Monday, 14 December 2020

 হটাৎ কখন এলোমেলো বৃষ্টি এলো আকাশ জুড়ে ,

হটাৎ কখন বাঁধভাঙা সেই কান্না এলোই কেমন করে ;

আটকে রাখা পাগল আমি ;

বাঁধ ভাঙলেই পাগল পারা। 

ভুল করে আজ আবার তাকাই ,

না হাঁটা পথ ঝরাপাতায়। 

সময় গেছে বদলে অনেক, যাবেও জানি আরো কিছু 

তবুও আমি থেকেই গেলাম পুরোনো আমি আর অনেক অবুঝ। 

আমাদের সেই রূপকথাদের বুকের মাঝে আগলে রেখে,

রইলো তোমার সোনাঝুরি, পথ পাহারায় একলা বসে 

চাঁদের আলোয় শীতের রাতের নিঝুম তারা দেখবে ? এসে?



Saturday, 21 November 2020

 ভালোবেসে বা অভিমান এ কিভাবে যখন চলে এলাম এত দূরে, একা একা কেটে গেল কত গুলো মাস। একা বড় একা। আমার ওই সন্ধ্যে বেলার উষ্ণতা টাকে বড্ড মনে পরে। বড্ড বেশি কান্না পায়। খুব বোকা আমি। 

Saturday, 26 September 2020

বার্তা

রোদ্দুরে ভরা সোনালী বিকেল গুলো হটাৎ কেমন ছোট্ট হতে শুরু করে দিয়েছে। দিন যেন আদুরে অভিমানী প্রেমিকার মতন ঠোঁট ফুলিয়ে অপেক্ষা করছে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে যেন কেউ আটকে রাখে দুহাতে। তাই এক পা চৌকাঠের বাইরে রেখেও যাবো কি যাবোনা করে আর এক পা চৌকাঠের ভিতরে রেখে অভিমানী মুখ অল্প ঘুরিয়ে আশা করে আছে সে ডাকের। কিন্তু সে ডাক আসেনা, সময়ের আবর্তে ক্রমশ তার অভিমান গাঢ় থেকে গাঢ় তর হতে থাকে, গুটি গুটি পায়ে রাত্রি নামে আর বুকের মধ্যে অস্ফুট কান্না জমতে জমতে রাতের অন্ধকারের কাছে মুখ লুকিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে একসময়। আলোর প্রয়োজন ক্রমে ম্লান হয়ে এসে রাতের কান্না হয়ে বিলীন হয়ে যায়। অভিমানী মেয়ের আদুরে আবদার গুলোর ওপরে কেমন যেন অবহেলা ভরে ধুলো জমতে থাকে। 
পরিবর্তন অমোঘ এবং অনস্বীকার্য। না চাইতেও আগের সেই অনেকটা লম্বা রোদ ঝকমকে দুপুর হটাৎ করে শেষ হয়ে গিয়ে ঝুপ করে সন্ধে নেমে আসে। আকাশে আজ রং এর খেলাও দেখা যায়না, মনখারাপের জানালা দিয়ে উঁকি দিতে থাকে শুকতারা, আসন্ন শীতের কাঠোরতাকে মেনে নেবার কেমন যেন এক নাবলা প্রস্তুতি চারিদিকে। একটা, দুটো করে আলো জ্বলে উঠতে থাকে। ধূমায়িত কফির কাপ এর আমোদিত গন্ধ ঝকঝকে skyline এর সীমানা পার করিয়ে চোখের ওপর ফুটিয়ে তোলে শীতের ধোঁয়াশা বিকেল, মখমলের মতন সবুজ মাঠের এধার থেকে ওধার পর্যন্ত একটা মোটা হয়ে থাকা ধোঁয়ার লেয়ার। কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব, পুজো পুজো গন্ধের মধ্যে দিয়ে একটা দুটো করে শিউলি ফোটার শুরু, সারারাত ধরে ফুটবে তারা। আর ভোর বেলায় বিছিয়ে পরে থাকবে, কোনো কিশোরী দুটো হাতের নরম অঞ্জলি ভোরে কখন তাদের ঘরে গিয়ে রাখবে সেই অপেক্ষায়। এভাবেই অপেক্ষায় থাকে সময়, ঘরে ফেরার, ঘরে আসার অথবা ঘরে আনার। আলোয় আলো রাস্তা, এ শহর ঘুমায়না, উইকেন্ড এর উচ্চকিত আলো আর জলসার আওয়াজ পেরিয়ে কানে ভাসতে থাকে সামগাছঅধ্যন।.......

Sunday, 19 July 2020

উত্থান

রবীন্দ্রনাথ কে আমি মনে করি, মনে করি, একান্ত নিজের স্বার্থে। যখন ই মনে হয় কেমন দম বন্ধ হয়ে আসছে, বা বিভিন্ন অপ সংস্কৃতির হাত থেকে মন চাইছে একটু সুগন্ধি চিত্ত স্নান , তখন ই মনে হয় স্নান করি ওই গীতবিতান এর পাতায়। নিজের অশান্ত মন কে শান্ত করার জন্যে মনে করি। মনে করি তাতে লাগাম দেবার জন্যে।

হয়তো তাই জন্যেই কখনো কখনো যখন মন সত্যি ই লাগাম ছাড়া হতে চেয়েছে, চেয়েছে সমস্ত ঠিক ভুল এর চিন্তা বিসর্জন দিয়ে আত্ম সম্পর্পন, তখন ও ওই ভালোলাগার গভীর সুপ্তি থেকে নিজেকে বেদনার্ত জায়গায় উত্থিত করে আনতে পেরেছি।

জানিনা, এই জীবন আমাকে কিভাবে কি দেবে, কি এর মানে, কি এর পথ, তবুও সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত্রির আলিঙ্গনে আমাদের দিন যখন খুঁজছে নিজের আশ্রয়, করছে সমস্ত দিনের হিসেব , এমন সময়ে , এই চন্দন এর গন্ধে আমাদের ওখানের দখিনা হাওয়ার মতো এলোমেলো হাওয়াতে আমার মন হয়ে চলেছে উদ্বেল। তখন আবার আমি নিজেকে খুঁজলাম ওই রবীন্দ্র সৃষ্টির মাঝে। আজ অনেক দিন পরে লিখতে বসলাম কিছু। সৃষ্টির আনন্দে স্রষ্টার যে আনন্দ, সে আনন্দ অসীম, অক্ষয়। সে যা কিছুই সৃষ্টি হোকনা কেন। যত তুচ্ছ, যত মহৎ ই হোকনা কেন, তবু সে ভীষণ নিজের। আপন মহিমায় মহিমান্বিত। আমরা এক খুব অন্যরকম সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি, পাওয়া না পাওয়া, চাওয়া , ইচ্ছে, এই সমস্ত শব্দ এখন কিরকম যেন থমকে গিয়ে অপেক্ষার মোড়কে নিজেদের বন্দি করেছে। মাঝেমাঝে কেমন যেন ক্লান্ত লাগে, মনে হয়, থাক , আর কিছু ভাববোনা। সমস্ত পৃথিবীর মতন আমিও নিজেকে সকল ভাবনা থেকে বিরাম দি। এমনিতেই সব কিছু কত ভঙ্গুর , কত ক্ষণস্থায়ী, কালকে যা ছিল, আজ তা নেই। কালকের ইমোশন আজ হয়তো অর্থহীন। আবার আজকের অর্থহীনতা আগামী দিনে হয়তো অর্থ পূর্ণ হয়ে সামনে এসে দাঁড়াবে, হতেই পারে। আমি যখন আমার সব থেকে কাছের মানুষ, আমার বাবাকে হারালাম, আর তারপরেও জীবন থিম গেলোনা, তখন ই বুঝেছিলাম জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে। এ মহা বিশ্বের কোনো কিছুতেই কোনো কিছু হয়না। কারোর বিহনে কিছু থেমে যায়না। সেটাই সত্যি।
আমাদের কাজ হলো, জীবনের ওই গতিটাকে ধরতে পারা। তাকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে চলা। প্রতিটা দিন কিছু বলতে চায়, প্রতিটা দিনের নিজস্ব কিছু বার্তা থাকে, সেই বার্তা কে বুঝে নিয়ে এগিয়ে চলা। আর আজকের যা কিছু তাকে গ্রহণ করে আগামীর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করা। হে ঠাকুর আমাকে শক্তি দিও, আমি যেন সেই নক্ষত্রের পথ অবলম্বন করে চির শান্তির পথে নিজের লক্ষে স্থির থেকে এগিয়ে যেতে পারি। আমার সঙ্গে থেকো। বেদনা যেন আমার আনন্দ কে আবৃত না করে ফেলতে পারে। আর আমার আনন্দ যেন পার্থিব আর বস্তুত হয়ে গিয়ে নিজেকে গন্ডি তে আবদ্ধ না করে ফেলে। তা যেন আকাশের মতো উদার হয়, আর এই সকল সৃষ্টি রস এ নিমজ্জিত থাকে।

"তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
কোথাও দুঃখ, কোথাও মৃত্যু, কোথা বিচ্ছেদ নাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
মৃত্যু সে ধরে মৃত্যুর রূপ, দুঃখ হয় হে দুঃখের কূপ
তোমা হতে যবে হইয়ে বিমুখ আপনার পানে চাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
হে পূর্ণ, তব চরণের কাছে যাহা-কিছু সব আছে, আছে, আছে
নাই নাই ভয়, সে শুধু আমারই, নিশিদিন কাঁদি তাই
অন্তরগ্লানি, সংসারভার, পলক ফেলিতে কোথা একাকার
জীবনের মাঝে স্বরূপ তোমার রাখিবারে যদি পাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই
তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই"

Tuesday, 14 July 2020

কুচ কামিনী, সুধা যামিনী/ বধূয়া, বৃথা বিনে তব
এই গন্ধসলিলা সুখ রজনী

আমাদের মন জল এর মতন, যে পাত্রে রাখবে , যে ঢালে ঢালবে সেই ঢালে সেই মতন ই সে ঢলবে।আবার কি জানো , জল কে যেমন ফোটাতে হয়, ফিল্টার করতে হয় তেমনি মন কেও ফোটাতে হয়, ফিল্টার করতে হয়। ভালো কথা, ভালো গান, সুর, ভালো সঙ্গের মধ্যে দিয়ে তাকে নিয়ে যেতে হয়, সৎ সংকল্পের মধ্যে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয়। শিশুর মতন সরল জিজ্ঞাস্য নিয়ে এ পৃথিবীর সকল কঠিন রাস্তা কে অনায়াস এ সহজ করে নিতে হয়। এই ভাবে নিজেকে প্রতিদিন উন্নীত করতে হয়, কেউ আসবেনা তোমার সাধুতা বিচারে, তুমি নিজেই নিজের বিচারক। তবে একদিন সময় তোমাকে এর প্রতিদান দেবে। দেবেই। তাই যদি তুমি এই কঠিন পৃথিবীর সুন্দরতম দিক টি খুঁজে নিতে চাও তবে সেই সুন্দরের কাছে যাও। কিন্তু কোথায় পাবে সেই সুন্দরকে। পাবে তোমার মননে, ভালো সঙ্গে, সুন্দর ফুল, ভালো লেখা।খুঁজে নাও সেই পুরা পুরাতনী পুরাণের ধারা, ঢেলে ফেলো তাকে আধুনিকতার ঢালে। মেঘমল্লার এর সুরে খুঁজে পাও বিরহী যক্ষ আর যোগিনী উমাকে। 

শুধু এখন বলি, হে প্রেমিক, যে উমার কালজয়ী প্রেম মহেশ্বর কে সাধনা করে লাভ করিতে হইয়াছিল, তাহাকে অমন দৈনিন্দিন করিয়া দিওনা। তাহাকে সযত্নে সাজায়ে রাখিয়ো। দেখোনা, সব পূজার সব ফুল হয়না, সব ঋতুতে সব ফুল ফোটেনা, জনিবে রাতের শিউলি রাতে আমন করে ফুটত পারে বলেই ভোরে তা সবুজ ঘাসের গালিচাকে অমন পবিত্র করিয়া তুলতে পারে। অপেক্ষা করিয়ো সেই শুভক্ষণ সুন্দর মুহূর্তের জন্যে।গহীন রাতের তামসাবৃত হয়ে শুধুই কামনার বশবর্তী হয়ে নারী পুরুষের একে অপরের যে কাছে আসা তাতে কামনা অধিক হয়ে ওঠে।প্রেম যায় হারিয়ে সে কাছে আসার মধ্যে কামনা সন্তুষ্ট হয় বটে তবে মনের গহীনে লুকোনো যে সুপ্ত সুন্দর তাহা জাগ্রত হয়না। সে সুধা আস্বাদনের সৌভাগ্যই বা কজনের হয়েছে, সে সুধার খবর জানেই বা কজনে, যে জানে সে মৃগনাভীর সুগন্ধে মাতোয়ারা মৃগ যেমন হন্যে হইয়া শুধুই সেই মৃগনাভিতেই বিলীন হতে চায়, সেও তেমনি করিয়া শুধু ওই সুধাতেই নিজেকে মগ্ন করিতে পারে।শুধু সব কথা, সব ভাব সব জায়গায় অনিয়ো না, তাহাকে যত্নে রাখিয়ো, রাতের মালকোষ যেমন চাঁদনী রাতের গভীরতাতে সম্পূর্ণতা পায় , তেমনি ই প্রকৃত মুহূর্তএ সম্পূর্ণতা পায় তোমার সকল অপ্রাকৃত প্রাকৃত ইচ্ছা কামনা বাসনা। 

বাসনা স্বাভাবিক তবে তাকে ভিতরে রাখো, সেই গভীর রাতের গহীন মোহে যখন চাঁদ নরম হয়ে স্নেহ ভোরে তাকিয়ে থাকে, সেই রাতের নীল আকাশের মতন গভীর রঙের শাড়িতে নিজে হাতে করে তোমার প্রিয়াকে সাজিয়ো। পরিয়ে দিও যুথির মালা, রজনীগন্ধা, বেলি, মোমের আলোয় যত্ন করে তৈরি কোরো সেই পরিবেশ যা জন্ম জন্মান্তেরেও মানুষ পায়না। সব শরীর কবিতা হয়না, সব শরীরে কবিতার ছন্দ রুদ্ধ হয়ে যায়না, সবাই সব ছন্দ খুঁজে নিতেও পারেনা। খুঁজে নিও সেই ছন্দ , চিনে নিও সেই গন্ধ। শুধু অপেক্ষা কোরো সেই প্রকৃত মুহূর্তের জন্যে। তার আগে কিছু বোলোনা। বোলোনা। দিওনা সেই মুহূর্ত, সেই সময় নষ্ট করে। 
সন্যাসীর জীবন আলাদা, মনন আলাদা, আর সংসারের মনন আলাদা। ওরে সংসারী মন, সংসার ই যদি করবি তো সেভাবে কর যেভাবের ঘোরে মহেশ্বর নিজেকে উমা পতি করে উমা চরণে নিবেশিত করেছিল। সেই ভাব খুঁজে নে। সেই মন কে তৈরি কর। 

Thursday, 11 June 2020

আমি ভাবি, এ মানুষ্য জন্মের কারণ, তার উদ্দেশ, তার নির্দেশ। ওই মেঘ এর কথা, চেষ্টা করি শোনার। আমার প্রবাসী জীবনে, একাকী জানালার ধারে ভাবনারা আপন পাখা মেলে দেয় নিঃসংকোচে। কখনো তা মেঘদূতের মতন একের বার্তা পৌঁছে দেয় অপর প্রান্তে। কখনো তা অভিমানে মুখ লুকোয়। আর আমি ভাবতেই থাকি, আমার ভাবনারা ডানা মেলে উড়ে যেতে যেতে আজ আটকে গেছিলো ওই যে নিচের গাঢ় সবুজ ? ওর মাঝখান টাতে , আর বললো, সময় যে বড় কম। অভিমান হলে মুখ লুকোসনে কেমন, বরং বৃষ্টি হয়ে নিঃসংকোচে ঝরে পরিস বুকে, আবার খুশিতে মেঘ হয়ে উড়ে যাস নাহয়। কিন্তু অভিমান নিয়ে দূরে সরে থাকিসনা কেমন। এই ক্ষয়িষ্ণু সময়ে, হাজারো স্মৃতির ভিড়ে এমনিতেই যে সব কেমন হারিয়ে যেতে থাকে, ঠিক ওই মেঘ গুলোর মতন। তাই তার মাঝে আর অভিমান এর দেওয়াল দিয়ে যেটুকু সময় আমাদের হাতে আসে, তাকে আর বাধা দিসনা বরং আপন মনের সবটুকু মাধুরী সাবলীল ভাবে মিশিয়ে দিয়ে এসে দাঁড়ালি নাহয়, নাহয় অনেক ঝগড়া করলি, চিৎকার করে ভুল ধরলি, তবু সামনেই থাকলি নাহয়।  কোন সে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে, মানুষ ভেবে এসেছে, আচ্ছা আমি ই কেন, কি আমার কাজ। আমি ডেটা এনালাইসিস করি, পাইথন এর এক একটা টার্মিনাল এ ঝড় ওঠে, ও আমার ভালোবাসা। আবার এই মেঘ, আমার এই ভাবনার নিঃসংকোচ ভেসে যাওয়া, এও আমার ভালোবাসা। আর এই দুয়ের মধ্যে জাগতিক আমি? সে কোথায় আছে তবে? মানুষ তো নিজেকেই সব চাইতে বেশি ভালোবাসে তাই না, নিজের আমি, নিজের সংসার, সন্তান, এই ঘিরেই আবর্তিত হতে থাকে, আমাদের সকল সুখ দুঃখ , ভাবনা ভালোবাসা, ভালোলাগা।
যাও মেঘদূত দিও প্রিয়ার ও হাতে, আমার বিরহ লিপি, লেখা কেয়াপাতে।...দিনশেষে সূর্যদেব যখন পাটে বসেছেন, তখন আমি বসে এই জানালায়, আবার ডানা মেলতে দিলাম আমার ভাবনাকে। মেঘেদের সঙ্গে সঙ্গে একটার পর একটা প্রেক্ষাপট পাল্টাতে লাগলো, বদলে যেতে থাকলো মেঘেদের রঙ , ধরন , এই কখনো ঘন কালো তো এই আবির রঙে রাঙা তো এই আবার পালক সাদা। মনকেমন করে উঠলো। নিচের সবুজেরা মাথা নেড়ে নেড়ে বলে উঠলো, অভিমানে মুখ লুকিয়ে থাকিসনা কেমন, তার চেয়ে বরং বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়িস, বাজ হয়ে গর্জন করে উঠিস, কিন্তু অভিমানে দূরে সরে থাকিসনা। এমনিতেই সময়ের যে বড় অভাব। এই ক্ষয়িষ্ণু সময়ে, হাজারো স্মৃতির ভিড়ে এমনিতেই যে সব কেমন হারিয়ে যেতে থাকে, ঠিক ওই মেঘদের মতন। তাই তার মাঝে আর অভিমানের আড়াল নাহয় নাইবা রইলো বরং আপন মনের সবটুকু মাধুরী দিয়ে সাবলীল ভাবে সামনে এসে দাঁড়াস। ঠিক ভুল সুখ দুঃখ মহাকালের স্রোতে কালের নিয়মে আপন ছন্দে এই সন্ধের পবিত্র সান্নিধ্য নিয়ে দিশা দেখিয়ে দিয়ে যাবে। শুকতারার নির্দেশে পথ ভ্রষ্ট না হয়ে রচনা হবে নব অধ্যায়। অযথা তাকে অভিমানের আড়াল দিওনা দোহাই আমার। 



Monday, 4 May 2020

বিকেলে রোদ টা এখানেও সোনালী হয়ে নামে। পুরাতন অপেক্ষার মতন ই মধুর হয়ে। আবার বিষণ্ণতায় ঢেকে বিদায় নেয়। সন্ধ্যে নামে। আমার ঠাকুরের সামনে এখনো আমি সবার ভালো থাকার জন্যে প্রার্থনা করি। চারিদিকে চন্দন এর গন্ধ। রাত হয়েছে এখন। গন্ধটা থমকে আছে। নিজেকে আত্মস্থ করেছি ধীরে ধীরে। একটা স্থির নির্লিপ্ততার মধ্যে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা , প্রতিদিন। পল্ অনুপল। টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া মন। ঠিক ভুল এর বিচার। নিজের কাছে নিজে কেমন ছোট হয়ে যাওয়া। ছোট হয়ে যাওয়া।...কিজানি, জীবন টা খুব অন্যরকম। প্রতিদিন যেন নিজেকে চিনতে পারি, চিনতে পারি অন্যকে। পারিপার্শিক কে। এটাই বোধয় বড় হওয়া, বুড়ো হওয়া হয়তো বা। 

ওই দূরে একটা মোটা গুঁড়ির গাছ, কেমন যেন গম্ভীর গায়ের রং। কেমন যেন সমীহ হয় দেখলে, যেন বাবার মতন, দাদুর মতন। মনে হয় ছায়াটার নিচে দাঁড়াই। দুদণ্ড চুপ করে বসি। গাছের পাতায় হাত দিয়ে আদর করি। স্বার্থ ছাড়া নিঃস্বার্থ সম্পৰ্ক গুলোকে প্রাণ ভোরে উপলব্ধি করি। এই মনখারাপ এর গল্প বলি কাউকে, যে আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে, শুনবে সেই মনখারাপের গল্প গুলো। বিরক্ত হবেনা। নিজের দরকারে নয়, আমার জন্যে আমাকে বুঝতে চাইবে। কোনো হিসেব নিকেশ ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মুহূর্তরা ফিরে তাকাবে, মুচকি হেসে চাঁদ সেদিন সত্যি উঠবে। ওই মোটা গুঁড়ির গাছটার তলায়। 

Saturday, 2 May 2020

রাজকন্যের আবদারে

আয় তোকে এক গল্প বলি,
রূপকথার ই মতন
এক যে ছিল রাজা রানী
হীরে মানিক রতন
হীরে মানিক তুচ্ছ মা রে,
আজ আছে কাল নেই
ছিল তাদের এমন কিছু
যার কোনো ক্ষয় নেই।

পাহাড় ঘেরা ছোট্ট পুরী ,
বাগান ভরা ফুল।
জল টলমল দীঘি কত
ফুটেছে কমল।
রাজা রানী রাজকন্যে
রাজ্য ভরা প্রজা
সুখী জীবন,আচার ব্যাভার
সুস্থ এবং সোজা।
ভোরের বেলা হাজার পাখি
কোন সুরে গায় গান ,
রাজার সাথে রাজকন্যে
মোহিত হয়ে যান।
ছোট্ট মেয়ে হচ্ছে বড়
শিখছে কিছু কত,
দেখছে যা , জানছে আরো
প্রশ্ন আরো শত।
কোন পাখি , তার নাম কি
গায়ের কেমন রং ,
কেমন করে তাকায় দেখো
বসার কতই ঢং।
আকাশ কখন তারায় ভরা ,
কখনো রোদ ঝলমল।
কখন নদী শুকিয়ে যায় ,
আবার কখনো জল টলমল।
রাজা শেখায় রাজকন্যেকে ,
এসব কিছুর নাম।
ঋতু কত, ফসল কত ,
ফল এর কোথায় কি ধাম।
সব কিছু শেখো মাগো,
হও অনেক বড়
প্রকৃতির মাঝে মানুষ হয়ে
নিজেকে তৈরি করো।
রাজকন্যে বুদ্ধিমতী
শিষ্টাচারে ভরা ,
পিতার কথা মতন
শুরু করলো নিজেকে গড়া।
নিজের কাজ নিজে করে,
গুছিয়ে খেতে বসে,
বাগান করে, গাছ পাখি
আর সবাইকে ভালোবাসে।
পশু পাখি কাঠবেড়ালি
বন্ধু সবাই তার ,
জোরে কথা বলেনা সে,
কখনো করেনা মুখভার।
গুরুজনকে মান্য করে,
ছোটদের কে ভালো ,
এইভাবেই রাজকন্যে
রাজার ঘর করলো আলো।
প্রজা পরিষদ,
সবাই বলে অহ ধন্য ধন্য।
যা কিছু ভালো আমাদের সব ই যে
আমাদের রাজকুমারীর জন্য।
হীরে নয়, মানিক নয়,
আসল রতন মন।
সব কিছু দেখে শিখে, ভালোবেসে
যদি সবাইকে করতে পারো যতন।
যেন তবেই তুমি সব পেয়েছো
হয়েছো ঠিক রাজকন্যে,
চারপাশে সব সাজানো আছে,
শিখে নাও মা, এসব তোমার ই জন্যে।

এইভাবে রাজার কাছে দিন কেটে যায় তার,
সুখী পরিবার, সুখী গৃহকোণ, সোনার সংসার।














Tuesday, 28 April 2020

পৃথিবীর এই সংকটের সময়ে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নয়, নিজের ক্ষুদ্র ক্ষমতা সবটুকু দিয়ে তার পাশে থেকে এই সবকিছুর মধ্যেই বরং করে নিতে চাইছি তার সৌন্দর্য্যকে। আমরা সবাইতো নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্যে, আমাদের ওই সময়টুকুতে আমাদের জন্যে রাখা কাজটুকু শেষ করতে আসি। আমার  কিছুই নেই, তবু শুধু আমি আমি আর আমি। সেই আমিত্বের বেড়াজাল ভেঙে একটু বাইরে মুখ বাড়িয়ে দেখলেই চোখে পরে এ পৃথিবীর কোণায় কোনায় সকল মানুষ মায়ায় ভালোবাসায় অপরকে আছে, ভরিয়ে আছে।
বড় ক্ষনিকের এই সব কিছু। সমস্ত কিছুর মধ্যেই হয়তো আমাদের সমস্ত স্বত্বা লীন হয়ে থাকে, মিশে থাকে। বারংবার আমাদের আশেপাশের বিভিন্ন উদাহরণ ফিরিয়ে দেয় বিশ্বাস, বস্তে শেখায় ভালো, আর প্রাণ ভোরে গ্রহণ করতে শেখায় সবটুকু ভালোকে। আমি সবের মধ্যেই আছি কিন্তু আমার কিছুই নয়। বিশ্বজোড়া শুধুই যে মায়ার ফাঁদ। তবে এ মায়া থেকে আমি পালাতে চাইনা, চাইনা এ মায়া ছিন্ন করতে। সংসারের মধ্যে থেকে আমি এক খুব সাধারণ নারী হয়ে সবকিছুর মধ্যে থেকে মায়া খুঁজে নিতে ভালোবাসি। সুখ নয়, দুঃখ নয়, যেন এই সুন্দরের কাছে ম্লান হয়ে যায় সমস্ত চাওয়া পাওয়া। শুধু মনে হয় এই মায়ায় যেন এমনি করে আজীবন সবকিছু সবসময় সুন্দর হয়ে সবাইকে জড়িয়ে থাকুক। আর এই নিস্তব্ধ রাতের গভীরতার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়ে মনে মনে আবৃতি করতে ইচ্ছে হয় স্বামীজীর সেই প্রেম ময়

 শব্দ সম্ভার -

"ভ্রান্ত সেই যেবা সুখ চায়, দুঃখ চায় উন্মাদ সে জন—
মৃত্যু মাঙ্গে সেও যে পাগল, অমৃতত্ব বৃথা আকিঞ্চন।
যতদূর যতদূর যাও, বুদ্ধিরথে করি আরোহণ,
এই সেই সংসার-জলধি, দুঃখ সুখ করে আবর্তন।
পক্ষহীন শোন বিহঙ্গম, এ যে নহে পথ পালাবার
বারংবার পাইছ আঘাত, কেন কর বৃথায় উদ্যম?
ছাড় বিদ্যা জপ যজ্ঞ বল, স্বার্থহীন প্রেম যে সম্বল;
দেখ, শিক্ষা দেয় পতঙ্গম-অগ্মিশিখা করি আলিঙ্গন।
রূপমুগ্ধ অন্ধ কীটাধম, প্রেমমত্ত তোমার হৃদয়;
হে প্রেমিক, স্বার্থ-মলিনতা অগ্নিকুণ্ডে কর বিসর্জন।
ভিক্ষুকের কবে বলো সুখ? কৃপাপাত্র হয়ে কিবা ফল ?
দাও আর ফিরে চাও, থাকে যদি হৃদয়ে সম্বল।
অনন্তের তুমি অধিকারী প্রেমসিন্ধু হৃদে বিদ্যমান,
'দাও, দাও'-সেবা ফিরে চায়, তার সিন্ধু বিন্দু হয়ে যান।
ব্রহ্ম হ'তে কীট-পরমাণু, সর্বভূতে সেই প্রেমময়,
মন প্রাণ শরীর অর্পণ কর সখে, এ সবার পায়।
বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর?
জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।।"

  হাত জড়ো  হয়ে আসছে, প্রণাম করতে ইচ্ছে করছে, এ পৃথিবীর বুকে আবারো বার বারো সেই শান্তির ছায়াকে আহ্বান করে বলতে  




asato mā sad gamaya,
tamaso mā jyotir gamaya,
mṛtyor mā amṛtaṃ gamaya,
Om shanti~ shanti~ shanti hi~~

Lead me from falsehood to truth,
Lead me from darkness to light,
Lead me from death to the immortality
Om peace peace peace

আমাকে অসত্য থেকে সত্যের পথে আনো , 
আমাকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাও 
আমাকে মৃত্যু থেকে অমরত্বের পথ দেখাও 
ওঁম শান্তি শান্তি শান্তি 


আমাদের চারপাশের সবকিছু, সমস্ত সম্পর্ক, যা কিছু পার্থিব বা অপার্থিব সব কিছু খুব সুন্দর। খুব সত্যি। হয়তো কখনো কখনো সময়ের টানা পোড়েনে তাতে তিক্ততার ছোঁয়া লাগে। হয়তো পারিপার্শ্বিকের চাপে তার মধ্যে অসুন্দরের ছায়া এসে পরে। কিন্তু এসব কিছুই এই চাঁদের কলংকের মতোই। ঠিক সময়ে, যখন জ্যোৎস্নায় চরাচর ভিজে নরম হয়ে যাবে তখন আর ওই কলঙ্ক চোখেই পড়বেনা, তার সবকিছু খুব স্নিগ্ধ, নরম আলোর মতো করে জড়িয়ে থাকবে আমাদের। কখনো তা চাঁদনী রাতের আদর হয়ে আমাদের রোমাঞ্চিত করে যাবে, কখনো তা দিন শুরুর নরম সোনালী রোদ্দুর হয়ে উজ্জীবিত করবে, কখনো বা কর্মরত মধ্যাহ্নের জানলা দিয়ে বাইরে দেখার আবেশ আনবে আবার কখনো তা দিনশেষে ঘরে ফেরার প্রিয় স্পর্শ দেবে। আর সমস্ত কিছুর মধ্যে বারংবার উপলব্ধি দিয়ে যাবে সেই গভীর স্নেহ, মমত্ব, ভালোবাসা আর শান্তির।
তাই আমার সন্ধ্যার ইমন কল্যাণ বারবার সুর তোলে। জীবনের হাজার সমস্যার মধ্যেও জীবনকে স্বপ্ন দিয়ে সুন্দর করে সাজাতে চাই , করিনা? ক্ষতিকি ? যতদিন স্বপ্ন দেখতে পারি, দেখিনা? তারপরে যদি ওই ওপরে যে বসে আছে, একদিন যদি ইচ্ছে করে, আমার সব স্বপ্ন ভেঙে দিতে, দেবে, আমার কাছেতো সে মহাপ্রলয় থামাবারও যে কোনো উপায় নেই। সে যবে হবে হবে, তবে তার আগে পর্যন্ত আমি না হয় প্রাণ ভোরে নিশ্বাস নি। ভোর বেলাতে হালকা চাদর গায়ে দিয়ে দিলে, যেমন সেই চাদর টাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে মানুষে শান্তি আর স্বস্তি তে আবার ঘুমিয়ে পরে, আর সেই শান্তির রেশ লেগে থাকে ঘুম ভেঙে উঠে সারাদিনটার মধ্যে। সেইরকম ই আমার এই স্বপ্ন মাখা চাঁদের আলো কে আমি জড়িয়ে থাকতে চাই। আর চাই ওর ওই আদরটা থেকে যেন কেউ কোথাও না বঞ্চিত না হয়। ওই আদোরে জড়ানো শান্তি জড়িয়ে থাকুক , তোমাকে, আমাকে, সবাইকে। ওই স্বস্তির নিঃশ্বাসটা আমি অনুভব করতে চাই। খুব।

Friday, 24 April 2020

বদলে যাওয়া পৃথিবীতে,
থমকে যাওয়া আমি।
আমার একলা দুপুর
বুঝতে শেখায় ঠিক, ভুল, পাগলামি।
বুকের মাঝে কষ্ট পাথর ভাঙা
তবু বলা বারণ
বদল সময়ে বদল তোমার
মনখারাপের আবেগ আমার
এ সব ই শুধু আমার একার কারণ।

আমরা আর কইনা কথা
ভাগ করিনা সুখ দুখ
সেসব এখন গল্প কথা
শুধুই বোধয় ভুলচুক।
একলা মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো
খেয়েছো খাবার ঠিক বল,
বাস্তবে এ সব হাস্যকর
শুধুই এখন অবান্তর।

চাইছি ভুলে থাকতে সুরে
ছন্দ , শব্দ , বাণীতে
তবু কেন হায় মন ফিরে চায়,
সেই স্মৃতি সরণিতে।



Sunday, 12 April 2020

সন্ধ্যে নামছে। ঠিক সন্ধ্যে নয়, গোধূলী। সূর্য্য সবে পাটে বসেছে। এবারে আসতে আসতে অস্তাচলে পাড়ি দেবে। কোনো কোনোদিন মাঝেমাঝে কত দীর্ঘ্য হয়ে যায়, আবার কোনো কোনোদিন কেমন চট করে চলে যায়। সব ই , সবকিছুই বোধয় perspective তাহলে। আমাদের ভালোলাগার ওপরে নির্ভর করে চলে সবকিছু। তাহলে অনিত্য কি। অনিত্য কি। কিছুই নয়। কিছুই স্থির নয় বোধয়। সব ই কেন পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সাথে কেন সব বদলে যায়, কেন যেভাবে যা কিছু আমরা পাই তাই কেন আমরা চাইনা। আর চাওয়া, সেই চাওয়ার ও কত প্রকার, কত ধরণ। কেউ চায় রাশি রাশি বিলাসিতা। কেউ চায় সুখী গৃহকোণ। মনের মতো করে রান্না করে গুছিয়ে খাওয়াতে। এ পৃথিবীর মধ্যে স্থির শান্তি কেন নেমে আসেনা? ধরিত্রী কেন তার আপন মাধুরী এক ভাবে সবার সামনে এক রকম করে তুলে ধরেনা ? কেন কখনো কখনো এমন বিষাদ ময় বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে মন। কেন মনের মধ্যে শুধু বলে চলি কেন কেন কেন। অথচ সে কেনো এর কোনো উত্তর আসেনা, কোনো উত্তর পাইনা। শুধুই আরো আরো বিষণ্ণতা ঢেকে আসে। 

আকাশ যেন আজ গভীর নীল রঙে ধ্যানমগ্ন। আসতে আসতে সূর্য্য তার দিনের সবটুকু কাজ গুটিয়ে ধীরে ধীরে আবীর রঙে সবকিছুকে রাঙিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছেন। ভীষণ শান্ত, নিস্তব্ধ চারিদিক। কোথাও এতটুকু কোনো শব্দ নেই। যেন সমস্ত প্রকৃতি একসাথে হাত জড়ো করে দিনের দিবাকর কে বিদায় সম্ভাষণ জানাচ্ছে। আসতে আসতে আমার বিক্ষিপ্ত মন থিতু হচ্ছে। কেমন যেন ঘোর লাগছে। ঠিক ভুলের বিচারে, তিরস্কৃত ক্লান্ত শ্রান্ত মন এই ধ্যানমগ্ন প্রকৃতির সাথে একাত্ম হচ্ছে। জাগ্রত হচ্ছে বোধি। প্রাণপণে খুঁজছে তার নিরবিচ্ছিন্ন শান্তির স্থল। চোখের জল এর মধ্যে কেমন যেন একটা পবিত্রতা আছে। চোখের জল যেন আমাদের অন্তরস্থল কে গভীর স্নেহে অভিষিক্ত করে যায়। লেখার মধ্যে একটা অদ্ভুত কিছু ঘটলো। এই এখন ই লিখতে লিখতে হটাৎ এক ঝলকআলো এসে পড়লো আমার মুখে, ভেজা চোখে। অস্তগামীর বিদায় রশ্মি। দিনের শেষ আদর টুকু। কি ছিল ওই আলোর মধ্যে, দিনের বিষাদ এর জন্যে তিরস্কার, নাকি বা ভীষণ মায়া। ভীষণ যত্ন। যে মায়া , যে যত্ন টুকুর জন্যে সবসময় আমার মনের মধ্যে হাহাকার করে, যে যত্ন যে মায়া টুকু আমি কাউকে দেবার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকি। যে যত্ন সম্পর্ক বোঝেনা, বোঝেনা অধিকারের হাজারো বেড়াজাল, সেই যত্ন যেন পিতার কাছে তাঁর স্নেহের কন্যার কাছে আসার মতো করেই আমাকে ছুঁয়ে গেলো। 

আকাশ আরো লাল, চারিদিক আরো শান্ত আরো নিস্তব্ধ। শাঁখ এখানে বাজেনা, ধুপ জ্বালাবো। চন্দন ধুপ। বসবো আজ অনেক্ষন আজ আমার ঠাকুরের কাছে। না কোনো অভিযোগ নেই আমার তাঁর কাছে, কোনো জিজ্ঞাসা নেই। শুধু নিজের দিনের প্রাপ্তি টুকু নিবেদন করার আছে। কোনো এক গভীর বোধের গোপন প্রাপ্তি আমাকে এনে দিলো এক নির্বেদ, নির্লিপ্ত শান্তি। প্রার্থনা করি এই শান্তি যেন ছুঁয়ে যায় তোমাকেও, যে টানাপোড়েন তোমার মধ্যে চলছে, অস্থির করে রেখেছে, ক্লান্ত করে দিয়েছে, মুক্তি পাও তুমি তার থেকে। স্থির নিস্তরঙ্গ এই শান্তির জলে অবগাহনএর পরে ঝড় থামুক। বেল ফুলের নরম পাপড়ির মতো তোমার মন কে আগলে রেখো সকল আঘাত থেকে। 


Saturday, 11 April 2020

মাঝেমাঝে হটাৎ চারপাশ টা কিরকম শূন্য হয়ে যায়। চেনা মানুষ চেনা মুখ কিভাবে বদলে যায়।  চেনা? না চেনাই বা কিকরে, ভুল তো আমি করেছি। খুব কম জনেই মনে করতে পারে, একটা মানুষ একলা ঘরে এতদিন সবাইকে ছাড়া কিভাবে একাকী আছে, খুব কম মানুষ ই একলা রাতের মধ্যে বুক ফাটা কান্না টা বুঝতে পারে। কেনই বা বুঝবে কেউ? কি দায় তার? ভুল যা সব ই শুধুই যে আমার। এই কান্নাও তাই আমার। একান্ত আমার প্রাপ্য। মানুষ না বুঝে তাকে ভুল জায়গা দিয়ে দেওয়া। সেই দায় আমার। এই একলা ঘর এর দায় আমার। এ কান্না আমার। এই অন্ধকার রাত্রি দমবন্ধ করা হাহাকার আমার। এত কষ্ট হতে পারে, এইরকম দম বন্ধ করা কষ্ট। ভীষণ কষ্ট। ভীষণ ভীষণ। 

Sunday, 5 April 2020

তোমাকে মনে পড়ছে। খুব বেশি করে। পারছিনা কিছুতেই। ভীষণ ভাবে বারবার মনের মাহে উঁকি দিয়ে যাচ্ছ তুমি শুধু তুমি। 

অবসরের জানালায় সবার জন্যে খোলা চিঠি

Hi, কথা বলছি নিউ ইয়র্ক থেকে। হ্যাঁ , ঠিক ই বুঝেছেন। করোনার epicentre যে নিউ ইয়র্ক সেখান থেকেই। গত পরশুদিন গোটা USA তে মারা গেছে হাজারের ও বেশি মানুষ। আমার দেশ এও সংখ্যা বাড়ছে, তার থেকেও বেশি বাড়তে চলেছে না খেতে পেয়ে থাকা মানুষের সংখ্যা। আমার পুরোনো প্রতিষ্ঠানের দুজন কলিগ এর থেকে জানলাম প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুলো অর্থনৈতিক মন্দা বন্ধ করতে কিভাবে স্যালারি কম করে দিতে চাইছে। মরিয়া হয়ে খুঁজছে কিছু ফরেন collaboration , যেখান থেকে খড় কুটোর মতো ভেসে থাকতে চাইছে। এসব তথ্য এই আমাদের সবার জানা। তবু আমাদের অনেকের মন ই কিছুতেই আর ঘরের মধ্যে থাকতে চাইছেনা। মনে হচ্ছে ইশ পাড়ার দোকান টাতে বসে কবে যে আড্ডা দেব। এখানের চিত্র ও এরকম ই কিছুটা। আমার জানালার নিচেই আছে এক সবুজ পার্ক। সেখানে প্রতিদিন ই স্বাস্থ সচেতন মানুষ বোধয় খোলা আকাশের নিচে আলো হাওয়া নেবে বলে আসে এবং নাকে মুখে কিছু না বেঁধেই আসে , নাকে মুখে কিছু বেঁধে এলে আলো বাতাস একটু কম ভেতরে প্রবেশ করতে পারে তো। এবং সব বয়সের লোকেদের ই বেশ হলিডে মুড এ একটা পিকনিক পিকনিক মেজাজে জগিং করতে, হাঁটতে এবং গল্প করতে দেখা যায়। ফলত USA এর সংখ্যা যে কেন বাড়ছে সেটা বুঝতে বিশেষ অসুবিধে হয়না। আমার এই অবসরের জানালাতে বসে আমি সারাদিন ধরে এই আকাশ টিকে দেখি। এই যে আকাশ টি দেখছেন। এই আকাশ টি। তো এই আকাশ আমাকে দিয়েছে নিজের মধ্যে একান্ত নিজের মতন করে থিতু হবার আর ভাবনার সময়। এই ভাবনার মধ্যেই চলতে থাকে আমার দৈনন্দিন কাজ, ঘরের কাজ, গবেষণার কাজ, অল্প অল্প আঁকা, লেখা, কবিতা, গল্প, গান। অনেকদিন পরে আবার আকণ্ঠ ডুব দিতে পারছি গল্পের বই এর দুনিয়াতে। পাচ্ছি ঠাকুরের সামনে বসে নিরবিচ্ছিন্ন ধ্যান মগ্ন সন্ধ্যার সান্নিধ্য। আর আপাতত কফির কাপ এ চুমুক দিতে দিতে না ভাবতে চেষ্টা করছি যে আমি আমার কাছের মানুষদের থেকে অনেকদূরে, কবে কোথায় তাদের দেখতে পাবো জানিনা বা আমি একা , বা আমার একলা বয়স্ক মা কিভাবে হাসিমুখে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে। এইসব। কারণ গোটা দুনিয়া আজ যে গভীর সংকট এর মধ্যে দিয়ে চলেছে বা চলতে যাচ্ছে, তার সামনে আমরা যারা নিজেদের চাল ডাল টা অন্তত আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখতে পারছি , তাদের নিজ নিজ ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ তুচ্ছ হয়ে যায়। অন্যমনস্ক হতে চাইছি আমাকে গতকালকে পাঠানো একটি ছবি থেকে, এক পিতার ছবি, যে দুটো ভাতের আশায় একদিন নিজের জায়গা ছেড়ে হরিয়ানার রাস্তা তৈরির কাজে এসেছিলো, আজ এই অতিমারীতে সেই দুমুঠো ভাতের আশা অনির্দিষ্ট কালের জন্যে বন্ধ হয়ে যাওয়াতে, পায়ে হেঁটে প্রায় মৃতপ্রায় ক্ষুধার্ত অবস্থায় নিজের জায়গাটা তে ফেরার চেষ্টা করছে, যেখানে অন্তত মাথার ওপরে একটা ছাদ আছে। ছবিটি সত্যি। অসংখ্য মানুষ এইভাবে এক ই কারণে বাড়ি ফিরছেন, আমার পুরোনো প্রতিষ্ঠানের কিছু সহকর্মী চাঁদা তুলে এদের হাতে তুলে দিয়েছে কিছুটা রাস্তার রসদ আর বেসিক কিছু স্বাস্থ্য সচেতনতা। তাই এছবি আমার কাছে পৌঁছেছে। কিন্তু এও জানি, তাদের প্রয়োজনের তুলনায় আমাদের কিছুই সাধ্য ই নেই কিছু করার। শুধু একটা জিনিস ছাড়া , সেটা হলো এই ভাইরাস টিকে কিছুভাবেই কোনো হোস্ট বডিএর প্রশ্রয় না দেওয়া অর্থাৎ কিনা আমরা আপনারা যারা কিনা বাড়ি থেকে না বেরিয়ে খেতে পড়তে পারছি তারা অন্তত চেষ্টা করি বাড়িতে থাকতে। যত সঠিক ভাবে আমরা এইটা পালন করবো তত তাড়াতাড়ি ওই দিন আনতে দিন খাওয়া মানুষ গুলো আবার হাসি মুখে কাজ করে খেতে পারবে। তত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে আমাদের চারপাশের ছবিটা। কিছুদিন পরে আবার কিন্তু আপনাকে আমাকে ট্রেন ট্রাম বাস মেট্রোতে ভিড়ে ঝুলে ঝুলে বসার জায়গার জন্যে লড়াই করতে করতে বা tarffic জ্যাম এর মধ্যে গাড়ি নিয়ে আটকে পরে শুরু করতে হবে গ্রাসাচ্ছাদনের চিন্তা। তখন ও আমি নিশ্চিত আমাদের কারোর কারোর মনে হবে বেশ চিলত quarrnatine এর সময় টা, ফেইসবুক জুড়ে আবারো আস্তে শুরু করবে those time বা missing corona এলেও আশ্চর্য্য হবোনা। আমরা সবসময়েই সময় চলে যাবার পরে তার মূল্যটা বুঝতে পারি আর সেই সময় টা কি নেই এর হিসেবে করতে করতে কি আছে সেটা দেখতেই ভুলে যাই, পরে হা হুতাশ করতে বসি। তার থেকে বরং এই সময়টাকেই উপভোগ করি। আসুননা। চারপাশের জগৎ টাকে তো দেখাই হয়না, মোবাইল এর ছোট্ট স্ক্রিন ই মুখ ডুবিয়ে যাওয়া আর আসা। আজ যখন প্রকৃতি সুযোগ দিয়েছেন, দেখে নিন চারপাশটাকে কে বলতে পারে, হটাৎ করে খুঁজে পেলাম কোনো নতুন সঙ্গীকে। ধরুন আপনার পাশের বাড়ির দস্যু বেড়াল টা যে একলা দুপুর বেলা কেমন ঘন্টার পার ঘন্টা ওই আম গাছের তলায় একটা গাছের দল নিয়ে খেলা করে চলে, আপনি হটাৎ ই আবিষ্কার করলেন তা।অথবা সেই কবে থেকে কে জানে, আপনার বাড়ির সামনের জামরুল গাছে থাকা এক সুন্দরী অথিতি বিহঙ্গ যে আপনাকে রোজ সকালে ঘুম ভাঙ্গায়, একদিন হটাৎ ই সায়াহ্ন এর আলোছায়ায় আপনার সাথে দেখা হয়ে গেলো তার। কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুর হাতে আঁকা ছবি আমাকে ভীষণ ভাবে মুগ্ধ করে দিয়েছিলো। সে নিজেও হয়তো জানতোনা তার মধ্যে এত সুন্দর এক শিল্পী সত্বা লুকিয়ে আছে। আমাদের জীবনটা বারো সুন্দর। চারপাশের সবকিছুও। আর সময়ের ও বারো দাম। আজ পাচ্ছি, কালকে এই সময় আর নাও থাকতে পারে। এতগুলো বছর তো সবার ভালো থাকার জন্যে রোজগার করে গেছেন, আজ একটু নাহয় নিজের আকাশটা দেখলেন, সারাদিন রান্নার পরে আজ নাহয় চট করে একটু খোলা হাওয়ায় গিয়ে দাঁড়ানোই হলো। নিজের হাতে যদি রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোর সুযোগ না পেয়ে থাকেন রোজ, তবে এই কদিন সেই সুযোগ টাকে ব্যবহার করুন প্রাণ ভোরে।
কি জানেন আমরা জানি ই না যে আমাদের মনের কোণে কোথায় লুকিয়ে আছে কোনো গায়ক, বাদক, শিল্পী, ফটোগ্রাফার, সুর তাল ছন্দ মায়ায় ভরা মানুষ। দৈনিন্দিন ব্যস্ততার মধ্যে তা কোথায় চাপা পরে গিয়ে হারিয়ে যায় একসময়। রাজকুমারীর দরকার নেই আমরা নিজেরাই নিজেদের ভেতরের সেই সুপ্ত বীরপুরুষের ঘুম ভাঙাতে পারি একটু সোনার কাঠির ছোঁয়ায়। সময়ের সাথে সাথে সবকিছু হালকা ভাবে নিয়ে এখন ই বেরিয়ে পড়বেন না। অসংখ্য ডাক্তার নার্স পুলিশ প্রশাসন অনলস চেষ্টা করে চলেছে আমাকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখতে, দিনের পার দিন বাড়ি যেতে পারছেনা। ডাক্তার দের মুখে মাস্ক এর দাগ হয়ে গেছে , আপনি আমিতো শুধু  শুয়ে বসে বাড়িতে আছি। এটুকুই তো করণীয়। এটুকুই করি। 

 আবারো বলছি  যত তাড়াতাড়ি আমরা না বেরিয়ে সমাজকে সংক্রামন মুক্ত করে ফেলতে পারি, তত তাড়াতাড়ি আমরা তো বটেই ই ওই দিন আনি দিন খাই মানুষগুলোও আবার বেরোতে পারবে। বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভবিষ্যতের চিন্তায় শয্যা নিয়েছেন সত্যি। আমি জানি আপনারা এসব ই জানেন এবং মনে করছেন আমি আবার জ্ঞান দিচ্ছি। হা দিচ্ছি। রোজ দিনা। আজ দিচ্ছি। কারণ আমাদের মধ্যে অনেকেই আমার ছেলে মাংস ছাড়া ভাত খেতে পারেনা বা টাটকা মাছ ছাড়া খাবো কিভাবে বলে বেরোচ্ছেন এবং মাছের পেট টিপে, রসিয়ে রসিয়ে কচুর লতি হাতে ঝুলিয়ে বাড়ি ফিরছেন। যদি আপনার পাঁচ বছরের ছেলে এখন ই বিশেষ কোনো পদ ছাড়া ভাত না খেতে পারে, তবে এটুকু বলে দিতে অসুবিধে হয়না যে , আপনার ছেলেকে কিন্তু ভবিষ্যতে তাহলে বেশির ভাগ সময় ই নাখেয়েই কাটাতে হবে।  কারণ সাধের খাবার  টুকু কোলকাতাতে সহজলভ্য হলেও কলকাতা থেকে বাইরে বেরিয়ে বেশি দূরে নয় দিল্লি তে গিয়ে থাকলেই ওটাকে বিলাসিতা মনে হবে। বাস্তবিক ই জানেন দিল্লিতে থাকাকালীন বহু জিনিসকে আমাদের বিলাসিতা মনে হয়েছে, যেমন প্রতিদিন ২৫টাকা piece এর রসগোল্লা খাওয়াটা। তাই কস্মিৎ ক্কাল ছাড়া দিল্লিতে কখনো রসগোল্লা কিনে খাইনি। খেতে ইচ্ছে করলে নিজে বাড়িতে দুধ থেকে ছানা কাটিয়ে বাড়িতে রসগোল্লা তৈরি করে ফেলেছি। এবং এরকম বহু জিনিস ই দু ঘন্টা দু ঘন্টা চার ঘন্টা যাতায়াত এর পরেও নিজে হাতে রান্না করে পরিবেশন করে দেখবেন খারাপ লাগেনা। বাচ্ছাকে অযথা প্যাম্পার করে ভবিষ্যৎ টি ঝরঝরে না করে তাকে সবরকম পরিস্থিতে মানিয়ে নিতে সেখান। কষ্ট হচ্ছে শুনতে তো? খারাপ লাগছে? মনে হচ্ছে, নিজের ছেলে হলে বুঝতিস। হ্যাঁ। কিজানেন নিজের ছেলে বা মেয়েকে আমি তার এইরকম কোনো বায়না মিটিয়ে দিতামনা এবং ভবিষ্যতেও দেবোনা। বরং এই বয়স থেকেই চেষ্টা করতাম তাকে ওই ক্লান্ত, ক্ষুধার্থ, আর্ত , অসহায় মানুষগুলোর চিত্রটার সঙ্গে পরিচিত করতে এবং বোঝাতে যে খাবার বিলাসিতা নয় খাবার হোলো নেসেসিটি। আর তারপরেও সে যদি মুখ ভার করে থাকতো, তাহলে বুঝতাম মানুষ করতে পারছিনা আমি। 
আর একটা কথা আজ না বলে পারছিনা, ভুল কম বেশি সবাই করে থাকে, আপনি আমি সবাই। তাই অযথা কোনো এক বিশেষ সম্প্রদায়ের দিকে আঙ্গুল না তুলে আসুননা, একটু মানুষ হয়ে তাকাই একে অপরের দিকে। এতো মানুষের মৃত্যু, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে রোগী ডাক্তার এর এত অজস্র কাহানি তো সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় পাতায়, তবু কি একটু বদলাতে পারিনা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিকে। আগে সময় ছিলোনা ভাবার, এখন তো পেয়েছি সময়, আসুননা নিজেদের অন্তরে একবার গভীর ভাবে তাকিয়ে দেখি, সেখানে কি শুধুই অসহিষ্ণুতা? compassion নেই? empathy ? এগুলো কি শুধুই বইতে পড়া শব্দ?  আমাদের ভেতরের সেই আমি টাকে জাগিয়ে তুলি চলুন। মানুষ তো আমরা। আমরাই পারবো। জানেন এই সময় কিভাবে আমাদের কত মানুষ চিনিয়ে দিয়ে যায়, এই যে সারাদিনে কত অজস্র ফোন, msg আমার খবর জানতে চেয়ে আমার কাছে আসে। এমন কত মানুষ আছে, যারা প্রতিদিন শুধু একবার তিস্তা? লিখে চুপ করে থাকেন। বছরের পার দেখা না হওয়া কত মানুষ স্যুধু একটি বার নিজের মুখে শুনতে চাইছে কেমন আছি, বাইরে বেরোতে বাড়ান করছে, ভালো ভালো বই পাঠাচ্ছে হোয়াটস্যাপ মেসেঞ্জার এ। তাদের আন্তরিকতায় বুক ভোরে যায়।  এইতো। কে বলে আমরা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। আমরা পারছি। আমরা পারবো ও. চলুন সবাইকে নিয়ে একসাথে এই সময়টাকে পেরিয়ে যাওয়া যাক। জীবনে এক সাথে চ্যালেঞ্জ নেবার সত্যি সময় এসেছে এবার। শাড়ি পাড়ার মধ্যে ভালোলাগা থাকতে পারে, চ্যালেঞ্জ যদি নিতে চান এইসময় সহিষ্ণুতা দেখিয়ে নি চলুন। আর আপনাদের এ ঘরের কোনো মেয়ে, বৌ অথবা বন্ধু যদি এক অজানা দেশে মাটি থেকে ১০ য়ালা উঁচুতে একটি এপার্টমেন্ট একা টিভি ছাড়া, নেটফ্লিক্স, হৈচৈ কিছুর দরকার বোধ না করে , লোকজনের মুখ না দেখে, শুধু এই জানালা দিয়ে আকাশ দেখে বৈচিত্র মে করে তুলতে পারে নিজের জীবন। তাহলে আমি নিশ্চিত, আপনারা সাছন্দে নিজেদের সময়টা উজাড় করে নিজেদের আরো একটু বেশি ভালোবেসে আর সমৃদ্ধ করে গৃহ বন্দী হয়ে থাকতে পারবেন। 

অবসরের জানালায় সবার জন্যে খোলা চিঠি 














Wednesday, 1 April 2020

এইরকম নিরম্বু একা এতগুলো দিন কোনোদিন থাকিনি। একেবারে একা। তার ওপরে নতুন দেশ, নতুন পরিস্থিতি। হটাৎ করে এক ঝলক বাতাসের মতোই দৈনিন্দিন জীবনে দিয়ে গাছে অবসর। চিন্তার ভাবনার এক প্রশস্ত পরিসর। আমার সকাল শুরুর ওই জানালার ধার দিয়ে কখনো আসে ঝকঝকে আকাশ, কখনো আসে মেঘলা দিন। আর আমি ভাবতেই থাকি, ভাবতেই থাকি। ভাবনা আমার বড় প্রিয়। ব্যস্ততার দিন গুলোতে যখন স্থির ভাবে কিছু ভাবতেও সময় পেতামনা, পরপর পরপর কাজের সারি, চিন্তাকেও একমুখী করে দিতে বাধ্য করে, এমন সময়ে আমার ভেতরের ভাবনার দল ডানা ঝাপটিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। আজ তারা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। 

সময়ের নিক্তিতে ঠিক ভুলের বোঝাপড়া রা ভীড় করে আসে। নিজের দুরন্ত আবেগ এখন সংযত। ভাষাহীন ভালোবাসা গভীর আঘাত আর ব্যাথা থেকে নিতে শুরু করে জীবনের শিক্ষা। জীবন সিনেমা নয়, জীবন যে জীবন ই। আমার সেই স্থির শান্তি আর বিশ্বাস আজ যেন সমূলে নাড়িয়ে দিয়েছে কেউ। কেন করলাম এ ভুল। কেন হলো আমার এ ভুল। আমিতো এমন ভুল করার নয় কেউ। তবু কেন হলো, কিকারেই বা হলো। সব ই কি ভুল ই ছিল তবে। এ হাহাকার যেন আজ সারাদিনে কেমন এক শূন্যতা বয়ে আনতে লাগলো। আমি বোধয় হেরেই গেলাম। জিতেও হেরেও গেলাম। নিজের বোধ, বিশ্বাস। বড় অহংকার ছিল নিজের ওপরে। আজ যেন সব কেমন এলোমেলো। আমি ভুল করেছি। এতবার জিজ্ঞাসা করছি ঠাকুর তোমায়, বলছোনা কেন? বলোনা আমি ভুল করেছি। 

Tuesday, 24 March 2020

দেখতে দেখতে প্রায় একমাস  হতে চললো। আমি নতুন দেশে, অজানা অচেনা শহরের মাঝে। ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিচ্ছি নিজের জায়গাটা। দশ তলার ওপরে এই এক কামরার ছোট্ট এপার্টমেন্ট এ চড়ুই আসেনা। আসেনা সেই পায়রা গুলো। কিজানি ওদের আর খাওয়া হয়না বোধয়। আমি রান্না ঘরে গেলেই কেমন আমার সাথে কথা বলতে আসতো। 

চারদিকে মৃত্যুর স্তব্ধতা। পৃথিবীর ব্যস্ততম শহরে আজ এ কিসের করাল ছায়া নেমেছে। পিনড্রপ সাইলেন্সার মধ্যে এম্বুলেন্সের শব্দ ছাড়া যখন আর কিছু শোনা যায়না, তখন গৃহ পরিজন আপন জনেদের থেকে বহুদূরে এই দশতলার আকাশচুম্বী ফ্ল্যাট এর মধ্যে একাকী বসে যেন মনে আজ সত্যি ই মনে হচ্ছে আমার পৃথিবী কাঁদছে। এ আমার গ্রামবাংলার বৃষ্টি নয়, এ বৃষ্টি দেখে কবি গান গেয়ে ওঠেনা, এ বৃষ্টি দেখে মনে হয়, কাতারে কাতারে অসহায় প্রাণ যেন তাদের শেষ ভিক্ষা নিয়ে প্রকৃতির কাছে নতজানু হয়ে বলছে ফিরিয়ে দাও। আমার প্রবাসের একাকী জীবন যেন হটাৎ পেয়েছে অখণ্ড অবসর। চরম ব্যস্ততার পরে সেই অখণ্ড অবসর আমাকে দিয়েছে অসীম সুদূর প্রসারী ভাবনার। চেতনার কোন এক সুপ্ত স্তর থেকে যেন মন বলে উঠছে তবে কি সময় হয়েছে, এ পৃথিবীর সেই চরম মুহূর্ত ঘনিয়ে এসেছে কি? কোনো এক মহাপুরুষ বলেছিলেন প্রকৃতি কে তোমরা যদি লালন না করো , প্রকৃতি কিন্তু নিজের মতন করে নিজেকে লালন করে নেবে। আর সে বড় ভয়ঙ্কর। আজ কি তবে সেই সময় এসেছে? যখন প্রকৃতি চাইছে নিজেকে গুছিয়ে নিতে। কিন্তু সে যদি গুছিয়ে নিতে শুরু করে, তবে তো সে কিছুই দেখবেনা। staticstics  এবং Evolutionary এর ভাষায় একে বলে random selection  under a certain  circumstances irrespective of everything when a few get selected from a larger population. প্রকৃতির সেই সিলেকশন যে বড় ভয়ঙ্কর হয়।  সে দেখেনা কে কার ভাই বন্ধু মা বাবা সন্তান স্বামী। এইভাবেই তো কালের নিয়মে সৃষ্টি ধ্বংস চক্রাকারে চলেছে। সভ্যতার বড়াই করে আধুনিকত্বের ভুল ব্যাখ্যায় মানুষ যখন শুধুই ভোগ লালসা মদেমত্ত হয়ে আছে, সব কিছুকেই যখন অবজ্ঞায় হেসে উড়িয়ে দিতে চায়, মনে করে পৃথিবীটা যেন তাদের হাতের মুঠির ভেতরে তাদের ই নিয়ন্ত্রণে আছে। তখন অলক্ষ্যে বসে বিধাতা হাসেন বৈ কি। অযত্নে অবহেলিত প্রকৃতি স্বার্থান্বেষী লোভী এবং এই আমিত্বময় মানব জগৎ কে গোড়া থেকে নাড়িয়ে দিয়ে জানান দিতে হয় যে হে অবলা , ওঠো জাগো, সময় হয়েছে নিজের অন্তর স্থলের গভীরে কতদিন তাকিয়ে দেখোনি, তাকিয়ে দ্যাখো তার দিকে। স্বার্থ , লোভ, পরান্মুখতা ত্যাগ করে একবার আবার চলো তাকিয়ে দেখি চরাচরে।










Sunday, 12 January 2020

সামনে থেকে তো দ্যাখে সবাই / তুমি দেখো দেখার বাইরের চোখ দিয়ে/ বিশ্বাস করি, হারিয়ে যা খুঁজি / শুধু এই বুঝি / তুমি খুঁজে দেবে , বন্ধুর পথে / জ্যোৎস্না ভেজা রাতে / অথবা দুর্ভেদ্য কুয়াশা সরিয়ে। 

ইচ্ছেনদী

আমার ল্যাব টা মাউন্ট sinai এর ১০ তলায়, আর আমার ওয়ার্কিং ডেস্কটা একদম জানালার ধারে , বিশাল জানালা। মনে হয় মেঘ গুলো এখুনি ঢুকে পড়বে এর মধ্যে। ...