Sunday, 25 March 2018

প্রদীপের শিখা

সেই ছোট্ট বেলা থেকে একটি ছোট্ট মেয়ে তার মনের যা কিছু ঠাকুরকে জানাতো। মনে পরে ক্লাস ফাইভ এর এডমিশন টেস্ট এর আগে ঠাকুরকে বড় বড় দুটো চিঠি লেখা হয়েছিল, তাতে কখনো ভালোবেসে কখনো রীতিমতো শাসিয়ে ঠাকুরকে বলা হয়েছিল একটা কথাই, যেন ওই এডমিশন টেস্ট এ যেন তার হয়ে যায়। তখন ওটাকেই জীবনের সব থেকে বড় পরীক্ষা বলে মনে হয়েছিল কিনা, তাই মনে হয়েছিল ফাইভ এর ওই এডমিশন টেস্ট এ পাশ করে গেলেই ব্যাস আর কিছু চাইনা। মনে আছে, পরে যখন মা এর হাতে পরে চিঠিগুলো, বাড়িতে খুব একচোট হাসির ঝড় উঠেছিল। এখনো পর্যন্ত সেই গুলো নিয়ে সবাই ওকে রাগায়। শুধু একজন মানুষ, একজন মানুষ কিন্তু ওকে নিয়ে হাসাহাসি করেনি, আস্তে করে, লজ্জায় আধখানা হয়ে যাওয়া সেই ছোট্ট মান্তুকে ঘর থেকে বের করে, আদর করে বলেছিলো, "বেশ করেছিস, এবার থেকে যা মনে হবে, বলিস তুই ঠাকুরকে। তোর ই তো ঠাকুর।" 
বাবার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিল বাবার আদরের মান্তু। কেন কেঁদেছিলো সেটা সে নিজেও জানেনা। কিন্তু ছোট থেকেই চাপা স্বভাবের মেয়েটা যখন একটা জায়গা নিজের মনে করে সেখানে তার চাওয়া , পাওয়া, অভিমান, ভালোবাসা সব উজাড় করে দিয়েছিলো আর ওর সেই জায়গাটা সবার সামনে হাজির হয়ে যাওয়াতে বা সবার সামনে হাসির খোরাক হয়ে যাওয়াতে, খুব রাগ হয়েছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিলো। কষ্টটা কি ঠিক সে নিজেও সেই বয়সে বুঝতোনা। কিন্তু ওই একটা মানুষ, ওই একটা মানুষ বুঝেছিলো।

আর তখন থেকে মান্তুর ছিল দুটো জায়গা। একটা তো সেই জন্মাবস্থা থেকেই তার নিজের। ওই সদা হাস্যময় মানুষটা। আর একটা ওই মানুষটার থেকে গ্র্যান্টেড হয়ে যাওয়া ওই ঠাকুরের আসন। সেই থেকে আজ ও ওই ঠাকুরের আসন তাকে খুব শান্তি দিতে পারে। এখন যখন আর এডমিশন টেস্ট নয়, প্রতি নিয়ত অজস্র পরীক্ষা দিতে দিতে খুব ইচ্ছে করে সেই ছোট্ট বেলার মতো বাবার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে, যখন খুব ইচ্ছে করে বাবার সঙ্গে টিনটিন, asterix বা পাগলা সাহেব কে ভাগ করে নিতে, তখন শুধু এই একটা জায়গাই যেন ওকে খুব যত্নে কাছে বসিয়ে সেই পাগলামো গুলোকে প্রশ্রয় দেয়। একবার ও মনে করিয়ে দেয়না সময় নষ্টের কথা। একবারো তাড়া দেয়না।

ধীরে ধীরে সন্ধে নামে। শাঁখ ঘন্টা ধুপ ধুনোর মধ্যে দিয়ে অনেক প্রতীক্ষার মধ্যে দিয়ে, হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তরের মধ্যে দিয়ে,রচিত হয় শান্তি। সেদিনের সেই ছোট মেয়েটা আজ অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন আর পরীক্ষাতে ভালো করে উত্তীর্ণ হলে আনন্দ উৎসব হয়না, তবু বাবার সেই কথাটা সবসময় মনে পরে , satisfaction . বাবা কখনো জিজ্ঞেস করতোনা পরীক্ষা কেমন হয়েছে, বলতো "তুই satisfied তো?" ব্যাস। ওই একটা মানুষ যে সবসময় তার মনের ওই সন্তুষ্টির খোঁজ নিয়েছে। হাসি মুখের পিছনে অন্য কোনো দুঃখের কথা সেই মানুষটা ঠিক বুঝে যেত। সাত বছর পেরিয়ে গেছে , সামনে এসে কেউ হয়তো জিজ্ঞাসা করেনি। তবু ওই যে চোখ বন্ধ করে যখন খুঁজি ওই কথাটা ঠিক শোনা যায় "তুই satisfied তো ?" হ্যাঁ বাবা, তোমার মান্তু নিজেকে কখনো কষ্টে থাকতে দেবেনা। তুমি ই তো শিখিয়েছিলে, সবসময় যদি ভালো কথা ভাবা যায়, ভালো কথা, ভালো গান, ভালো মানুষদের সংস্পর্শের মধ্যে দিয়ে নিজেকে নিয়ে যাওয়া যায়, তাহলে আর কোথাও কোনো কষ্ট থাকেনা। কোনো দুঃখ থাকেনা। আমারও ঠিক তাই হয় জানো, এখনো, বেশিক্ষন কোনো মনখারাপ, কোনো দুঃখই আমাকে কষ্টে থাকতে দেয়না। তুমি কিছু ভেবোনা বাবা। তোমার মান্তু খুব ভালো আছে। 

বাইরে তখন চলছে 
Khandana bhava-bandhana jaga-vandana Vandi-tomay; Niranjana nara-rupa-dhara Nirguna guna-may.
Mochana agha-dushana jaga-bhushana Chid-ghana-kay; Jnananjana vimala-nayana Vikshane moha jay.
........................................................
........................................................
Nirbhaya gata-samsaya drira-nischaya Manasavan; Nishkarana bhakata-sarana Tyaji jati-kula-man.

তুমি কিছু ভেবোনা বাবা। তোমার মান্তু খুব ভালো আছে। এই যে প্রদীপের শিখা যা এখুনি আমি জ্বালিয়ে রাখলাম, সে আলো তে আমার, আমাদের চারপাশের কোনো কারোর অন্তরাত্মা কে আমি কখনো আঁধারে রাখবোনা। ওই যে, বড় সাধ আমার এই প্রদীপের শিখার, ক্ষুদ্র সে, সাধ্য নেই, তবু সাধ সব জায়গায় সব খানে সব অন্ধকার যেন দূর হয়ে যায়। জানি একদিন তা হবেই। ঘরের কোণায় কোণায় জ্বলে উঠবে হাজার বাতি। আমাকে তখন আর কারোর কোথাও মনে পড়বেনা হয়তো, সে না পড়ুক, আমি কিন্তু দুচোখ ভরে দেখবো ওই হাজার আলোর রোশনাই। আর মনে মনে বলবো "প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে , মোরে আরো আরো দাও প্রাণ। "




No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...