Sunday, 29 April 2018

কনে দেখা আলো

বারান্দায় বেরিয়েই দেখলাম, একটা অদ্ভুত হলদে রঙের আলো চারপাশ টাকে কেমন করে যেন মুড়ে রেখেছে। শুনেছি এই আলোটাকে বলে কনে দেখা আলো। তার সাথে একটা হালকা শিরশিরানি হালকা হাওয়া দূরে কোথাও বৃষ্টির খবর বয়ে নিয়ে এলো। এখানের গরম হলকা সেই ভিজে হাওয়া টাকে যেন পরম আদরে সর্বাঙ্গে গায়ে মেখে নিয়ে কেমন এক স্বস্তি আর শান্তির নিশ্বাস ফেললো। 

স্বস্তি, শান্তি, বিশ্বাস, নির্ভরতা ---আমার খুব প্রিয় আর কাছের কিছু শব্দ। আমাদের সবাইকেই কখনো কখনো চলার রাস্তায় হোঁচট খেতে হয়, তখন এই শব্দ গুলো, এই শব্দ গুলোকে আঁকড়ে ধরে আবার আমরা পথ চলতে পারি। আমার বাবা একদিন বলেছিলো, "মান্তু, মনের সঙ্গে কখনো তঞ্চকতা করবিনা, খুব ভালো করে বোঝার চেষ্টা করবি, আমাদের মনটা কিসে ভালো থাকে, কিসে শান্তিতে থাকে, কিসে স্বস্তিতে থাকে। খুশি বা আনন্দে হয়তো এ মন কে অনেক কিছুই রাখতে পারে, কিন্তু দেখিস ভালো করে বুঝে দেখিস, ক্ষণিকের আনন্দ নয়, চিরকালীন শান্তি। এ মন শান্তি পায় কোথায় দাঁড়িয়ে, কোথায় নির্ভরতার আশ্রয় পায় , সেই জায়গাটা দেখিস চিনতে কখনো ভুল করিসনা।" পরে এই কথার প্রতিধ্বনি শুনেছিলাম রামকৃষ্ণের কথামৃতে, মনি ভৌমিকের বিবেকানন্দ ব্যাখ্যায় বা সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় এর গল্পের বিভিন্ন ছত্রে ছত্রে। আমার শান্তির জায়গাটা চিরকালই ওই মানুষটা যে আমাকে হাত ধরে হাঁটা শিখিয়েছে, প্রত্যেক পদক্ষেপে যার কথা আমাকে দিশা দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়, ধ্রুবতারার মতো যে কথা, বাণী হয়ে আমাকে পথ দেখায়। সেই মানুষটা।  আমার বাবা। আর ওই ঠাকুরের সিংহাসন। সন্ধ্যারতির ধূপের ধোঁয়ায়, প্রদীপের আলোতে যখন অজান্তে আমার চোখের জলে গাল ভিজে যায়, তখন বুঝি, সমস্ত গ্লানি ওই জলের মধ্যে দিয়ে ধুয়ে মুছে গেলো। 

আজ এই গোধূলি বেলার মনকেমন করা কনে দেখা আলোর সাথে দিবাবসানের স্নিগ্ধ স্বস্তি যখন মিশে গিয়ে আমাকে আমার বাবার বলা ওই কথা গুলো মনে করিয়ে দিয়ে গেলো। তখন মনে হলো সারাদিনের নীরবতার বড় প্রয়োজন ছিল। হয়তো নিজের জন্যে, হয়তো অন্যের জন্যে। একদিন আমার বাবা যখন আমাকে আমার চেতনাকে গড়ার জন্যে ওই কথা গুলো বলেছিলো, তখন আমাদের কেউ একথা বোধয়  জানতোনা যে , এ কথার কি গভীর মর্ম। আজ আমার মন একথা অন্য কারোর কাছেও জিজ্ঞাসা করতে চাইছে, দেখো ছেলে, খোঁজো নিজেকে, ভুল বুঝলেও বুঝো বৈ কি আমায়, তবু খোঁজো। এ কি শুধুই মুহূর্তের আনন্দ , ক্ষণিক সুখের আকুলতা নাকি তোমার মন কোনো চির শান্তি , স্বস্তিকে খুঁজতে চায়। বসতে চায় দুদণ্ড শীতলপাটির স্নিগ্ধ ছায়ায়, গণ্ডূষ ভরে পান করতে চায় সুধা মুহূর্ত আর তারপর আবার পথ চলে। 

আসলে কি জানো , কি করি বলো, বিধাতা আমাকে হটাৎ করে সমস্ত আধুনিকতা দিয়েও পৌরাণিক করে রেখে দিয়েছে যে। আমি মুহূর্তে বাঁচা মানে বুঝি আমাদের জীবনের ছোট্ট ছোট্ট এক একটা সমস্ত মুহূর্ত এর যা কিছু ভালো, যা কিছু সুন্দর তাকে নিঃশেষে অন্তর এ গ্রহণ করে নেওয়া। ভালো থাকার সেই যে চাবিকাঠি। জীবনের সারবত্তা সেখানেই আছে লুকিয়ে। আর ওই সমস্ত মুহূর্ত তখন ই অন্তরে নেওয়া যায় যখন আমাদের মন চিরশান্তির পথে স্থির রাখে নিজেকে। আমার মুহূর্তে বাঁচা westernize রঙে রাঙিয়ে তুলতে পারলে, হয়তো এটাই বলতাম আজকের আনন্দ কালকের গ্লানির কারণ হলেও আজকের আনন্দ আজকের ই।  না পারলামনা এ কথা বলতে, এ আবার যেন সেই শেষের কবিতার অমিতের সংঘর্ষ তার চারপাশের তথাকথিত সভ্য সমাজের সঙ্গে।  
আমার মন ওই মুহূর্ত তে বাঁচেনা, কি করি বলো বীরপুরুষ মশাই, আমার মন যে প্রদীপের অনির্বাপিত শিখার মতো, সত্যি, শান্তি আর স্বস্তির পথে অনির্বান জ্বলতে চায়। আর তাই ক্ষনিকের আনন্দ নয়, চিরকালীন স্বস্তিকে খুঁজতে দেবার জন্যে এ নীরবতার তোমার জন্যে হয়তো বা আমার জন্যেও বড় দরকার ছিল। কি জানো , ওই যে তুমি বলেছিলে, আমরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকি কখন ওই শরৎ কালে মেঘের ভেলা ভাসিয়ে দুগ্গা মা, চারদিনের জন্যে আমাদের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়ে যাবে, এটা জেনেও যে চারদিন পরে বিসর্জন, কিন্তু জানোকি, ওই চারদিন পরের বিসর্জন আমরা হাসিমুখে দিতে পারি এই কারণেই কারণ আমাদের মনের ভেতরে থাকে আবার পরের বছরের ওই চারদিনের জন্যে ফিরে পাওয়ার আশা। আর মনের ভেতরে এই চারদিনের স্মৃতি আগামীর চারদিনের আশার সাথে যেমন ই এক হয়ে যায়, অমনি ই দুঃখ ভুলে স্বস্তি খুঁজে পায় এ মন। সেই কোন ছোট থেকে এই সনাতন ভাবনার সাথে এক হয়ে আমরা বড় হয়েছি, পারিনি বিসর্জন দিতে সেই বোধ কে। তাই আমার জীবন রাস্তায় চলতে চলতে গড়ে ওঠা ছোট বড় সমস্ত সম্পর্ক আমার কাছে যে বড় সুন্দর, মধুর হয়ে তার নিজের নিজের জায়গা আলোকিতো করছে। আমি ভাবতে এখনো পারিনি যে আজ যার খারাপ থাকা আমাকে ভাবালো, কাল তাকে শুধুই চলার পথের মুহূর্তের অভ্যেস বলে ফেলে দেব। আর তাইতো, দিনকাল সময় পেরিয়ে ওই চিরন্তন বোধ এর হাত ধরে, হটাৎ করে তোমার পাশে এসে দাড়াঁতে দ্বিধা বোধ হয়নি। আর তাই বোধয় ওই চিরকালীন শান্তির ছায়ার খোঁজে তোমায় সাথ দিতে ইচ্ছে করে। 
আর তাই এই নীরবতা। যার হয়তো বড় প্রয়োজন ছিল। 

অনেক সময় আমরা নিজেরা শুধু মাত্র কিছু অভ্যেস এর বশে, কিছুজিনিস কে জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে ফেলি। ভাবি বোধয় এ ছাড়া আমি কিছুতেই থাকতে পারবোইনা , কিন্তু যখন ই তা আমাদের থেকে চলে যায়, তখন দেখি আমরা এতটুকু তাকে miss না করেই , তাকে ছাড়াই খুব ভালো ভাবে দিন কাটিয়ে নিতে পারি। এই হলো আমাদের মন। এই মন কে বোঝার জন্যে তাই, কিছুটা নীরবতা, কিছুটা সময়, কিছুটা space খুব দরকার হয়ে পরে। 
আবার জানো আগের ঘটনার উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে, যাকে শুধু মাত্রই অভ্যেস এর বশে আমরা অবহেলায় ভাবি, এ আর এমনকি , জীবন একে ছাড়াও চলে যাবে, হটাৎ তার না থাকা সমস্ত পৃথিবীটা কে যেন শূন্য করে দিয়ে যায়। অকারণ কান্নায় বুকের ভেতরে ঢেউ ওঠে। মনে হয় সব কিছু থেকেও আমার এই চাঁদনী রাতের কোনো মানেই নেই, বেলী র সুগন্ধ আজ ব্যর্থ আক্ষেপে কেঁপে উঠছে। সব কিছু থেকেও আমার মনের তন্ত্রীতে কোনো সুর ই যেন বেজে উঠছেনা। এও আমাদের মন। এই যে একজনের অভাবে সবকিছু শূন্য হয়ে যাওয়া, একে বোঝাও খুব দরকার। কিছুটা নীরবতা , সময় এই একজন মানুষের আর একজনের জীবনে যে অনিস্বীকার প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমরা অনেক সময় ই বুঝতেই পারিনা, তাকে বুঝিয়ে দিয়ে যায়।
আর এই নিরাবতা আর একটা খুব মূল্যবান জিনিস আমাদের বুঝতে শেখায়, নিজেকে। নিজে কি চাই, কেন চাই আর কাউকে সত্যি ই পাশে চাই কিনা, একথা বুঝিয়ে যেমন দেয় ই। তেমন ই খুব গভীর ভাবে আমাদেরকে বোধহয় আমাদের শান্তির, ওই স্বস্তির জায়গাটা দেখিয়ে দিয়ে যায়। 
অদ্ভুত আমাদের মন , খুব সুন্দরও। আর আমাদের জীবন, না তাতে কোনো জটিলতা নেই। সরল শাদা সুন্দর একটা পথ। আর এই সুন্দর পৃথিবীতে, অনেক কথা, কত হাসি, ফুলের রাশি আর অপরিমিত ভালোবাসা আমাদেরকে চেনায় আমাদের সংসার এর সারকথা। সংসার অন্তঃসার শূন্য নয়। সংসার বড় সুন্দর, গভীর , অনাবিল। আর আমাদের চারপাশের সবাইকে নিয়ে, ভালোয় মন্দে, সবকিছুকে নিয়ে  সৌন্দর্য্য এ ফলে ফুলে ভরে ওঠে এ সংসার।

গোধূলীর আলো ক্ষীণ হয়ে আসছে, সন্ধ্যার আগমনকে বরণ করে নেবার সময় হলো, যাই আমার্ সন্ধ্যার শান্তি কে আবাহন করার প্রস্তুতি নি। আমার ঘরের কোণে যে দ্বীপ জ্বলে উঠবে, আমি জানি তা তোমার মনের সকল অভিমান কে ও নিঃশেষে দূর করতে পারবে। আর ওই যে  " সন্ধ্যার প্রদীপ আর ধুপ। একজন আলো দেয় আর একজন ছড়ায় মোহময়ী সুবাস" সেই সুবাসে চারিদিক আমোদিত হয়ে উঠুক, আর ওই আলোতে যেন খুঁজে পাওয়া যায় সেই স্বস্তির নির্ভরতা, শান্তির আশ্রয়কে। 

খুব ভেতরথেকে একটা গান মনে উঠে আসছে , 

তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ॥ 
তবু প্রাণ নিত্যধারা, হাসে সূর্য চন্দ্র তারা,. বসন্ত নিকুঞ্জে আসে বিচিত্র রাগে ॥ 
তরঙ্গ মিলায়ে যায় তরঙ্গ উঠে,. কুসুম ঝরিয়া পড়ে কুসুম ফুটে। 
নাহি ক্ষয়নাহি শেষনাহি নাহি দৈন্যলেশ--. সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে 






Saturday, 28 April 2018

অপেক্ষা

আজ এখানেও মেঘ আর চাঁদ লুকোচুরি খেলছে। নামনা জানা ফুলের গন্ধে চেতনা হারিয়ে যেতে চাইছে। এই চাঁদনী রাত, এই অর্ধ লুপ্ত চেতনা থেকে জাগ্রত হতে হতে, আবার মনে এলো দুই পথিকের গল্প। শুনবে? আমার সে পথিকের কথা? এক শীতের অলস দুপুর, এক শিশু চোখের বেদনাকে অনুভব করতে গিয়ে হটাৎ খুঁজে পেয়েছিলো এক পথিকের শ্রান্তিকে। তারপর সে শ্রান্তি মুছে দিয়ে পথ এক অনুপম বন্ধনহীন গ্রন্থিতে দুই পথিক কে বেঁধে ফেললো। পথের সেই ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছিল শীতের পাতাঝরা, বসন্তের মাতাল সৌন্দর্য্য, চৈত্রের চাঁদ, বৈশাখের বর্ষবরণ, নীল ঘন অপরাজিতা, চিকন সবুজ কচি পাতা আর আরো যে কত কিছু তা কে জানে। আর ওই পাতাঝরার সময় থেকে বসন্তের নবীন আকুলতাকে সঙ্গে নিয়ে আজকের এই রৌদ্র তপ্ত ধরণীর সাথে পা ফেলতে গিয়ে যেন হটাৎ ভয় হলো খুব , মনে হলো একদিন যাকে ছায়া দেবে বলে, আলো দেখাবে বলে, হাতে হাত রেখে একসাথে পা মিলিয়ে শীত এর রুক্ষতাকে দূরে সরিয়ে রেখে বসন্তের নতুনকে আলিঙ্গন করে তাকে যত্ন করে আগলে রেখেছে, কিন্তু এমন তো নয়, তাকে কোনো মিথ্যা স্বপ্নে, মিথ্যা বাঁধনে অচেতন করে ফেলেছে? এমন তো নয়, এই ভালো থাকার ঘোর তাকে সূরার নেশার মতো ধ্বংসের পথে এগিয়ে দিচ্ছে।  ভালো থাকার ঘোর কি ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে? বারবার এই রাতের নীরব অথচ মাতাল সৌন্দর্য্যের কাছে, আমার ওই ঠাকুরের কাছে, সেই এক ই প্রশ্ন করে চলেছি। উত্তর দাও, উত্তর দাও। জানিনা কখন এর উত্তর পাবো, তবু অপেক্ষা করবো। অপেক্ষা করবো আমার সে প্রশ্নের সঠিক উত্তরের। অপেক্ষা করবো সঠিক দিশার। অপেক্ষা করবো একটা সতেজ উজ্জ্বল ভোরের। আর অপেক্ষা করবো আমার সেই বীরপুরুষ, সেই পথিক , সে যেন তার সমস্ত অচেতনতা কাটিয়ে আলোর পথ খুঁজে পায়। কারোর ওপর নির্ভর করে নয়, তার সেই চেতনাদীপ্ত পথ চলার সাক্ষী হবার অপেক্ষা করবো। না না ধ্বংস নয়। সে কখনো যেন হেরে না যায়। সেই জয়ী বীরপুরুষকে দুচোখ ভোরে দেখার অপেক্ষায় থাকবো। 

Tuesday, 24 April 2018

মিষ্টি পৃথিবী

মাসটা বৈশাখ, কিন্তু জানিনা কি কারণে সেই প্রচন্ড দাবদাহ এখনো শুরু হয়নি এখানে। বসন্তের বাতাস যেন কোনো এক বিলম্বিত লয় এ কোকিলের কুহুতানে, কাঞ্চনের স্নিগ্ধতায়, চাঁপার শুভ্রতায় নিজেকে উজাড় করে আটকে রেখে দিয়েছে আমাদের চারপাশ টাতে।

গোধূলী বেলায় ল্যাব থেকে এমনি ই বেরিয়েছিলাম, একটু হেঁটে ফিরে আসতে। হটাৎ কোকিলের কুহু আমাকে যেন কোথায় একটা নিয়ে গিয়ে ফেললো। কোন এক অজ্ঞাত কারণে আজ সারাদিন চারপাশের সমস্ত কথা যেন বড় বাহুল্য মনে হচ্ছিলো। লোকজনের ভিড় এড়িয়ে , কথা, সৌজন্য মূলক হাসি এই সব কিছু এড়িয়ে মন যেন বারবার একটু একা নিভৃতে নীরবে থাকতে চাইছিলো। মনের সেই চাওটাকে সম্মান না করে পারিনি। জোর করে কথা বলতে কিছুতেই আর পারছিলামনা। কাজ একটু হালকা হতেই তাই বেরিয়ে গিয়েছিলাম ল্যাব থেকে। আর বেরিয়েই পেলাম কোকিলের কুহু ডাক সঙ্গে নিমফুলের গন্ধ। ফুলে ফুলে সাদা হয়ে থাকা গাছটা মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে আমায় ডাকছিলো যেন। সকাল বেলাথেকে কাজের মাঝে মাঝে বারবার মনে পড়ছিলো ওই যে earth day নিয়ে কি করা যায়। দুপুর ১২ টার সময় অনেক গুলো ভাবনা কিছুটা ভালো লাগলেও মন ছুঁয়ে যেতে পারেনি। হটাৎ ওই ফুলে ফুলে ভর্তি নিমগাছ, সবুজ পাতা আর ওই হালকা তিতকুটে কিন্তু কেমন এক মনমাতানো মিষ্টি গন্ধ, একটা খুব মিষ্টি ছবি আর একটা লাইন আমার মনে এনে দিলো "life is still sweet in bitter taste"..নিজের অজ্ঞাতেই লাইন টা যে আমার মুখে হাসি এনে দিয়েছিলো, তা বুঝলাম পাশ দিয়ে যেতে যেতে চেনা একজনএর উক্তিতে, বললো গাছের তলায় একা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছি, ব্যাপারটা কি?লজ্জা পেয়ে তারতারি গাছের নিচে থেকে চলে এলাম। ছবিটা নিজের মনেই রাখলাম। ওই গাছটাই গ্রীষ্মের প্রচন্ড রোদে উজ্জ্বল আকাশটাকে সঙ্গে নিয়ে আমাকে এই পৃথিবীকে প্রকাশ করার জন্যে খুব মিষ্টি এক ভাবনা আর ছবি আমার মনে এনে দিয়ে গেলো। তবে এই প্রথম ভাবনাকে বাঁধ দিলাম। অনেক বার ভাবছিলাম, খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার ওই ছবি, ওই ভাবনা কোথাও পৌঁছে দিতে। কিন্তু জানিনা কেন, মনে হচ্ছিলো থাক, সব ছবি, সব সুন্দর, সব কথা কি ভাগ করে নেওয়া যায়..না কি তা উচিত।

ল্যাব এ ফিরে গেছিলাম। কাজের থেকে বড় আর কিছু বোধয় হয়না, যা মন কে স্থির রাখতে পারে। গত কালের রাত থেকে আজ সারাদিনে চলা এ মনের উত্তালতা আমি প্রকাশ করতে পারবোনা, তবে সমস্ত কিছুর মাঝে এক অন্য অনুভব আমাকে আজ বিস্মিত করছিলো। হয়তো সেই বিষ্ময় থেকে একটু অস্থিরতা এসেছিলো যা আমায় খুব এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছিলো। আসলে কোনোদিন নিজেকে নিজের মনের কথাকে কোথাও প্রকাশ করতে পারিনি। মনে জানতাম, আমার নীরবতার ভাষা বোঝার সাধ্য কারোর নেই। এ বোধয় শুধুই আমার আপনার। আজ দেখলাম, আমার ওই নীরবতার ভাষাও কেউ পড়তে পারে, শত ভাবে নিজেকে লুকোনোর চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েও, হাজার হাজার kiometer এর ব্যবধান তুচ্ছ করেও ওই নীরবতার অন্তর্নিহিত অর্থ বোঝার মতো ক্ষমতাও সত্যি কারোর আছে। সামনে থাকার দরকার হয়না, মুখের প্রতিচ্ছবি দেখার দরকার হয়না, গলার স্বর শোনার দরকার হয়না, তবু নীরবতার ভাষা পড়া যায়। আমার সেই বিস্ময় আরো বেড়ে গেলো যখন দেখলাম, আমার ওই যে পৃথিবীকে খোঁজার প্রচেষ্টা, ...যদিও কোনো কাজে লাগলনা, তবুও সে প্রচেষ্টা ওই নিস্তব্ধতা পড়তে পড়ার মতোই এটাও কারোর নজরের বাইরে ছিলোনা। আর শুধু তাই নয়, ওই যে বলছিলাম, একটা ছবি তৈরি হয়েছিল মনে, - দেখলাম তার খুব কাছাকাছি একদম হয়তো এক নয়, তবু ভীষণ মিষ্টি খুব আদুরে আদুরে উজ্জ্বল চোখের আর ছোট্ট ছোট্ট মেঘের জুতো পায়ে, মাথায় লতা পাতা ফুলের মুকুট পরা মিষ্টি একটা পৃথিবী, যেটা দেখেই এক নিমেষে আমার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো, সারাদিনে নিজের জন্যে রচিত অজস্র বাধা নিষেধের বেড়া এক ঝটকায় ভেঙে গেলো। এমনকি ভুলে গেলাম নিজের খুঁজে রাখা, ভেবে রাখা ভাবনা গুলোর না কাজে লাগা, শুধু মনে হলো, কি করে হলো, কি করে হলো। ..এই ছবিটাই, এই রকম এ কিছু যা ছিল আমার মনে তা কোথা থেকে কি করে সামনে এলো। একটা ভীষণ এক সন্তুষ্টি এলো মনে, মনে হলো, ওই মিষ্টি পৃথিবীটা রচনাতে যেন আমারও অংশ আছে। অথচ অবাক ব্যাপার আমি যখন খুঁজছিলাম, হয়তো তার আগেই বা সেই সময় এই এর রচনা হয়ে গেছে , তবু কেন জানিনা, একবারও মনে হলোনা যে আমার খোঁজা টা কাজে লাগলোনা, বরং মনে হলো, একসাথে কিভাবে এক ভাবনাতে যেন ওই মিষ্টি পৃথিবী সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

একটু আগে ল্যাব থেকে বেরোবার সময় দেখলাম "চোদ্দ টা তিথির খন্ডতা" বোধয় পূর্ণতা পেতে আর বেশি বাকি নেই। মৃদু একটা হাওয়া আসতে করে আমায় বলে গেল, কথা নয়, কথা নয়। মুগ্ধ হয়ে যাও। মুগ্ধতায় ছেড়ে দাও নিজেকে। আর পারলামনা। মনে হলো, ওই চাঁদ, এই আকাশ, নিমফুলের গন্ধ, শ্বেত শুভ্র চাঁপা সব কিছু যেন আমাকে বলে দিচ্ছে, "তুমি ভুল ছিলে , তুমিতো কখনো সুন্দরকে ভাগ করতে অন্য কিছু ভাবোনি, আজ কেন ভাবছো?"
মনে হলো, সব কিছুর সব ভাবনা এক হয়ে মিশে গিয়ে ঠিক যেন এই জ্যোৎস্না রাতের সাথে আগামীর শান্ত সবুজ সকাল  এক হয়ে, স্নিগ্ধ হয়ে আমার দরজায় এসে দাঁড়ালো। দুহাত বাড়িয়ে তাকে কাছে না ডেকে কি ফেরানো যায়।
আর ধরে রাখলামনা নিজেকে, ওই সুন্দরের মধ্যে লীন হয়ে যেতে যেতে বুঝলাম, সত্যি ই আমি ভুল ছিলাম, beauty demands naturality, সুন্দরতার মধ্যে দ্বিধা রাখতে নেই, ভাবনা আনতে নেই। যা স্বাভাবিক, যা সত্যি যা অকপটে মনে ভেসে আসে, যা অকপটে ঠোঁটে আসে, তাই সুন্দর। আর এই সবকিছু নিয়ে আমাদের এই পৃথিবীটা সুন্দর। স্বপ্নের মতো। মিষ্টি পৃথিবী।

Wednesday, 18 April 2018

আবদার

একটু আগে সন্ধে নামলো আমাদের পাহাড়তলীর এই ছোট্ট জায়গাটাতে। ছাদে ছিলাম। নেমে আসতে আসতে মনে পরে গেল এবারের বর্ষবরণের দিনের এক অভিনব জোর এর কথা। জোর? হ্যাঁ , জোর।  আবদার, আদোর আর ভালোবাসা থেকে যে জোর আসে সেই মিষ্টি জোর। কি সহজ, কি সুন্দর আর খুব অভিনব ও বটে। 

অসমবয়সী আমাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। ছোট্ট মানুষটাকে নিয়ে বিব্রত মা, বাবা ভেবে পাচ্ছিলোনা মেয়েকে কিভাবে মানুষ করবে। দিল্লির মতো জায়গা, মেয়ে বুঝি আর মানুষ হলোইনা। যথারীতি যা হয়, দুঃখ দুশ্চিন্তা বকুনি হয়ে ঝরে পরে ওই ছোট্ট প্রাণের উপরেই। এমন এক দিনে , মা এর বকুনি থেকে বাঁচিয়ে , তার তিস্তা কাকিমা, ভুলিয়ে ভুলিয়ে খাবার খাওয়ায়। ছোট্ট মানুষ, দুঃখ ভুলতে আর কতক্ষন লাগে। সেই শুরু আমাদের সখ্যতার। তারপর একদিন বৌদি ফোন এ বললো "কালকে জ্বর এর ঘোরে শুধু কাকিমা কাকিমা বলে ডেকেছে। কিন্তু কিন্তু করে বললো "পারবে গো এই উইকেন্ড এ একবার আসতে ?" জ্বর হয়েছে সোমবার আর আমি যাবো নেক্সট উইকেন্ড এ? এত কাজ থাকতে পারে আমার? সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছিলাম। সখ্যতার সেই দ্বিতীয় ধাপ। সেই ধাপ এ শুধু বোধয় ছিল আমার অবাক হওয়ার পালা। ঘটনার পর ঘটনা। শুধু ভাবতাম আমার জন্যে এতো ভালোবাসা ওই ছোট্ট প্রাণের ভিতরে? এলো কোথা থেকে? ওর ঠাকুমা একদিন বললো "খুব যে কাকিমা কাকিমা, মনে রাখবি? বড় হয়ে কাকিমাকে?"  

কথাটা আমার হটাৎ খুব মনখারাপ করে দিয়েছিলো। পরে কি হবে, কেউ মনে রাখবে কিনা, সেই জন্যে আজকের ভালোবাসা অস্বীকার করবো ? পরে  ভুলে গেলেও, আজকের ওই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডাকা টা তো আর মিথ্যে হয়ে যাবেনা।...আমাদের আলাপ চলতে থাকলো, গল্পে, কবিতায়, ভয়েস মেসেজ, আঁকার খাতায়, চোর পুলিশ খেলায় সবেতে। 
দেখতে দেখতে দুবছর কেটে গেলো। সেই ছোট্ট মেয়ের মা বাবার চোখ মুখ আর বিব্রত হয়না। না সে ওরা যাই বলুক, আমি জানি এর জন্যে অন্য কিছু নয়। এর জন্যে ওর আধার এ দায়ী। একজন শিশু তো ভগবানের অংশ নিয়ে আসে, সে কি কখনো খারাপ হতে পারে?

এই দুবছরে কাকিমার ওপর তার জন্মেছে অশেষ অধিকার। আর সেই অধিকার বোধের বহিঃপ্রকাশ দেখলাম এই বর্ষবরণের দিনে। খুব কষ্ট ও হচ্ছিল ওর শিশুমনে হয়তো বা অজান্তে অবহেলার আঘাত দিয়ে ফেলেছি। ওর সেই খাবার ছেড়ে আনতে আসাটাতে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলামনা নিজেকে। সঙ্গে সঙ্গে এও বুঝলাম, আমাদের সোনামনি দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছে। সে এখন জোর দিয়ে বলতে পারে, "আমার খিদে পায়নিতো " " তোমরা চলো আগে". "এই শাড়িটাই পড়তে হবে তোমায়। " "টিপ্ পর ". "চুল বাঁধছ কেন ? একদম চুল বাঁধবেনা কিন্তু।" আর সেদিন , ওর সেই শিশুমনের আবদার মেটাতে মেটাতে হটাৎ এক অন্য মনের এক ই আবদার বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো। কিভাবে হয়। টিপ্ পড়তে গিয়ে, সেই কথার প্রতিধ্বনি ভেসে এসে ভীষণ অন্যভাবে আমাকে অন্যমনস্ক করে দিয়েছিলো কিছুক্ষনের জন্যে। তার একটু আগেই পুজো করেছিলাম। ওই ধূপের ধোঁয়া, ফুলের গন্ধের সাথে মিশে কেন কি জানি এক অদ্ভুত কথা আমার মনে এনে দিলো। চমকে গেলাম। কেমন যেন মনে হলো, ওই শিশুর দাবির সাথে ভগবানের এ কি ইচ্ছা , এ কি ছল আমাকে কি আমার ই অজান্তে অন্য কোনো আবদার মেটাল। না কি এ সব ই co -incidence ? 







Tuesday, 10 April 2018

ফিরে এসো

অনেক দূর থেকে ভেসে আসা এক শিশুমনের কান্না আমার সবকিছু কেমন ঝাপসা করে দিলো। খুব মনে পরে যাচ্ছে অনেকদিন আগের কোনো একটা ছোটো মেয়ের কথা, যার বাবার আসতে একটু দেরি হলেই তার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠতো। খুব ভয় করতো। মনে আছে দুহাত জড়ো করে ঠাকুরকে বলতো ঠাকুর আমার বাবা যেন তাড়াতাড়ি ফিরে আসে। যেন এখনই চলে আসে। লুকিয়ে লুকিয়ে খাতার পাতায় ঠাকুরকে লিখতো ওই এক ই কথা। লিখতে লিখতে কতদিন চোখের জলে পাতা ভিজে গ্যাছে , এই আজকের মতোই, আজ ও যেমন ল্যাপটপের কীবোর্ড টা ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে শব্দ বারবার। ঠিক তেমন ই, সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটার চোখের জল দেখে, তার বাবাও তাকে দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে বলতো, "ভুল হয়ে গেছে মা, আর কখনো হবেনা। দেখো আর কখনো আমি দেরি করবোনা। " মা আর দিদি বলতো উফ এই মেয়েকে নিয়ে আমরা আর পারিনা যেন। কারোর কোনো কথাই শোনেনা।
আজ খুব মনে পড়ছে , আজ ও খুব কাঁদছি আমি বাবা, কৈ তুমি তো আসছোনা। সেইযে আজ থেকে সাত বছর আগে, তখন ও কত করে ঠাকুরকে কে বলেছিলাম, কৈ ঠাকুর শুনলোনাতো, ফিরে এলেনাতো তুমি। জানতেনা তোমার মান্তু কাঁদবে?  তোমার আদরের 'বামি', তোমার মান্তুর কাছে ফিরে এলেনাতো? সবসময় যাকে নিয়ে তুমি চিন্তা করতে, সেই যে বিএসসি এর সময় , msc এর সময় কত কাঁদছিলে তোমরা দুজনে, একে অপরকে ছেড়ে থাকতে হবে বলে কত কাঁদছিলে, মা কত বকলো আমাদের, বললো হ্যাঁ , মেয়ে তো শ্বশুর বাড়ি চলে যাচ্ছে। আজ তোমার মেয়ে সত্যি শ্বশুর বাড়ি গেছে বাবা। সবাইকে নিয়ে সে সাজিয়ে গুছিয়ে সংসার করছে। তুমি যেমন চেয়েছিলে, সেরকম তাকে সবাই খুব ভালোবাসে। আর তুমি যেমন চেয়েছিলে, সেরকম করে সে পড়াশুনো করছে। এগিয়ে চলছে। আর ওই যে সেই শব্দটা? বজ্রকঠোর কুসুমকোমল। ?ওই শব্দ টাও সে মনে রেখেছে বাবা। কোনোরকম চারিত্রিক শৈথিল্য সে বরদাস্ত করবেনা , সে নড়ে যাবেনা দেখো। শুধু রোজ, প্রতিদিন সে তোমাকে খোঁজে, ওই যে তুমি যেভাবে কম্বল বুড়ো সেজে তোমার মান্তুকে লুকিয়ে ফেলতে আর সবাই খুঁজতো তারপর তোমার মান্তু খিলখিলিয়ে হাসতো , আর তুমি তোমার মান্তুর ওই হাসিটা দেখার জন্যে কত কাণ্ডই না করতে। আবার তোমার মান্তুকে লুকিয়ে দাওনা ঐভাবে। জানো , কত কথা আছে তোমার সাথে, কত গল্প, কত অভিজ্ঞাতা।

তুমি সবসময় বলতে "কবে যে এই পাগলিটা বড় হবে", তুমি জানো , তোমার সেই মান্তু কত বড় হয়ে গেছে। সে তার জীবনকে সাজিয়েছে তোমার মতন করে। যেমন তুমি চেয়েছিলে। ভোরে ওঠা, সূর্য্য প্রণাম। যোগ। ঠাকুর পুজো। পড়াশুনা। কাজ। দিনশেষে নিজের সাথে কথা বলা। ব্যাডমিন্টন। হাঁটা। প্রকৃতির মধ্যে, বই এর মধ্যে হারিয়ে যাওয়া। সবাইকে ভালোবাসা। জানো বাবা, তুমি চলে যাবার পরে , তোমার সমস্ত চেতনা, সমস্ত বোধ দিয়ে আমি পাগলের মতো এই সবকিছুকে আঁকড়ে ধরলাম। আর তোমার চেতনার মধ্যে দিয়ে তোমাকে খুঁজে পেলাম আসতে আসতে। তোমার মান্তু তোমাকে ছাড়া নিজেকে স্থির করতে পারলো। অবশ্য না, ছাড়া তো নয়। তোমাকে নিয়েই সে স্থির হলো। জানো বাবা, আমি রোজ, সবসময় তোমার কথা ভাবি, কিন্তু নিজেকে দিনা তোমাকে miss  করতে। সবকিছুর মধ্যে থেকে, সবার মধ্যে থেকে তোমাকে খুঁজে পাই। শত আঘাতেও হাসতে পারি। তোমার হাসি মুখটা মনে পরে। মনে পরে তোমার মান্তুকে তুমি সবসময় হাসিখুশি দেখতে চাইতে। আমি হাসি। আর জানো , সত্যি ই কোনো কষ্ট আমাকে বেশিক্ষন কষ্টে থাকতেই দেয়না , কোথায় জানো ভালোলাগার স্রোতে সব ভেসে যায়। শুধু ভালোলাগা পরে থাকে।

তবু মাঝেমাঝে খুব মনে হয়, কেন তুমি নেই , কেন সেই দিনগুলো ফিরে আসেনা, কেন তুমি সেদিন চলে গেলে , কেন ঠাকুর সেই ছোট্ট বেলার মতো করে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে গেলোনা। আজকের ওই ছোট্ট মেয়েটার চাপা কষ্টটা সেদিনের সেই ছোট মেয়েটার উথাল পাতাল মন টার এক ই অনুভূতি কে আবার ফিরিয়ে দিয়ে গেল। ওই কষ্টটা ওই কান্না টা খুব চেনা আমার। সেই কষ্টটা আজ ও এক ই ভাবে সব কিছু শূন্যতায় ভরিয়ে দিয়ে যায়। আর এক ই ভাবে বলে, তারতারি এসো। তাড়াতাড়ি এসো। ফিরে এসো।

তুমি ভালো থেকো। খুব ভালো থেকো বাবা। তোমার মান্তু কষ্টে নেই। সে ভালো আছে। তুমি ভালো থেকো।




বৃষ্টির শব্দ

আজ বাতাসে কেমন একটা মন কেমন করা ভিজে ভিজে গন্ধ। গাছের পাতা গুলো ভীষণ সবুজ হয়ে  আছে। বসন্তের নরম স্নিগ্ধ সবুজ সতেজতা, তার ওপরে আজকের বৃষ্টিস্নান, চারদিক যেন শিশু চোখের বিষ্ময় নিয়ে অথবা মাতৃস্নেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। দুটো উপমাই কিজানি কেন একসাথে মনে এলো, আসলে ওই দুটো উপমাই যেন কোথায় এক হয়ে মিশে যায়। ওই দুই সম্পর্কের মধ্যে থাকে স্বার্থহীন ভালোবাসা। তারমধ্যে একজন চায় তার সর্বস্ব সঁপে নিশ্চিন্ত নির্ভরতা আর একজন চায় তার সর্বস্ব দিয়ে ওই শিশু প্রাণ কে আগলে রাখা। সমর্পন আর গ্রহণ। আচ্ছা সব সম্পর্কের ই কি এই একই  রকমের ই কিছু সমীকরণ থাকে ? সমর্পন কি তখন ই করা যায়, যখন সম্পূর্ণ গ্রহণ থাকে। বা উল্টোটা? আবার দুটো থেকেও যদি দুই তন্ত্রী এক ই সুরে এক ই ভাবে স্পন্দিত না হয়, তবে কি সে গ্রহণ বা সমর্পন কোনোটাই সম্পূর্ণ হয়না? জানিনা। সমস্ত ভাবনা যেন স্তব্ধ হয়ে শুধু বাইরের বৃষ্টির শব্দ শোনার চেষ্টা করছে। 
বাইরে এখুনি একটা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে বৃষ্টি। আর ওই বৃষ্টির শব্দ আমাকে বারবার পৌঁছে দিচ্ছে, আমার মনের মনিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত একটা বৃষ্টির রাতের ছবির সাথে। জানিনা সে ছবি কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে কিনা, তবু খুব ইচ্ছে করছে একটা ঐরকম গভীর রাত পেতে। যেখানে এই আজকের মতোই থাকবে ঝোড়ো হাওয়ার শনশন। বারান্দার আলোটা বারবার কেঁপে কেঁপে দুলে দুলে উঠে রাত টাকে আরো একটু রোমাঞ্চিত করে যাবে। বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর অন্য যেকোনো জাগতিক শব্দ যেখানে বাহুল্য হয়ে যাবে। ঘরের ভেতরে জ্বলুক নাহয় কেঁপে কেঁপে ওঠা মোম এর আলো, তারপর একসময় নিভে যাক হটাৎ। অন্ধকার এর মধ্যে থেকে মেঘের গর্জনের মধ্যে নিরাপদ নির্ভরতার উষ্ণতা যদি খুঁজে পাওয়া যায়, যাকনা। আর জুঁই ফুল? আমার বৃষ্টির রাতে, জুঁই ফুলের একটু সুবাস থাকবেনা? তা কি হয় নাকি? জুঁই ফুলের সুবাস চারিদিকে আরো একটু বেশি পাগলামি ই যদি ছড়িয়ে দিতে চায়,দিকনা। "ডুবি যদি তো ডুবিনা কেন , ডুবুক তরী , ডুবুক সব ই।"


নাহ, স্বপ্ন এবারে বড্ডো বেশি ই বাড়াবাড়ি করছে। এখুনি বাঁধ দেওয়ার দরকার বড়। বাঁধ দেওয়া হলো। শেষের কবিতার ঢঙে বলতে ইচ্ছে করছে, বেঁচে থাক আমার বৃষ্টির রাত, বেঁচে থাকুক আমার জুঁই ফুল। মেঘের গর্জন থেকে আগলানো নিরাপদ উষ্ণতা কি আর সবসময় উষ্ণতা দিতে পারে।....তার থেকে বরং ফিরে যাই চলো বৃষ্টির সন্ধেতে। সেখানে রাতের রোমাঞ্চকতা নাই থাকুক, যদি চাদর মুড়ি দিয়ে, মোমবাতির আলোতে বাবা মার্ কোল ঘেঁষে বসে মুড়ি, বেগুনি, বা তেলেভাজা খেতে খেতে ভুতের গল্প?..না, ভুতের গল্পে আমার বড় ভয়। ..তাই ভুতের গল্প - বাদ। প্রিয়, কাছের মানুষ সঙ্গে থাকলে যেকোনো সময়, সকাল সন্ধ্যে, রাত....হয়ে যায় তরতাজা, সতেজ, প্রাণবন্ত। .. 

বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। জানি কালকে একটা ঝকঝকে সকাল দিয়েই শুরু হবে আমার দিনের। আজকের মেঘলা সকাল আমার সারাদিন টাকে খুব মনখারাপের মোড়কে মুড়ে রেখেছিলো। কেউ জানেনা তা। কেউ বোঝেনি তা। কাউকেই বলিনি। কোনোদিন ই তো নিজের মনের কথা মুখে আনতে পারিনি, তবে আজ ই বা কিকরে তা হবে। আর আজ ও , এখনো কোনোদিন ই এই মন টাকে পুরো কেউ পড়তে পারলোনা। আচ্ছা সে যাক, কি দরকার তার, সে নিয়ে কোনো দুঃখ নেই আমার। ভালোই হয়েছে, যা হয়েছে। শুধু কেন কিজানি এই দিনের শেষেও সেই মনখারাপ এই বৃষ্টির শব্দের সাথে একেবারে মিশে যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যে থেকেই কেমন একটা নৈঃশব্দ আমাকে যেন কিরকম একটা গ্রাস করে নিচ্ছে। এই নৈশব্দ আমি ভালোবাসি। এই নৈশব্দের মধ্যে আমি বুঁদ হয়ে যাই। মিশে যাই। এক হয়ে যাই। গত কালের মতন। সেই রামকৃষ্ণ আরতির মতো। গভীর, স্থির, নীরব, নিস্তব্ধ শান্তি। চারিদিক ভীষণ ভাবে শান্ত। ভীষণ  চুপচাপ। কি অপার অসীম সুন্দর এক নৈশব্দ। আদি অনন্ত, অন্তহীন।
কেন জানিনা মনে হচ্ছে আমি কোনো একটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিছু একটা পরীক্ষা হয়তো আমাদের প্রতিদিন ই দিতে হয়।  তবে এই পরীক্ষা তে আমায় জিততে হবে। আমি বুঝতে পারছি আমার সামনে যে পথ আমায় ভীষণ ভাবে হাতছানি দিচ্ছে, সে পথে গেলে বোধয় চলবেনা আমায়। হয়তো ওই দুর্গম রাস্তাই আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। অনেকগুলো রাস্তা, তারমধ্যে একটা রাস্তা এই কদিনে হটাৎ খুব হাতছানি দিচ্ছে আমায়। বলছে আয় আয় এই রাস্তা তোকে সেখানে পৌঁছে দেবে, যেখানে তুই তোর নিজের ভাবনার , নিজের স্বপ্নের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছিস। ভয় হচ্ছে।বুঝতে পারছিনা, কোন পথ বেছে নেবো। হটাৎ এই বৃষ্টির শব্দ আমাকে কিছুদিন আগে শোনা একটা কথা বলে দিয়ে গেল, "ভয় পেওনা, আমি তোমায় হারতে দেবোনা। তুমি জিতবে। আমি জানি তুমি জিতবে। "..ভরসা পেলাম। শক্তি পেলাম। আবার সেই বোধটা বোধহয় ফিরে এলো। রাস্তা। একে অপরের হাত ধরে ভিড় রাস্তা পেরিয়ে এগিয়ে চলা। আজকের রাতের এই বৃষ্টি আমার সমস্ত গ্লানির ধুলো ধুইয়ে মুছিয়ে দিয়ে,...একপা একপা করে ভোরের আলোর দিকে পা বাড়াচ্ছে। অপেক্ষা করবো।..ভোরের। একটা সতেজ, সবুজ, নির্মল ভোর। 


Saturday, 7 April 2018

দুপুরবেলার গল্প

ছোট থেকে আমি অন্য আর পাঁচ জনের থেকে একটু একা একাই বড় হয়েছি। খুব ছোট্ট বেলাতে মনখারাপ হলেও তারপর আর কখনো সেভাবে একা লাগেনি আমার। I never felt lonely actually. বরং দুপুর মানেই আমার কাছে রং পেনসিল, আঁকার খাতা, টিনটিন, পাণ্ডব গোয়েন্দা, গুঁড়ো আমূল দুধ, ডাঁসা পেয়ারা, কোকিলের কুহু, ছাতারে পাখির ঝগড়া এই সব। অনেকদিন ওই পাখি গুলো দেখিনি, মনে আছে ওই পাখিগুলো খুব আসতো আমাদের বাড়িতে। আমি আর বাবা ওদের মুড়ি দিতাম, ভাত দিতাম। ওরা পেঁপের দানাও খেত মনে আছে। খুব কেঁচোর কেঁচোর করতো ওরা। আর আমি ও সমান তালে ওদের সাথে কথা বলতাম। একবার তো দুপুরে এত কথা বলছিলাম যে পাশের বাড়ির পিসি দেখতে চলে এসেছিলো, কেউ এসেছে ভেবে।
এখানে ছাতারে পাখি আসেনা। তবে এখানে পায়রা আসে। ওরাও আমার সঙ্গে অনেক কথা বলে। ওদের হাঁটাটা দেখলে খুব মজা লাগে আমাদের। ঠিক যেন মনে হয়, বুড়ি ঠাকুমা, পেছনে হাত মুড়ে পায়চারি করছে।
গরম কালের দুপুরের একটা আলাদা মাদকতা আছে, নিচে কি একটা নিয়ে যাচ্ছে হেঁকে হেঁকে। তবে এখানের দুপুরের সাথে ভীষণ ভাবে যুক্ত বাঁশি। বাঁশিওলা বাঁশি নিয়ে বাজিয়ে বাজিয়ে এই দুপুরে দিল্লির গলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ায়। অদ্ভুত অদ্ভুত একটা সুর। যখন যেদিন প্রথম আসি এখানে, তখন এসেই আমি অবাক হয়ে গেছিলাম। সবে শিফটিং শেষ হয়ে আমরা রেস্ট করছিলাম, এমন সময় ওই বাঁশির সুর। সেই মুহূর্তেই ওই বাঁশির সুর আমাকে আমার এই জায়গাটার সাথে একদম মায়ায় বেঁধে ফেললো। হয়তো কিছুই নয়, সাধারণ, বাচ্চা দের হরেকরকম বাঁশি নিয়ে ওই বাঁশি ওলা যায়। কিন্তু তবু নানান রকম শব্দের মধ্যে আমি অপেক্ষায় থাকি, কখন ওই বাঁশিওলা তার বাঁশিটা বাজাবে।
ছুটির দিন, অলস মধ্যাহ্নের আলোছায়া মাখা দুপুরবেলা, সঙ্গে বাঁশির সুর। মনে হয় যেন স্বপ্ন দেখছি। খুব গরমেও কিছুতেই দুপুরবেলাতে আমি এসি চালাইনা। বাইরের তপ্ত হাওয়া একটু একদিন নাহয় এলোই, ধরণী যে প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে দগ্ধ হচ্ছে, আর আবার দুহাত বাড়িয়ে আমাদের ডেকে নিচ্ছে , স্নিগ্ধ করছে। তার বেলা? আমার কেমন যেন মনে হয় , ওই রাস্তার অনেক কথা আছে, অনেক কিছু বলতে চায় সে। কি যেন একটা নেশা আছে ওই রাস্তার। যেন শুধু ওই নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতে বলে, আর হ্যাঁ আর একটা শব্দ আছে ওই রাস্তার। চরৈবেতি। এগিয়ে চলো।
আর ওই রাস্তা যেমন নেশার তৈরি করে, ঠিক তেমন ই নেশা নিয়ে আসে এই দুপুরবেলা। সামনের বারান্দা দিয়ে একটু গরম, একটু ঠান্ডা মেশানো একটা হাওয়া আসছে। রেলিং এর ছায়া পড়েছে, বারান্দায়। আর আমার এই ঘরটাতে, ওই হাওয়া, এই আলোছায়া, আধখোলা ডায়েরি র পাতা, অবিন্যস্ত হেমেন্দ্রারচনাবলী, অগোছালো এলোমেলো বেল ফুলের গন্ধ, সিলিং ফ্যান এর শব্দ, ফেরীওলার হাঁক সবকিছু যেন এক অনন্য মায়া জাল রচনা করে ভীষণ অলস করে দিচ্ছে আমায়। কালকে সন্ধে থেকে এখানে ঝড় বৃষ্টি হওয়াতে , চারিদিক খুব স্নিগ্ধ হয়ে আছে। আমার তুলসী কে খুব সুন্দর লাগছে আজ। একদম নতুন, সবুজ, সুন্দর। একটা গান আজ ঘুমথেকে উঠে থেকেই মনে পড়ছে, অনেকবার শুনলাম, তবু শুনতে ইচ্ছে করছে।...ওর ছন্দে যেন আজ আমার প্রাণ স্পন্দিত হচ্ছে।...খুব appropriate লাগছে।

                                                দহনশয়নে তপ্ত ধরণী পড়েছিল পিপাসার্তা,                      
                                                    পাঠালে তাহারে ইন্দ্রলোকের অমৃতবারির বার্তা।                 
                                                   মাটির কঠিন বাধা হল ক্ষীণ, দিকে দিকে হল দীর্ণ---              
                                                    নব-অঙ্কুর-জয়পতাকায় ধরাতল সমাকীর্ণ---                     

                                       ছিন্ন হয়েছে বন্ধন বন্দীর হে গম্ভীর।।    
হে গম্ভীর।।                            
নীল- অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় সম্বৃত অম্বর হে গম্ভীর!

বনলক্ষ্ণীর কম্পিত কায়, চঞ্চল অন্তর---
ঝঙ্কৃত তার ঝিল্লির মঞ্জীর হে গম্ভীর।।
বর্ষণগীত হল মুখরিত মেঘমন্দ্রিত ছন্দে,
কদম্ববন গভীর মগন আনন্দঘন গন্ধে---
নন্দিত তব উৎসবমন্দির হে গম্ভীর।।
দহনশয়নে তপ্ত ধরণী পড়েছিল পিপাসার্তা,
পাঠালে তাহারে ইন্দ্রলোকের অমৃতবারির বার্তা।
মাটির কঠিন বাধা হল ক্ষীণ, দিকে দিকে হল দীর্ণ---
নব-অঙ্কুর-জয়পতাকায় ধরাতল সমাকীর্ণ---

ছিন্ন হয়েছে বন্ধন বন্দীর হে গম্ভীর।।  
হে গম্ভীর।।        







Wednesday, 4 April 2018

বজ্রকঠোর কুসুমকোমল

আজকের দিন বা কোনো দিন ই আমি আলাদা করে দেখতে চাইছিনা। ভেবোনা আমি শোক করছি। আমি জানি শোক করা তুমি ঘৃণা করো। তোমার মান্তু র চোখের জল তুমি একদম পছন্দ করোনা। তাই সে কখনো কাঁদবেনা। কিন্তু তবু কি করবে সে বলো, আজ যখন তোমাকে ফুল দিলাম, ওই একরাশ গোলাপের পাপড়ির মধ্যে, রজনীগন্ধার শ্বেত শুভ্রতার মধ্যে তোমার মুখটা দেখতে পেয়ে খুব মনখারাপ হয়ে গেলো। তুমি তো জানো তোমার মান্তু , তার যখন যেটা মনে হয়, সেটাই বলে দেয়। ভাবলাম আমার চেনা, আমার সব থেকে প্রিয় মানুষটাকে আমি এভাবে দেখবো কেন। বুকের মধ্যে খুব উথাল পাথাল করে উঠছে। কত কিছু বলার ছিল, সামনে থেকে বসে কত গল্প করার ছিল, কত কিছু জানার ছিল, বোঝার ছিল। মাঝেমাঝে কত ঝড় ওঠে, সেই ঝড় থেকে সামলানোর জন্যে তোমার সান্নিধ্যের খুব অভাব বোধ করি। কিন্তু জানো এখন লিখতে লিখতে আবার আমার সেই বোধ ফিরে পেলাম। সেই শক্তি। না, তুমি মনখারাপ করোনা, তুমি তোমার মান্তু কে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলে, সেভাবেই দেখতে পাবে। তুমি জানো , তোমাকে কখনো বলা হয়নি , সেই যে class two বা three হবে, বিদ্যাসাগরের রচনা লেখার সময় তুমি একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলে, মা বলেছিলো এতো কঠিন শব্দ ও বুঝবে কি করে। তুমি বলেছিলে, বুঝবে। আর আমাকে বলেছিলে, শব্দ টা যেন আমি মনে রাখি। শব্দ টা ছিল "বজ্রাদপি কঠোর অথচ কুসুম কোমল"। জানো বাবা, স্মৃতিশক্তি টা বোধহয় genetically পেয়েছি আমি , সবাই তো তাই বলে। আজ পর্যন্ত কোনো কথাই, কোনো ঘটনাই ভুলিনি। আমার মনে আছে, ওই শব্দটা বাবা। ভুলিনি। সবসময় মনে রাখবো। আমার মনে আছে তুমি তোমার মান্তুর মধ্যে চরিত্রের ওই কাঠিন্য, ওই দৃঢ়তা দেখতে চেয়েছিলে, তার মনের সমস্ত কোমলতা বজায় রেখে। তাই বোধয় ক্লাস থ্রী থেকেই তার মনের মধ্যে এমন ভাবে গেঁথে দিয়েছিলে ওই শব্দ টা , যে আজও এই এত বছর পরেও কোনোদিন সে তার সেই কোন ছোট বেলায় পরিচয় হওয়া ওই একটা শব্দ কে ভুলতে পারেনি। বরং যখনি এই আজকের মতো, কান্না উঠে এসে গলার কাছটাতে জমা হয়ে থাকে, যখন চারিদিকে মিছেই হাতড়াতে থাকি, তখন সেই শব্দ বীজমন্ত্রের মতো আমাকে স্থির করে। সংযত করে। 

বাইরে এখন ওই যে হলুদ উজ্জ্বল হলুদ ফুলগুলো, গোলাপি আর লাল কাগজফুল গুলোর সাথে মাথা দোলাচ্ছে। বোধহয় বলছে, 
                                        "নাহি ক্ষয় , নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ -
                                          সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে। "


Sunday, 1 April 2018

চেতনা

প্রথমে ভয় হচ্ছিলো,
একটা অদ্ভুত অনুভব
সেই আগের মতো -
একটা অসম্ভব লজ্জা, একটা অদ্ভুত ভয়।
একটা কি যেন একটা
ঠিক জানিনা-
ভাবছিলাম দেখবোনা দেখবোনা ----
এই স্বপ্ন আমি দেখবোনা,
এই স্বপ্ন আমার জন্যে নয়।

তারপর ধীরে ধীরে,
সবটা পরে বুঝলাম -
সেই যে বীরপুরুষ ,
সে এখন অনেক বড় হয়েছে
কত পরিণত, বুঝদার।
এখন আর নেই তার সেই অবুঝ আবদার
"চলে আয় , চলে আয় please" -
সেই ব্যাকুলতা, অস্থিরতা কাটিয়ে ছোট্ট বীরপুরুষ
নিজেকে করেছে স্থির, শান্ত।
পরিণত।

তখন
ধীরে ধীরে সেই লেখার শুভ্রতা,
একমুঠো আবির ছড়িয়ে দিয়ে গেল,
একেবারে রাঙা করে দিলো।
আর তারপর এই প্রথম,
আমি ভয় পেলামনা।
আমি জানি,
যাকে সৃষ্টির নেশায় পায় -
সে কখনো দিকভ্রান্ত হয়না।
আর ওই যে দিশাটা খুঁজে পাওয়া
কি সুন্দর তা।
ওই দিক খুঁজে পাওয়া মানুষটার
লেখনী বলে দিচ্ছে, কত পরিণত সে,
কত পরিণত ওই লেখনী।
কত পরিণত তার বোধ,
সেখানে ঝড় ওঠে
আবার সে ঝড় আপনি ই শান্ত হয়।
অসময়ের বৃষ্টি তাকে ভিজিয়ে দিতে পারেনা।
তার স্বপ্নরচিত সত্যি দিয়ে
মনের সমস্ত সৃজনশীলতা দিয়ে, মুছে যায় সব কালিমা।
আর এই প্রথম
গ্লানি নয়, ভয় নয়,
একঝলক ঠান্ডা হওয়ার মতো
এক মিষ্টি ভালোলাগা দিলে তুমি আমায়।
শক্তি দিলে তুমি আমায়।
ওরা তোমার আপন মনের মাধুরী
তোমার গল্পের চরিত্র
আমি ওদের জানিনা।
আমি ওদের চিনবোইনা।
আমিতো শুধু বুঝলাম নিজ মনের মাধুরীতে
তুমি নিজেকে করেছ সুন্দর, করেছো স্থাপিত।
কেন জানিনা সব কিছু ছাপিয়ে আমার চোখের সামনে নিজের স্বপ্নের সঙ্গে অন্য আরো কিছু স্বপ্ন যেন একেবারে এক হয়ে মিশে গেল, কোথায় সব কিছু আলাদা হয়েও কি ভীষণ এক যেন।
ভিন্ন বিষয়, ভিন্ন সব তবু স্বপ্নের ওই রেশ টা যেন কিভাবে  একেবারে এক সুরে বাঁধা হয়ে উঠলো বেজে।

এবারে আমি ভয় পাইনি
পেলাম এক অন্যরকম অনুভব, এক তৃপ্তি ,
এক বন্ধুতার ভরসা।
এক নিশ্চিন্তের ভালোলাগা।
ঠিক যেন হাত ধরে কেউ রাস্তা পার করে দিলো।
তৃপ্তি পেলাম তোমার অনুভূতি, তোমার ভালোলাগা, তোমার স্বপ্নের
পাশে পাশে এক ই  সাথে সদা বহমান
চেতনাকে খুঁজে পেয়ে।
সেই চেতনার রঙে,
আমি ফিরে পেলাম দিনের আলোর শক্তিকে,
ভোরের স্নিগ্ধতাকে,
রাত্রির নিস্তব্ধ গভীরতাকে।
গাছের সবুজ পাতা হোলো আরো সবুজ।

আর এই প্রথম
ভয় নয়,
আমি দেখলাম আলো।
সঠিক দিশা খুঁজে পাওয়ার উজ্জ্বল বোধ
আর চেতনাদীপ্ত আলো।





ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...