই প্রদীপের ওঠানামা। সন্ধ্যা আরতির একটানা সুর। চারিদিকের কোলাহল, শব্দ, কথা , কোথায় যেন সব ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল, শুধু মনে হলো ওই সামনের মা আর মা এর স্নেহদৃষ্টি যেন আমাকে সিক্ত করে দিচ্ছে। কালকে থেকে বড় নদীর কাছে যেতে ইচ্ছে করছিলো, শান্ত বাতাস, একটু স্থির শান্তি। আজ যেন ওই দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে সেই শান্ত সমীরণ আমাকে ছুঁয়ে গেল। আপনা থেকে হাত জড়ো হয়ে গেল, ক্ষুদ্র এ মন। প্রার্থনা ছাড়া আর কিছু যে দেবার নেই। শুধু সেই অন্তরের সমস্ত শুভ ইচ্ছা কে এক করে এ মন বলে উঠলো, এই শান্ত মলয় যেন সবার কাছে পৌঁছে যায়। যে শান্তির স্পর্শে আমার অন্তরাত্মাকে আমি বারবার জাগিয়ে রাখি, সেই শান্তি সবার সব ঘরের কোণ কে যেন ছুঁয়ে যেতে পারে।
বাড়ি ফিরে এলাম। যে প্রদীপ আজ এখানে জ্বলে উঠলো, সেই প্রদীপের সাধ্য খুব সামান্য কিন্তু বড় সাধ তার সমস্ত অন্ধকার কে দূর করে আলো জ্বালানোর। সে আলো আমার ঝড়ের রাতেও নিভবেনা, বৃষ্টির শব্দ তাকে রোমাঞ্চিত করতে পারে, কিন্তু নিভিয়ে দেবেনা। সেই আলো যাকনা , যাকনা জ্বলে। আর ওই বাতাস প্রার্থনা হয়ে বয়ে যাক। দুচোখে দিক ভালোলাগার হাত বুলিয়ে।
No comments:
Post a Comment