একটু আগে সন্ধে নামলো আমাদের পাহাড়তলীর এই ছোট্ট জায়গাটাতে। ছাদে ছিলাম। নেমে আসতে আসতে মনে পরে গেল এবারের বর্ষবরণের দিনের এক অভিনব জোর এর কথা। জোর? হ্যাঁ , জোর। আবদার, আদোর আর ভালোবাসা থেকে যে জোর আসে সেই মিষ্টি জোর। কি সহজ, কি সুন্দর আর খুব অভিনব ও বটে।
অসমবয়সী আমাদের দুজনের পরিচয় হয়েছিল এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। ছোট্ট মানুষটাকে নিয়ে বিব্রত মা, বাবা ভেবে পাচ্ছিলোনা মেয়েকে কিভাবে মানুষ করবে। দিল্লির মতো জায়গা, মেয়ে বুঝি আর মানুষ হলোইনা। যথারীতি যা হয়, দুঃখ দুশ্চিন্তা বকুনি হয়ে ঝরে পরে ওই ছোট্ট প্রাণের উপরেই। এমন এক দিনে , মা এর বকুনি থেকে বাঁচিয়ে , তার তিস্তা কাকিমা, ভুলিয়ে ভুলিয়ে খাবার খাওয়ায়। ছোট্ট মানুষ, দুঃখ ভুলতে আর কতক্ষন লাগে। সেই শুরু আমাদের সখ্যতার। তারপর একদিন বৌদি ফোন এ বললো "কালকে জ্বর এর ঘোরে শুধু কাকিমা কাকিমা বলে ডেকেছে। কিন্তু কিন্তু করে বললো "পারবে গো এই উইকেন্ড এ একবার আসতে ?" জ্বর হয়েছে সোমবার আর আমি যাবো নেক্সট উইকেন্ড এ? এত কাজ থাকতে পারে আমার? সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছিলাম। সখ্যতার সেই দ্বিতীয় ধাপ। সেই ধাপ এ শুধু বোধয় ছিল আমার অবাক হওয়ার পালা। ঘটনার পর ঘটনা। শুধু ভাবতাম আমার জন্যে এতো ভালোবাসা ওই ছোট্ট প্রাণের ভিতরে? এলো কোথা থেকে? ওর ঠাকুমা একদিন বললো "খুব যে কাকিমা কাকিমা, মনে রাখবি? বড় হয়ে কাকিমাকে?"
কথাটা আমার হটাৎ খুব মনখারাপ করে দিয়েছিলো। পরে কি হবে, কেউ মনে রাখবে কিনা, সেই জন্যে আজকের ভালোবাসা অস্বীকার করবো ? পরে ভুলে গেলেও, আজকের ওই ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ডাকা টা তো আর মিথ্যে হয়ে যাবেনা।...আমাদের আলাপ চলতে থাকলো, গল্পে, কবিতায়, ভয়েস মেসেজ, আঁকার খাতায়, চোর পুলিশ খেলায় সবেতে।
দেখতে দেখতে দুবছর কেটে গেলো। সেই ছোট্ট মেয়ের মা বাবার চোখ মুখ আর বিব্রত হয়না। না সে ওরা যাই বলুক, আমি জানি এর জন্যে অন্য কিছু নয়। এর জন্যে ওর আধার এ দায়ী। একজন শিশু তো ভগবানের অংশ নিয়ে আসে, সে কি কখনো খারাপ হতে পারে?
এই দুবছরে কাকিমার ওপর তার জন্মেছে অশেষ অধিকার। আর সেই অধিকার বোধের বহিঃপ্রকাশ দেখলাম এই বর্ষবরণের দিনে। খুব কষ্ট ও হচ্ছিল ওর শিশুমনে হয়তো বা অজান্তে অবহেলার আঘাত দিয়ে ফেলেছি। ওর সেই খাবার ছেড়ে আনতে আসাটাতে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছিলামনা নিজেকে। সঙ্গে সঙ্গে এও বুঝলাম, আমাদের সোনামনি দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে গেছে। সে এখন জোর দিয়ে বলতে পারে, "আমার খিদে পায়নিতো " " তোমরা চলো আগে". "এই শাড়িটাই পড়তে হবে তোমায়। " "টিপ্ পর ". "চুল বাঁধছ কেন ? একদম চুল বাঁধবেনা কিন্তু।" আর সেদিন , ওর সেই শিশুমনের আবদার মেটাতে মেটাতে হটাৎ এক অন্য মনের এক ই আবদার বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছিলো। কিভাবে হয়। টিপ্ পড়তে গিয়ে, সেই কথার প্রতিধ্বনি ভেসে এসে ভীষণ অন্যভাবে আমাকে অন্যমনস্ক করে দিয়েছিলো কিছুক্ষনের জন্যে। তার একটু আগেই পুজো করেছিলাম। ওই ধূপের ধোঁয়া, ফুলের গন্ধের সাথে মিশে কেন কি জানি এক অদ্ভুত কথা আমার মনে এনে দিলো। চমকে গেলাম। কেমন যেন মনে হলো, ওই শিশুর দাবির সাথে ভগবানের এ কি ইচ্ছা , এ কি ছল আমাকে কি আমার ই অজান্তে অন্য কোনো আবদার মেটাল। না কি এ সব ই co -incidence ?
No comments:
Post a Comment