Tuesday, 10 April 2018

বৃষ্টির শব্দ

আজ বাতাসে কেমন একটা মন কেমন করা ভিজে ভিজে গন্ধ। গাছের পাতা গুলো ভীষণ সবুজ হয়ে  আছে। বসন্তের নরম স্নিগ্ধ সবুজ সতেজতা, তার ওপরে আজকের বৃষ্টিস্নান, চারদিক যেন শিশু চোখের বিষ্ময় নিয়ে অথবা মাতৃস্নেহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। দুটো উপমাই কিজানি কেন একসাথে মনে এলো, আসলে ওই দুটো উপমাই যেন কোথায় এক হয়ে মিশে যায়। ওই দুই সম্পর্কের মধ্যে থাকে স্বার্থহীন ভালোবাসা। তারমধ্যে একজন চায় তার সর্বস্ব সঁপে নিশ্চিন্ত নির্ভরতা আর একজন চায় তার সর্বস্ব দিয়ে ওই শিশু প্রাণ কে আগলে রাখা। সমর্পন আর গ্রহণ। আচ্ছা সব সম্পর্কের ই কি এই একই  রকমের ই কিছু সমীকরণ থাকে ? সমর্পন কি তখন ই করা যায়, যখন সম্পূর্ণ গ্রহণ থাকে। বা উল্টোটা? আবার দুটো থেকেও যদি দুই তন্ত্রী এক ই সুরে এক ই ভাবে স্পন্দিত না হয়, তবে কি সে গ্রহণ বা সমর্পন কোনোটাই সম্পূর্ণ হয়না? জানিনা। সমস্ত ভাবনা যেন স্তব্ধ হয়ে শুধু বাইরের বৃষ্টির শব্দ শোনার চেষ্টা করছে। 
বাইরে এখুনি একটা ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সঙ্গে বৃষ্টি। আর ওই বৃষ্টির শব্দ আমাকে বারবার পৌঁছে দিচ্ছে, আমার মনের মনিকোঠায় সযত্নে রক্ষিত একটা বৃষ্টির রাতের ছবির সাথে। জানিনা সে ছবি কোনোদিন বাস্তবায়িত হবে কিনা, তবু খুব ইচ্ছে করছে একটা ঐরকম গভীর রাত পেতে। যেখানে এই আজকের মতোই থাকবে ঝোড়ো হাওয়ার শনশন। বারান্দার আলোটা বারবার কেঁপে কেঁপে দুলে দুলে উঠে রাত টাকে আরো একটু রোমাঞ্চিত করে যাবে। বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর অন্য যেকোনো জাগতিক শব্দ যেখানে বাহুল্য হয়ে যাবে। ঘরের ভেতরে জ্বলুক নাহয় কেঁপে কেঁপে ওঠা মোম এর আলো, তারপর একসময় নিভে যাক হটাৎ। অন্ধকার এর মধ্যে থেকে মেঘের গর্জনের মধ্যে নিরাপদ নির্ভরতার উষ্ণতা যদি খুঁজে পাওয়া যায়, যাকনা। আর জুঁই ফুল? আমার বৃষ্টির রাতে, জুঁই ফুলের একটু সুবাস থাকবেনা? তা কি হয় নাকি? জুঁই ফুলের সুবাস চারিদিকে আরো একটু বেশি পাগলামি ই যদি ছড়িয়ে দিতে চায়,দিকনা। "ডুবি যদি তো ডুবিনা কেন , ডুবুক তরী , ডুবুক সব ই।"


নাহ, স্বপ্ন এবারে বড্ডো বেশি ই বাড়াবাড়ি করছে। এখুনি বাঁধ দেওয়ার দরকার বড়। বাঁধ দেওয়া হলো। শেষের কবিতার ঢঙে বলতে ইচ্ছে করছে, বেঁচে থাক আমার বৃষ্টির রাত, বেঁচে থাকুক আমার জুঁই ফুল। মেঘের গর্জন থেকে আগলানো নিরাপদ উষ্ণতা কি আর সবসময় উষ্ণতা দিতে পারে।....তার থেকে বরং ফিরে যাই চলো বৃষ্টির সন্ধেতে। সেখানে রাতের রোমাঞ্চকতা নাই থাকুক, যদি চাদর মুড়ি দিয়ে, মোমবাতির আলোতে বাবা মার্ কোল ঘেঁষে বসে মুড়ি, বেগুনি, বা তেলেভাজা খেতে খেতে ভুতের গল্প?..না, ভুতের গল্পে আমার বড় ভয়। ..তাই ভুতের গল্প - বাদ। প্রিয়, কাছের মানুষ সঙ্গে থাকলে যেকোনো সময়, সকাল সন্ধ্যে, রাত....হয়ে যায় তরতাজা, সতেজ, প্রাণবন্ত। .. 

বৃষ্টি এখনো হচ্ছে। জানি কালকে একটা ঝকঝকে সকাল দিয়েই শুরু হবে আমার দিনের। আজকের মেঘলা সকাল আমার সারাদিন টাকে খুব মনখারাপের মোড়কে মুড়ে রেখেছিলো। কেউ জানেনা তা। কেউ বোঝেনি তা। কাউকেই বলিনি। কোনোদিন ই তো নিজের মনের কথা মুখে আনতে পারিনি, তবে আজ ই বা কিকরে তা হবে। আর আজ ও , এখনো কোনোদিন ই এই মন টাকে পুরো কেউ পড়তে পারলোনা। আচ্ছা সে যাক, কি দরকার তার, সে নিয়ে কোনো দুঃখ নেই আমার। ভালোই হয়েছে, যা হয়েছে। শুধু কেন কিজানি এই দিনের শেষেও সেই মনখারাপ এই বৃষ্টির শব্দের সাথে একেবারে মিশে যাচ্ছে। আজ সন্ধ্যে থেকেই কেমন একটা নৈঃশব্দ আমাকে যেন কিরকম একটা গ্রাস করে নিচ্ছে। এই নৈশব্দ আমি ভালোবাসি। এই নৈশব্দের মধ্যে আমি বুঁদ হয়ে যাই। মিশে যাই। এক হয়ে যাই। গত কালের মতন। সেই রামকৃষ্ণ আরতির মতো। গভীর, স্থির, নীরব, নিস্তব্ধ শান্তি। চারিদিক ভীষণ ভাবে শান্ত। ভীষণ  চুপচাপ। কি অপার অসীম সুন্দর এক নৈশব্দ। আদি অনন্ত, অন্তহীন।
কেন জানিনা মনে হচ্ছে আমি কোনো একটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কিছু একটা পরীক্ষা হয়তো আমাদের প্রতিদিন ই দিতে হয়।  তবে এই পরীক্ষা তে আমায় জিততে হবে। আমি বুঝতে পারছি আমার সামনে যে পথ আমায় ভীষণ ভাবে হাতছানি দিচ্ছে, সে পথে গেলে বোধয় চলবেনা আমায়। হয়তো ওই দুর্গম রাস্তাই আমাকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে পারবে। অনেকগুলো রাস্তা, তারমধ্যে একটা রাস্তা এই কদিনে হটাৎ খুব হাতছানি দিচ্ছে আমায়। বলছে আয় আয় এই রাস্তা তোকে সেখানে পৌঁছে দেবে, যেখানে তুই তোর নিজের ভাবনার , নিজের স্বপ্নের প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছিস। ভয় হচ্ছে।বুঝতে পারছিনা, কোন পথ বেছে নেবো। হটাৎ এই বৃষ্টির শব্দ আমাকে কিছুদিন আগে শোনা একটা কথা বলে দিয়ে গেল, "ভয় পেওনা, আমি তোমায় হারতে দেবোনা। তুমি জিতবে। আমি জানি তুমি জিতবে। "..ভরসা পেলাম। শক্তি পেলাম। আবার সেই বোধটা বোধহয় ফিরে এলো। রাস্তা। একে অপরের হাত ধরে ভিড় রাস্তা পেরিয়ে এগিয়ে চলা। আজকের রাতের এই বৃষ্টি আমার সমস্ত গ্লানির ধুলো ধুইয়ে মুছিয়ে দিয়ে,...একপা একপা করে ভোরের আলোর দিকে পা বাড়াচ্ছে। অপেক্ষা করবো।..ভোরের। একটা সতেজ, সবুজ, নির্মল ভোর। 


No comments:

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...