Wednesday, 4 April 2018

বজ্রকঠোর কুসুমকোমল

আজকের দিন বা কোনো দিন ই আমি আলাদা করে দেখতে চাইছিনা। ভেবোনা আমি শোক করছি। আমি জানি শোক করা তুমি ঘৃণা করো। তোমার মান্তু র চোখের জল তুমি একদম পছন্দ করোনা। তাই সে কখনো কাঁদবেনা। কিন্তু তবু কি করবে সে বলো, আজ যখন তোমাকে ফুল দিলাম, ওই একরাশ গোলাপের পাপড়ির মধ্যে, রজনীগন্ধার শ্বেত শুভ্রতার মধ্যে তোমার মুখটা দেখতে পেয়ে খুব মনখারাপ হয়ে গেলো। তুমি তো জানো তোমার মান্তু , তার যখন যেটা মনে হয়, সেটাই বলে দেয়। ভাবলাম আমার চেনা, আমার সব থেকে প্রিয় মানুষটাকে আমি এভাবে দেখবো কেন। বুকের মধ্যে খুব উথাল পাথাল করে উঠছে। কত কিছু বলার ছিল, সামনে থেকে বসে কত গল্প করার ছিল, কত কিছু জানার ছিল, বোঝার ছিল। মাঝেমাঝে কত ঝড় ওঠে, সেই ঝড় থেকে সামলানোর জন্যে তোমার সান্নিধ্যের খুব অভাব বোধ করি। কিন্তু জানো এখন লিখতে লিখতে আবার আমার সেই বোধ ফিরে পেলাম। সেই শক্তি। না, তুমি মনখারাপ করোনা, তুমি তোমার মান্তু কে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলে, সেভাবেই দেখতে পাবে। তুমি জানো , তোমাকে কখনো বলা হয়নি , সেই যে class two বা three হবে, বিদ্যাসাগরের রচনা লেখার সময় তুমি একটা শব্দ ব্যবহার করেছিলে, মা বলেছিলো এতো কঠিন শব্দ ও বুঝবে কি করে। তুমি বলেছিলে, বুঝবে। আর আমাকে বলেছিলে, শব্দ টা যেন আমি মনে রাখি। শব্দ টা ছিল "বজ্রাদপি কঠোর অথচ কুসুম কোমল"। জানো বাবা, স্মৃতিশক্তি টা বোধহয় genetically পেয়েছি আমি , সবাই তো তাই বলে। আজ পর্যন্ত কোনো কথাই, কোনো ঘটনাই ভুলিনি। আমার মনে আছে, ওই শব্দটা বাবা। ভুলিনি। সবসময় মনে রাখবো। আমার মনে আছে তুমি তোমার মান্তুর মধ্যে চরিত্রের ওই কাঠিন্য, ওই দৃঢ়তা দেখতে চেয়েছিলে, তার মনের সমস্ত কোমলতা বজায় রেখে। তাই বোধয় ক্লাস থ্রী থেকেই তার মনের মধ্যে এমন ভাবে গেঁথে দিয়েছিলে ওই শব্দ টা , যে আজও এই এত বছর পরেও কোনোদিন সে তার সেই কোন ছোট বেলায় পরিচয় হওয়া ওই একটা শব্দ কে ভুলতে পারেনি। বরং যখনি এই আজকের মতো, কান্না উঠে এসে গলার কাছটাতে জমা হয়ে থাকে, যখন চারিদিকে মিছেই হাতড়াতে থাকি, তখন সেই শব্দ বীজমন্ত্রের মতো আমাকে স্থির করে। সংযত করে। 

বাইরে এখন ওই যে হলুদ উজ্জ্বল হলুদ ফুলগুলো, গোলাপি আর লাল কাগজফুল গুলোর সাথে মাথা দোলাচ্ছে। বোধহয় বলছে, 
                                        "নাহি ক্ষয় , নাহি শেষ, নাহি নাহি দৈন্যলেশ -
                                          সেই পূর্ণতার পায়ে মন স্থান মাগে। "


No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...